Ferighat by Shirshendu Mukhopadhyay

ফেরিঘাট – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (Ferighat by Shirshendu Mukhopadhyay)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

সিড়ির তলা থেকে স্কুটারট্য টেনে নিয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাথ ঘেঁষে দাড় করাল মধু, তার হাতে পালকের সাড়ন । মঞ্ছুবে | মুছলেও খুব একটা চকচকে হয় না আজকাল | রঙটা জলে ? গেছে, এখানে ওখানে চটা | উঠে গেছে । বেশ পুরোনো হয়ে গেল স্কুটারটা জানালা দিয়ে নিচের ব্াস্তায় স্কুটারটা একটুক্ষণ অন্যমলে দেখল অমিয় । বহুকালের সঙ্গী | মায়া পড়ে গেছে । কল্যাণ তিন হাজার টাকা দর দিতে চেয়েছিল | জিনিসটা ইটালিয়ান বলে নয়, মায়া পড়ে গেছে ধলেই বেচে নি অমিয় । তা ছাড়া একবার বেচে দিলে নতুন আর কেনা? হবে না । অমিয়র দিন চলে গেছে। মুখ ফিরিয়ে অমিয় টেবিলে সাজালো একপ্রেট টোস্ট, একটা আধ সেদ্ধ ডিশ, এক গ্রাস ৮
দুধ, নুন-স্বপ্নিচের কৌটো, চাষচ–এসব আবার দেখে । সকাল আটটা কী সোয়া আটটা এখন সাড়ে আটটায় সে রোজ বেরোয় । বেরোবার আগে সে রোজ টোস্ট ডিষ নুন-মরিচ দিয়ে খাঁয় । দুধ পান করে | আজ, কিন্তু খাবারগ্তলোর দিকে তাকিয়ে দেখতেও তার অনিচ্ছা হচ্ছিল | খিদে বে নেই | বমি বমি ভাব ৷ রাতে ভাল ঘুম হয়নি, বার বার উঠে সিগারেট খেয়েছে | সকালে বে অনেকক্ষণ স্রান করেছে চৌবাজ্চা খালি করে | তব শরীর ঠিকমতো ঠাণ্ডা হয়নি । খাওয়ার কথা বে
এখন ভাবাই যাচ্ছে না। টেবিলের ওপাশে রোজকার মত হাসি বসে নেই | শোয়ার ঘরের দরজায় হাসি দাড়িয়ে আছে । কাল রাতে হাসিও বোধহয় ঘুমোয়নি | ঘুমোলে যে ছোট ছোট অবিরল শ্বাস পড়ে ওর, সেই শব্দ তোকে শোনেনি অমিয় । বেত আর বাশ দিয়ে তৈরী ভারি সুন্দর একটা খাট শখ করে কিনেছি হাসি, বন অধিয়র গ্রদিন ছিল। পুরনো বড় খাটটা বেচে দিয়ে অমিয় কিনে নিল একটা সোফা-কাম-বেড । সেই থেকে” দুজনের বিছানা আলাদা | বেতের খাটে হাসি, সোফা কাম-বেড়ে অমিয় | সেইটেই কি মারাজুক ভুল হয়েছিল ।


বস্তুত তো ছোটোবেলা থেকেই অধিয় যৌথ পরিবারে মান্য | সেখানে বড় খাটের সঙ্গে আর একখানা বড় খাটি জোড়া দেওয়া | বিশাল মাঠের মত বিছানা, শামিয়ানার মত মশারি | দাদু ঠাকুষা শুতো, আর.স্ই সঙ্গে তারা রাজ্যের ছেলেপুলে | পরিবারের অর্ষেক এক বিছানায় । যারা সেই বিছানায় শুয়ে বড় হয়েছে তারা আজও কেউ একে অন্যের সঙ্গে গুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়নি, যে যার কাজের ধান্দায় আলাদা হয়ে ভিন্ন সংসার করেছে, দাদু ঠাকুমা মরে গেছে কবে | তবু সেই প্রকাণ্ড বিছানার সুতি আজও অমিয়র পিসতুতো, মাসতুতো জ্যাঠতুতো, খুড়তুতো ভাই আর বোনদের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারেনি । দেখা হলে সবাই অকৃত্রিম খুশি হয়, এক- আধবেলা জোর করে রাখে, প্রাণপণে খাওয়ায়, কত পুরনো দিনের গল্প হয়৷


অমিয় খেতে পারছে না । একদম না । একটা টোস্ট মুখে তুলে দেখল | ভাল টোস্টটি হয়েছে, মুড়মুড় করে ভেঙে যাচ্ছে দাতের চাপে | তবু অমিয়র কাছে কাঠের গুঁড়োর মত বিশ্বাদ লাগে | ডিমটা থেকে আঁশটে গন্ধ আসে । দুধটাকে খড়িগোলা নে হয় অমিয় টোস্ট হাতে ধরে রেখে একবার চেষ্টা করে হাসির দিকে তাকায় ! আসলে তাকাতে তার ভয় করছিল । চোখে চোখ পড়ে । হাসির কোন দ্বিধা নেই, ভন্র নেই । এমন নিষ্ঠুর মেয়ে অমিয় খুব কমই দেখেছে। অমিযকে কখনো হাসি সমীহ করেনি । আজ পর্যন্ত বলতে গেলে হাসি সঠিক বৌ হয়নি অমিয়র | ইচ্ছে হয়নি বলে হাসি সন্তান-ধারণ করল লা আজ পর্যন্ত । না করে ভালই করেছে । নী তাহলে এখন অসুবিধে হত । হাসি তাই অধিয়র চোখে সোজা চোখ রাখতে পারে | ভয় পায় লুনা । অধিয়র কাছে তার কোন দায় নেই ।

আমি কিন্ত কয়েকটা জিনিস নিয়ে যাব । হাসি সকালে এই প্রথম কথা বলে । অমিয় ভ্রুতুলে বলে- কী বললে? লব. হাঁসি বলে– আমি কয়েকটা জিনিস নিয়ে যাব । এখানে তো আমার নিজস্ব কিছু নেই |
কী নেবে?…………………

লেখক সম্পর্কে

জন্ম ২ নভেম্বর, ১৯৩৫ ।

দেশ__ঢাকা জেলার বিক্রমপুর ৷ মোক্তার দাদু আইন ব্যবসা জমাতে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহে । সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে জন্ম । শৈশব কেটেছে নানা জায়গায় । পিতা রেলের চাকুরে | সেই সূত্রে এক যাযাবর জীবন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় । এরপর বিহার, উত্তরবাংলা, পূর্ববাংলা, আসাম ।

পঞ্চাশ দশকের গোড়ায় কুচবিহার | মিশনারি স্কুল ও বোর্ডি-এর জীবন | ভিকটোরিয়া কলেজ থেকে আই-এ । কলকাতার কলেজ থেকে বি এ। স্নাতকোত্তর পড়াশুনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে । স্কুল-শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু | এখন বৃত্তি-সাংবাদিকতা । আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত । ছাত্রজীবনের ম্যাগাজিনের গণ্ডী পেরিয়ে প্রথম গল্প-দেশ পাত্রকায় । প্রথম উপন্যাস “ঘুণপোকা? । “দেশ’ শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত | প্রথম কিশোর উপন্যাস__“মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ । কিশোর সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিরূপে ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার । ১৯৮৯ সালে পেয়েছেন সাহিত্য আকাদমি পুরস্কার । আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দুবার ।
খেলায় তাঁর উৎসাহ অদম্য । বকসিং, টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, টেবিল টেনিস সম্পর্কে যেমন, আযাথলিটক্‌সেও তেমনই আগ্রহী । জীবনের এক সংকটময় মুহুর্তে তিনি
জীবনের প্রতি আস্থা ফিরে পান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সান্নিধ্যে এসে | নিরামিষাশী । ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য । তাঁর রচনাতেও ঘুরে-ফিরে আসে আধ্যাত্মিক অন্বেষণ । পাঠক হিসেবে সর্বপ্রাসী | ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ প্রিয়, প্রিয় গ্রিলার এবং কল্পবিজ্ঞানও ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top