একটু চোখ বুলিয়ে নিন
ভোরবেলায় সোজা এয়ারপোর্টে চলে এসে অতীশ দেখল দিল্লি ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। টিকিট পেতে কোনও অসুবিধে হল না। পকেটে টিকিট না নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে
যে টেনসন হয় সেটা চলে যেতে ও দুটো খবরের কাগজ কিনে কফির স্টলের সামনে গিয়ে দীড়াল। প্লেন ছাড়তে তখনও কিছু দেরি রয়েছে। গতকাল বিকেলেও তার দিল্লি যাওয়ার কথা ওঠেনি । ঠিক ছিল শোভনই আসবে কলকাতায় । প্রায় এক মাস ধরে আসছি জাসছি করে শেষপর্যস্ত কাল রাত্রে শোভনলাল বলল, “আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাগাদা যখন তোমার তুমিই এসো। মর্নিং ফ্লাইটে এলে এয়ারপোর্টে থাকব।’ বাইশ লাখ যার পাওনা তার তাগাদা থাকবে না তো কার থাকবে?
‘এক্সকিউজ মি?”
অতীশ সরে দীড়াল। লোকটা পাঁচ কাপ কফির অর্ডার দিয়ে ফিরে গেল একটু দূরে। কফির কাপ হাতে নিয়ে অতীশ দেখল লোকগুলো খুব গম্ভীর মুখে কিছু আলোচনা
করছে। একজন বলছে, বাকিরা বেশ সমীহ করেই মাথা নাড়ছে। যে লোকটা কথা বলছে তার পরনে সালোয়ার কুর্তা, স্বাস্থ্য ভাল। লোকটাকে হঠাৎ চেনা-চেনা মনে হল
অতীশের। কোথায় যেন দেখেছে! ঠিক এই চেহারায় নয়! এই সময় অর্ডার দিয়ে যাওয়া লোকটা কফির তাগাদা দিতে এল। কফি তৈরি। ওর একার পক্ষে পাঁচটা কাপ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ইশারা করতেই ওই একজন ছাড়া বাকিরা এগিয়ে এল।
অতীশ বুঝল ওই লোকটাই দলের নেতা । কিন্তু লোকটাকে (স কোথাও দেখেছে। কফি খেয়ে অতীশ শুনল তাদের সিকিউরিটি এনক্লোজারে যেতে বলা হচ্ছে। অতীশ পা চালালো । স্ুয্টিকেসটা চালান করে দিয়ে ছোট খোপে ঢুকে হাত ওপরে তুলে দাড়ানোর সময় ওর প্রতিবারের মতো এবারও মনে হল বাপারটা বেশ হাস্যকর । যে দ্ুততায় তার কোমর পকেট হাঁটুতে আলতো আঙুল বুলিয়ে বোর্ডিং কার্ডে ছাপ মেরে সিকিউরিটির লোক কাজ সারেন তাতে মতলববাজ লোক বিপদে পড়বে না। …………..
লেখক সম্পর্কে
সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ! লেখালেখি! প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম
গল্প “দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস “দৌড়”, ১৯৭৫-এ “দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আর অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তার যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া “দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা; উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।