Czarer Guptodhan by Abul Asad-24

 জারের গুপ্তধন – আবুল আসাদ (Czarer Guptodhan by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

মস্কোর দক্ষিণ অংশে মস্কোভা নদী লেনিন হিলস-এর পাদদেশে এসে ‘ইউ’ টার্ন নিয়েছে। এই ‘ইউ’ টার্নের যেখানে কমসোমলস্কায়া হাইওয়ে দক্ষিণ থেকে এসে মস্কোভা নদী অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে সেদোভায়া রিং-এর দিকে, সেখানে মস্কোভা নদীর তীরে একটি দুর্গ সদৃশ বাড়ি।
বাড়িটার বিশাল গেটে একটা সুদৃশ্য সাইনবোর্ড। লেখা, ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’। সাইনবোর্ডে ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘সোশ্যাল রিসার্চ ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন’।
সরকারী কাগজে কলমে সংস্থাটি একটি জাতীয় এনজিও। এই এনজিও সাইনবোর্ডের আড়ালে এটাই গ্রেট বিয়ারের হেডকোয়ার্টার।
বাড়িটা এক সময় সোভিয়েত রাজবন্দীদের বধ্যভূমি বলে কথিত কেজিবি’র জেলখানা ‘লুবিয়াংকা’র অংশ ছিল। কমিউনিজমের পতনের পর বাড়িটা পরিত্যক্ত হয়। এই পরিত্যক্ত বাড়িটাই ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর নামে গ্রেট বিয়ার কিনে নিয়েছে। গ্রেট বিয়ার লুবিয়াংকার ‘হেরিটেজ’ ঠিকই রক্ষা করছে একে আর একটা বধ্যভূমিতে পরিণত করে। লুবিয়াংকা ছিল কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার বধ্যভূমি, গ্রেট বিয়ারের হাতে এসে এটা এখন হয়েছে রুশীয়করণের বধ্যভূমি। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ভূগর্ভস্থ দু’টি তলা গ্রেট বিয়ারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বধ্যভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাড়িটা দুর্গ সদৃশ, কারণ পাঁচতলা উঁচু বিরাট এলাকা নিয়ে তৈরি বিরাট বাড়িটার উত্তর দিকের প্রধান গেটটি ছাড়া আর কোন দরজা, জানালা, কার্নিশ, ব্যালকনি ইত্যাদি কিছুই নেই। বাড়ির বহির্দেয়ালের নিচ থেকে শীর্ষ পর্যন্ত প্রতি পনের ফুট দূরত্বে বিল্ডিং-এর চারদিক ঘুরে একসারি করে ঘুলঘুলি। ঘুলঘুলির আয়তন এক বর্গফুটের বেশি হবে না।
দুর্গ সদৃশ বাড়ির দক্ষিণ অংশে পাঁচ তলায় বিরাট একটি হলঘর।
ঘরে ডজন দুই বড় সাইজের কুশন চেয়ার। চেয়ারগুলোর সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা। ফাঁকা জায়গাটার পরে প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু একটা মঞ্চ।
মঞ্চের ঠিক মাঝখানে সাত ফুট উঁচু আরও একটা মঞ্চ। মঞ্চটির আয়তন পাঁচ বর্গফুটের মত হবে।
হলরুমের মেঝে থেকে এই মঞ্চটিকে সলিড মেঝে বিশিষ্ট বলে মনে হয়। আসলে মঞ্চটি দশ ফুট কংক্রিটের দেয়াল বিশিষ্ট একটা ফাঁকা চোঙা।
হলঘরের পঁচিশটি চেয়ারে পঁচিশজন লোক বসে। ওদের দিকে তাকালে ওদের পোশাক, স্বাস্থ্য, চেহারা, গাম্ভীর্য ইত্যাদি বলে দেয়, ওরা সবাই রাশিয়ার এক একজন দিকপাল।
ওদের স্থির এবং সম্ভ্রমপূর্ণ দৃষ্টি মঞ্চের উপরে মঞ্চের শীর্ষদেশটার উপর নিবদ্ধ।
তাদের চোখের সামনে বরাবরের মতই একটা সোনালী সিংহাসন উঠে এল মঞ্চের শীর্ষে। সোনালী সিংহাসনে সোনালী বর্মে ঢাকা একজন মানুষ। মুখেও সোনালী মুখোশ।
সোনালী সিংহাসনটি মঞ্চ শীর্ষে উঠে আসার সাথে সাথে হলের চেয়ারে বসা সকলে উঠে ডান হাত সামনে বাড়িয়ে মাথা নিচু করল।
মঞ্চ শীর্ষ থেকে গমগমে দু’টি শব্দ বেরিয়ে এল, ‘বস তোমরা।’
মাথা নিচু করে বসল সবাই।
সেই কণ্ঠ আবার ধ্বনিত হলো। মঞ্চ শীর্ষ থেকে ভেসে এল কথা, ‘রাশিয়ার গর্বিত সন্তানগণ, আপনাদের মাধ্যমে সকলের প্রতি আমার শুভেচ্ছা।’
বলে একটু থামল। মুহূর্তকাল পরে গম গম করে উঠল সেই কণ্ঠ আবার। বলল, ‘গোয়েন্দা প্রধান মাজুরভ, আমাদের ‘অপারেশন প্যারিস প্রজেক্ট’ সম্পর্কে বলার জন্যে তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছি।’
‘মহামান্য আইভান দীর্ঘজীবী হোন।’
বলে সামনের সারি থেকে উঠে দাঁড়ানো মাজুরভ একটা ঢোক গিলে আবার শুরু করল, ‘প্রিন্সেস ক্যাথারিন ও ফরাসী রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স প্লাতিনিকে মস্কো নিয়ে আসতে পারার সাফল্য বাদে আমাদের প্যারিস অপারেশন ব্যর্থ হয়েছে। রাজকীয় ডায়েরী ও রাজকীয় রিং-এর সন্ধান পেয়েও এবং কার কাছে আছে জেনেও তা উদ্ধার করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। সেই লোককে তিন বার ধরেও আমরা আটকাতে পারিনি। সেখানে পাঠানো প্রায় পুরো জনশক্তি আমাদের ধ্বংস হয়ে গেছে মাত্র একজন লোককে মোকাবিলা করতে গিয়ে। আমরা সেখানে আক্রমণের পর্যায় থেকে আত্মরক্ষার অবস্থানে নেমে এসেছি। আহমদ মুসা প্রিন্সেস ক্যাথারিন ও মিঃ প্লাতিনিকে উদ্ধার করার জন্যে ইতোমধ্যেই রাশিয়া যাত্রা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’ থামল মাজুরভ।
মঞ্চ থেকে সেই কণ্ঠ বেজে উঠল আবার। বলল, ‘আরও সফলতা আছে। গ্রেগরিংকো, উস্তিনভ, ম্যালেনকভ, মায়োভস্কির মত অপদার্থদের দেশে ফিরে আসতে হয়নি। ওদের জন্যে আমাদের কোন বুলেট খরচ করতে হয়নি।’ থামল কণ্ঠটি।
হলে চেয়ারে বসা সকলের মুখ ম্লান হয়ে গেল। গ্রেট বিয়ারের আইনে ব্যর্থতার কোন জায়গা নেই। মৃত্যুই এর একমাত্র মূল্য। চেয়ারে উপবিষ্ট সকলের ম্লান মুখে এই ছবিই ভেসে উঠেছিল।
মঞ্চ থেকে ভেসে আসা কণ্ঠ থামতেই মাজুরভ সামনের দিকে মাথা নুইয়ে বলে উঠল, ‘মহামান্য আইভান দীর্ঘজীবী হোন’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top