দেয়াল by হুমায়ূন আহমেদ, অন্যপ্রকাশ

দেয়াল

লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনা: অন্যপ্রকাশ
ধরণ: ঐতিহাসিক রাজনৈতিক উপন্যাস

বইয়ের পটভূমি:

হুমায়ূন আহমেদের “দেয়াল” একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঐতিহাসিক উপন্যাস, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়—১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রচিত। লেখক এ উপন্যাসে ইতিহাসের একটি স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত অংশকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যা পাঠকদের ইতিহাসকে নতুনভাবে দেখার সুযোগ করে দেয়।


বইয়ের কাহিনি সংক্ষেপ:

“দেয়াল” মূলত একটি কাল্পনিক কাহিনির মোড়কে বাস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে রচিত। লেখক এখানে একটি সাধারণ পরিবারের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমির সাথে তাদের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন।

প্রধান চরিত্রসমূহ:

১. রুবি:

  • গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, এক তরুণী যার জীবনে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
  • রুবির মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন এবং তাদের অসহায়ত্বকে চিত্রিত করেছেন।

২. রাজনৈতিক পটভূমি:

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের করুণ পরিণতি।
  • ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং এর প্রেক্ষাপট।

উপন্যাসের কাহিনি:

গল্পটি রুবি এবং তার পরিবারের জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও এটি মূলত ঐতিহাসিক ঘটনা, বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং এর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অস্থিরতাকে প্রকাশ করে।

লেখক রুবির জীবন এবং দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি করেছেন, তা অত্যন্ত চমৎকারভাবে প্রাসঙ্গিক। রুবির দৃষ্টিকোণ থেকে লেখক দেখিয়েছেন কিভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে এবং তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে ভেঙে দেয়।


বইয়ের মূল বিষয়বস্তু:

১. ঐতিহাসিক বাস্তবতা:

  • “দেয়াল” উপন্যাসটি ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের হত্যাকাণ্ড এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত।
  • এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে এই ঘটনার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।

২. রাজনীতি এবং সাধারণ মানুষের জীবন:

  • উপন্যাসে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ক্ষমতার লোভ, এবং রাজনৈতিক নেতাদের নীতিহীনতাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
  • এটি দেখায় যে কিভাবে রাজনীতি শুধু শীর্ষ পর্যায়েই নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনকেও তছনছ করে দিতে পারে।

৩. নৈতিকতার সংকট:

  • উপন্যাসে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নৈতিকতার গভীর সংকট এবং বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
  • লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, একটি স্বাধীন জাতি কীভাবে তার জাতির পিতাকে এভাবে হারাতে পারে?

৪. এক সাধারণ পরিবারের লড়াই:

  • রুবি এবং তার পরিবার উপন্যাসে প্রতীকী চরিত্র হিসেবে কাজ করেছে, যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টিকে থাকার জন্য লড়াই করে।
  • এটি দেখায় যে ব্যক্তিগত স্বপ্ন এবং আশা কীভাবে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মুখে ধ্বংস হয়ে যায়।

বইয়ের ভাষা এবং উপস্থাপনা:

হুমায়ূন আহমেদের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার সহজ এবং মনোমুগ্ধকর ভাষা। “দেয়াল”-এও তিনি একইভাবে সরল ভাষায় জটিল এবং গভীর বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

  • লেখকের কাব্যিক বর্ণনা এবং চরিত্রগুলোর মানবিক দিক পাঠকদের আবেগতাড়িত করে।
  • ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যায় তিনি কখনোই অতিরঞ্জন করেননি; বরং তথ্যনির্ভর এবং বাস্তবতা-ভিত্তিক বর্ণনা দিয়েছেন।

বইয়ের ইতিবাচক দিক:

১. ঐতিহাসিক ঘটনা পুনর্ব্যাখ্যা:

  • “দেয়াল” বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্মান্তিক অধ্যায়কে তুলে ধরে।
  • এটি পাঠকদের ১৯৭৫ সালের ঘটনার গভীরে যাওয়ার সুযোগ দেয়।

২. সাহসী লেখা:

  • এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে উপন্যাস রচনা করা সাহসিকতার পরিচায়ক।
  • লেখক সত্য তুলে ধরতে কারো প্রতিক্রিয়া বা সমালোচনার ভয় পাননি।

৩. আবেগময় চরিত্রচিত্রণ:

  • রুবি এবং তার পরিবারের চরিত্রগুলো খুবই জীবন্ত এবং আবেগময়।
  • পাঠকরা চরিত্রগুলোর সঙ্গে সহজেই সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

বইয়ের সমালোচনার দিক:

১. ঐতিহাসিক বিতর্ক:

  • উপন্যাসটি ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা হওয়ায় অনেক সময় এটি বিতর্কিত তথ্য বা ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে।
  • কিছু পাঠক মনে করেন, হুমায়ূন আহমেদ কিছু ঘটনা উপস্থাপনে পক্ষপাতিত্ব করেছেন।

২. অধিক রাজনৈতিক মনোযোগ:

  • গল্পের কিছু অংশে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ায় এটি মাঝে মাঝে উপন্যাসের কাহিনি থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

কার জন্য এই বইটি উপযুক্ত?

  • যারা বাংলাদেশের ইতিহাস এবং ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটভূমি নিয়ে জানতে চান।
  • যারা সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন।
  • যারা হুমায়ূন আহমেদের ভিন্নধর্মী কাজের অনুরাগী।

উপসংহার:

“দেয়াল” একটি সাহসী এবং গভীর বই, যা ইতিহাসের একটি স্পর্শকাতর অধ্যায়কে তুলে ধরে। হুমায়ূন আহমেদ কেবল একজন লেখক হিসেবে নয়, বরং একজন দার্শনিক চিন্তাবিদ হিসেবে এখানে কাজ করেছেন।

এই উপন্যাসটি একটি কালজয়ী সৃষ্টি, যা আমাদের ইতিহাসকে নতুনভাবে বুঝতে এবং মূল্যায়ন করতে শেখায়। তবে বইটি পড়ার সময় পাঠকদের উচিত সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা, কারণ এটি বাস্তব এবং কাল্পনিক ঘটনার একটি মিশ্রণ।

আপনি যদি বাংলাদেশি সাহিত্যের ভক্ত হন এবং ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা উপন্যাস পড়তে আগ্রহী হন, তবে “দেয়াল” অবশ্যই আপনার পড়ার তালিকায় থাকা উচিত।

বইটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৩৩৩ টাকা। আপনি চাইলে বইটি রকমারি ডট কম থেকে কিনে নিতে পারেন।

বইয়ের লিংক – দেয়াল (হার্ডকভার)

আপনার আরও কোনো বইয়ের রিভিউ প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে পারেন। 😊

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top