একটু চোখ বুলিয়ে নিন
রাগী সূর্য তার সমস্ত রাগ ঢেলে দিচ্ছে মরুর খটখটে বালিয়াড়িতে। চার দিক
জুড়ে নৃত্য করছে ঝলসানো তাপের অদৃশ্য শিখাগুলো। এর মধ্য দিয়েই তাপদগ্ধ
হয়ে ছুটে চলছে এক মুসাফির গনব্য তার মদীনা। এ বিজন মরুতে সে
একলা । সঙ্গী বলতে একমাত্র তার ঘোড়াটিই। অথচ মরুতে কোন মুসাফির একা
একা পথ চলার দুঃসাহস দেখায় না। কারণ প্রতি পদেই এখানে লুটেরা আর মরু
দস্যুর ভয়। লোকেরা এজন্য কাফেলার সহ্যাত্রী হয়ে সফর করতে স্বাচ্ছন্দবোধ
করে । কাফেলার সঙ্গে সফর করলে শুধু লোক-সঙ্গ ও নিরাপত্তার অভাবই দূর হয়
না, নানান বিপদাপদে রোগ শোকে সম্মিলিত সাহায্যও পাওয়া যায়।
তবুও একা একাই চলছে এ মুসাফির । না, তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না
সে পথহারা কোন পাক । পথহারা পথিকের চেহারায় যে বিমর্ষতা থাকে, শংকার
যে কালো আঁচড় থাকে তার মধ্যে সেটা একেবারেই অনুপস্থিত । অবশ্য সফরের
ক্লান্তি তার মধ্যে স্পষ্ট । কিন্তু পথচলায় “কুছ পরওয়া নেহি ধরনের দূরস্ত
অভিব্যক্তি ৷ গুণগুণ করে কখনো মরুচারীদের কোন গানের কলি আওড়াচ্ছে সে,
কখনো ঘোড়ার সাথে বিড় বিড় করে কথা বলছে । এভাবে হেসে খেলেই সে এই
কঠিন সফরকে সহজ করে নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে সে পথে দু’বার তাবু ফেলেছে । ঘোড়াটিকে সে ক্লান্ত হতে দেয়নি ।
তার সাথের পাথেয়, তার পোশাক আশাক দেখে মনে হচ্ছিলো না যে, সে
জীবিকার সন্ধানে ক্রিষ্ট হয়ে ফিরছে, না সে কোন বেদুইন পল্লীর লোক, না দরিদ্র
কোন পরিবারের অসহায় কেউ । চেহারায় আভিজাত্যের দারুণ দ্যুতি ও
ব্যক্তিত্বের প্রথরতা দেখে বুঝা যাচ্ছিলো সে তার গোত্রের সরদার গোছের কেউ হবে ।
তার সফরের আরেকটি সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ছিলো। সে তখন মাটি ও
বালির উচু নিচু অসমতল টিলা টক্করের ভোলভালার ভেতর দিয়ে পথ চলছিলো ।
সে হয়তো জানতো সামনেই ছোট একটি মরুদ্যান রয়েছে। তাই সে তার
ঘোড়ার লাগামও টিল করে।
_ অরুদ্যানে গিয়ে সে তার ঘোড়াটি থামাতে চাইলো । কিন্তু ঘোড়া তার
মুনীবের ইংগিত উপেক্ষা করে ছুটতে ছুটতে উদ্যানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ক্ষীণ