একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
মানবসমাজে যখন থেকে শাসনের ধারা শুরু হলো, তখন থেকেই পাশাপাশি
বিদ্রোহের ধারাও চলে আসছে । বিদ্রোহীরা বড়ো-বড়ো প্রতাপশালী ও নিপীড়ক
রাজা-বাদশাদের সিংহাসন উলটে দিয়েছে। বিদ্রোহের ইতিহাস পড়ুন । দেখবেন,
কোনো-কোনো বিদ্রোহ এত বড়ো ছিল এবং এমন প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে, তার
কাহিনি ইতিহাসের পাতা থেকে কোনোকালেও মুছবার নয় ৷ অবশ্য বেশিরভাগ
বিদ্রবোহই ছিল ছোটোখাটো; ফলে সেগুলো ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি
মোটেও ।
বিদ্রোহ বড়ো হোক কিংবা ছোটো; তাকে দমন করতে একটি-ই পন্থা অনুসৃত হয়ে
আসছে । বিদ্বোহী নেতাদের গ্রেফতার করা হয়, নিপীড়ন চালানো হয়,
বিদ্রোহীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয় । তাতে সাধারণত বিদ্বোহ দমে যায় বটে;
কিন্ত চিরতরে নয় । এই প্রক্রিয়ায় বিদ্রোহের আগুন আপাতত নির্বাপিত হলেও
কয়লার মতো ভেতরে-ভেতরে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে । নেতাদের ধরপাকড়,
প্রতিশোধস্পৃহাকেও যুক্ত করে দেয় । অবশেষে এই বিদ্রোহ অস্ত্রের জোরে দমনের
চেষ্টা চালানো হয় । বিদ্রোহ অনেক সময় গৃহযুদ্ধেরও রূপ ধারণ করতে পারে, যার
ফলে শাসকগোষ্ঠীর সিংহাসন উলটে যায় আর বিদ্রোহীরা জয়লাভ করে । অনেক
সময় বিদ্রোহীরা পরাজয়ও বরণ করে ।
সিপাহসালার আমর ইবনুল আস (রাযি.)কে রিপোর্ট দেওয়া হলো, ব্যবিলনে
পুলিশ বিভাগে যেসব কিবতি খিস্টান আছে, তাদের মাঝে বিদ্রোহের আলামত
পরিলক্ষিত হচ্ছে । তারা বলে ফিরছে, আমরা এই পশ্চাদপদ আরব মুসলমানদের
অধীনে থাকব না। তখন সব কজন মুসলিম সেনাপতির নিশ্চিত ধারণা ছিল,
সিপাহসালার ‘ আদেশ জারি করবেন, কিবতিদের শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন
করে ফেলো । যদি ওরা এরূপ বিদ্রোহমূলক চিন্তাধারা থেকে বিরত না হয়, তা
হলে ওদের কঠিন শাস্তি দাও, যা অন্যদের জন্য শিক্ষার ওপরকরণ হয় । কিন্তু যে-
আমর ইবনুল আস নিজের গোটা বাহিনীকে নিশ্চিত মৃত্যুর সুখে ঠেলে দেন,
রিপোর্ট শুনে তিনি একদম চুপ রইলেন- মুখে একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না