Mount Ararater Arale by Abul Asad-48

মাউন্ট আরারাতের আড়ালে – আবুল আসাদ (Mount Ararater Arale by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

আহমদ মুসা ও সাতজন কমান্ডো এক এক করে অ্যান্টেনার খোলা বেজ মুখ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল।
প্রথমেই পাথুরে সিঁড়ি।
সিঁড়ির সাত-আটটা ধাপ পেরুতেই একটা দরজার ল্যান্ডিং-এ গিয়ে তারা পৌঁছল।
দেখেই বোঝা গেল, সিঁড়িটা লিফটের আরেকটা দরজা।
দরজাটা পাথরের।
দরজা খোলার চিন্তায় আহমদ মুসা দরজা ও দরজার চারপাশের চৌকাঠের মতো প্রান্তের ‍ওপর চোখ বোলাতে লাগল।
ডান ও বাম পাশের দুই চৌকাঠে ভার্টিক্যালি লম্বা দু’টি করে বাটন দেখতে পেল আহমদ মুসা।
দু’পাশের দু’বাটনেই হিব্রু ভাষায় ওপেন ক্লোজ লেখা। কিন্তু দু’পাশের বাটনের লেখা এক রকমের নয়।
বাঁ পাশের চৌকাঠের লেখা সোজা মানে ওপেন শব্দ ডান দিক থেকে লেখা এবং ক্লোজ শব্দ বাঁ দিক থেকে লেখা, কিন্তু ডান দিকের চৌকাঠে শব্দ দু’টি বাঁ দিক থেকে লেখা।
পেছনে দাঁড়ানো কমান্ডো নেতা মুরাদ আনোয়ারের দিকে ফিরে তাকিয়ে আহমদ মুসা বলল, ‘মনে হচ্ছে মুরাদ আনোয়ার, একটা ধাঁধা না ভাঙতে পারলে আমরা দরজা খুলতে পারবো না।’
মুরাদ এগিয়ে এল।
দেখল দুই চৌকাঠের চারটি বাটনকে ও বাটনের লেখাগুলোকে।
ভাবনার ছায়া নামল মুরাদ আনোয়ারের মুখে। ভাবছিল আহমদ মুসাও।
কয়েক মুহূর্ত নিঃশব্দে কাটল।
‘কিছু ভেবে পেলে মুরাদ আনোয়ার?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘ধাঁধায় ফেলার জন্যে ‘ওপেন’ শব্দ সোজা আর উল্টো করে দু’বার লিখেছে। আমার মনে হয়, দুই ‘ওপেন’ বাটনের একটা চাপলেই আমাদের চাওয়াটা পেয়ে যাব মানে দরজা খুলে যাবে।’
‘চাপ দাও, মুরাদ আনোয়ার।’ বলল আহমদ মুসা।
মুরাদ আনোয়ার দুই ওপেন বাটনই পরপর নানাভাবে চাপল, কিন্তু পাথরের দরজা যেমন ছিল, তেমনি থাকল।
মুরাদ আনোয়ারের চোখে-মুখে হতাশা ফুটে উঠল। বলল, ‘তার মানে ধাঁধার অর্থ এটা নয়। নিশ্চয় আরও জটিল কিছু আছে।’ বলেই হঠাৎ থেমে গেল মুরাদ আনোয়ার। তার চোখে-মুখে নতুন ভাবনার আলো। বলল, ‘দু’পাশের দুই ‘ওপেন’-এ চাপ দেয়ার পর গোপন আরও একটা কমান্ড নিশ্চয় আছে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’
আহমদ মুসা ভাবছিল।
হঠাৎ তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দু’পাশের চৌকাঠের বাটন চারটির ওপর আরও একবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে বলল, ‘না, মুরাদ আনোয়ার, তার মনে হয় দরকার হবে না। খুব সহজ একটা গাণিতিক নিয়ম রয়েছে ধাঁধার পেছনে। দেখ, ‘ক্লোজ’ শব্দ দু’টিই মাইনাস পজিশনে রয়েছে। মাইনাসে মাইনাসে প্লাস। তার মানে, ক্লোজ শব্দের বাটন দু’টি একসাথে চাপলেই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। আর দেখ, ‘ওপেন’ বাটন দু’টির একটি প্লাস, অন্যটি মাইনাস পজিশনে। প্লাসে-মাইনাসে মাইনাস। অতএব, ‘ওপেন’ বাটন দু’টি একসাথে চাপলেই আমি মনে করি দরজা খুলে যাবে। চেষ্টা কর মুরাদ আনোয়ার।’
বলে আহমদ মুসা রিভলভার ধরা ডান হাতটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে পেছনে দাঁড়ানো কমান্ডোদের দিকে একবার তাকাল।
বাটন দু’টি পুশ করতে এগিয়ে গেছে মুরাদ আনোয়ার।
লম্বা একটা ‘হিস’ শব্দ শুনে ঘুরে দাঁড়াতেই সামনের দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল সে। দেখল, দরজাটা হাওয়া। ওপার থেকে অর্ধডজন স্টেনগান হাঁ করে আছে তাদের দিকে। সবচেয়ে সংগীন অবস্থা মুরাদ আনোয়ারের। তার বুকে রিভলভার চেপে ধরে আছে একজন।
আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াতেই সে চিৎকার করে উঠল, ‘সবাই হাত ওপরে তোল। না হলে সবাই একসাথে লাশ হয়ে…।’
মুরাদ আনোয়ার আহমদ মুসার বাম দিকে চল্লিশ ডিগ্রী কোণে দাঁড়িয়েছিল। ফলে মুরাদ আনোয়ারের বুকে যে রিভলভার তাক করেছিল, তার বাম পাশ গোটাই আহমদ মুসার সামনে অবারিত।
লোকটি যখন হাত ওপরে তোলার নির্দেশ দিচ্ছিল, তখন পকেটের ভেতরে থাকা আহমদ মুসার রিভলভার উঠে এসেছিল লোকটির মাথা লক্ষ্যে।
কথা শেষ হবার আগেই আহমদ মুসার রিভলভারের গুলি লোকটির বাম কানের পাশ দিয়ে ঢুকে গেল তার মাথায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top