Title | পারাপার |
Author | হুমায়ূন আহমেদ |
Publisher | হাতেখড়ি |
Edition | 7th Printed, 1997 |
Number of Pages | 93 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
সানগ্রাস পরা বেহেশতের পরী এতক্ষণে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এইসব
তথ্য আপনি আমার মার হাতে লেখা দেখতে গেলেন ?
জি না। আমি বলেছি ইনটুশন থেকে । আমার ইনটশন প্রবল। যে মেয়েটির কথা
বললাম দে বোধহয় আপনার মেয়ে ?
খুকি জবাব দিল না।
মাইক্রোবাস নড়ে উঠল। জ্যাম কমেছে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। গাড়ির সামনে
একটা ঠেলাগাড়ি আছে বলে গাড়িটাকে শন্ধুক গতিতে এগুতে হচ্ছে । আমি উঠে দাড়িয়ে
বললাম, যাই।
ভদ্রমহিলা তখনো নিজেকে সামলাতে পারেন নি। আমি যে চলে যাবার জনো উঠে
দাঁড়িয়েছি তাও বোধহয় বুঝতে পারেন নি। মাইক্রোবাসের শ্লাইডিং দরজা খোলার পর
তিনি সংবিত ফিরে গেলেন। তীক্ষ গলায় বললেন, না না, তুমি যেতে পারবে না।
এতক্ষণ আমাকে তুই বলছিলেন, শেষ সময়ে তুমি । ততক্ষণে আমি নেমে গেছি।
মাইক্রোবাসের জানালার কাচ সরিয়ে ভদ্রমহিলা ব্যাকুল হয়ে ডাকছেন, এই হিমু এই,
এই! এই ছেলে! আমি তার দিকে তাকিয়ে অতয়দানের হাসি হাসলাম-_ অর্থাৎ আসব।
আবার দেখা হবে।
ভুদ্রমহিলাকে আমি চিনতে পারছি লা। এই সমস্যাটা আমার ইদানীংকালে হচ্ছে।
মানুষ না-চেনা রোগ। মস্তিষ্কের যে অংশে স্মৃতি জমা থাকে দেই অংশে কিছু বোধহয়
হয়েছে। স্মৃতির ফাইল গায়েব হয়ে গেছে। এক সময়কার চেনা লোকজনদের সঙ্গে
দেখা হয়। যেহেতু ব্রেইন সেলে জমা রাখা তাদের ফাইল গায়েব হয়ে গেছে, সেহেতু
তাদের চিনতে পারি না। একজন নিওরোলজিস্টের সঙ্গে দেখা করা দরকার । রোগ
আরো বাড়বার আগেই চিকিৎসা দরকার, নয়তো দেখা যাবে কাউকেই চিনতে পারছি
না। সবাই অপরিচিত। অবশ্যি আমার ধারণা, সেই অভিজ্ঞতাও মজার অভিজ্ঞতা হবে।
৬০০ কোটি মানুষের বিশাল পৃথিবী, আমি কাউকেই চিনতে পারছি না।