একটু চোখ বুলিয়ে নিন
আমার আপন আধার
তীব্র যন্ত্রণায় ঘুম ভাঙল। মনে হল সারা গায়ে কাটা ফুটে গেছে। নিঘঘতি কোন
দুস্বপ্নু। ইদানীং ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখছি। আমি চোখ মেলে দেখি __ দুঃস্বপ্ন
নয়, আসলেই কাটা ফুটেছে। বিছানাময় গোলাপ ফুল। পাশ ফিরতেই গায়ে
গোলাপের কাটা বিধল। ব্যাপার বুঝতে বেশি সময় লাগল না। আজ আমার
জন্মদিন। আমার কন্যারা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগ করে বিছানাময় কাটাসুদ্ধ
গোলাপ বিছিয়ে রেখেছে। ফুলের কাটাই বিধেছে। ফুলশয্যা সবসময় আনন্দময়
নয়।
আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এখন জেগে উঠা যাবে না। আমার
কন্যারা নিশ্চয় জাগাবার জন্যেও কোন বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছে। ওদের
বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। কাটার ঘা শরীরে নিয়ে গভীর ঘুমের ভান করলাম।
বিকট শব্দে রেকর্ড প্রেয়ার বেজে উঠলো। এই হচ্ছে আমাকে জাগাবার
কৌশল। কয়েকদিন ধরে যে গানটি বাজাচ্ছি কন্যারা সেই গানটি ফুল ভল্যুমে
দিয়ে দিয়েছে। কানের পর্দা ফেটে যাবার অবস্থা। সুচিত্রা মিত্র আকাশ ফাটিয়ে
গাইছেন,
অধীর হল কেন জানি
আকাশ কোণে যায় শোনা কি
ভোরের আলোর কানাকানি।।”
আমি বিছানায় উঠে বসলাম। তিন কন্যা একসঙ্গে টেচিয়ে উঠলো __“হেপি
বার্থ ডে!” বড় কন্যার হাতে একটা ট্রে। সেই ট্রেতে একটা কাপ। কানায় কানায়
ভর্তি চা। চায়ে দুধের সর ভাসছে। মনে হচ্ছে কন্যারা তাদের সমস্ত প্রতিভা ব্যয়
করে চা বানিয়েছে।
লেখক সম্পর্কে
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকে’র মাধ্যমে আত্নপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগর জীবনের পটভূমিতেই তার অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহারণ ‘অচিনপুর’, ‘ফেরা’, মধ্যাহ্ন। মুক্তিযুদ্ধ বারবার তার লেখায় ফুঠে উটেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নির্বাসন’ প্রভৃতি উপন্যাস। ‘গৌরিপুর জংশন’, ‘যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ’, চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ -এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। ‘বাদশা নামদার’, ‘মাতাল হাওয়া’য় অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজরা ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে।