একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
রানা এজেন্সি । অর্কিড সিটি। ক্যালিফোর্নিয়া ।
শরতের বিকেল। সুনীল আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ সাদা মেঘের ভেলা । মৃদু ঝিরঝিরে বাতাসে একইসঙ্গে অচেনা কয়েকটা ফুলের মাতাল করা সুবাস। খোলা জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যায় পার্কের ঘন সবুজ গাছের সারি। দূরের ব্যস্ত রাস্তা থেকে ভেসে আসছে গাড়ি-ঘোড়ার চাপা গুঞ্জন। থম মেরে বসে আছে রানা নিজের অফিসে । সকাল থেকে ছুটোছুটি করে ক্লান্ত ও, সেই সঙ্গে হতাশ এবং বিরক্ত ।
ওর সামনের চেয়ারে বসে একদৃষ্টিতে ওকে দেখছে রানা এজেলির অপারেটর, রানার বন্ধু জেমস কুপার, চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ। সিআইএতে ছিল যখন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়েকবার মারাত্মক বিপদ থেকে রানাকে বাচিয়েছিল সে, উপরওয়ালাদের চোখের কাটা হতে দ্বিধা করেনি । ফলে রানাও বিপদে আপদে তার দিকে বাড়িয়ে দেয় বন্ধুত্বের হাত। আফ্রিকায় একটা বিপজ্জনক আ্যাসাইনমেন্টে রানা ওর প্রাণ বাঁচানোয় ‘আরও গাঢ় হয়েছে বন্ধুত্ব। এরপর সিআইএ থেকে পদত্যাগ করে কয়েকটা সফল আ্যাসাইনমেন্টে অংশ নেয় সে রানার সঙ্গে। ধীরে ধীরে দু’জন ওরা চিনেছে পরস্পরকে, পরিণত হয়েছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে।
স্বাধীনচেতা মানুষ বলে সিআইএ-র উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় চাকরি ছেড়ে অর্কিড সিটিতে নিজের প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছিল জেমস কুপার ৷ মূলধনের অভাব ছিল তাঁর, তা ছাড়া, কাজে দক্ষ হলেও প্রাচুর্যের নগরী অর্কিড সিটির অতি বড়লোকদেরকে বাড়তি খাতির করত না বলে কাজ পেত না, ব্যবসায় মার খাচ্ছিল। জেমস কুপার অর্থসংকটে আছে জেনে তাকে লোভনীয় বেতনে রানা এজেন্সিতে যোগ দেবার প্রস্তাব দিয়েছিল রানা, রাজি হয়নি সে। শর্ত জুড়ে দেয়, নতুন অন্য কারও চেয়ে বেশি বেতন দেয়া না হলে তবেই শুধু চাকরিতে জয়েন করতে পারে । রানা তার কথা মেনে নেয়ায় রানা এজেন্সির লন্ডন শাখায় যোগ দিয়েছে সে মাস তিনেক আগে । একটা সফল আাসাইনমেন্ট শেষে ছুটিতে ছিল, রানা অর্কিড সিটিতে আসছে জেনে জুটে পড়েছে সঙ্গে। তারপর এখানে এসে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে নিজেই নিজের ছুটি ক্যান্সেল করে দিয়েছে। রানাকে বলেছে, ‘থাকছি, আপাতত কাজ চালিয়ে নিতে পারব আমি ।’
রানা এজেন্সির অর্কিড সিটি শাখা-চীফ তুহীন আশরাফের পাঠানো খবর পেয়ে লন্ডন থেকে রাতের ফ্লাইটে এখানে এসেছে মাসুদ রানা, সঙ্গে জেমস কুপার। আজ সকালে পৌছেছে, তারপর থেকে সময়টা কেটেছে ওর হাসপাতাল ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ছোটাছুটি করে ।
দু’দিন আগে পাঠানো ই-মেইলে তুহীন ওকে জানিয়েছিল, এখানে ঝামেলায় আছি আমরা । বিশেষ কারণে মেইল-এ সবকিছু খুলে জনানো সম্ভব নয়। মাসুদ ভাই যদি পারেন তো , প্লিজ, চলে আসুন ।
ঝামেলাটা যে এরকম কিছু হতে পারে, সেটা এখানে আসবার আগে পর্যন্ত ধারণা ছিল না রানার। দীর্ঘ প্লেন জার্নির পর রানা এজেন্সির অফিসে এসেই অফিস-সেক্রেটারি সুসানা সারান্ডনের কাছে দুঃসংরাদটা শুনতে হয়েছে ওকে । কদিন আগে এই শাখায় বদলি হয়ে এসেছে সে নিউ ইয়র্ক থেকে।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে টপ-সিক্রেট একটা কাজে বেরিয়ে গিয়েছিল তুহীন আশরাফ ও আরও দু’জন এজেন্ট, আজিজ খন্দকার ও হাকিম হাশেমি। সাগর-সৈকতের কাছে অজ্ঞাত পরিচয় গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত হয় তিনজন । কাজটা কী, সেটা সুসানাকে বলে যায়নি ওরা, কাজেই জানবার উপায় নেই রানার । তুহীন-আজিজ-হাকিম, তিনজনই এখন হাসপাতালে । তুহীনের অবস্থা আশঙ্কাজনক । মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে কোমায় আছে
সে। আজিজ খন্দকার ও হাকিম হাশেমি ছুরিকাহত । আট-দশবার স্ট্যাব করা হয়েছে ওদের । ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-এ ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে দু’জনকে ।
খবরটা পেয়েই দেরি না করে জেমস কুপারকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে ছুটেছিল রানা । তিনজনের একজনকেও দেখতে দেননি ডাক্তাররা । জানিয়ে দিয়েছেন, আরও তিন-চারদিনের আগে আজিজ খন্দকার বা হাকিম হাশেমির সঙ্গে দেখা করবার অনুমতি মিলবে না, কথা বলা তো অসম্ভব । সুসংবাদ বলতে এটুকু: বাচবে ওরা । আর দুঃসংবাদ: তুহীন “আশরাফের ব্যাপারে এখনও কিছু বলা যায় না।
এরপর জেমস কুপারকে অফিসে ফিরে অপেক্ষায় থাকতে বলে হাসপাতাল থেকে পুলিশ হেডকোয়াটার-এ যায় রানা।
ওখানে ওর সঙ্গে শীতল, রূঢ্ আচরণ করা হয়েছে । খটখটে একটা কাঠের চেয়ারে বসিয়ে ওয়েইটিং রুমে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে পাক্কা একটা ঘণ্টা, তারপর নিরাসক্ত এক ডিউটি অফিসারের মারফত জানানো হয়েছে, আকস্মিক এই হামলার জন্য কারা দায়ী সেটা পুলিশ জানে না, তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন অফিসারকে । তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় সূত্র না থাকায় কেস-এ কোনওই অগ্রগতি হয়নি ।
এরপর স্বয়ং পুলিশ ক্যাপ্টেন ব্রায়ান ফ্লেমিং-এর সঙ্গে দেখা করতে চায় রানা । প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর সাক্ষাতের অনুমতি মেলে । তিনি দু’চার কথার পর অবজ্ঞার সঙ্গে যা বলেন, তার সারমর্ম হচ্ছে:
রানা এজেন্সির এজেন্টদের উপর হামলার বিষয়টিতে আমরা আর কী তদন্ত করব, রানা এজেন্সির লোকেরাই তো পুলিশের বাড়া । তবুও আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি! তদন্তের স্বার্থে আপাতত বাইরের কাউকে কোনও তথ্য দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ।…আর কোনও কথা না থাকলে, মিস্টার রানা, এবার আপনি আসতে পারেন ।
তিক্ত মনে খানিক আগে অফিসে ফিরেছে রানা । সেই থেকে ভাবছে, কী করবে । অন্যান্য শাখা থেকে অপারেটর আনাতে পারে ও অর্কিড সিটিতে । সেক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা এসে যায় ওর। পারে একা বা জেমসকে নিয়ে খোজ-খবর শুরু করতে, অথবা প্রভাবশালী কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে জোরেশোরে তদন্ত করবার জন্য পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করতে । কিন্তু সেটা করতে গেলে আরও বৈরী হয়ে উঠবে পুলিশ- পদে পদে বাধা সৃষ্টি করবে সব কাজে ।
জেমস কুপারের দিকে একবার তাকাল চিন্তিত রানা । জেমস ছাড়া রানা এজেন্সি অর্কিড সিটি শাখায় অপারেটর বলতে আর কেউ নেই এখন । সিদ্ধান্ত যা নেবার ভেবেচিন্তে দ্রুত নিতে হবে ওকে | …ও আর জেমস…
ইন্টারকম বেজে উঠতেই জেমস কুপারের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রিসিভার তুলল রানা । নিশ্চয়ই জরুরি কোনও কিছু, নইলে এ-সময় ওকে বিরক্ত করত না সুসানা। অনেকদিন নিউ ইয়র্কে রানার প্রাইভেট-সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছে সে, ফলে জানে রানার মুড কখন কীরকম থাকে ।
“কী, সুসানা?’ ক্লান্ত শোনাল রানার কণ্ঠ।
মিস্টার রিচার্ড জন্সটন ফোন করেছেন, মাসুদ, জবাব দিল জুসানা । “কোনও অপারেটরকে চাইছেন।”
সবার সামনে রানাকে মিস্টার রানা বলেই ডাকে সুসানা, তবে একা থাকলে শুধুই মাসুদ । সহজ-সরল, দৃঢ়চেতা মেয়েটির অতি কাছে আসবার কোনও উদ্দেশ্য নেই বুঝতে পেরে আপত্তি করেনি রানা । সুসানার ধারণা, সে যেহেতু রানাকে অত্যন্ত পছন্দ করে, কাজেই রানাও তাকে খুব পছন্দ করে। আর, রানা যেহেতু একটু ছেলেমানুষ টাইপের, আবেগপ্রবণ, বিপদের ঝুঁকি নিতে পিছপা হয় না- প্রয়োজনে ওকে খানিকটা ডেটে রাখা দরকার ।
গত কয়েক বছরে আস্তে আস্তে সুসানার সঙ্গে চমৎকার একটা মিষ্টি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রানার । দু’জন দু’জনকে বিশ্বাস করে ওরা, ভরসা রাখে পরস্পরের উপর ।
“আমি ধরছি, বলল রানা । ইন্টারকমের রিসিভার নামিয়ে রেখে তৃতীয় ফোনটার রিসিভার তুলে নিল। হ্যালো, মিস্টার
জন্সটন? মাসুদ রানা বলছি।’
“স্বয়ং মাসুদ রানা?’ ভরাট একটা কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠল রিসিভারে, কিন্ত কোথায় যেন মিশে আছে বিষাদের ছোয়া । “তোমার ঠিকানা চাইব বলে যোগাযোগ করেছিলাম, কিন্তু কী সৌভাগ্য, রানা! খোদ তুমি! হাউ আর ইউ, মাই বয়?’
“ফাইন, সার, রানার গলায় চাপা থাকল না তিক্ততা । “দিস অর্কিড সিটি ইয গিভিং মি দ্য হেল অভ আ নাইস-টাইম । বিশেষ করে অর্কিড সিটির পুলিশদের অতিরিক্ত আন্তরিক ব্যবহারে আমি আবেগাপ্লুত | …কিছু দরকার, মিস্টার জন্সটন?”
কথা ভেসে এলো না ওদিক থেকে। খানিক নীরবতার পর আবার শোনা গেল রিচার্ড জন্সটনের গলা: “সরি, রানা, তোমার এজেন্সির ছেলেদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটা পেপারে পড়েছি। বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে তোমার মনের অবস্থা কেমন।” একটু থামলেন। “পুলিশের ব্যাপারে কী যেন বলছিলে, রানা? আমি কোনও কাজে আসতে পারি? তুমি তো জানো, পুলিশ ক্যাপ্টেন ব্রায়ান আমার ভাইয়ের বন্ধু। আমি কোনও অনুরোধ করলে হয়তো ফেলবে না ও।’
রিচার্ড জন্সটন অর্কিড সিটির প্রাক্তন মেয়র । গত নির্বাচনে স্বেচ্ছায় প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন, নইলে আবারও নির্ঘাত মেয়র হতেন তিনি । একজন সত্যিকারের সৎ, পরোপকারী মানুষ বলে সুখ্যাতি আছে সম্রান্ত এই ভদ্রলোকের- ফলে অসম্ভব জনপ্রিয় । বেশ কিছু প্রভাবশালী লোকের আপত্তির মুখেও অর্কিড সিটিতে রানা এজেন্সি খুলবার অনুমতি তিনিই দিয়েছিলেন, নইলে সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স পেতে অনেক দেরি হতো, হয়তো পাওয়াই যেত না। রানা খানিকটা হলেও কৃতজ্ঞ ভদ্রলোকের প্রতি, বর্ণবাদ-বিরোধী সাম্যবাদী মনোভাবের কারণে পছন্দ করে তাকে। কয়েকবার কয়েকটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে দু’জনের ৷ ভদ্রলোক সবসময় খুব আন্তরিক আচরণ করেছেন ওর সঙ্গে ।
রানা চুপ করে থাকায় মিস্টার জন্সটন জিজ্ঞাসার সুরে বললেন, “ওয়েল, মাই বয়?
একটু দ্বিধা করল রানা, তারপর বলল, “পুলিশ যদি তথ্য শেয়ার করত, তা হলে অপরাধীদের ধরা অনেক সহজ হতো, ফাইল-চাপা দিতে চাইছে।’
“তাই? একটু থমকে গেলেন রিচার্ড জন্সটন। “আমি ব্রায়ানকে জানাব, এই কেসটার ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ আছে। আশা করি তাতে কাজ হবে ।” রানা চুপ করে থাকায় প্রসঙ্গ পাল্টালেন তিনি । “যে-ব্যাপারে তোমার এজেন্সিতে ফোন করা, রানা । আসলে ব্যাপারটা আমার জন্যে খুব জরুরি । বলতে পারো তোমার সাহায্য ছাড়া… চুপ হয়ে গেলেন জদ্রলোক।
বলুন ।’
“আমার মেয়েকে তো চেনো, রানা? …সারাহ?’ হঠাৎ বেসুরো শোনাল রিচার্ড জন্সটনের কণ্ঠ।
চিনি, ভদ্রলোকের গলার পরিবর্তনটা লক্ষ্য করল রানা। “গলফ ক্লাবে পরিচয় হয়েছে ।’
“ওকে কেমন মেয়ে বলে মনে হয় তোমার, রানা?” রিচার্ড জন্সটনের গলার সুরে মনে হলো রানার মতামত জানাটা তার জন্য খুব জরুরি ।
খুবই ভাল মেয়ে, নির্ধিধায় বলল রানা। “ব্রিলিয়ান্ট। ভবিষ্যতে আপনার সুনাম বাড়াবে ও।
‘ওর জন্যেই যোগাযোগ করেছি, থামলেন রিচার্ড জন্সটন।
বিচলিত মনে হলো তাঁকে, যেনো কি বলবেন তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিতে চাইছেন, অথচ দ্বিধা টেনে ধরছে তার জিভ ।
খানিক অপেক্ষা করল রানা, তারপর শান্ত স্বরে বলল, ইয়েস?
“সর্বনাশা নেশায় পেয়েছে ওকে, রানা, মিস্টার জন্সটনের কণ্ঠে সব হারানোর হাহাকারটা গোপন থাকল না। ‘হেরোইন! গত একমাস ধরে ওর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ করছিলাম, অনেক রাত করে বাড়ি ফিরছিল ও । বুঝতে পারিনি মেয়েটা আমার এরকম হয়ে যাচ্ছে কেন। ওর মুখেই দু’একবার শুনেছিলাম, এক প্লে-বয়ের সঙ্গে মিশছে ও। পাত্তা দিইনি, ভেবেছিলাম ঠাট্টা করছে। আমার মেয়েকে তো চিনি আমি । আবার থামলেন তিনি । তার দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেল রানা। “আসলে চিনি না! গত রাতে চলে গেছে ও বাড়ি ছেড়ে । সেই প্লে-বয়ের আ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে উঠেছে। একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে। নেশার ঘোরে কী লিখেছে ও নিজেও বোধহয় জানে না।’ চুপ হয়ে গেলেন ভদ্রলোক ।
“তারপর, সার?’ নরম গলায় জিজ্ঞেস করল রানা । দুঃখ বোধ করছে মানুষটার জন্য । স্নেহপরায়ণ একজন পিতা যখন দেখেন তার সন্তান বিপথে চলে গেছে, তখনকার অনুভূতি কীরকম জানে না ও, তবে আন্দাজ করতে পারে।
“তার পর থেকে কী করব ভাবছি আমি, রানা, কাতর শোনাল রিচার্ড জন্সটনের গলা । “পুলিশে খবর দিইনি লজ্জায়। মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে কোনও প্রাইভেট আইকে রিক্রট করিনি । লোক জানাজানি হলে, রানা, ধুলোয় মিশে যাবে আমার মান-সম্মান। হঠাৎ মনে হলো তোমার এজেন্সির কথা । তোমার কথা আডমিরাল হ্যামিলটনের কাছে যতটুকু যা শুনেছি, তাতে বুঝেছি, নিদ্ধিধায় ভরসা রাখা যায় তোমার এজেন্সির উপর । ভাগ্যটা বোধহয় ভাল আমার, তোমাকেই পেয়ে গেলাম ফোনে । তবে…
‘আমাকে কী করতে বলেন আপনি, মিস্টার জন্সটন? বিব্রত বোধ করছে রানা । সারাহ জন্সটনকে শেষ দেখেছে ও কয়েক মাস আগে, গলফ ক্লাবে । সতেরো বছরের তরতাজা, সুন্দরী মেয়ে। খুব সম্মান করত ওকে । শেষবার যখন দেখা হলো, যেচে এসে ওর কাছে গলফিঙের বেশ কিছু লেসন নিয়েছিল । মেয়েটার দ্রুত শিখবার ক্ষমতা বিশ্মিত করেছিল রানাকে । হয়তো সেই কচি মেয়েটাকে কোনও প্লে-বয়ের অশ্লীল, নোংরা আলিঙ্গন থেকে ছিনিয়ে আনতে হবে ।
“আমার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দাও, রানা, কাপা গলায় বললেন রিচার্ড জন্সটন। “এটা তোমার কাছে আমার কাতর
অনুরোধ । এক অসহায় পিতার দাবি । টাকা যা লাগে…”
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো না রানার । নিচু গলায়, কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, টাকার কথা বলে লজ্জা দেবেন না, সার। আমি আপনার কাছে খণী। আমার সাধ্য মত করব আমি । সেই লোক কোথায় থাকে সেটা আপনার জানা আছে?
রানা কাজটা করে দেবে জেনে বিরাট একটা শ্বাস ছাড়লেন রিচার্ড জন্সটন। ‘জানি। চিঠিতে বদমাশটার ঠিকানা লিখেছে সারাহ্। …থ্যাঙ্ক ইউ, মাই বয়। তুমি ওকে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গেই ওয়াশিংটনে নিয়ে যাব আমি ওকে । আমার ঘনিষ্ঠ এক ডাক্তার বন্ধুর রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিক আছে, ওখানে ওকে ভর্তি করিয়ে দেব। সুস্থ হলে নিশ্চয়ই নিজের ভুল বুঝতে পারবে ও । …ওই লোকটার ঠিকানা: .২৭ ওয়েলিংটন স্ট্রিট । একটা অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং ওটা ।’
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।