হিমু – হুমায়ুন আহমেদ (Himu by Humayun Ahmed)

হিমু – হুমায়ুন আহমেদ (Himu by Humayun Ahmed)

নিচে জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্টি “হিমু” চরিত্র ও বইয়ের উপর একটি বিস্তারিত ও সাহিত্যসম্মত রিভিউ উপস্থাপন করা হলো:


বই রিভিউ: হিমু – হুমায়ুন আহমেদ

লেখক: হুমায়ুন আহমেদ
প্রকাশকাল: ১৯৯০-এর দশক থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বহু খণ্ডে
ধরন: কল্প-বাস্তব, জীবনদর্শন, মানবিক দর্শনভিত্তিক উপন্যাস
মূল থিম: প্রথা বিরোধিতা, আত্মদর্শন, জীবনবোধ ও সমাজ-অসঙ্গতির প্রতি নির্মম বিদ্রুপ

হিমু কে?

হিমু হলো বাংলা সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্র—এক বোহেমিয়ান জীবনযাপনে অভ্যস্ত, হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত, পায়ে চপ্পল না থাকা, নিয়মের বাইরে চলা এক স্বপ্নবিলাসী যুবক। তার জীবনবোধ প্রচলিত শিক্ষায় গড়ে ওঠেনি; সে যুক্তিবাদে নয়, অন্তর্জ্ঞান আর অনুভূতির উপর নির্ভর করে। সমাজ যাকে পাগল ভাবে, পাঠক তাকে ভাবে দার্শনিক।

সারসংক্ষেপ ও ব্যাখ্যা:

হিমুর জীবন কোনো নির্দিষ্ট গল্পে বাঁধা নয়। প্রতিটি বইয়ে তার নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, অদ্ভুত কিছু ঘটনার সম্মুখীন হওয়া, মানুষের মনে অদ্ভুতরকম ঢুকে পড়া এবং ভাবনার গভীরতা নিয়ে চলা একটি ভিন্ন ধারা। সে পুলিশের ভয়ে পালায়, ভবঘুরে জীবনযাপন করে, কিন্তু মানুষের মন পড়ে ফেলতে পারে সহজেই।

হিমুর পিতা ছিলেন একজন ‘অপরাধী তৈরির কারিগর’, যিনি হিমুকে এমনভাবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন যেন সে সমাজের নিয়মের বাইরে গিয়ে বাস করতে পারে। ফলে হিমু হয়ে ওঠে এক প্রশ্নবিদ্ধ চরিত্র—প্রথা, ধর্ম, জ্ঞান বা বিজ্ঞান—কোনো কিছুই তার জীবনের চূড়ান্ত নয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই ‘উন্মাদ’-এর কথায় থাকে দার্শনিক সত্য।

ভাষা ও শৈলী:

হুমায়ুন আহমেদের লেখার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার সহজ ভাষা, সরল বাক্য এবং জীবনঘনিষ্ঠ উপস্থাপন। হিমুর সংলাপে কখনো হাসি, কখনো বিস্ময় আবার কখনো বা গভীর বেদনার ছাপ থাকে। লেখক অত্যন্ত দক্ষভাবে পাঠককে হাসাতে হাসাতে চিন্তায় নিমজ্জিত করে ফেলেন।

হিমুর দর্শন:

  • বাস্তবতার বাইরে বের হয়ে জীবন দেখা
  • মনের স্বাধীনতা
  • অপ্রচলিত চিন্তাধারা
  • ভেতরের সত্য খোঁজার প্রয়াস
  • নিয়মের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকার সাহস

হিমু চরিত্রটি পাঠককে প্ররোচিত করে ভাবতে—সত্যিই কি আমাদের সব নিয়ম মানা দরকার? নাকি কখনো কখনো নিয়ম না মানাই প্রকৃত জীবন?

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

হিমুকে যারা একবার পড়েছেন, তারা তাকে ভোলেন না। হিমু পাঠকের বন্ধু হয়ে ওঠে—একজন আত্মীয়, একজন ফুসফুসের মতো, যার কথা মনে পড়লেই মনে হয়, “জীবনটা হিমুর মতো করে বাঁচতে পারলে ভালো হতো!”

উপসংহার:

“হিমু” কেবল একটি চরিত্র নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। যারা প্রচলিত জীবনের বাইরে কিছু ভাবতে চান, মননশীলতার খোরাক চান এবং সাহিত্যের মধ্য দিয়ে একটু অবসরপ্রাপ্ত, ভাবুক জীবন অনুভব করতে চান—তাদের জন্য হিমু সিরিজ অপরিহার্য।

হুমায়ুন আহমেদ এই চরিত্রটির মাধ্যমে আমাদেরকে জীবন, সমাজ এবং আত্মচিন্তার এক নতুন দরজা খুলে দেন।


আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top