Masud Rana - Corosweed

চরসদ্বীপ – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Corosweed – Masud Rana By Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

এক

‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক…’

প্রায় বিশ লাখ মুসল্লি মক্কার বাইরে মিনা উপত্যকায় জড়ো হচ্ছেন। মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন তারা, আজ রাতটুকু মিনায় কাটিয়ে কাল হজ ব্রত পালন করবেন।

এটা ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করা গত বছরের অনুষ্ঠান, দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের একটা বোয়িং-এর টিভি
মনিটরে | বোয়িংটা বোম্বে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে আছে যাত্রাবিরতির নির্ধারিত সময় পার হবার পরেও ।

এ বছর বাংলাদেশ বিমানের এটাই শেষ হজ ফ্লাইট । সব মিলিয়ে, দুশো সত্তরজন আরোহী । বলাই বাহুল্য, সবাই তারা হজ করার নিয়ত নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন। বেশিরভাগই প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ। মহিলাদের সংখ্যা মাত্র পনেরোজন, তাদেরও বয়স কারও পঞ্চাশের নিচে নয়। তবে পাঁচ থেকে এগারো বছরের সাতটি শিশু-কিশোর আছে। আরোহীরা জানেন না নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরও প্রেন কেন টেক-অফ করছে না। এ-ব্যাপারে কেউ কোন প্রশ্ন তোলার আগেই ক্যাপটেনের নির্দেশে ভিসিআর অন করে গত বছরের হজ অনুষ্ঠান দেখাবার আয়োজন করেছে
ফ্লাইট স্টুয়ার্ডরা । তাতে কাজও হয়েছে । আরোহীরা হজ পালনের প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতা গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখছেন। টেক-অফ করার প্রায় সকল প্রস্তুতি শেষ করার পর আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, তবু এখন পর্যন্ত কাউকে উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে না। তবে আরোহীরা কেউ প্রশ্ন করলে এই দেরি হবার কারণ স্টুয়ার্ড বা সাধারণ ফ্লাইট ক্রুরা ব্যাখ্যা করতে পারবে না। তারা নিজেরাই জানে না কেন দেরি হচ্ছে।

ফ্লাইট ডেকে একটা থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । আধ ঘণ্টা আগে টেক-অফ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে তখনই দুঃসংবাদটা দেয়া হয়। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা যাত্রীবাহী বোয়িং দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে রওনা হয়ে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় যাচ্ছিল, ভারতীয় মেইনল্যান্ড পিছনে ফেলে তিনশো কিলোমিটার যাবার পর প্লেনটা নিখোঁজ হয়ে গেছে। মেইনল্যান্ড ত্যাগ করার আগেই বোম্বে এয়ারপোর্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল পাইলট’। কন্ট্রোল টাওয়ারকে কোন রকম যান্ত্রিক গোলযোগের কথা জানায়নি সে। আবহাওয়া ছিল খুবই অনুকূল-মেঘমুক্ত আকাশ, বাতাসের গতিবেগ স্বাভাবিক। তারপরই একটা বিস্ফোরণের শব্দ বেরিয়ে এলো কন্ট্রোল টাওয়ারের রেডিও থেকে । পরমুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল । কন্ট্রোল টাওয়ারের আতঙ্কিত টেকনিশিয়ানরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করল, কিন্তু প্রেনটা থেকে আর কোন সাড়াই
পাওয়া যায়নি ।

ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই বোয়িং-এ নয়জন ক্রুসহ দেড়শো যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ভারতীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ীও আদ্দিস আবাবায় যাচ্ছিলেন ইথিওপিয়ায় বেসরকারী পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করার জন্যে ।

এরকম একটা দুঃসংবাদে স্বভাবতই বাংলাদেশী বোয়িং-এর ফ্লাইট ডেকে শোকের ছায়া নেমে এলো। ক্যাপটেন সিদ্ধান্ত নিলেন, আরোহীদের খবরটা জানাবার দরকার নেই, কারণ তাতে আতঙ্ক ছড়াবার আশঙ্কা আছে।

দুঃসংবাদটা দেয়ার সময়ই কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্যাপটেনকে জানানো হয়েছে, দিল্লি থেকে টেক-অফ করা
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ওই প্লেন নিখোজ হবার সময়, অর্থাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার মুহূর্তে যেখানে ছিল, ঠিক ওই জায়গার ওপর দিয়েই বাংলাদেশী বোয়িং-এর দুবাই হয়ে জেদ্দায় যাবার কথা, তাই টেক-অফ করার অনুমতি দিতে ইতস্তত করছে তারা । অন্য কোন এয়ারলাইন্সের প্লেন ওই সময় ওই এলাকায় ছিল কিনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অকুস্থল বোম্বে থেকে যতটা দূরে, করাচী থেকে তারচেয়ে কিছুটা কাছে, তাই করাচী এয়ারপোর্টের কন্ট্রোল
টাওয়ারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়েছে তারা কিছু জানে কি না। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রশ্ন শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল করাচী কন্ট্রোল টাওয়ার। তারপর রেডিও অপারেটর অত্যন্ত কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় বলল, পাকিস্তানের লেজে পা দেয়া হলে এমন ছোবল মারবে তারা, বিষের জ্বালায় গোটা ভারত ছটফট করবে। কি প্রশ্নের কি জবাব! করাচী কন্ট্রোল টাওয়ারের এরকম উদ্ভট প্রতিক্রিয়ায় বোম্বে কন্ট্রোল টাওয়ার স্বভাবতই হতভম্ব হয়ে পড়েছে । তাদের সন্দেহ, প্রেনটা নিখোজ বা বিস্ফোরিত হবার পিছনে পাকিস্তানের হাত, থাকতে পারে ।

কিন্তু দশ মিনিটের ব্যবধানে ওই একই এয়ার স্পেস-এর ওপর দিয়ে উড়ে এলো দুটো বোয়িং-একটা ব্রিটিশ
এয়ারওয়েজের যাত্রীবাহী বিমান, এলো দুবাই হয়ে লন্ডন থেকে; আরেকটা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের কার্গো প্লেন, এলো কুয়েত হয়ে আমস্টারডাম থেকে । নির্বিঘ্নে বোম্বে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল ওগুলো। কন্ট্রোল টাওয়ারের প্রশ্নের জবাবে বোয়িং দুটোর পাইলটরা জানাল, আরব সাগরে তারা কিছু আবর্জনা ভাসতে দেখেছে, ওগুলো নিখোজ প্রেনটার’ ধ্বংসাবশেষ হলেও হতে পারে। না, জীবিত কোন মানুষ তারা দেখেনি ।

সাত মিনিট পর আরও একটি প্লেন ল্যান্ড করল বোম্বে এয়ারপোর্টে, যাত্রাবিরতি শেষে দুবাই থেকে রওনা হয়ে একই
এয়ার স্পেস-এর ওপর দিয়ে এসেছে । এটা একটা এনজিও-র চার্টার করা কার্গো প্লেন।’ এর পাইলটও আরব সাগরে কিছু আবর্জনা দেখেছে । তবে না, জীবিত কোন মানুষকে পানিতে ভাসতে দেখেনি ।

তিনটে প্রেন নির্বিঘ্নে চলে আসায় বোম্বে কন্ট্রোল টাওয়ার এরপর স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট এয়ার স্পেসকে নিরাপদ বলে ধরে
নিল। নির্দিষ্ট সময়ের পঞ্চাশ মিনিট পর বাংলাদেশী বোয়িংকে টেক-অফ করার অনুমতি দিল তারা । তবে সাবধানের মার নেই ভেবে বোয়িং-এর ফ্লাইট প্ল্যান ঠিক রেখে এয়ার রুট সামান্য একটু বদলাতে বলা হলো। বাংলাদেশী বিমান এখন দুবাই পৌছানোর জন্যে কোন সরলরেখা অনুসরণ করবে না, পাকিস্তান থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার জন্যে একটু বাকা প্রথ ধরে এগোবে। এই পরামর্শ দেয়ার আরও একটা কারণ হলো, ভারতীয় নৌ-বাহিনীর দুটো উদ্ধারকারী জাহাজ ও বিমান বাহিনীর এক ঝাঁক রেসকিউ হেলিকপ্টার অকুস্থলের দিকে রওনা হয়েছে, তাদেরকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেয়ার জন্যে এলাকাটা খালি রাখতে পারলে ভাল হয়।

নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর দুশো সত্তরজন হজযাত্রী নিয়ে টেক-অফ করল বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং। অনিবার্য কারণবশত দেরি হবার কথা বলে আরোহীদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলেন ক্যাপটেন।

আরব সাগর বা ভারত মহাসাগর, যাই বলা হোক, বোম্বে থেকে প্রায় চারশো কিলোমিটার দূরে চরস নামে একটা দ্বীপ আছে ভারতের । একটু ঘুর পথ ধরে আসায় সরাসরি ওই দ্বীপের ওপর চলে এলো বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং। বোম্বে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রক্ষা করছে পাইলট প্রায় ত্রিশ হাজার ফুট ওপর থেকে পাহাড় ও জঙ্গল ছাড়া দ্বীপটার আর কোন বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ল না। ফ্লাইট এঞ্জিনিয়ার দ্বীপ থেকে প্রায় বিশ মাইল দক্ষিণে একটা সুপারট্যাংকার দেখতে পেয়ে ইঙ্গিতে সেদিকে কো-পাইলটের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। এর কারণ হলো, সাগরের বিশাল একটা এলাকা জুড়ে ওটা ছাড়া আর কোন জাহাজ দেখা যাচ্ছে না।

এরপর মর্মবিদারক যে ঘটনাটা ঘটল তার একমাত্র সাক্ষী হয়ে থাকল ওই সুপারট্যাংকারটি |

এ এমন এক সময়ের ঘটনা, যখন মার্কিনিদের সাহায্য নিয়ে চরম মৌলবাদী তালেবানরা আফগানিস্তান থেকে রুশ সৈন্যদের মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে; অন্যদেশের যুদ্ধক্ষেত্রে এই পরাজয়ের হাত ধরে নিজেদের দেশে হাজির হয়েছে রাজনৈতিক বিপর্যয়, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়ন একের পর এক বিভিন্ন রাজ্য ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করছে, দখল করে নিচ্ছে সামবিক স্থাপনা, মিলিটারি হার্ডওয়্যার-এর গুদাম,
যুদ্ধজাহাজ, এয়ারফোর্স বেইস, মিসাইল ঘাঁটি ইত্যাদি। এই চরম বিশৃংখলা ও অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু সামরিক অফিসার তাদের ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল। ঠিক তাদের দলে ফেলা না গেলেও, স্বেচ্ছাচারিতার দিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেল একজন মেজর জেনারেল । তার নাম সের্গেই গোরস্কি।

ক্রেমলিন কর্মকর্তাদের প্ল্যান ছিল তালেবানদের পরাজিত করতে পারলে আফগানিস্তানে তারা স্থায়ী মিসাইল ঘাঁটি তৈরি করবে, কাবুল হবে রাশিয়ার বর্ধিত বাহু। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আফগাস্তিানে তারা মিসাইল পাঠাতে শুরু করে। প্রথম চালানে দূর, নিকট ও মাঝারি পাল্লার সত্তরটা মিসাইল ছিল, এগুলোর মধ্যে দশটা ছিল আইবিএম-ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল, নিউক্লিয়ার ওঅরহেড বহন করার ফ্যাসিলিটি বা কেপাবিলিটিসহ।

তখনও ঘাটি, লঞ্চিং প্যাড বা সাইলো তৈরি করা হয়নি, নিউক্লিয়ার ওঅরহেড ও মিসাইলগুলো প্যাকিং-এর ভেতর ছিল । যুদ্ধে তালেবানদের কাছে রুশ সৈন্যরা হারছে, ওদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নও ভেঙে পড়ার উপক্রম করছে, এই অবস্থায় ক্রেমলিন থেকে জেনারেল গোরিস্কির কাছে নির্দেশ পাঠানো হলো, মিসাইল ও নিউক্লিয়ার ওঅরহেড নিয়ে দেশে ফিরে এসো ।

কিন্তু ক্রেমলিনের সেই নির্দেশ অমান্য করে, সমস্ত মিলিটারি হার্ডঅয়্যার এবং সঙ্গী অফিসার ও টেকনিশিয়ানদের নিয়ে আফগানিস্তান থেকে হারিয়ে বা গায়েব হয়ে গেল জেনারেল গোরস্কি ৷ পাকিস্তানের প্রতি তার বিশেষ ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও চরম একটা আঘাত হেনে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পাকিস্তানকে মুছে ফেলতে চায় সে। কিন্তু তা করতে হলে নিরাপদ একটা ঘাটি দরকার, যেখানে আধুনিক সমস্ত ফ্যাসিলিটি পাওয়া যাবে ।
জেনারেল গোরস্কি সিদ্ধান্ত নিল, পাকিস্তানকে শায়েস্তা করার জন্যে ভারতের সাহায্য নেবে সে। হিন্দুকুশ পর্বতমালার
কাছাকাছি, একটা এয়ার বেইস-এর তলায়, টানেলের ভেতর লুকানো ছিল তার কনভয় । ব্যক্তিগত প্রতিনিধি মারফত কাশ্মীর হয়ে দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠাল সে; তাতে বলা হলো দশটা নিউক্লিয়ার ওঅরহেড সহ সত্তরটা বিভিন্ন পাল্লার মিসাইল গোপনে বিক্রি করা হবে অবিশ্বাস্য কম দামে; শর্ত হলো, জেনারেল গোরস্কি এবং তার সহকারী অফিসার ও টেকনিশিয়ানদের আজীবন রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে-বলাই বাহুল্য, গোটা ব্যাপারটা চিরকাল গোপনও রাখতে হবে।

ভারত তখনও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়নি, তাদের অতি সাধের ক্ষেপণাস্ত্র “অগ্নিও সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে রুশ সরকার প্রায় শ’ছয়েক মিসাইল দিল্লিকে উপহার হিসেবে দেয়, সেগুলোকেই ভারত নিজেদের তৈরি “অগ্নি-১, “অগ্নি-২’, ও “অগ্নি-৩’ হিসেবে প্রচার করতে শুরু করে । এই সব মিসাইল বসানোর জন্যে চরস দ্বীপের একটা অংশে ঘাটি তৈরির কাজে হাত দেয় তারা। ঘাঁটি তৈরির জাক পুরোদমে চলছে, এই সময় জেনারেল গোরস্কির প্রস্তাব পেয়ে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা উল্লসিত হয়ে উঠল। রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত করতে উঠেপড়ে লাগল তারা, যুক্তি দেখাল প্রত্যাখ্যান করা হলে জেনারেল গোরস্কি এই একই প্রস্তাব পাকিস্তানকেও
দেবে, এবং ইসলামাবাদ এত বড় সুযোগ অবশ্যই হাতছাড়া করবে না।

জেনারেল গোরস্কি তার মনের গোপন ইচ্ছাটা সযত্বে চেপে রেখেছে, ভারতকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেয়নি যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য । পাকিস্তানের যত বড় শক্রই ভারত হোক, বিনা পরোচনায় এটম বোম ফেলে দেশটাকে ধ্বংস করার প্ল্যান কখনোই তারা অনুমোদন করবে না, কারণ মার খেয়ে মার হজম করার মত জাতি পাকিস্তানীরা নয়। এই যুক্তি বোঝে বলেই জেনারেল গোরস্কি ভারতকে আসল কথাটা জানায়নি । তবে, সে কিছু না জানালে কি হবে, ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তারা ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করে । সেটা অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ ।

বলতে গেলে প্রায় পানির দরে সত্তরটা মিসাইল ও পঞ্চাশ থেকে একশো মেগাটন ওজনের দশটা নিউক্লিয়ার ওঅরহেড কিনে নিল ভারত। জেনারেল গোরস্কি আর তার সহকারী অফিসার ও টেকনিশিয়ানদেরও গোপনে আনঅফিশিয়ালি রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হলো। কড়া ভারতীয় সামরিক প্রহরায় হিন্দুকুশ পর্বতমালা পেরিয়ে জেনারেল গোরস্কির কনভয় জম্মু ও কাশ্মীর হয়ে বোম্বেতে পৌছাল, সেখান থেকে নৌ-বাহিনীর কারো কার্গো ভেসেলে তুলে সমস্ত কিছু পাঠিয়ে দেয়া হলো চরস দ্বীপে, সদ্য তৈরি মিসাইল ঘাটিতে। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে জেনারেল
গোরস্কি আর তাঁর দলের সবাইকে পইপই করে বলে দেয়া হলো, আন্ডারগ্রাউন্ড ঘাটি থেকে যখনই তারা গ্রাউন্ড লেভেলে উঠবে, প্রতিবার রাবারের মুখোশ পরে নিতে যেন ভুল না করে। বলা হলো বিশেষ করে মার্কিন স্যাটেলাইট ক্যামেরাকেই বেশি ভয়-এমনকি রাতের অন্ধকারেও স্পষ্ট ফটো তুলতে সক্ষম ওগুলো ।

চোরাই মাল কিনে খুবই লাভবান হলো ভারত; চোরেরাও নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে খুব খুশি। চোরেদের সর্দার জেনারেল
গোরস্কি মনে মনে বুদ্ধি আাটছে, পাকিস্তানের ওপর চরম একটা আঘাত হানার সুযোগ কিভাবে তৈরি করা যায়।

চোরাই রুশ মিসাইল ও নিউক্লিয়ার ওঅরহেডগুলো শুধুমাত্র কমপিউটর আর নির্দিষ্ট রেডিও সিগন্যালের সাহায্যে অপারেট বা আকটিভেট করা যায় । বিশেষভাবে এই কাজের জন্যে তৈরি করা “প্রোগ্রাম যে কমপিউটরে ঢোকানো হয়েছে সেটা রয়েছে ইস্পাতের তৈরি একটা কামরায়, ওই একই কামরায় আছে রেডিও সেটটাও; কামরার ভেতরে ও বাইরে ভারতীয় গুর্খা রেজিমেন্টের সৈন্যরা রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা পালা করে পাহারা দিচ্ছে-বিনা অনুমতিতে রাশিয়ান কেউ তো দূরের কথা, ভারতীয় কোন অফিসারও ওটার কাছাকাছি যেতে পারে না।

ভারতীয় অফিসাররা মিসাইল ও নিউক্লিয়ার ওঅরহেড অপারেট ও আকটিভেট করার কলা-কৌশল শিখে নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কমপিউটরটিকে নিজেদের হেফাজতে রাখছে । জেনারেল গোরস্কি প্রতিবাদ করলেও ভারতীয় অফিসাররা তাতে কান দেয় না। রাগে ও আক্রোশে মনে মনে বেলুনের মত ফোলা ছাড়া চোরের সর্দারের আর কিছু করারও নেই । প্রতিটি মিসাইলে বিল্ট-ইন কমপিউটর আছে, তবে সেটার সাহায্যে শুধু টার্গেট ফিক্স করা
যায়, মিসাইল নিক্ষেপ বা নিউক্লিয়ার ডিভাইস আকটিভেট করা………

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top