ব্ল্যাক ক্রসের কবলে – আবুল আসাদ (Black Cross er Kobole by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

গেরিলা সদৃশ ওয়াট তার চাবুক থামাল। চিৎকারও থেমে গেল ওমর বায়ার। চিৎকার রূপান্তরিত হলো গোঙানিতে।
ওমর বায়ার দেহটা ওবু করে টাঙানো ঘরের ছাদের সাথে। ঝুলে পড়েছে তার দু’টি হাত নিচের দিকে। দেহ তার রক্তাক্ত। তার হাত, তার চুল বেয়ে ফোটা ফোটা রক্ত গিয়ে পড়ছে মেঝেতে।
ওয়াট তার চাবুকের রক্ত স্পঞ্জে মুছে চামড়ার তৈরী চাবুকের সাপের মত লকলকে লেজটা হাতে গুটিয়ে নিল। বাম হাত দিয়ে এ্যাসট্রে থেকে জ্বলন্ত সিগারেট তুলে নিয়ে এগুলো ওমর বায়ার দিকে। ওয়াটের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে-মুখে চরম অধৈর্য্যের ভাব।
বাম হাতের সিগারেটটা সে চেপে ধরল ওমর বায়ার কাঁধে।
কেঁপে উঠল ওমর বায়ার দেহ। চিৎকার করে চোখ খুলল ওমর বায়া।
হো হো করে হেসে উঠল ওয়াট। মুখ বিকৃত করে সে বলল, এমন পেটানো হাতিকে পেটালেও সে কথা বলত। শেয়ালের বাচ্চা তোর মুখ খুলতে পারলাম না, তোর বিড়ালের বংশে জন্ম নেয়া উচিত ছিল।
একটু থাকল ওয়াট। তারপর গলার স্বরটা একটু নামিয়ে বলল, সামান্য দু’টো কথা বলে দিলে এসব তোর কিছুই হতো না। বল, তোর জমি জমার কাগজ-পত্র কার কাছে, কোথায় রেখেছিস? অথবা বল, ক্যামেরুনের কোর্ট থেকে তোর কেসটা তুই তুলে নিবি।
সমগ্র দক্ষিণ ক্যামেরুনের একমাত্র অবশিষ্ট মুসলিম ল্যান্ড ওমর বায়ার জমিদারী কুক্ষিগত করার এ দু’টি পথই খোলা আছে ‘কিং ডোম অব ক্রাইস্ট’ (KOC-কোক) এবং ‘আর্মি অব ক্রাইস্ট অব ওয়েস্ট আফ্রিকা’ (AOCOWA-ওকুয়া) এর কাছে। ওমর বায়ার জমি জমার কাগজপত্র যদি পেয়ে যায়, তাহলে ওমর বায়া প্রমাণ করতে পারবে না যে জমি জমা গুলো তার। তাছাড়া কাগজ-পত্র প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করে নিজেরা কাজে লাগাতে পারবে। ওমর বায়ার কাগজপত্রের যে কপি ক্যামেরুনের সহকারী সেরেস্তায় জমা ছিল তা ওকুয়া ইতিমধ্যেই গায়েব করে ফেলেছে। সুতরাং ওমর বায়ার কাছের কাগজপত্র একবার হাত করতে পারলেই কেল্লাফতে।
ওমর বায়া ধীরে ধীরে ডান হাতটা তুলে কাধের ফোস্কাটার উপর হাত বুলিয়ে বলল, তোমাদের আমি চিনি না। তোমাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই, তোমরা এসব চাও কেন?
ওমর বায়ার ঝুলন্ত হাতটার উপর ফুটবলের মত একটা লাথি চালিয়ে ওয়াট বলল, আবার বলছিস সেই একই কথা। দুনিয়ার কেউ আমাদের মিত্র নয়, আমাদের মিত্র আমাদের স্বার্থ। আমাদের স্বার্থেই ‘ওকুয়া’ এখন আমাদের মিত্র, আর তুই আমাদের শত্রু। এবার আমার প্রশ্নের জবাব দে।
‘জবাব আমি বহুবার দিয়েছি’।
‘কি জবাব দিয়েছিস?’
‘তোমরা যা চাও তার কোনটাই পাবে না’।
চোখ দু’টি জ্বলে উঠল ওয়াটের। কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত হয়ে বলল, তুই কি পাগল? জংগল ভরা ক্যামেরুনের কাম্পু উপত্যকায় ১০ হাজার একর জমি বড় হলো, না তোর জীবন বড়?
‘তুমি ফরাসী না?’
‘হ্যা। কেন?’
’১০ হাজার নয়, তোমার ফ্রান্সের ১০ একর জমি কি তুমি বৃটিশের হাতে তুলে দিতে পার?’
‘বৃটেন ভিন্ন রাষ্ট্র, তার হাতে আমার দেশের মাটি তুলে দেব কেন?’
‘তাহলে আমি দেব কেন?’
‘ওকুয়া’ কিংবা ‘কোক’ তো ভিন্ন রাষ্ট্র নয়। তোমার এ তুলনা ঠিক নয়।
‘ভিন্ন রাষ্ট্র নয় কেন? খৃষ্টান জাতিস্বার্থ নিয়ে ওকুয়া ক্যামেরুন ভুমি দখলের যে অভিযান চালাচ্ছে, তা পুরোপুরিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রসূত। এ রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো ক্যামেরুনে একক খৃষ্টান জাতি স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্যে মুসলিম জাতি-স্বার্থের সম্পূর্ণ বিনাশ সাধন করা। সুতরাং আমার যে দশ হাজার একর জমি তা শুধু জমি নয়, আমার অস্তিত্ব, আমার জাতির অস্তিত্ব। আমাকে তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো, আমার জাতির অস্তিত্ব তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারি না’।
চোখ জ্বলে উঠল ওয়াটের। হাতের চাবুক নাচিয়ে সে বলল, দিতে হবে তোমাকে। ‘ওকুয়া’ নয়, ব্ল্যাক ক্রসের হাতে তুমি পড়েছ। কথা তোমাকে বলিয়েই ছাড়ব।
‘ওকুয়ার হাতে মৃত্যু একটা, তোমাদের হাতে দুইটা মৃত্যু আছে না কি?’
‘বিদ্রুপ করছ ব্ল্যাক ক্রসকে?’ চোখ থেকে আগুন ঝরল ওয়াটের। লাফিয়ে উঠল তার চাবুক। বিদ্যুতের গতি নিয়ে ছোবল মারল ওমর বায়ার দেহে। এই ছোবলে ফিনকি দিয়ে রক্ত নামছে ওমর বায়ার দেহ থেকে। আঘাতের সাথে সাথে ওমর বায়ার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে চিৎকার।
দু’হাতে বাট ধরে চাবুক চালাচ্ছে ওয়াট। ওমর বায়ার চিকার ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে এল। থেকে গেল একসময়। চোখ দু’টি তার বুজে গেল, ঝুলে পড়ল হাত দু’টি নিঃসাড় হয়ে। জ্ঞান হারিয়েছে ওমর বায়া।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top