একটু চোখ বুলিয়ে নিন
গত তিন রাতেই ঘটনাটা ঘটেছে। অতি তুচ্ছ ব্যাপার। একে “ঘটনা” বলে গুরুত্বপূর্ণ করা ঠিক না৷
তারপরেও মিসির আলি তাঁর নোটবুকে লিখলেন-_
‘বিগত তিন রজনীতেই একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হইয়াছে। রাত্রি তিনটা দশ মিনিটে আমার ঘুম
ভাঙ্গিয়াছে। ইহার কারণ অনুসন্ধান করিয়া পাইতেছি না।’
মিসির আলির নোট বইটা চামড়ায় বাঁধানো। দেখে মনে হবে প্রাচীন কোনো বই। বইয়ের মলাটে
সোনালি রঙে নাম লেখা-_
ব্যক্তিগত কথামালা
ড. মিসির আলি
পিএইচডি
নোট বইটা তিনি কারও সামনে বের করেন না। বের না করার অনেকগুলো কারণের একটি হলো
তাঁর কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই। সাইকোলজিতে নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস
ডিগ্রি পেয়েছিলেন। নামের আগে ড. কখনো লিখতে পারেননি। যদিও বিদেশ থেকে প্রচুর চিঠিপত্র
পান যেখানে তারা ভুল করে ড. মিসির আলি লেখে। ৰ
শুদ্ধ দ্রুত প্রবাহিত হয় না। ভুল হয়। নিজের দেশেও অনেকেই মনে করে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি
আছে। বিশেষ করে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা।
চামড়ায় বাঁধানো এই নোট বইটা তাঁর এক ছাত্রী দিয়েছিল। ছাত্রীটির নাম রেবেকা। নোট বইটার
সঙ্গে রেবেকার একটা দীর্ঘ চিঠিও ছিল। যে চিঠি পড়লে যে-কোনো মানুষের ধারণা হবে রেবেকা
নামের তরুণী তার বৃদ্ধ শিক্ষকের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। চিঠির একটি লাইন ছিল এ
রকম-স্যার, যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি আপনার পাশে থাকতে চাই। কে কী মনে করবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।’ চিঠি পড়ে মিসির আলি তেমন শঙ্কিত বোধ করেননি। তিনি জানেন তরুণী মেয়েদের হঠাত আসা আবেগ হঠাতৃই চলে যায়। আবেগকে বাতাস না দিলেই হলো। আবেগ বায়বীয় ব্যাপার, বাতাস পেলেই তা বাড়ে। অন্য কিছুতে বাড়ে না। রেবেকা থার্ড ইয়ারে উঠেই ইউনিভার্সিটিতে আসা বন্ধ করল। মিসির আলি স্বস্তি বোধ করলেন। মেয়েদের হঠাত ইউনিভার্সিটিতে আসা বন্ধ করা স্বাভাবিক ঘটনা। বিয়ে হয়ে গেছে, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে কিংবা বিদেশে চলে গেছে। আজকাল ছাত্রীরাও বিদেশ যাচ্ছে। ইচ্ছে করলেই রেবেকার ব্যাপারটা তিনি জানতে পারতেন। তার বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করলেই জানা যেত। মিসির আলির ইচ্ছা করেনি। মেয়েটা ভালো থাকলেই হলো। যদি কখনো দেখা হয় তাকে বলবেন-তুমি যে নোটবইটা আমাকে
লেখক সম্পর্কে
বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে প্রবাদ পুরুষ। গত ত্রিশ বছর ধরেই তাঁর তুঙ্গস্পর্শী
জনপ্রিয়তা । এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন । অধ্যাপনা
ছেড়ে হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের
‘দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল, … ছবি বানানো চলছেই।
ফাঁকে ফাঁকে টিভির জন্য নাটক বানানো। মানুষ হিসেবে তাঁকে তাঁরই সৃষ্ট চরিত্র হিমু এবং মিসির আলি মতোই রহস্যময় বলে
মনে হস্ত । তার বেশিরভাগ সময় কাটে নিজের তৈরি নন্দনকানন “নুহাশ পল্লী’তে ।