একটু চোখ বুলিয়ে নিন
সুরাইয়া অবাক হয়ে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
ছেলের নাম ইমন। বয়স পাচ বছর তিনমাস । মাথা ভর্তি কোকড়ানো
চুল। লম্বাটে ধরণের মুখ । মাঝে মাঝে সেই মুখ কোন এক বিচিত্র কারণে
গোলগাল দেখায়, আজ দেখাচ্ছে । ইমন তার মায়ের বিস্মিত দৃষ্টির কারণ
ধরতে পারছে না। সে ভুরু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ভুরু
কুঁচকানোর এই বদঅভ্যাস সে পেয়েছে তার বাবার কাছ থেকে । ইমনের বাবা
হাসানুজ্জামান অতি তুচ্ছ কারণে ভুরু কুঁচকে ফেলেন । সেই কুচকানো ভুরু
সহজে মসৃন হয় না।
সুরাইয়া বলল, ইমন একটা কাজ কর। আমার শোবার ঘরে যাও । ড্রেসিং
টেবিলের আয়নাটার সামনে দাড়াও । দাড়িয়ে সুন্দর করে হেসে আবার আমার
কাছে চলে এসো ।
ইমন বলল, কেন?
“আমি যেতে বলছি এই জন্যে যাবে । সব কিছুতে কেন কেন করবে না ।’
ইমন সরু গলায় বলল, সবকিছুতে কেন কেন করলে কি হয়?
সুরাইয়া বিরক্ত গলায় বলল, খুব খারাপ হয়। বড়রা কোন কথা বললে
কেন কেন না বলে সেই কথা শুনতে হয়। তোমাকে আয়নার সামনে যেতে
বলছি তুমি যাও। আয়নার সামনে দীড়িয়ে খুব সুন্দর করে হসিবে । মনে থাকে
যেন।
হাসলে কি হবে?
‘হাসলে খুব মজার একটা ব্যাপার হবে ।’
ইমন আয়নার দিকে যাচ্ছে। খুব যে আগ্রহের সঙ্গে যাচ্ছে তা না। আয়নার
সামনে দাড়িয়ে হাসলে মজার কিছু হবে বলে তার মনে হচ্ছে না। বড়রা যে
প্রায়ই অর্থহীন কথা বলে এই সত্য সে ধরতে শুরু করেছে।
লেখক সম্পর্কে
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকে’র মাধ্যমে আত্নপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগর জীবনের পটভূমিতেই তার অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহারণ ‘অচিনপুর’, ‘ফেরা’, মধ্যাহ্ন। মুক্তিযুদ্ধ বারবার তার লেখায় ফুঠে উটেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নির্বাসন’ প্রভৃতি উপন্যাস। ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ -এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। ‘বাদশা নামদার’, ‘মাতাল হাওয়া’য় অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজরা ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে।