বহুব্রীহি - হুমায়ূন আহমেদ (Bohubrihi by Humayun Ahmed)

বহুব্রীহি – হুমায়ূন আহমেদ (Bohubrihi by Humayun Ahmed)

বই রিভিউ: “বহুব্রীহি” – হুমায়ূন আহমেদ

বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদ তার অসংখ্য রচনায় মানবিক অনুভূতি, সম্পর্ক, এবং জীবনবোধকে নতুনভাবে চিত্রিত করেছেন। “বহুব্রীহি” তার একটি অন্যতম শক্তিশালী এবং পাঠকপ্রিয় রচনা, যা সামাজিক, মানসিক এবং দার্শনিক দিকগুলোর গভীরে প্রবাহিত হয়ে পাঠককে এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বইটি পাঠকদের জীবনের নানা দিক নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে এবং এটি মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের জটিলতা, এবং আত্মবিশ্বাসের গুরুত্ব নিয়ে গভীর আলোচনা করেছে।

উপন্যাসের কাহিনি:

“বহুব্রীহি” বইটির কাহিনি প্রধানত এক যুবক, রাজিব, এবং তার জীবনের নানা প্রতিকূলতা নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। রাজিব একজন সাধারণ যুবক, যার জীবনে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। সে জীবনে একটি অস্থিরতা অনুভব করে এবং এই অস্থিরতার মধ্যে তার সম্পর্ক, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ, এবং সমাজের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে থাকে। তবে, তার জীবনে এক বিশেষ মানুষ, ফাহিমা, আসার পর তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনযাত্রা এক নতুন মোড় নিয়ে এগিয়ে যায়।

গল্পের মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কের মাধুর্য ও সংকট, মানুষের আত্মবিশ্বাস, এবং সামাজিক দ্বন্দ্বগুলোর চিত্র তুলে ধরেছেন। রাজিবের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং তার মানসিক অবস্থার মধ্যে এক গভীর জটিলতা বিদ্যমান, যা পাঠককে জীবনের গভীরতা এবং মানুষের প্রকৃত অনুভূতির প্রতি নতুনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে।

এছাড়াও, “বহুব্রীহি” সামাজিক সত্য, চেতনা এবং সম্পর্কের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি গভীর প্রশ্ন তুলে ধরে। এটি পাঠকদের সেই বাস্তবতার দিকে মনোযোগী করে তোলে, যেখানে তাদের নিজেদের এবং আশপাশের সম্পর্কের গুরুত্ব ও মূল্য নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

ভাষা ও শৈলী:

হুমায়ূন আহমেদ তার লেখায় যে প্রাঞ্জল এবং হৃদয়গ্রাহী ভাষা ব্যবহার করেন, তা “বহুব্রীহি” তেও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তার গল্প বলার শৈলী অত্যন্ত সোজা এবং পাঠককে গল্পের মধ্যে আকর্ষিত করে। তিনি জীবনের জটিলতাগুলোর মধ্যেও এক ধরনের সহজ ভাষা ব্যবহার করে, যা পাঠকদের সাথে একাত্ম হতে সহায়ক হয়।

লেখক তার চরিত্রগুলোর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক গতি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা পাঠককে তাদের জীবন, সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতি গভীরভাবে ভাবতে প্ররোচিত করে। বইটির ভাষা এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যাতে পাঠক চরিত্রগুলোর অনুভূতির সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং তাদের সংগ্রাম অনুভব করতে পারে।

পাঠককে কী দেয় “বহুব্রীহি”:

“বহুব্রীহি” কেবল একটি সম্পর্কের গল্প নয়, বরং এটি জীবনের বৃহত্তর সত্য এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বইটি পাঠকদের শেখায় যে, জীবনের সংকট এবং সম্পর্কের মধ্যে যা কিছু জটিলতা রয়েছে, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের মনোযোগ এবং সাহস থাকা উচিত। রাজিবের সংগ্রামের মাধ্যমে পাঠক তার নিজের জীবনযাত্রা এবং সম্পর্কের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পারে।

এছাড়াও, বইটি মানব মনস্তত্ত্বের গভীরতা এবং সম্পর্কের মাঝের আস্থা এবং বিশ্বাসের গুরুত্ব সম্পর্কে পাঠককে ধারণা দেয়। এটি তাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করে, যেন তারা তাদের জীবনের সমস্যা ও দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করতে পারে।

উপসংহার:

সার্বিকভাবে, “বহুব্রীহি” একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং চিন্তাশীল উপন্যাস। এটি কেবল এক কাহিনি নয়, বরং এটি জীবন, সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি এক গভীর দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। হুমায়ূন আহমেদ তার লেখার মাধ্যমে পাঠকদের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধ প্রদান করেছেন, যা তাদের জীবনে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রেরণা যোগাবে।

এটি একটি চিন্তাশীল ও হৃদয়গ্রাহী বই যা জীবন, সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাসের গভীরতা অনুভব করতে সহায়ক। “বহুব্রীহি” হুমায়ূন আহমেদের একটি অমূল্য সৃষ্টি, যা বাংলা সাহিত্যের এক চিরকালীন অংশ হয়ে থাকবে।

আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–

এবং

বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top