Masud Rana - Dongshon

দংশন – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Dongshon – Masud Rana By Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

লিমপোপো সিমান্ত থেকে দক্ষিণের পথ ধরলো ঘোড়সওয়ার শুরু হলো ঢাল । ক্রমশ উচু হয়ে পাথুরে পর্বতশ্রেণীর গোড়ায় গিয়ে মিশেছে মাটি, ঢালটা ঘাসবনে ঢাকা । তিন দিনের দিন সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টার দেখা পেলো ওরা, আকাশের গায়ে কালো ও তীক্ষ চুড়াবহুল একটা রেখা, যেন প্রাচীন কোনো হাঙরের এক সারি দাঁত।

রোদের আঁচে পুড়ে যাচ্ছে চামড়া, খালি গায়ে অনেকটা পিছিয়ে থেকে ঘোড়সওয়ারকে অনুসরণ করছে ডমরু। লিমপোপো নদীর কিনারা ত্যাগ করার পর প্রায় কোনো কথাই হয়নি ওদের মধ্যে _ প্রেয়সীর মধুর সানিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে বিরহ ব্যথায় এখনও কাতর হয়ে আছে ঘোড়সওয়ার, আর পরিবারের সবাইকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে ডমরু ৷


ডমরুর দষ্টিতে ঘোড়সওয়ার অরণ্যদেব, ঈশ্বরপ্রেরিত উদ্ধারকর্তা। জীবনের পরম স্বস্তিকর অথচ অবিশ্বাস্য মুহূর্তটির কথা বারবার মনে পড়ছে তার। আর মাত্র এক ঘন্টা পরই ভীতিকর সন্ধ্যা নামতো গভীর অরণ্যে সেই সাথে আসতো সিংহ বা হায়েনার পাল, ছিড়ে খেয়ে ফেলতো তাকে।


উপজাতীয় কোন্দলের শিকার ডমরু | নিরীহ একজন মানুষ, বউ আ’র অক্ষম মা-বাবাকে নিয়ে জঙ্গলে ঘর তুলে বেঁচে থাকার সংগ্রাম তার। কারো সাতে-পাঁচে নেই । তবু হটেনটট উপজাতির অচেনা একদল লোক দুপুর বেলা এসে আগুন লাগিয়ে দিলো ঘরে, তিনজনকে ভেতরে রেখে। ঠিক সেই সময় বর্শা হাতে শিকার থেকে ফিরলো ডমরু- প্রিয়জনদের লাশ দেখে ডুক্করে কেঁদে উঠলো । তাকে ঘিরে নাচলো হটেনটটরা, হাস্য- কৌতুকে মেতে উঠলো । পরিবারের আর সবার মতো ওখানেই তাকে হত্যা করা হলো না, লুঠ করা তিন মন বোঝা মাথায় চাপিয়ে দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে চললো তাকে। নিজেদের গ্রামের কাছাকাছি এসে একটা গাছের সাথে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধল হটেনটটরা। যাওয়ার সময় ব্যঙ্গ করে বলে গেল, ‘এই রইলো তোমার বর্শা, অরণ্যদেব তোমাকে উদ্ধার করার পর আবার শিকারে বেরিয়ো।’

ঘোড়ায় চেপে সত্যি সত্যি এলো অরণ্যদেব। চোখে দেখেও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি ডমরু। তাকে দেখে কোনো প্রশ্ন করেনি ঘোড়সওয়ার। ডমরুর চোখদুটো তার ভালো লেগে গেল, সাদা অংশটুকু দুধের মতো, হলুদ বা লাল দাগ নেই কোথাও। গায়ের রঙ চকচকে আলকাতরা। তাকে মুক্ত করলো ঘোড়সওয়ার, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা হারিয়ে তখনও ফ্যাল ফ্যাল করে থাকিয়ে আছে ডমরু। চেহারাই বলে দেয় ডমরু জুলু উপজাতির লোক। জুল ভাষায় ‘ধন্যবাদ” জানাবার কোনো শব্দ নেই, যেমন নেই ‘দুঃখিত’ বলার কোন শব্দ । ঘোড়সওয়ার তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার নাম কি?”

‘ডমরু,’ বললো সে। ঘোড়সওয়ারকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে এসে ঘোড়ার লাগাম ধরলো। ‘আপনার ঘোড়া পানি খাবে,’ বলে বনভূমির ভেতর দিয়ে হাঁটা ধরলো নালার দিকে । ঘোড়সওয়ার বুঝলো, উপকারের প্রতিদান দিতে চাইছে লোকটা। শুধু পানিই খাওয়ালো না, ঘোড়ার জন্য ঘাসও কেটে আনলো সে, হাতের বর্শা দেখিয়ে বললো, ‘ বলেন তো রাতের জন্যে খাবার যোগাড় করে আনি |”

তাড়া আছে ঘোড়সওয়ারের। নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য তার নেই বটে, তবে শহর বা লোকবসতি থেকে যতোটা সম্ভব দূরে সরে যেতে হবে তাকে, নদী-মাঠ-পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে এমন কোথাও পৌছতে হবে যেখানে আইন ও সভ্যতার লম্বা হাত সহজে তার নাগাল পাবে না। শ্বাপদ সংকুল  জিম্বাবুই ও মোজাম্বিক থেকে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে দক্ষিণ আফিকায় পালিয়ে এসেছে সে, কিন্তু জানে দক্ষিণ আফ্রিকাও তার জন্যে নিরাপদ জায়গা নয়। ভমরুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ঘোড়সওয়ার জানতে চাইলো, তার আর কোনো সাহায্য লাগবে কিনা। উত্তরে নিজের বুকে আঙুল ঠেকিয়ে মাথা নাড়লো ডমরু, তারপর ঘোড়সওয়ারের দিকে আঙুল তাক করে ওপর-নিচে মাথা দোলালো, অর্থাৎ তার ধারণা ঘোড়সওয়ারের সাহায্য দরকার হবে। মৃদু হেসে মাথা নাড়লো ঘোড়সওয়ার, বিদায় জানিয়ে চড়ে বসলো নিজের ঘোড়ায় । ডমরু সম্পর্কে কোনো কৌত্হল প্রকাশ করেনি সে, জানতে চায়নি কে বা কারা তাকে গাছের সাথে বেধে রেখেছিল-__ যেচে পড়ে কিছু জানতে চাওয়া ভালো চোখে দেখে না আফ্রিকান উপজাতির লোকজন ।

বনভূমির ভেতর দিয়ে মাইলখানেক আসার পর ঘোড়সওয়ার লক্ষ্য করলো, ডমরু তার পিছু পিছু আসছে। ঘোড়া থামিয়ে তার জন্যে অপেক্ষা করলো সে, কাছে আসতে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাচ্ছো তুমি? বলো তো পৌছে দিই।‘ মাথা হেট করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো ডমরু, নিজের অসহায় অবস্থা তাকে আড়ষ্ট করে তুলেছে। তারপর বিড়বিড় করে জানালো, “আমার তো যাবার কোনো জায়গা নেই ।’

কি যেন চিত্তা করলো ঘোড়সওয়ার । ‘আমার সাথ যেত চাও? নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকালো ডমরু ৷ তাকে ঘোড়ার পিঠে তৃলে নিলা ঘোড়সওয়ার।

সেই থেকে ঘোড়সওয়ারের সাথেই আছে ডমরু। হ্টেনটটদের গ্রামগুলোকে পাশ কাটিয়ে আসতে সাহাযা করেছে সে, ঘোড়ার যত্ন নিয়েছে, রাতের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে বের করেছে। ‘হাড়ে মরচে ধুরে যাবে,’ এই অজুহাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে এক সময় নেমে পড়ে সে, তারপর আর অনেক সেধেও তাকে তৃলতে পারেনি ঘোড়সওয়ার। তবে হা্টেওলোকটা। বাতাসের বেগে, ঘোড়ার সাথে তাল মেলাতে তার কোনো অসুবিধেই হয় না। ঘোড়সওয়ারও অবশ্য তার ঘোড়াটাকে দৌড় খাটায়নি একবারও ।‌

নেংটির কৌচড় থেকে ছোট্ট একটা টিনের কৌটো বের করে দু’ আঙুলেসামান্য নস্যি নিলো ডমরু, আঙুল দুটো নাকের সামনে তুলে জোরে শ্বাস টানলো | হাঁচি দেয়ার পরও নাকের চারপাশে মাংস কুঁচকে থাকলো তার, তাকালো পাহাড়ের দিকে । বেলাশেষের রোদে চকচক করছে চূড়ার পাথর, আর খানিক পরেই ক্যাম্প ফেলতে হবে ওদেরকে ।

কিন্তু না, সঙ্গের পরও ঘোড়ার পিঠ থেকে নামলো না ঘোড়সওয়ার। ঘাসঢাকা জমিন অকন্মাৎ ভাজ খেয়ে আরো এক ধাপ উঁচু হয়েছে, কিনারা ধরে চলে গেছে রাস্তাটা, নিচের উপত্যকায় আলো দেখতে পেলো ওরা ।

বড় শহরগুলোকে অনেক পিছনে ফেলে এসেছে ঘোড়সওয়ার, নিরাপত্তার অভাববোধটা এখন আর আগের মতো বিরক্ত করছে না তাকে। তার চারদিক এখন পাঁচ-সাতশো মাইল পর্যস্ত শুধু গভীর অরণ্য, ফাঁকা মাঠ, পাহাড় ও খুদে আদিবাসীর গ্রাম। লুকিয়ে না বেড়িয়ে এবার কোথাও থামতে পারলে মন্দ হয় না। ঢাল বেয়ে আলোটার দিকে নামতে শুরু করলো সে

নেমে, আসছে ওরা, বাতাস থেকে গন্ধ পেয়ে  ঘোড়সওয়ার বুঝল আশপাশে কোথাও কয়লার খনি আছে। তারমানে আদিবাসীদের গ্রাম নয়। ছোটোখাটো একটা শহর দেখতে পাবে ওরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো শেতাঙ্গ সরকার ক্ষমতায়, সমস্ত কল- কারখানা, খনি ও ব্যবসা-বাণিজ্য বেশিরভাগই তাদের কব্জায় ছোট্ট শহরটার প্রধান রাস্তায় উঠে এসে যা আশঙ্কা করেছিল তাই দেখতে পেলো ঘোড়সওয়ার । নিগ্রোরাও  আছে বটে, তাদের চেহারা ও বেশভূষা মলিন, খনি শ্রমিকদের যেমন হয়ে থাকে। শেতাঙ্গরা হাসিখুশি, চেহারায় রগচটা ভাব, আচার-আচরণে রাজকীয় দম্ভ।

সিদ্ধান্ত পান্টালো ঘোড়সওয়ার। এখানে থামবে না সে। শহর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নির্জন কোথাও ক্যাম্প ফেলবে। কিন্তু হোটলটির কাছে এসে ইতস্তত একটা ভাব দেখা গেল তার মধ্যে। হোটেল মানে গোসল করার পানি, চার দেয়ালের ভেতর নরম বিছানা, গরম খাবারদাবার। হঠাৎ নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগলো ঘোড়সওয়ারের। কিন্তু না, হোটেলে রাত কাটাবার চিন্তাটা বাতিল কর দিলো সে। তবে, বারে একবার বসা যেতে পারে, ভাবলো সে। ডম্রু, ঘোড়া নিয়ে শহরের বাইরে চলে যাও। আগুন জ্বেলো, তা না হলে অন্ধকারে ক্যাম্পটা আমি চিনতে পারবো না।

ঘোড়া থেকে নেমে বার এ ঢুকলো ঘোড়সওয়ার . কামরাটা লোকজনের ভিড়ে উপচে পড়ছে। বেশিরভাগই মাইনার, চামড়ায় কালো ধুলো লেগে আছে। সবাই ওরা শ্বেতাঙ্গ, দেখে অবাকই হলো আগন্তুক। তবে বারম্যান কালো, মনে হলো ভারতীয়। ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না সে-_শেতাঙ্গরা এখানে কালোদের ঢুকতে দেয় না, নাকি কালোরা ভয়ে ঢোকে না? কোনো গোলমালে জড়াবার ইচ্ছে নেই তার, ভাবলো বেরিয়ে যায়। কিন্তু তাকে দেখে এরই মধ্যে সমস্ত কথাবার্তা থেমে গেছে।

মাইনারদের, এক কোণ থেকে কে যেন বিড়ালের মিউ মিউ ডাক অনুকরণ করলো । ব্যস, চারপাশ থেকে শুরু  হয়ে গেল কুকুর, বিড়াল ও ছাগলের ডাক। এখনও সময় আছে, নিজেকে সাবধান করলো আগন্তুক, অপমানটা গায়ে না মেখে বেরিয়ে যেতে পারে সে। কিন্তু না, এখন আর বেরিয়ে যাওয়া যায় না। মানুষ হিসেবে নিজের মর্যাদাকে অনেক বড় করে দেখে আগন্তক, এখন বেরিয়ে গেলে সেটা হবে পালিয়ে যাওয়া, নিজেকে অপমান করা। শান্তভাবে এগোলো সে, কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাড়ালো, বিস্মিত বারম্যানকে বললো, ‘বিয়ার।’

বারমানের কালো চেহারায় উদ্বেগ, আগন্তুককে কি যেন বলতে গিয়েও বললো না। পিছন ফিরলো সে, একটা বিয়ারের ক্যান খুলে গ্লাসে ঢাললো, কয়েক টুকরো বরফ সহযোগে পরিবেশন করলো আগন্তুককে। ফিস ফিস করে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপ কাহাসা আয়ে, সাব?” মাথা নিচু করে গ্লাসে চুমুক দিলো আগন্তুক, কথা বললো না।

কৃকুর-বিড়ালের ডাক থেমে গেছে। বার-এর ভেতর পিন-পতন নিস্তব্ধতা । শ্বেতাঙ্গ মাইনাররা ভাবতেও পারেনি তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ উপেক্ষা করবে আগস্তুক। এর আগেও দু একজন কালো ঢুকে পড়েছে বার-এ, নিজেদের ভূল বুঝতে পারার সাথে সাথে পালাতে দিশে পায়নি তারা। কিন্তু এ লোকটা কোন্‌ সাহসে কাউন্টারে এসে দাঁড়ালো?

প্রথমে এগিয়ে এলো বেটেখাটো একজন মাইনার । বেঁটে, তবে ড্রাম এর মতো গোল ও নিরেট, ওজন হবে কম করেও আড়াই মন। আগন্তুকের গলা জড়িয়ে ধরার জন্যে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিতে হলো তাকে। তার নিঃশ্বাস থেকে ভূর ভূর করে হইস্কির গন্ধ বেরুচ্ছে। নেশায় চুর হয়ে আছে লোকটা। ‘বিয়ার? ছো! ভান করবে তুমি একজন সত্যিকার পুরুষ মানুষ অথচ বিয়ার খাবে, তা কি হয়? এসো, বীরপুরুষ, আমার সাথে পাল্লা দিয়ে হুইস্কি খাও। যে জিতবে, সব খরচ তার।’

‘না, ধন্যবাদ,” নরম সুরে বললো আগন্তুক। ‘আরে ব্যাটা, আয়,” আদর করার ঢঙে আগন্তুকের কোমর জড়িয়ে ধরে টান দিলো মাতাল লোকটা । ‘তোর চোদ্দ পুরুষ কখনো এ-সুযোগ পায়নি। একজন সাদাকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিয়ে হিরো বনে যাবি। আয়, আয়!” টানাটানিতে আগন্তুকের হাতে গ্লাসটা ঝাঁকি খেলো, ছলকে পড়লো খানিকটা বিয়ার।

‘আমাকে বিরক্ত করো না।’ গা ঝাড়া দিয়ে নিজেকে মুক্ত করলো আগন্তুক।

‘আমার বিরুদ্ধে তোমার কোনো অভিযোগ আছে?’ কোমরে হাত রেখে মারমুখো হলো শ্বেতাঙ্গ মাতাল।

‘না। একা বিয়ার খেতেই ভালো লাগছে আমার।

ও বুঝেছি, আমার রঙ তোমার পছন্দ হয়নি। তুমি আমাকে ঘৃণা করো! আমার এই সাদা মুখ তোমার পছন্দ নয়! চিবুকটা আগন্তুকের মুখের সামনে তুলে ঘষে দেয়ার চেষ্টা করলো মাতাল।

নিজেকে অনেক কষ্টে শান্ত রাখলো আগন্তুক। ‘সরে যাও,” মৃদু কণ্ঠে বললো সে। ‘আমার সাথে লাগতে এসো না।”

কাউন্টারের ওপর সজোরে চাপড় মারলো মাতাল। ‘কৈরালা, লড়াকু ষাঁড়টাকে- দুই আউন্স হুইস্কি দাও। না, চার আউন্স। ব্যাটা যদি না খায়, আমি ওর গলায় জোর করে ঢেলে দেবো ।”

কৈরালার হাত কাঁপছে, তার বাড়িয়ে দেয়া গ্লাসটা নিঃশব্দে প্রত্যাখ্যান করলো আগন্তুক। নিজের গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করলো সে, কাউন্টারের ওপর টাকা রাখলো, তারপর ঘুরে পা বাড়ালো দরজার দিকে। কৈরালার হাত থেকে গ্রাসটা ছোঁ দিয়ে তুলে নিলো মাতাল গরিলা, হুইক্কিটুকু ছুঁড়ে মারলো আগন্তুকের মুখে । চোখে লাগতেই জ্বালা করে উঠলো, মাতালের পেটে প্রচণ্ড একটা ঘুসি মারলো আগন্তুক! মাতালের মাথ নিচু হচ্ছে, আবার তাকে আঘাত করলো সে, এবার মুখে। চরকির মতো এক পাক ঘুরে গেল মাতাল, তারপর ধপাস কর পড়ালো পায়ের সামনে, থেতলানো নাক থেকে রক্ত বেরুচ্ছে ।

‘ওকে তুমি মারলে কেন?” আরেকজন মাইনার মাতাল্টাকে বসাবার চেষ্টা করছে।

‘ তোমার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য, ও তোমাকে হুইস্কি খেতে সেধেছিল- মারলে কেন?” টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো বিশাল-বপু আরেকজন। ‘শালা গোলমাল পাকাতে চায়!”

‘ধর ব্যাটাকে, মেরে তক্তা বানিয়ে দে!”

‘আয় সবাই, ওর জিভ টেনে ছিড়ে আনি!

‘কালো কুত্তাটাকে দুর্বল মনে কোরো না, গায়ে জোর আছে:। কিন্তু বেজন্মাটা জানে না বলবান কুত্তাদের সিধে করার জন্যেই আছি আমরা”।

কামরার ভেতর সবাই এখন আগন্তবকের পরম শক্র! সবাইকে ওর বিরুদ্ধে জড়ো হতে দেখে অদ্ভুত একটা স্বস্তি বোধ করলো সে। মনের বিষন্ন এবং কাতর ভাবটা এক নিমেষে উধাও হয়ে গেল। ঠিক যেন এই রকম একটা কিছুরই দরকার ছিল তার।

একজোট হয়ে ছয়জন এগিয়ে আসছে ওরা । সবারই নিরেট চেহারা, পেশীবহল শরীর। একজনের হাতে একটা বোতল দেখালো আগন্তুক গলা চড়িয়ে কথা বলছে লোকগুলো, নিজেদের উৎসাহ জোগাচ্ছে, অপেক্ষা করছে সঙ্গীদের কেউ একজন শুরু করবে ভেবে।

চোখের কোণ দিয়ে একজনকে এগিয়ে আসতে দেখলো আগন্তুক। ঠিক সময়ে পিছন দিকে লাফ দিয়ে সরে এলো সে, হাত দুটো আক্রমণের……………

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top