Onish by Humayun Ahmed

অনীশ – হুমায়ুন আহমেদ (Onish By Humayun Ahmed)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

অনীশ
হাসপাতালের কেবিন ধরাধরি ছাড়া পাওয়া যায় না, এই প্রচলিত ধারণা সম্ভবত
পুরোপুরি সত্যি নয়৷ মিসির আলি পেয়েছেন, ধরাধরি ছাড়াই পেয়েছেন। অবশ্যি
জেনারেল ওয়ার্ডে থাকার সময় একজন ডাক্তারকে বিনীতভাবে বলেছিলেন, “ভাই
একটু দেখবেন একটা কেবিন পেলে বড় ভালো হয়।’ এই সামান্য কথাতেই কাজ
হবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আজকাল কথাতে কিছু হয় না। যে-ডাক্তারকে অনুরোধ
করা হয়েছিল, তিনি বুড়ো। মুখের তঙ্গি দেখে মনে হয় সম্ধথ মানবজাতির ওপরই
তিনি বিরক্ত! কোনো তয়ংকর দুর্ঘটনায় মানবজাতি শিঃশেষ হয়ে আবার যদি
ঘ্রককোবী গ্যামিবা থেকে জীবনের শুরু করে তাহলে তিনি খানিকটা আরাম পান।
তীঁকে দেখে মনে হয় নি তিনি মিসির আলির অনুরৌধ মনে রাখবেন। কিন্তু ভদ্রলোক
মনে রেখেছেল। কেবিন জোগাড় হয়েছে পাঁচতলায়। রুম নাহার চার শ’ নয়।
সব জায়গায় বাংলা প্রচলন হলেও হাসপাতালের সাইনবোৌর্ডগ্লি এখনো বদলায়
নি। ওয়ার্ড, কেবিন, পেডিয়াটিকস_ এ-সব ইংরেজিতেই লেখা। শুধু রোমান হরফের
জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে বাংলা হরফ! হয়তো এগুলির সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ
পাওয়া যায় নি। কেবিনের বাংলা কী হবে? কুটিরঃ জেনারেল ওয়ার্ডের বাংলা কি
“সাধারণ কক্ষ”?
যতটা উৎসাহ নিয়ে মিসির আলি চার শ’ শ’ নস্বর কেবিনে এলেন ততটা উৎসাহ
থাকল না। ঘন্টাখানেকের মধ্যে তিশি আবিফার করলেন--বাথরুমের ট্যাপ বন্ধ হয় না। ফত কষেই প্টাচ আটকানো যাক, ক্ষীণ জলধারা ঝরনার মতো পড়তেই থাকে। কমোডের ফ্ল্যাশও কাজ করে না। ফ্ল্যাশ টানলে ঘডঘড় শব্দ হয় এবং কমোডের পানিতে সামান্য আলোড়ন দেখা যায়। এই পর্যন্তই। তার চেয়েও ভয়াবহ আবিষ্কারটা করলেন রাতে ঘুমোতে যাবার সধয়। দেখলেন বেডের পাশে সাদা দেয়ালে সবুজ রঙের মার্কার দিয়ে লেখা
“এই ঘরে থে থাকবে
সে মারা যাবে।
ইহা সত্য। মিথ্যা ন্য়। |”

লেখক সম্পর্কে

বাংলাদেশের লেখালেখির ভুবনে প্রবাদ পুরুষ। গত ত্রিশ বছর ধরেই তাঁর তুঙ্গস্পর্শী
জনপ্রিয়তা । এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ছিলেন । অধ্যাপনা
ছেড়ে হঠাৎ করেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের
‘দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, আমার আছে জল, … ছবি বানানো চলছেই।
ফাঁকে ফাঁকে টিভির জন্য নাটক বানানো। মানুষ হিসেবে তাঁকে তাঁরই সৃষ্ট চরিত্র হিমু এবং মিসির আলি মতোই রহস্যময় বলে
মনে হস্ত । তার বেশিরভাগ সময় কাটে নিজের তৈরি নন্দনকানন “নুহাশ পল্লী’তে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top