একটু চোখ বুলিয়ে নিন
মুযাম্মিল আফেন্দী দেখলো, বিশাল একটি মেঠো জমি । চারদিক থেকে বিবর্ণ
পাথুরি আকাশসমান উচু প্রাচীরে ঘেরা । শিকল পায়ে কয়দীরা নানান ধরনের কাজ
করে যাচ্ছে। দৈত্যকায় কয়েকটি হাবশী কাফী লোহার ডাণ্ডা নিয়ে সেখানে ঘুরে
বেড়াচ্ছে। কাউকে একটু আনমনা দেখলেই কয়েক ঘা বসিয়ে দিচ্ছে তার পিঠে । পর
মুহূর্তেই বুক চেড়া আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসছে সেই কয়দীর মুখ থেকে । কয়দীদের
পরনে শুধু ছিড়া ফাটা নোংরা পাজামা । শরীরের ওপরের অংশ সম্পূর্ণ নগ্ন। দূর
থেকেও ওদের পাঁজড়ের হাড়গুলো গোনা যাচ্ছিলো । ওদের একমাত্র কাজ হলো
জানোয়ারের মতো বেগার খাটা আর গরুর মতো মার খাওয়া । মুযাম্মিলের কাছেই
একটি কয়দী ছিলো । কয়দীটি ঘুরতেই সে আতকে উঠলো, তার পিঠ জুড়ে কে যেন
কাচি দিয়ে আচড়িয়েছে। সারা পিঠে দগদগে ঘা ।
মুযাম্মিল ভেতরে ভেতরে চরম এক ধাক্কা খেলো । হাসান ইবনে সবাকে হত্যা
করে যদি বন্দী হতো কোন আফসোস ছিল না তার। হত্যা তো দূরের কথা তার
সামনেও যেতে পারলো না সে। মুযাম্মিল এই ভেবে আরো কষ্ট পেলো, আহা! যে
ইবনে আবিদ তাকে নিয়ে এসেছে আলমোত, এদের হাতে আরো আগেই ধরা
পড়েছে। কিন্তু ইবনে আবিদ যে এখন হাসান ইবনে সবার সঙ্গে খোশ আলাপে মেতে
উঠেছে তা তো মুযাম্মিলের জানার কথা নয়।
মুযাম্মিলের সামনে আরেকটি বিশাল দালান পড়লো । এটিও কালচে পাথরে
নির্মিত। সেই দালানের উচু একটি দরজার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো । দরজায় তালা
ঝুলছে। চাবিওয়ালা প্রহরী এসে দরজা খুলতেই মুযাম্মিলকে ধান্কাতে ধাক্কাতে ভেতরে
নিয়ে যাওয়া হলো।
সামনে একটি সিঁড়ি পড়লো । ভূগর্ভের দিকে চলে গেছে সিঁড়িটি | মুযাম্মিলকে
নিয়ে সিড়ি ভাঙ্গতে লাগলো ওরা । একজন সামনে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সিড়ি শেষ
হলো একটি দেয়ালের গায়ে । সামনের লোকটি বায়ে ঘুরলো। একটু যাওয়ার পর
আরো পাঁচ ছয়টি সিঁড়ি বেয়ে নামলো ওরা । সুড়ঙ্গের মতো গলি পথ ধরে চলতে
লাগলো । মুযাম্মিলের মনে হলো ওরা তাকে পাতালে নিয়ে গিয়েও রেহাই দেবে না।
কতবার যে ডানে বামে তাকে ঘ্ুরানো হলো সে হিসাব ভুলে গেছে অনেক আগেই সে।
অবশেষে তাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে রয়েছে দু’দিক থেকে কামরার
সারি। প্রতিটি কামরার সামনে ভেতরে এবং গলিমুখে মশাল জ্লছে। মুযাম্মিলকে
একটি অন্ধকার কামরার সামনে নিয়ে যাওয়া হলো । ভেতরে মশাল জ্বলছে ঠিক। কিন্তু
মশালের আলো চারদিক আরো ভূতুড়ে করে তুলেছে। মুযাম্মিলের মাথা চক্কর দিয়ে
উঠলো। দম আটকে আসতে লাগলো । মনে হলো কাছেই কোন লাশের নাড়ি-ভুড়ি