নিচে বই “লালসালু – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ” এর উপর একটি বিস্তারিত ও সাহিত্যিক রিভিউ তুলে ধরা হলো:
বই রিভিউ: লালসালু – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
লেখক: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
প্রকাশকাল: ১৯৪৮
ধরন: উপন্যাস, সামাজিক-ধর্মীয় বাস্তবতা
মূল থিম: ধর্মের নামে প্রতারণা, গ্রামীণ সমাজব্যবস্থা, ক্ষমতার খেলা, বিশ্বাস ও অন্ধতা
সারসংক্ষেপ:
“লালসালু” সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম উপন্যাস, এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ও সমাজমনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ, একজন প্রতারক, যে একটি অচেনা গ্রামের পাশে পড়ে থাকা এক বেওয়ারিশ কবরকে ‘পীর সাহেবের মাজার’ বলে প্রতিষ্ঠিত করে, আর সেই মাজারকে ঘিরে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করে নেয়।
ধীরে ধীরে সে পুরো গ্রামকে ধর্মীয় ভয় এবং কুসংস্কারে আবদ্ধ করে রাখে, যেখানে ঈমানের চেয়ে তার কথাই বড় হয়ে ওঠে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষদের সরলতা, অশিক্ষা ও ধর্মীয় ভীতিকে হাতিয়ার করে মজিদ হয়ে ওঠে সমাজের একমাত্র নিয়ন্ত্রক।
সাহিত্যিক বিশ্লেষণ:
এই উপন্যাসটি নিছক কোনো গল্প নয়, এটি এক গভীর সমাজচিত্র—যেখানে ধর্মকে পণ্য বানিয়ে মানুষকে শাসন করা হয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ অত্যন্ত সংযত ও শক্তিশালী ভাষায় তুলে ধরেছেন কিভাবে একজন প্রতারক মজিদ, ধর্মের নামে এক গ্রামে তার শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
মজিদের চরিত্রটি বহুমাত্রিক—একদিকে সে ঠান্ডা মাথার ষড়যন্ত্রকারী, অন্যদিকে মাঝে মাঝে নিজের কাজ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। এই মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন উপন্যাসটিকে আরও গভীরতা দিয়েছে।
ভাষা ও রচনা শৈলী:
লেখকের ভাষা সহজ, কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বর্ণনায় রয়েছে বাস্তবতার নির্মম আঘাত। উপন্যাসে গ্রামীণ জীবনের চিত্র অত্যন্ত জীবন্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে—কৃষিজীবী সমাজ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মহিলাদের অবস্থা, শিশুদের সরলতা সবই নিখুঁতভাবে চিত্রিত।
মূল বার্তা:
- ধর্ম যদি মনুষ্যত্ব ও জ্ঞানের পরিবর্তে ভয় ও অন্ধ অনুসরণে রূপ নেয়, তবে তা সমাজের জন্য এক বিপজ্জনক অস্ত্র হতে পারে।
- গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সরলতা ও অশিক্ষা কিভাবে শোষণের সুযোগ করে দেয়, তার বাস্তব রূপচিত্র।
- সমাজে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কেবল নৈতিকতা বা জ্ঞান দিয়ে নয়, ভয়ের কৌশল দিয়েও কায়েম হয়—যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
উপসংহার:
“লালসালু” নিছক উপন্যাস নয়, এটি একটি প্রজ্ঞা-নির্ভর সতর্কবার্তা। এটি পড়লে বোঝা যায়—শুধু ধর্মের নাম নিলেই কেউ ধার্মিক হয় না, বরং ধর্ম ব্যবহৃত হতে পারে এক শক্তিশালী রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে।
বাংলা সাহিত্যে ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজ মনস্তত্ত্বের এমন শক্তিশালী মিলনবিন্দু খুব কমই দেখা যায়। যারা বাস্তবধর্মী ও গভীর অর্থবোধক সাহিত্য পড়তে চান, “লালসালু” তাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–
এবং
বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-