Iman Dipto Dastan by Enayetullah Altamash -6

ঈমানদীপ্ত দাস্তান ৬ – এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ (Iman Dipto Dastan 6 by Enayetullah Altamash)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

মেয়েটি নিজের লাশ দেখল

 সুদর্শন যুবক আন-নাসের সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর সেই কমান্ডোদের একজন, যারা মৃত্যুর চোখে চোখ রেখে কথা বলে। খৃস্টানদের বিশ্বাস, সুলতান আইউবীর কমান্ডোদেরকে মৃত্যুও ভয় করে। মরুভূমির দুর্গমতা, সমুদ্রের উতলা, কণ্টকাকীর্ণ পর্বতমালা কিছুরই পরোয়া করে না তারা। দুশমনের রসদ ইত্যাদিতে অগ্নিসংযোগ করে নিজেরা আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জীবন কুরবান করা তাদের পক্ষে একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু জিন-পরী আর ভূত-প্রেতে প্রচণ্ড ভীতি সুলতান আইউবীর এই অকুতোভয় জানবাজ গেরিলাদের। তারা কখনো জিন-ভূত দেখেনি; শুধু গল্প-কাহিনী শুনেছে মাত্র, যাতে তাদের শতভাগ বিশ্বাস আছে। জিন-পরীর নাম শুনলেই ভয়ে তাদের গা ছমছম করে ওঠে।

আন-নাসের যদি আসিয়াত দুর্গে আপন মর্জিতে এবং সচেতন অবস্থায়। এসে পৌঁছতো, তাহলে এতোটা ভয় পেতো না। তাকে যদি কয়েদি বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো, তাহলেও সে নির্ভীক থাকতো এবং পালাবার বুদ্ধি বের করে নিতো। কিন্তু তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে হাশিশের নেশায় মস্তিষ্কে অবাস্তব কল্পনা সৃষ্টি করে। সেই নেশার ঘোরে সে কাল্পনিক সবুজ শ্যামলিমা এবং বাগ-বাগিচার মধ্যদিয়ে পথ অতিক্রম করে এসেছে।

কিন্তু এখন তার নেশা কেটে গেছে। এই ভূখণ্ডে কোথায় কোথায় সবুজ শ্যামলিমা থাকতে পারে, তার স্মরণ আসতে শুরু করেছে। এখন সে বুঝে, মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ অঞ্চল এমন স্বর্গীয় হতে পারে না।

আন-নাসের যে রূপসী মেয়েটিকে পরী মনে করেছিলো, এখন সে তার পালঙ্কে বসা। মেয়েটি তার কল্পনার চেয়েও বেশি সুন্দরী। আন-নাসের মেয়েটিকে মানুষ বলে বিশ্বাসই করতে পারছে না। মেয়েটি যখন বললো, তুমি আমার উপর আস্থা রাখো, তখন তার ভয় আরো বেড়ে গেলো। সে শুনেছে, জিন-পরীরা চিত্তাকর্ষক প্রতারণার মাধ্যমে মানুষ খুন করে থাকে।

এই দুর্গটি তার কাছে জিন-পরী ও ভূত-প্রেতের আড্ডা বলে মনে হতে শুরু করেছে। তার সঙ্গীরা এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। 

আমি তোমার উপর কেন ভরসা রাখবো? আমার জন্য তোমার কেন এতো মায়া হলো? এখানে আমাকে কেন নিয়ে এসেছো? এটা কোন জায়গা? মনে সামান্য সাহস সঞ্চয় করে আন-নাসের জিজ্ঞেস করে।

তুমি যদি আমার উপর আস্থা স্থাপন না করো, তাহলে তোমার পরিণতি খুবই মন্দ হবে- মেয়েটি বললো- তুমি ভুলে যাবে, তুমি কে ছিলে। তোমার হাত তোমারই ভাইদের রক্তে রঞ্জিত হবে আর তুমি সেই রক্তকে ফুল মনে করে আনন্দিত হবে। আমি তোমার প্রতি এতো স্নেহশীল কেনো হলাম, সেই প্রশ্নের উত্তর আমি এখনই দিতে পারবো না। এটি একটি দুর্গ, যার নাম আসিয়াত। এটি ফেদায়ীদের দুর্গ। এখানে ফেদায়ীদের গুরু শেখ সান্নান অবস্থান করে থাকেন। তুমি কি ফেদায়ীদের সম্পর্কে জানো?

হ্যাঁ, জানি- আন-নাসের জবাব দেয়- খুব ভালো করে জানি। এবার আমি বুঝে ফেলেছি তোমরা কারা। তোমরাও ফেদায়ী। আমি জানি, ফেদায়ীদের কাছে তোমাদের ন্যায় রূপসী মেয়েরা থাকে!

তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই- মেয়েটি বললো- আমার নাম লিজা।

তোমার সঙ্গে আরো একটি মেয়ে ছিলো, সে কোথায়? আন-নাসের জিজ্ঞেস করে।

তার নাম থ্রেসা- লিজা জবাব দেয়- সে এখানেই আছে। তোমাদেরকে হাশিশের নেশায় আচ্ছন্ন করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।

লিজা আর কিছু বলতে পারলো না। হঠাৎ থ্রেসা এসে কক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে যায় এবং ইশারায় লিজাকে বেরিয়ে যেতে বলে। লিজা আন নাসেরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।

এখানে কী করছো?- থ্রেসা জিজ্ঞেস করে- লোকটার এতো কাছাকাছি বসেও তোমার হুশ হলো না যে, মুসলমান ঘৃণ্য মানুষ? তুমি কি বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে অপরাধী হতে চাচ্ছো?

লিজার মাথায় কিছুই ধরছে না। সে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। মুসলিম আমীরদের চরিত্রহননের পেশাটার প্রতি প্রচণ্ড বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে তার। এই ঘৃণা-বিতৃষ্ণা এতোই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে, নিজের কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে লিজা। এখন তার মাথায় একটিই চিন্তা- হয় প্রতিশোধ গ্রহণ কিংবা পলায়ন।

আমিও একটি যুবতী মেয়ে- থ্রেসা বললো- আমারও এই মুসলিম গেরিলা আন-নাসেরকে ভালো লাগে। ভালো লাগার মতো সুদর্শন যুবক বটে। যদি বলো, লোকটা তোমার হৃদয়ে বাসা বেঁধে ফেলেছে, তাহলে আমি বিস্মিত হবো না। তোমার অন্তরে বৃদ্ধ মুসলমান আমীর ও সালারদের প্রতি যে ঘৃণা জন্মে গেছে, তাও আমি জানি। সে কারণেই তুমি তাদের খেলনা হয়ে থাকতে চাচ্ছে না। কিন্তু কর্তব্যকে তো আর ভুলে গেলে চলবে না। ক্রুশের মর্যাদাকে সামনে রেখে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই মুসলমানরা তোমার দুশমন।

না থ্রেসা!- লিজা আপুত কণ্ঠে বললো- তার প্রতি আমার সেই আকর্ষণ নেই, যা তুমি মনে করছো।

 তাহলে তার পাশে গিয়ে বসেছিলে কেন?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top