📚 বই রিভিউ: “কিছু শৈশব” – হুমায়ূন আহমেদ
✍️ লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
📅 প্রকাশকাল: ২০০১
📖 ধরণ: আত্মজীবনীমূলক, সামাজিক, সৎ গল্প
🔖 প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ
🔍 বইটির পরিচিতি
“কিছু শৈশব” হুমায়ূন আহমেদের একটি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং হৃদয়স্পর্শী আত্মজীবনীমূলক বই। এটি তার শৈশবের স্মৃতি এবং জীবনের কিছু ছোট ছোট মুহূর্ত নিয়ে লেখা, যা পাঠকদের মনে এক ধরনের মিষ্টি বিষাদ এবং ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টি করে। বইটি তার শৈশবকালের কিছু বিশেষ মুহূর্ত এবং তার পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর অন্তর্নিহিত গল্পের মাধ্যমে লেখক নিজেকে প্রকাশ করেছেন।
বইটির মধ্যে শৈশবের খেলার আনন্দ, পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময় এবং ছোট ছোট বিপদ-আপদ উঠে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে আমাদের শৈশবের সরলতা, হাস্যরস এবং তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো অত্যন্ত মাধুর্য ও সোজাসাপ্টা ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে পাঠকরা অনুভব করতে পারবেন যে, শৈশব কেবল সময়ের এক টুকরো নয়, বরং এটি মানুষের জীবনের ভিত্তি এবং আধ্যাত্মিক নিরাময়ের জায়গা।
👥 প্রধান চরিত্র
- লেখক নিজেই: বইটির প্রধান চরিত্র হলেন লেখক নিজেই। তাঁর শৈশবের নানা অমূল্য স্মৃতি, জীবনযাত্রা এবং সামাজিক জীবন বইটিতে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। লেখক তার ছোটবেলার গল্পগুলো শেয়ার করেছেন, যা তার পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতাকে প্রকাশ করে।
- পরিবারের সদস্যরা: হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্যরা বইটির একটি বিশেষ অংশ। তার মা, বাবা, ভাই-বোন এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে তার সম্পর্কের খুঁটিনাটি এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, যা একেবারে হৃদয়গ্রাহী এবং জীবন্ত মনে হয়।
- বন্ধুরা: লেখকের শৈশবের বন্ধুরা এবং তাদের সঙ্গে কাটানো সময়ও বইটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা লেখকের জীবনের আনন্দ এবং কিছু সময়ের দুঃখের সঙ্গী ছিল, যা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হবে।
🎯 থিম ও বার্তা
- শৈশবের সাদাসিধে সুখ: বইটির মূল থিম হলো শৈশবের নির্দোষ আনন্দ এবং সাদাসিধে জীবন। হুমায়ূন আহমেদ তার শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, শৈশবের আনন্দ এবং সুখ শুধু ছোট জিনিসগুলোতে লুকিয়ে থাকে—যেমন খেলার সময়, প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকা, ছোট ছোট ভুল এবং সেগুলোর মাধ্যমে শেখা।
- পারিবারিক সম্পর্ক: বইটিতে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। লেখক তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং ভালো সম্পর্কের কথা বলেছেন, যা একটি গার্হস্থ্য জীবনের মূল ভিত্তি।
- বন্ধুত্ব ও জীবনের শিক্ষা: “কিছু শৈশব” বইটি বন্ধুত্বের মাধুর্য এবং জীবনকে সহজভাবে উপভোগ করার শিক্ষা দেয়। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়ের মাধ্যমে লেখক শিখেছেন কীভাবে জীবনের ছোট ছোট আনন্দকে সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়।
- স্মৃতির গুরুত্ব: এই বইটি স্মৃতির শক্তি এবং তাদের জীবনকে গঠন করার ক্ষমতার কথা বলেছে। লেখক তার শৈশবের স্মৃতি থেকে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ নিয়ে এসে নিজের জীবনকে নতুন করে দেখতে শিখেছেন।
✍️ লেখার ধরন
হুমায়ূন আহমেদ তার চিরাচরিত সরল ভাষায় “কিছু শৈশব” উপন্যাসটি লিখেছেন। তাঁর লেখার ধরন অত্যন্ত সোজাসাপ্টা এবং বোধগম্য, যা পাঠককে খুব সহজে আকৃষ্ট করে। তার লেখার মধ্যে কোনো জটিলতা নেই, বরং প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য পাঠককে সহানুভূতির সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি শৈশবের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো এত সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পাঠক তা নিজের জীবনে অনুভব করতে পারেন।
এই বইটি লিখতে গিয়ে লেখক একদিকে যেমন তার শৈশবের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করেছেন, অন্যদিকে, সেগুলোর মধ্যে থাকা জীবনধারণের নৈতিক শিক্ষা এবং মানুষের সম্পর্কের গভীরতা ফুটিয়ে তুলেছেন। তার সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাষার সহজতা পাঠকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
💬 পাঠ প্রতিক্রিয়া
“কিছু শৈশব” একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং হৃদয়গ্রাহী বই, যা পাঠকদেরকে জীবনের শৈশবের সঙ্গে এক নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে সহায়তা করে। হুমায়ূন আহমেদ তার শৈশবের গল্পগুলো খুবই সাদাসিধে এবং তবুও মর্মস্পর্শীভাবে বর্ণনা করেছেন, যা কোনো পাঠকের কাছে সহজেই হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে।
এই বইটি তার পাঠকদের মধ্যে শৈশবের মধুর স্মৃতির পুনর্জাগরণ ঘটাতে সহায়তা করে। লেখকের সরলতা এবং আন্তরিকতা পাঠকদের সাথে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি করে, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এটি পাঠকদেরকে নিজেদের শৈশব এবং জীবনের প্রাথমিক মুহূর্তগুলোর দিকে ফিরে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করে।
✅ কেন পড়বেন?
- যদি আপনি শৈশবের সরলতা এবং আনন্দের অনুভূতি ফিরে পেতে চান
- যদি আপনি এমন একটি বই পড়তে চান যা পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধুত্ব এবং জীবনের মৌলিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করে
- যদি আপনি হুমায়ূন আহমেদের লেখার সহজতা এবং হৃদয়স্পর্শী ভাষা উপভোগ করেন
- যদি আপনি এমন একটি বই চান যা আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি মনে করিয়ে দেয়
🔚 উপসংহার
“কিছু শৈশব” হুমায়ূন আহমেদের একটি অসাধারণ সৃষ্টি, যা শৈশবের সরলতা, সম্পর্ক এবং জীবনের মাধুর্য তুলে ধরে। এটি একটি হৃদয়গ্রাহী এবং সৃষ্টিশীল উপন্যাস যা পাঠককে জীবনের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই বইটি আমাদের শিখিয়েছে যে, শৈশবের ছোট ছোট মুহূর্ত এবং সম্পর্কই আসলে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এটি পাঠকদের মনে এক অদ্ভুত এবং মিষ্টি অনুভূতি সৃষ্টি করবে, যা তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতির প্রতি নতুন এক দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে সহায়তা করবে।
আপনার কপি কিনুন রকমারি.কম থেকে–
এবং
বইটির ফ্রি সফট কপি ডাউনলোড করুন এখানে-
