পোকা - হুমায়ূন আহমেদ (Poka by Humayun Ahmed)

পোকা – হুমায়ূন আহমেদ (Poka by Humayun Ahmed)

বই রিভিউ: “পোকা” – হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার প্রতিটি রচনা মানবিক অনুভূতি, সম্পর্কের জটিলতা এবং সমাজের নানা দিক নিয়ে এক নতুন আলোর সৃষ্টি করে। “পোকা” বইটি তার লেখা আরেকটি চমৎকার রচনা, যা মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, জীবনের সংকট এবং মানবিক চেতনার গভীরতা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করে। এই বইটি, হুমায়ূন আহমেদের অন্যসব রচনার মতো, মানুষের অস্তিত্বের সংকট এবং তার মানসিক ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

উপন্যাসের কাহিনি:

“পোকা” একটি অস্বাভাবিক উপন্যাস যা পাঠকদের একটি বিশেষ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রবাহিত করে। বইটির কাহিনি একটি মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে, যিনি এক অদ্ভুতভাবে একটি পোকাকে নিজের জীবনের প্রতীক হিসেবে দেখেন। পোকা কেবল একটি জীবন্ত প্রাণী নয়, বরং এটি সেই ব্যক্তির জীবনের অন্ধকার দিকের প্রতিফলন।

গল্পের মূল চরিত্র একটি মধ্যবয়স্ক পুরুষ, যার জীবনের নানা সমস্যা তাকে এক পোকা বা ছোট প্রাণীর সঙ্গে সাদৃশ্যতা অনুভব করতে বাধ্য করে। লেখক এখানে মানুষের ক্ষুদ্রতা, একাকীত্ব এবং ব্যক্তিগত সংকটের মাঝে আক্ষরিক এবং রূপকভাবে “পোকা” কে ব্যবহার করেছেন, যা আসলে আমাদের জীবনের প্রতিফলন। এই উপন্যাসে, হুমায়ূন আহমেদ পোকা এবং মানুষের সম্পর্কের মাধ্যমে সম্পর্ক, অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং একাকীত্বের গভীরতা উন্মোচন করেছেন।

গল্পের মাধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন যে, মাঝে মাঝে আমাদের নিজস্ব অজানা দিকগুলোর প্রতি আমাদের আকর্ষণ তৈরি হয়, যেমন পোকা যা আমাদের দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র কিন্তু সত্যিকারভাবে অনেক বড় আকার ধারণ করে। এটি শুধুমাত্র একে অপরকে সহ্য করার বা সহানুভূতির গল্প নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা যেখানে মানবজীবনের অস্পষ্টতা এবং সংকটগুলোর মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতা ফুটে ওঠে।

ভাষা ও শৈলী:

হুমায়ূন আহমেদের ভাষাশৈলী সাধারণত সহজ, প্রাঞ্জল এবং গভীর ভাবনার। “পোকা” বইটিতেও তার লেখার স্বাভাবিক গুণাবলী ফুটে উঠেছে। তিনি গল্পটিকে খুবই সাবলীল ভাষায় লিখেছেন, যা পাঠককে খুব সহজেই গল্পের সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে। তবে, এই বইটির মধ্যে একটি ধীর গতির রচনা রয়েছে যা পাঠককে চরিত্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে সময় দেয়, তাদের মানসিক অবস্থার সঙ্গে একাত্ম হতে সহায়ক হয়।

লেখক তার সৃষ্ট চরিত্রের মনস্তত্ত্ব এবং জীবনের সংকটগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, যা পাঠককে সহজভাবে কিন্তু গভীরভাবে ভাবায়। “পোকা” এর মধ্যে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের পরিচিত হাস্যরস এবং জীবনবোধ, যা একেবারে সূক্ষ্মভাবে পাঠকের অনুভূতিতে প্রবাহিত হয়। বইটির মধ্যে প্রায় প্রতিটি বাক্য পাঠককে কিছু ভাবতে বাধ্য করে এবং মানব জীবনের এক রহস্যময় দিক উন্মোচন করে।

পাঠককে কী দেয় “পোকা”:

“পোকা” শুধু একটি গল্প নয়, এটি জীবনের প্রতি এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি। এটি আমাদের জানায় যে, আমরা যখন নিজেদের জীবনের সংকট নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমাদের কখনও কখনও একেবারে ক্ষুদ্র, অবহেলিত বা একাকী দিকগুলো দেখতে হয়। পোকা, যা আমাদের চোখে ক্ষুদ্র মনে হয়, তা বাস্তবে আমাদের জীবনের একটি বড় অংশ হতে পারে।

এই বইটি পাঠকদের শেখায় যে, আমাদের নিজেদের জীবন এবং সম্পর্কের মধ্যে এক ধরণের অন্ধকার দিক রয়েছে, যা বুঝতে আমরা অনেক সময় ব্যর্থ হই। পোকা প্রতীক হিসেবে আমাদের সেই অদৃশ্য, অনুধাবন না করা দিকগুলোর দিকে নজর দেয় এবং আমাদের নিজেদের সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

এছাড়া, এটি আমাদের শেখায় যে, মানুষের মনস্তত্ত্বে এক অদ্ভুত জটিলতা রয়েছে যা একে অপরকে বুঝতে কিংবা সম্পর্কের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে কখনোই সহজ নয়।

উপসংহার:

“পোকা” একটি অত্যন্ত চিন্তাশীল এবং দার্শনিক উপন্যাস যা পাঠককে জীবনের অন্ধকার, সম্পর্কের জটিলতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এটি হুমায়ূন আহমেদের এমন একটি রচনা, যা একদিকে সাদাসিধে গল্প, আরেকদিকে গভীর জীবনবোধের আলোকে পাঠককে আবেগময় ও মানসিকভাবে প্রভাবিত করে। এটি পাঠকদের জীবনের দৃষ্টিকোণ বদলানোর একটি মাধ্যম এবং মানব জীবন ও সম্পর্কের খোলামেলা পর্যালোচনা। “পোকা” হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্য সৃষ্টি, যা বাংলা সাহিত্যে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top