Romeli Durge by Abul Asad-46

রোমেলি দুর্গে – আবুল আসাদ (Romeli Durge by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

‘স্যরি ম্যাডাম। আপনাকে মুখ খুলতেই হবে, আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে। দরকার হলে আপনাকে আমরা থানায় নেব। আপনার পেছনে যে মহিলারা দাড়িয়ে আছেন, তারা পোশাকে সিভিলিয়ান বটে, কিন্তু তারা দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসার। বাড়িটাও চারিদিক থেকে পুলিশে ঘেরা।’ বলল আহমদ মুসা।
আয়েশা আজীমা মাথা নিচু করে বসেছিল। তার মুখে কিন্তু ভয়ের চিহ্নমাত্র নেই। আহমদ মুসা শান্ত কণ্ঠের কঠোর কথাগুলো আয়েশা আজীমার চেহারায় সামান্য চাঞ্চল্যেরও সৃষ্টি করল না।
আহমদ মুসার ডান পাশের সোফায় বসেছিল তাহির তারিক, বাম পাশের আরেক সোফায় বসেছিল জেনারেল হাজী মোস্তফা কামাল।
আয়েশা আজীমা বসে ছিল সামনে একটু দূরের একটা সোফায়। মাঝখানে লাল কার্পেটে মোড়া বর্গাকৃতির ছোট্ট একটা চত্বর। তাতে শুধু একটা ‘টী’ টেবিল।
তার পরনে পাজামা ও ফুলহাতা কামিজ। কামিজের উপর একটা কুকিং অ্যাপ্রন।
আয়েশা আজীমা রান্নাঘরে ছিল। সেখানে সে যেভাবে ছিল মহিলা পুলিশ অফিসারেরা তাকে সেভাবেই ধরে নিয়ে এসেছে।
তার মাথায় একটা রুমাল বাঁধা।
বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিছাত্রী ও সেরা সুন্দরী ছিল আয়েশা আজীমা। সৌদি ছাত্র শেখ বাজের মেধা ও বিত্তই সম্ভবত শেখ আয়েশা আজীমাকে আকৃষ্ট করে। আকর্ষণ শেষে প্রেম ও বিবাহে পরিণতি লাভ করে।
আয়েশা আজীমা আহমদ মুসার কথার কোন জবাব না দেয়াতে আহমদ মুসা জেনারেল তারিক ও জেনারেল হাজী মোস্তফা কামালের দিকে একবার তাকাল। তারপর মুখ ঘুরিয়ে আয়েশা আজীমাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘দেখুন, চুপ থেকে লাভ নেই। ড. শেখ বাজ হাতে-নাতে ধরা পড়েছেন। তার কাছ থেকে কোটপিনের আকারে এই শক্তিশালী ট্রান্সমিটার পাওয়া গেছে। তিনি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছেন, তার কোটপিনে যে ট্রান্সমিটার তা তিনি জানেন না। কিন্তু আইন তার এ কথা মানবে না। ধরা পড়ার পর সব অপরাধীই এমন কথা বলে। এখন আমরা জানতে চাই আপনার এ ব্যাপারে বক্তব্য কি? কারণ তিনি বলেছেন, কোটপিন আপনার সংগ্রহ করা।’
থামল আহমদ মুসা।
আয়েশা আজীমা একবার মুখ তুলে আহমদ মুসার দিকে চাইল। কোন কথা নেই তার মুখে। তবে প্রথমবারের মত তার চোখে-মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠতে দেখা গেল।
আহমদ মুসা মুখ একটু নিচু করে ভাবল। তার ঠোঁটে ফুটে উঠল এক সূক্ষ্ণ হাসি। বলল সে, ‘তাহলে বুঝা গেল মিসেস বাজ, আপনি কিছুই জানেন না। ড. শেখ বাজই মিথ্যা কথা বলেছেন। সত্য তাহলে তার কাছেই পাওয়া যাবে। তার কাছ থেকেই সত্য এবার বের করতে হবে। সত্য বের করার কৌশল পুলিশের জানা আছে। বাবা ডেকে সব সত্য কথা বলে দেবেন তিনি। আমরা উঠছি। যতদিন না বিষয়টির সুরাহা হয় ততদিন আপনি পুলিশের কাস্টডিতে…।’
কথা শেষ করতে পারল না আহমদ মুসা। চিৎকার করা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল আয়েশা আজীমা, ‘না, আমি সব বলব। ওর কোন দোষ নেই। ওঁর মত ভাল মানুষ কোন অপরাধ করতে পারেন না। তার কোন ক্ষতি করবেন না, তাকে আপনারা ছেড়ে দিন।’
কথাগুলো বলে থামল আয়েশা আজীমা। দু’হাতে মুখ ঢেকে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।
‘ওঁর কোন দোষ নেই দোষটা তাহলে কার, এটাই তো আমরা জানতে চাচ্ছি। সব বলুন আপনি আমাদের।’ বলল আহমদ মুসা।
আয়েশা আজীমা হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বলল, ‘আমি একটা স্টেটমেন্ট করব, আপনি লিখুন।’
আহমদ মুসা তাকাল তুরস্কের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান জেনারেল হাজী মোস্তফা কামালের দিকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top