Andaman Sorojontro by Abul Asad-41

আন্দামান ষড়যন্ত্র – আবুল আসাদ ( Andaman Sorojontro by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

‘বুঝলাম, হোটেল সাহারা থেকে তোমাদের উদ্ধারের কাহিনী এ জন্যেই তাহলে চেপে গেছ এতদিন। দারুণ রোমান্টিক কাহিনী’ বলল সুষমা রাও। সোফায় শাহ্ বানুর গলা জড়িয়ে ধরে বসে সুষমা।
শাহ্ বানু গলা থেকে সুষমার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, বাঁচা-মরার লড়াইয়ের মধ্যে রোমান্টিকতা কোথায় পেলে?’
বল কি তুমি রোমান্টিকতা নয়? দোতলা থেকে স্বপ্ন-নায়কের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়া, তা কাঁধে চলে প্রাচীরে ওঠা, তার হাতে ঝুলে নিচে নামা, ইত্যাদি রোজান্টিক নয় বলে মনে কর?’
আমি ঝাঁপিয়ে পড়িনি। দড়ির মই ছিঁড়ে পড়ে গিয়েছিলাম। এভাবে পাথরের উপর পড়লে বড় রকমেম কিছু ঘটতে পারতো। তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন। আর প্রাচীর পাও হওয়ার ময় যা ঘটেছে, ওরকম বিপদে এর চেয়েও বেশি কিছু ঘটতে পারে। আপতকালীন এসব বিষয় কেউ মনে রাখে না, মনে রাখার মত নয়। এখানে রোমান্টিকতা খোঁজা পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়।’ বলল শাহ্ বানু।
মনে রাখে না বলল, আচ্ছা বলত, ঐ ঘটনা তুমি আমৃত্য ভুলতে পারবে?’
‘মনে রাখা মানে আমি স্মরণ রাখা অর্থৈ বলিনি। বলেছি, মানুষ এমন ঘটনা রঙিন অর্থাৎ রোমান্টিক চোখে দেখে না। সে রকম দেখা একবারেই অস্বাভাবিক।’ শাহ্ বানু বলল।
‘তোমার সাথে এ নিয়ে তর্ক করবো না শাহ্ বানু। তবে বলব, চোখের পানিতে সুখের স্বপ্ন প্রতিবিম্বিত হতে পারে, হতাশার ঘনঘটার মধ্যে জীবনের প্রদীপ দীপ জলে উঠল বা দু’জীবনের মিলনের বীজ অংকুরিত হতে পারে। তুমি মানতে না চাইলেও এর লাখো দৃষ্টান্ত আছে পৃথিবীর ইতিহাসে।’ বলল সুষমা রাও।
‘দেখ সুষমা, পৃথিবীতে আহমদ মুসা আজ একজনই আছেন। তিনি তোমার ঐ ‘লাখোর মধ্যেকার একজন নন। তাই তোমার দৃষ্টান্ত অচল এখানে।’
‘আমি জানি শাহ্ বানু। আহমদ মুসা ভাইকে এই কথার বলার সাহস আমার নেই। আমি বলছি তোমার কথা। তোমার হৃদয়ের কথা।’
শাহ্ বানুর মুখ রাঙা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরণেই যন্ত্রণার এক কালো ছায়া এসে তা গ্রাস করে নিল। বলল শাহ্ বানু গম্ভীর কণ্ঠে, ‘কিন্তু আমাকে বলছ কেন?’
‘কারণ তোমার মুখে অমূল্য অনুরাগের এক রাঙা রূপ আমি বার বার দেখেছি। কিছুণ আগে ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় দেখেছি এবং এইমাত্রও দেখলাম।’
হাসল শাহ্ বানু। হেসে উঠলেও তার মুখের রাজকীয় লাবণ্য কিন্তু হেসে উঠল না। তাতে জড়ানো বেদনার প্রলেপ। বলল সে ধীর শান্তকণ্ঠে, ‘তুমি যেটা দেখেছ সেটা অন্যায় এবং এক অবাধ্যতা। আমি দুঃখিত তার জন্যে।’
অকষ্মাৎ ভারী হয়ে উঠেছে শাহ্ বানুর কণ্ঠ। তার শুকনো ঠোঁটে হাসি ফুটে আছে ঠিকই, কিন্তু তার দু’চোখ ফেটে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্র“।
মুহূর্তেই সুষমা রাওয়ের মুখ থেকে হাসি রসিকতার চিহৃ উঠে গেল। বিষ্ময়-বেদতনার ছায়া নামল তার চোখে-মুখে। বলল সে,’কি ব্যাপার শাহ্ বানু?’ উৎকণ্ঠা সুষমার রাওয়ের কণ্ঠে।
শাহ্ বানু চোখ মুছে হেসে উঠে জড়িয়ে ধরল সুষমা রাওকে। বলল, এস সুষমা এসব আমরা ভুলে যাই। আহমদ মুসা দেড় মাসের বাচ্চা রেখে এখানে এসেছেন এই জীবন-মৃত্যুর অভিযানে। এস আমরা তাঁর জন্যে এবং সেই মিষ্টি বাচ্চার জন্য দোয়া করি।
শাহ্ বানু জড়িয়ে ধরারয় সুষমা রাও নিশ্চল স্থির হয়ে গেছে। গোটা দেহ জুড়ে বয়ে গেল বেদনার এক স্রোত। বলল সুষমা রাও কাঁপা কণ্ঠে, ‘তুমি যা বলছ তা সত্য শাহ্ বানু? কার কাছে শুনেছ?’
‘আম্মার কাছে।’ বলল শাহ্ বানু।
শাহ্ বানু সুষমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসল। আগের মতই স্থির, নিশ্চল বসেছিল সুষমা রাও। দু’জনই নিরব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top