একটু চোখ বুলিয়ে নিন
সহ্যাদ্রি হোটেল
মহাবলেশ্বর-_পুণা
৩রা জানুআরি
ভাই অজিত,
বোম্বাই এসে অবধি তোমাদের চিঠি দিতে পারিনি । আমার পক্ষে চিঠি লেখা কি রকম কষ্টকর
কাজ তা তোমরা জানো । বাঙালীর ছেলে চিঠি লিখতে শেখে বিয়ের পর । কিন্তু
আমি বিয়ের পর দুদিনের জন্যেও বৌ ছেড়ে রইলাম না, চিঠি লিখতে শিখব কোথেকে ? তুমি
সাহিত্যিক মানুষ, বিয়ে না করেও লম্বা চিঠি লিখতে পার । কিন্তু তোমার কল্পনাশক্তি আমি
কোথায় পাব ভাই । কাঠখোট্রা মানুষ, শ্রেফ সত্য নিয়ে কারবার করি ।
তবু আজ তোমাকে এই লম্বা চিঠি লিখতে বসেছি । কেন লিখতে বসেছি তা চিঠি শেষ
পর্যন্ত পড়লে বুঝতে পারবে । মহাবলেম্বর নামক শৈলপুরীর সহ্যাদ্রি হোটেলে রান্রি দশটায়
মোমবাতি জ্বেলে এই চিঠি লিখছি। বাইরে শীতজর্জর অন্ধকার ; আমি ঘরের
জানালা বন্ধ করে লিখছি, তবু শীত আর অন্ধকারকে ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না ।
বাতির শিখাটি থেকে থেকে নড়ে উঠছে; দেয়ালের গায়ে নিঃশব্দ ছায়া পা টিপে টিপে
আনাগোনা করছে। ভৌতিক পরিবেশ । আমি অতিপ্রাকৃতকে সারা জীবন দূরে সরিয়ে
রাখতে ছেয়েছি- কিন্তু অনেক দিন আগে একবার মুঙ্গেরে গিয়ে বরদাবাবু নামক একটি ভূতজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়
হয়েছিল মনে আছে? আমি তাঁকে বলেছিলাম- ভূত প্রেত থাকে থাক, আমি তাদের
হিসাবের বাইরে রাখতে চাই । এখানে এসে কিন্তু মুশকিলে পড়ে গেছি, ওদের আর হিসেবের বাইরে
রাখা যাচ্ছে না।
কিন্তু থাক | গল্প বলার আর্ট জানা নেই বলেই বোধ হয় পরের কথা আগে বলে
ফেললাম । এবার গোড়া থেকে শুরু করি-_
কাজে বোম্বাই এসেছিলাম সে কাজটা শেষ করতে দিন চারেক লাগল | ভেবেছিলাম
কাজ সেরেই ফিরব, কিন্তু ফেরা হল না। কর্মসূত্রে একজ্ন উচ্চ পুলিস কর্মচারীর সঙ্গে
পরিচয় হয়েছে, মারাঠী ভদ্রলোক, নাম বিষু। বিনায়ক আপ্টে। তিনি বললেন, “বম্বে
এসেছেন, পৃণা না দেখেই ফিরে যাবেন?
প্রশ্ন করলাম, ‘পৃণায় দেখবার কী আছে?
চিনি বললেন, ‘পুনা শিবাজী মহারাজের পীঠস্থান, সেখানে দেখবার জিনিসের অভাব ?
সিংহগড়, শনিবার দুর্গ, ভবানী মন্দির_’
লেখক সম্পর্কে
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তাঁর জন্ম উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর শহরে নিজ মাতুলালয়ে। আদিনিবাস পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যস্থিত উত্তর কোলকাতার বরানগর কুঠিঘাট অঞ্চল৷ তাঁর রচিত প্রথম সাহিত্য প্রকাশিত হয় তার ২০ বছর বয়সে, যখন তিনি কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে আইন নিয়ে পড়াশুনো করছিলেন।