একটু চোখ বুলিয়ে নিন
১
আহমদ মুসাকে স্বাগত জানাল হোয়াইট হাউজের চীফ অব প্রোটোকল এ্যালান শেফার্ড।
আহমদ মুসাকে নিয়ে বসাল হোয়াইট হাউজের বৈদেশিক উইং-এর ভিভিআইপি কক্ষে। এ কক্ষেই প্রেসিডেন্ট বিদেশী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের সাক্ষাত দেন।
আহমদ মুসা বসলে এ্যালান শেফার্ড বলল, ‘মাফ করবেন স্যার, এক মিনিট, আমি আসছি।’
কিন্তু তার কথা শেষ না হতেই তার হাতের অয়্যারলেস টেলিফোন বেজে উঠল।
ধরল টেলিফোন এ্যালান শেফার্ড। টেলিফোন ধরে শুধু ‘ইয়েস স্যার’, ‘ইয়েস স্যার’, বলতে থাকল। সব শেষে বলল, ‘আমি ওঁকে নিয়ে যাচ্ছি স্যার।’
কথা শেষ করে কল অফ করে দিল এ্যালান শেফার্ড। তাকাল সে আহমদ মুসার দিকে। তার মুখে কিছু বিব্রত ভাব। বলল সে আহমদ মুসাকে, ‘স্যরি স্যার। আপনাকে আর একটু কষ্ট করতে হবে। আসুন আমার সাথে।’
বলে সে ঘুরে দাঁড়াল ঘর থেকে বের হবার জন্যে।
আহমদ মুসাও উঠে দাঁড়াল। চলল এ্যালান শেফার্ডের সাথে।
এ্যালান শেফার্ড আহমদ মুসাকে নিয়ে এল হোয়াইট হাউজের ডোমেষ্টিক উইং-এ। বসাল তাকে ভিভিআইপি কক্ষে। এ কক্ষেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট মার্কিন ভিভিআইপি’দের সাক্ষাত দেন।
আহমদ মুসা বসল। বলল হাসতে হাসতে, ‘কোন তৃতীয় স্থানে তো আর যেতে হবে না?’
এ্যালান শেফার্ডের বিব্রত অবস্থা বাড়ল। বলল, ‘স্যরি স্যঅর। ভুলটা আমারই হয়েছিল।’
‘কিন্তু বুঝতে পারলাম না। ‘বিদেশ’ থেকে ‘স্বদেশ’-এ আসলাম কেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্যার, এটাই তো হবে। আমার মত আপনিও ভুল করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো আপনার স্বদেশ। আপনি তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। আপনি তো ডোমেষ্টিক উইংয়েই আসবেন।’ বলল এ্যালান শেফার্ড।
‘ও এই কথা। এমন নাগরিক আমি তো প্রতিটি মুসলিম দেশের।’ হেসে বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার, অন্য অনেক দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনা হয় না। মার্কিন নাগরিকরা যে অধিকার ভোগ করে, তা দুনিয়ার অধিকাংশ দেশেই নেই।’ এ্যালান শেফার্ড বলল।
আবার অয়্যারলেস বিপ বিপ করা শুরু করল এ্যালান শেফার্ডের।
কথা বলল সে অয়্যারলেসে। কথা শেষ করেই সে ঘুরে তার পেছনের দেয়ালের দিকে এগুলো। দেয়ালের একটা ছবির সামনে দাঁড়াল। ছবিটি দেয়ালে সেঁটে আছে। ছবির বটমে সাপোর্টিং একটা কাঠের প্যানেল। প্যানেলে প্রায় অদৃশ্য কয়েকটা বোতাম। একটা বোতাম টিপল। সংগে সংগে আহমদ মুসার সামনের দেয়ালের একটা অংশ টেলিভিশন স্ক্রীনে রূপান্তরিত হলো। টিভি স্ক্রীনে ফুটে উঠেছে একটা বিশাল ঘরের দৃশ্য। ঘর ভর্তি মানুষ। একটি চেয়ারও খালি নেই। প্রতিটি চেয়ারের সামনে ডেষ্ক। ডেষ্কে প্রত্যেকের নোটশীট, কলম, রেকর্ডার রেডি। ঘরে ষ্টিল ও টিভি ক্যামেরার বন্যা।
এ্যালান শেফার্ড বলল, ‘স্যার আপনার একটু কষ্ট হবে। প্রেসিডেন্টের ‘meet the press’ অনুষ্ঠান শেষ মুহূর্তে এক ঘণ্টা পিছিয়ে যায়। আর দু’এক মিনিটের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট প্রেসের সামনে আসছেন। দুঃখিত স্যার, আপনাকে এক ঘণ্টা বসতে হবে।’
‘দুঃখ নয় মি. শেফার্ড, এটা খুশির বিষয় হলো। প্রোগ্রামটা এক ঘণ্টা পিছিয়ে যাওয়ায় প্রেসিডেন্টের প্রেস ব্রিফিং এখন সরাসরি দেখার আমার সৌভাগ্য হলো।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ স্যার। প্রেসিডেন্টের ‘meet the press’ অনুষ্ঠান আপনাকে আনন্দ দিলে আমরা খুব খুশি হবো।’
কথা শেষ করেই ‘এক মিনিট স্যার’ বলে সে বেরিয়ে গেল।
ঠিক এক মিনিটের মধ্যেই সে একটা ট্রেতে দুই মগ কফি এবং দুই হাফপ্লেট ভর্তি ক্র্যাকার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল।