আমিই রানা – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Ami e Rana – Masud Rana By Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

মাসুদ রানা ।

একা শুয়ে বিছানায় । চিৎ হয়ে। ঘুমোচ্ছে।

অদ্ভুত এক আত্তরক্ষার ভঙ্গিতে মুঠো পাকানো ডান হাতটা পড় আছে
কপালের উপর. কার উপব্র যেন খেপে আছে ও, নিজের অজ্ঞাতেই ৷ ঘুমের মধোই
দুম করে একটা ঘুসি মেরে বসবে যেন। বুকটা উঠছে, নামছে। শ্বাস-প্রশ্বাস
স্বাভাবিক, গভীর এবং নিয়মিত । .

পৈনন্দিন সাময়িক মৃত্যুর গভীর তলদেশ থেকে উঠে আসছে রানা, ঘুম ভাঙছে
ওর। আরও দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে। পাতা দিয়ে মোড়া চোখের ভিতর মণি দুটো একটু
একটু নড়ছে। লম্বা একটা নিশ্বাস বেরিয়ে এল। হাতুটা নেমে গেল কপাল থেকে ।
পাশ ফিরে শুলো। কয়েক ইঞ্চি নেমে এল মাথাটা বালিশ থেকে! কয়েক মুহূর্ত স্থির
হয়ে শুয়ে থাকল ও। আবার নড়ছে মণি দুটো। একটু কুঁচকে উঠল পাতা দুটো,
একটু কাপল, তারপর টান টান হয়ে উঠল । ভাজ হয়ে উঠে গেল উপর দিকে।

চোখ মেলল রানা । বিছানার সামনে শূন্য সাদা দেয়াল দেখতে পাচ্ছে। দীর্ঘ
একটা শ্বাস টেনে বাতাসে ভরে নিল ফুসফুস । হাত দুটো উপরে তুলে আড়মোড়া
ভাঙল। হাই উঠছে বুঝতে পেরে ডান হাতটা নামিয়ে এনে মুখের সামনে রাখল।
টান টান করল পা দু’টো। বালিশের উপর নেড়েচেড়ে ঠিক জায়গামত বসাল
মাথাটাকে । বা-হাত মুখের সামনে এনে হাই তুলল আরেকটা । তারপর অলস
ভঙ্গিতে চোখের সামনে নিয়ে এল হাতটাকে। রিস্ট ওয়াচ দেখছে।

ঘড়ির তিন্টে কাটা একই জায়চায় দাড়িয়ে। ঠিক বারোটা বাজে।

কুঁচকে উঠল ভুরু দুটো । হাত ঝাকিয়ে নাড়া দিল ঘড়িটাকে, কানের সাথে
ঠেকিয়ে ধরল।

টিক্‌ টিক চলছে ঘড়ি। চোখের সামনে নিয়ে এল সেটাকে. দেখতে পাচ্ছে
সেকেন্ডের কাটাটা তার বৃত্ত ধরে ঘুরতে শুরু করেছে আবার।

হঠাৎ কি যে হলোব পড় করে বিছানার উপর উঠে’বদল রাঃ | অড়িটার
দিকে চোখ। মাঝরাত, নাকি দিন দুপুর–এসব নিয়ে কিছু ভাবছে না খন। হঠাৎ
ধরতে পেরেছে ব্যাপারটা, ঘড়িটা ওর-নয়। সাধারণত একটা অটোমেটিক ওমেগা
পরে ও। এটা ওমেগা নয়, সোনালী রঙের পাটেক ফিলিপ। ওমেগার সাথে ছিল
কেবল ধাতব ব্যাটার রয়েছে সাদানিধে চামড়ার

কপালে চিন্তার একটা রেখা ফুটে” । চোখের দৃষ্টি সতর্ক । ধীরে ধীরে
তুলছে মুখ । কামরাটার চারদিকে তাকাচ্ছে। আরেকটা ধাককা খেলো সাথে সাথে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top