Doshjon By Humayun Ahmed

দশজন – হুমায়ূন আহমেদ (Doshjon By Humayun Ahmed)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

লোকটির মুখ লম্বাটে ।

চোখ দুটি তক্ষকের চোখের মতো । কোটর থেকে অনেকখানি বেরিয়ে
আছে। অত্যন্ত রোগা শরীর । সরু সরু হাত । হাতের আঙুলগুলো অস্বাভাবিক
লম্বা। কাধে ঝুলছে নীলরঙা চকচকে ব্যাগ । তার দাড়িয়ে থাকার মধ্যে একটি
বিনীত ভঙ্গি আছে। নিশ্চয়ই কিছু-একটা গছাতে এসেছে।

দুপুরের দিকে এ রকম উটকো লোকজন আসে । এরা কলিং বেল টিপে
বিনীত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থেকে হাত কচলায় ৷ লাজুক গলায় বলে, “আমি নিতান্তই
একজন দরিদ্র ব্যক্তি, কাটা কাপড়ের টুকরো বিক্রি করি । আপনি কি অনুগ্বহ
করে কিছু কিনবেন ? কিনলে আমার খুব উপকার হয় ।’

এই লোক নিশ্চয়ই সে রকম কিছু বলবে। ইরিনা তাকে সে সুযোগ দিল না।
লোকটি মুখ খুলবার আগেই সে বলল, “আমাদের কিছু লাগবে না । আপনি যান।’

লোকটি কিছুই বলল না চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খোলা দরজা দিয়ে বাড়ির
ভেতরটা দেখার চেষ্টা করতে লাগল । ইরিনা কড়া গলায় বলল, ‘বলেছি তো
আমাদের কিছু লাগবে না।’

“আমি কিছু বিক্রি করতে আসি নি।’

“আপনি কে? কাকে চান আপনি?

“আমি কে? তা কি তুমি বুঝতে পারছ না?

“ইরিনা তীক্ষ চোখে তাকাল লোকটির দিকে । লোকটির দীড়িয়ে থাকার যে
ভঙ্গিটিকে একটু আগেই বিনীত ভঙ্গি মনে হচ্ছিল, এখন সে-রকম মনে হচ্ছে
না। এখন মনে হচ্ছে লোকটি ভয়ঙ্কর উদ্ধত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে।

“আপনার কি দরকার বলুন

“বাইরে দাড়িয়ে কি আর সবকিছু বলা যায়

“বাবা-মা কেউ ঘরে নেই, আপনাকে আমি ভেতরে আসতে বলব না।’

লোকটি মেয়েদের রুমালের মত ছোট্ট ফুল আঁকা একটি রুমাল বের করে
কপাল মুছল। ইরিনা কাপা কাপা গলায় বলল, “আপনি কোনো খবর না দিয়ে
এসেছেন।’

লোকটি বলল, “খবর না দিয়ে অনেকেই আসে। জরা আসে, মৃত্যু আসে
এবং মাঝে মাঝে গ্যালাকটিক ইন্টেলিজেন্সের লোকজন ।’

লেখক সম্পর্কে

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকে’র মাধ্যমে আত্নপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগর জীবনের পটভূমিতেই তার অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহারণ ‘অচিনপুর’, ‘ফেরা’, মধ্যাহ্ন। মুক্তিযুদ্ধ বারবার তার লেখায় ফুঠে উটেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নির্বাসন’ প্রভৃতি উপন্যাস। ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ -এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। ‘বাদশা নামদার’, ‘মাতাল হাওয়া’য় অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজরা ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top