একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
“মারা যাচ্ছি আমি! ভাবনাটা যেন ঝাকি দিয়ে বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে এল ডিন মার্টিনকে । ঘোলাটে মগজটা সাফ হয়ে গেল আবার । বিড়বিড় করল ও, “না, মরব না, কিছুতেই মরব না!”
লম্বা, পাকানো রশির মত দেহ ওর। চওড়া একটা পাথুরে তাকে বসে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে আছে। ভাল হাতটা দিয়ে সরিয়ে দিল কপালে এসে পড়া এক গোছা চুল।
মাথাটা দপ্দপ্ করছে । পাথরে বাড়ি খেয়েছিল ওর মাথা । মগজের পরিষ্কার ভাবটা বেশিক্ষণ রইল না; আবার ঘোলাটে হয়ে এল । এখানে পড়ে যাওয়ার পর থেকে, গত এক ঘণ্টায় অন্তত ছয়-সাতবার এমন হয়েছে। প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চলে যায় । ঘোরের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে । অতীতের একটাই ভয়ানক স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে । ঘেমে নেয়ে ওঠে শরীর ।
ছয়শো ফুট নীচে গভীর গিরিসঙ্কটের ভিতর দিয়ে বইছে টার্ন নদী, এঁকেবেঁকে চলে গেছে পশ্চিমে জ্যারোনি নদীর দিকে, স্রোতের মৃদু কুলকুল শব্দ কানে আসছে। উপত্যকার চুনাপাথর কেটে একই ভঙ্গিতে বয়ে চলেছে দশ লক্ষ বছর ধরে। এখান থেকে আঠারো ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়া, ওখানেই দাড়িয়ে ছিল ও। অন্য পাড়ের ঝোপেঝাড়ে ভরা গিরিখাতের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিল। সূর্য ছিল তখন মাথার ওপর, মার্চের নরম রোদ ছড়াচ্ছিল।
মনে পড়ল, পিঠে বাধা ছোট ব্যাকপ্যাটাকে সোজা করার জন্য ঘুরতে গিয়েই বিপত্তিটা ঘটেছে। শ্যাওলায় ঢাকা পিচ্ছিল পাথরে পা পিছলে ছিল। তারপরের কথা আর মনে করতে পারছে না। ঘটনাটা ঘটেছে এখন থেকে তিন
ঘণ্টা আগে, ঘড়ি দেখে বুঝেছে। বা হাতে ব্যথা পেয়েছে । আঙুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ফুলে গেছে। এতই ফোলা, ঘড়ি খুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছে । হাড় ভেঙেছে বোধহয় ।
আবার ঘড়ির দিকে তাকাল ও । সাড়ে-তিনটে বাজে । জোর করে টেনে তুলল নিজেকে । উঠে দাড়িয়ে ওপর দিকে তাকাল। খাড়া উঠে গেছে পাথরের দেয়াল। বেশি নয়, মাত্র আঠারো ফুট । খাজ আর ফাটলও আছে কিছু । এমনিতে বেয়ে ওঠা কঠিন হলেও অসম্ভব হতো না। কিন্তু বা হাত অকেজো হয়ে গিয়েই বেকায়দা করেছে। ভাঙা হাত নিয়েই ওঠার চেষ্টা করেছিল একবার । প্রচণ্ড ব্যথায় বো করে চক্কর দিয়ে উঠেছিল মাথা । জ্ঞান হারিয়ে তাক থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি বসে পড়েছিল আবার ।
আশপাশটা ভালমত দেখল আরেকবার ও । তাকটা দেখতে অনেকটা তৃতীয়ার বাকা চাদের মত । লম্বায় ফুট বিশেক হবে। ও যেখানে বসে আছে সেখানটা ছয় ফুট চওড়া। দুই মাথা সরু হতে হতে মিশে গেছে পাহাড়ের গায়ে।
এখান থেকে বেরোনোর একটাই উপায়, ওপর দিকে ওঠা- যেখান থেকে পড়েছে, সেখানে উঠে উল্টোদিকের ঢাল বেয়ে নামতে হবে।
আবার ঘোলাটে হয়ে আসছে মগজ । ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ও। ফিরে এল পুরনো দুঃস্বপ্নটা। এই নিয়ে কল্পনায় কতবার যে গ্রেনেডটাকে গড়াগড়ি খেতে দেখেছে প্লেনের সিটের ফাকে । যেন কানে আসছে এখনও আতঙ্কিত যাত্রীদের
চিৎকার । সিটে বসা অল্প বয়েসী লোকটার সাদা হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে পাচ্ছে। পাশে বসা ওর তরুণী স্ত্রী আর একটা ফুটফুটে বাচ্চা। নিজের দেহ দিয়ে আড়াল করে ওদের বাচাতে গ্রেনেডের ওপরই ঝাপ দিয়েছিল লোকটা । কিন্ত
আটকাতে পারেনি । কালো আনারসের মত দেখতে জিনিসটা গড়াতে গড়াতে চলে গেছে সিটের নীচে বিস্ফোরিত হয়েছে কলজে-কাপানো শব্দে ।
ঝটকা দিয়ে আবার জেগে উঠল ও । দুই হাতে কান ঢেকে ফেলেছে নিজের অজান্তে । চিবুক বেয়ে ঘাম ঝরছে, এদিকে শীত লাগছে । ঘড়ি দেখল আবার । চারটে বাজে । সন্ধ্যার দেরি নেই। তাপমাত্রা আরও কমবে, একেবারে শূন্য ডিগ্রির
কাছাকাছি নেমে যাবে । ব্যাকপ্যাকে একটা হালকা শাওয়ারপ্রফ টপ-কোট আর এক টুকরো চকলেট আছে । এক ফ্লাস্ক কফিও ছিল, তবে ওপর থেকে পড়ার সময় পাথরে বাড়ি লেগে ছিটকে চলে গেছে ওটা কোথায় কে জানে । একটা রাত হয়তো কোনওমতে কাটাতে পারবে এখানে ও, তারপর আর সম্ভব নয়।
নদীর ওপারে হাজারখানেক গজ দূরে রয়েছে রাস্তাটা । এখান থেকে রাস্তার একটা অংশ চোখে পড়ছে, প্রায় একশো গজ দীর্ঘ, একটা বাক । আগেরবার যখন হুশ ফিরেছিল, মনে আছে, অন্তত দু’বার ওই পথে গাড়ি যেতে দেখে রুমাল নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল । কিন্তু দৃষ্টিপথে দশ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয়নি গাড়িগুলো । এত সামান্য সময়ে ওর দিকে আরোহীদের চোখ পড়ার কথা নয়।
খিদেয় মোচড় দিল পেট । খাওয়া দরকার । চকলেটের জন্য ব্যাকপ্যাক হাতড়াচ্ছে, এ সময় একটা গাড়ি এসে থামল রাস্তার বাকে । একটা ভ্যান, সম্ভবত ডোরমোবিল। দূর থেকে খেলনার মত লাগছে । এক মুহূর্ত পর গাড়ি থেকে নামল
দুটো পেঙ্গুইন। আসলে দু’জন মহিলা । সাদা-কালো পোশাকে দূর থেকে ওদের পেঙ্গুইনের মত লাগছে।
‘নান,’ বিড়বিড় করল ও । নিজেকে বলল, “মাই ডিয়ার ডিন, এখনও তোমার ওপর থেকে ঈশ্বরের করুণা একেবারে চলে যায়নি। ওই দেখো, তোমাকে উদ্ধারের জন্যে তিনি দূজন নানকে পাঠিয়েছেন!
বার বার পিছন তাকাচ্ছে ওরা, যেদিক থেকে এসেছে । মাঝে মাঝে হাত তুলে পরস্পরকে কী যেন বলছে।
রুমাল নেড়ে ওদের চোখে পড়ার চেষ্টা করল ডিন। নাড়তে নাড়তে হাত ব্যথা হয়ে গেল, কিন্ত মহিলাদের চোখে পড়ল বলে যনে হলো না। হতাশ হয়ে শেষে আকাশের দিকে মুখ তুলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলল. “নান পাঠিয়েছ না কচু,
ওরা তো আমার দিকে তাকাচ্ছেই না! দেখো, দেখো, ওপরে বসে বসে আমার দুর্দশা দেখো! তোমার তো মজাই লাগছে, হতচ্ছাড়া বুড়ো ভাম কোথাকার!”
একটু চকলেট ভেঙে মুখে দিল ও । চোখ রাস্তার দিকে । গলা শুকিয়ে খসখসে হয়ে গেছে। বিস্বাদ লাগছে চকলেট । চোখ ঝাপসা হয়ে এল । কখন আবার ঘোরের মধ্যে চলে গেছে. বলতে পারবে না । দুজনের মধ্যে অল্পবয়েসী নানটির চেহারা সুন্দর, গোলগাল মুখ । ও দাড়িয়ে আছে রাস্তার কিনারে নদীটার ধারে ।একসময় এখানে পাথরে তৈরি সাদা রঙ করা নিচ বেড়া ছিল, এখন অনেক জায়গাতেই ভেঙে গেছে। বেড়ার ওপাশে খাড়া নেমে গেছে গিরিসঙ্কটের দেয়াল, প্রায় ছয়শো ফুট নীচে । রাস্তার অন্যপাশে পাহাড়ের দেয়াল ।
ওর সঙ্গী, দ্বিতীয় মহিলাটি দাড়িয়ে আছে ডোরমোবিল ভ্যানটার কাছে। বয়েস পয়ত্রিশ-ছত্রিশ । এর চেহারাও সুন্দর ৷ চোখা নাক।
পাহাড়ি রাস্তার ঢালের দিকে তাক্ল অল্পবয়েসী নান। পাহাড়ের দেয়ালে ঘেরা বাক ওখানটায়। নাক টেনে বিরক্তির সঙ্গে বলল, ‘এতক্ষণে তো ওই বিটকেল জন্তটার চলে আসার কথা । সারাদিন রাস্তায় দাড়িয়ে থাকব নাকি?’ ইংল্যাণ্ডের
লিভারপুলের ঢঙে কথা বললেও আমেরিকান টান বোঝা যায় পরিষ্কার।
ঝট করে মুখ তুলে তাকাল ওর দিকে দ্বিতীয় নান। “দেখো, জেনি, বারবার কিন্ত সাবধান করতে পারব না তোমাকে ।’ এর উচ্চারণে স্কটিশ হাইল্যান্ডারদের টান। “ছিহ, এ রকম বাজে ভাষায় কথা বলে নাকি নানেরা? তা ছাড়া তোমার মত
সুন্দরী ভদ্র মহিলার কণ্ঠে ওসব অভদ্র কথা মানায়ও না।’
মুখ বাকিয়ে হাসল জেনি । জ্বলে উঠল ওর কালো ধোয়াটে চোখ । “হু, নিউ অর্লিয়ান্সের বেশ্যার মুখে মানায় ।’
“উফ্, আজ কী হয়েছে তোমার, জেনি? আমাকে খোচাচ্ছ কেন? কবে অস্বীকার করেছি, আমি পতিতাদের সর্দারনী ছিলাম? তুমি জানো, ভদ্রলোকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতাম নিতান্তই পেটের তাগিদে । ওই পেশায় না গিয়ে উপায় ছিল না আমার!’
“জানি, মিসেস মেরি ফ্রিজেট, প্রয়োজনের তাগিদেই তো ওসব ভদ্রলোকদের মনোরঞ্জন করতে এই পেশায় আসে আমাদের মত অভাবী মেয়েরা, পরে স্বভাব বদলে যায়। তা ছাড়া তোমার পাল্লায় পড়েই নাম লিখিয়েছিলাম । এর সঙ্গে
ভদ্রভাবে কথা বলার কী সম্পর্ক? মন খুলে কথাও বলা যাবে না নাকি?
‘এ নিয়ে পরে আরেকদিন কথা বলব, কিছুটা কঠিন হলো মেরির কণ্ঠ। ‘শোনো, ওই কাজটা যখন নিয়েছিলে, তখন কিন্তু খুশি হয়েই নিয়েছিলে। ওটা থেকে যে বেচে গেলে, আমারই কল্যাণে, তার জন্যে নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দাও । কী, আমি তোমাকে তুলে আনিনি, অস্বীকার করতে পারবে?
“না, অস্বীকার করছি না। তবে এনেছ আমার যোগ্যতার কারণে । তোমার পতিতালয়ের আর কেউ অন্যের গলায় ক্ষুর চালানোর সাহস রাখে না, কিংবা পিয়ানোর তার দিয়ে ‘গলায় ফাস পরাতে পারে না। তা ছাড়া, তোমার নোংরা
সমকামিতায় আমি ছাড়া আর কে সাড়া দিত, সহযোগিতা করত, বলো? তিক্ত হাসি ফুটল জেনির ঠোটে ।
মেরির সুন্দর নাকের নীচে ঠোট দুটো শক্ত হয়ে গেল। “তোমার মনটা খুব নীচ, জেনিফার গ্রেগ। ঠিক আছে, ভাল না লাগলে কোরো না। জো লুইকে বলব?
সতর্ক হয়ে গেল জেনি । বদলে গেল মুখের ভাব । এতক্ষণে খেয়াল হলো, বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে । সহজে মেজাজ খারাপ করে না মেরি। যখন ও জেনিফার গ্রেগ বলে ডাকে, বুঝতে হবে প্রচণ্ড রেগে গেছে । আর মেরির রেগে যাওয়াটা বিপজ্জনক । খুবই বিপদজনক।
জেনির ধোয়াটে চোখ থেকে রুক্ষতা উধাও হয়ে গেল. অনুশোচনা দেখা দিল সেখানে । তোয়াজের ভঙ্গিতে বলল, “সরি, মেরি, সত্যিই আমি দুঃখিত । আসলে, এমন একটা কাজে আছি, এত উত্তেজনা, মন-মেজাজ ঠিক রাখতে পারি না, মুখ ফসকে আজেবাজে কথা বলে ফেলি। প্লিজ, জো লুইকে কিছু বোলো না। গতবার কী যে ভয়ঙ্কর অত্যাচারটা করেছে আমার ওপর…
মৃদু একটা শব্দ কানে আসতেই থেমে গেল ও । পাক খেয়ে ঘুরে দাড়াল দুজনে। রাস্তার কিনারে বেড়ার মত দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় বিশ ফুট উঁচু পাহাড়ের দেয়াল থেকে লাফিয়ে নেমেছে একজন লোক । পরনে গাঢ় রঙের স্ন্যাকস আর
ব্লেজার, গায়ে হালকা হলুদ শার্ট, গলায় বাধা কালো রুমাল । বুকের কাছে ঝুলছে একটা ফিল্ড গ্লাস। ঝাড়া সওয়া ছয় ফুট লম্বা, চওড়া কাধ, এতবড় একটা শরীর নিয়ে অবিশ্বাস্য হালকা ভঙ্গিতে হাটে, মনে হয় যেন মাটি স্পর্শ করে না পা, উড়ে চলে। সোনালি দাড়ি আর সোনালি চুল চৌকোনা মুখটাকে ঘিরে যেন সোনালি আভা তৈরি করেছে। চোখ দুটো হালকা নীল । দেখেই বোঝা যায়, প্রচণ্ড শক্তি আর ক্ষমতা ধরে ওই দেহে। লোহার বর্ম পরিয়ে হাতে তলোয়ার ধরিয়ে দিলে মধ্যযুগীয় বীরযোদ্ধা হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে অনায়াসে ।
মেরি বলল, “এই যে, মিস্টার জো লুই, চলে এসেছেন।’ জো লুই ওর ডাকনাম, নিজেই চালু করেছে। নাম আসলে লুই ক্যামারো । কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা জো লুই-এর ভক্ত, তাই তখন থেকেই নিজের নামটাকে বদলে জো লুই করে নিয়েছে। মিস্টার না বললে বা আসল নামে ডাকলে ও অখুশি হয়। তাই সবাই ওকে মিস্টার জো লুই বলে ডাকে, আসল নামে ডাকার সাহস পায় না, এমনকী ওর বস্ হেনরি ক্লিঙ্গার ও না।
মেরির কথায় হেসে মাথা ঝাকাল জো লুই। এক মাইল পথ দৌড়ে এসেছে, পাহাড়ি পথে, ভাঙা পাথরের টুকরো মাড়িয়ে, কিন্তু পরিশ্রমের কোন চিহ্নই দেখা যাচ্ছে না ওর চেহারায় । হাপাচ্ছেও না একটু।
“গাড়িটা আসছে, পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাবে । তোমরা তৈরি?
হ্যা, মিস্টার জো লুই । পরিকল্পনায় কোনও পরিবর্তন হয়নি তো?’
“না, মিসেস ফিজেট। তুমি আর জেনি প্রথমটুকু শেষ করো । আমি লুকিয়ে থেকে চোখ রাখব, সময় হলেই বেরোব ।”
“ভাববেন না, মিস্টার জো লুই । আমি আর জেনি ঠিকমতই সেরে ফেলব । তারটাও রেডি রেখেছে ও ৷”
“তোমাদের দুজনের ওপরই আমার বিশ্বাস আছে, মিসেস ফিজেট ।’ কঠিন হয়ে উঠল জো লুই-এর দৃষ্টি । “তবে, মনে রেখো, জেনিকে যদি কোনও কারণে তারটা ব্যবহার করতে হয়, তোমার ওপর আমি খুশি হব না। আর তারপর কী
ঘটবে এসে তো নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছ।
রক্ত সরে গেল মেরির মুখ থেকে । “না, আসলে বলতে চাইনি, মুখ ফসকে তারের কথাটা বেরিয়ে গেছে।’
ভবিষ্যতে মুখ ফসকানোর ব্যাপারেও সাবধান থাকবে। মিসেস ফ্রিজেট। মুখ ফসকানোও আমি পছন্দ করি না।” রাস্তার পাশে চলে গেল জো লুই। দ্রুত হেঁটে পৌছে গেল পাহাড়ের দেয়ালটা যেখানে নিচু হয়ে এসেছে সেখানে । দেয়ালের মাথা এখানে আট ফুটের মত উচু । হাত বাড়িয়ে কিনারটা ধরে এক দোল দিয়ে উঠে গেল ওপরে, অদৃশ্য হয়ে গেল চোখের পলকে।
ভ্যানের কাছে গিয়ে দাড়াল জেনি । জ্যাক বের করে গাড়ির একটা চাকার কাছে রাখল । “ইস্, ওর গলায় যদি ফাসটা পরাতে পারতাম!” বিড়বিড় করল ও। সামান্য একটু ভুল করলেও এমন নির্যাতন করে, উফ…”
হাজার গজ দূরে, সর্পিল রাস্তাটার বাঁকের ওপাশে, ন্বাভাবিক গতিতে ছুটে আসছে একটা পিজো ৫০৪ গাড়ি । হাই তুলল পিছনের সিটে বসা সলীল সেন । ফ্রান্স সহ পশ্চিম ইউরোপের পাঁচটি দেশের বিসিআই রেসিডেন্ট চিফ ও–অবশ্যই এমব্যাসির ছত্রছায়ায় । বিভিন্ন পরিচয়ে কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পয়ত্রিশজন এজেন্টের হেড । ক্লান্ত, কিন্ত খুশি সলীল। ব্রাসেলস-এ ন্যাটো ইন্টেলিজেন্সের কো-অর্ডিনেশন কমিটির কাজ হচ্ছিল, তাতে চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করে এসেছে। প্রচণ্ড খাটুনি গেছে গত একটা হপ্তা। তারপর গত আট ঘণ্টা ধরে ছুটছে ফ্রান্সের রাস্তায় । আর মিনিট বিশেকের মধ্যেই পৌছে যাবে ওবার্য ডু টার্ন-এ–লা মেলানি পাহাড়ের উপত্যকায় বয়ে যাওয়া একটা নদীর ধারের ছোট্ট সরাইখানায় । ওখানে সোহানা ও রানা আছে, ছুটি কাটাচ্ছে।
চারদিন থাকবে ওখানে সলীল । কোন কাজ নেই-শুধু হাটাহাটি, মাছ ধরা, গল্প । সন্ধ্যায় রানা-সোহানার সঙ্গে তাস খেলে কাটাবে ও। ভাবতেও ভাল লাগছে । কতদিন যে এভাবে বিশ্রাম নেয়নি, মানে, নিতে পারেনি । সামনের আকাবাকা পথটার দিকের স্বপ্নীল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে মনে মনে রোমাঞ্চিত হচ্ছে ও । হুইলের ওপর ঝুঁকে থাকা ড্রাইভারের হাত নড়ার সঙ্গে ক্রমাগত কেঁপে কেপে ওঠা পিঠের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “জন, আমাকে নামিয়ে দেয়ার পর কী করতে হবে তোমাকে, মনে আছে তো?”
“আছে, সার, জনের লাল চুলভর্তি মাথাটা ওপরে-নীচে ঝাকি খেল। “মিলাউতে চলে যাব, মডার্ন হোটেলে রুম বুক করব, সেখানে মিস্টার রয় কনারির কোনও নির্দেশনা আসে কি না, সেই অপেক্ষায় ওখানে থাকব দুদিন। দুদিন পরেও যদি তিনি কোনও খবর না দেন, অফিসে ফোন করে পরবর্তী নির্দেশ জেনে
নিতে হবে আমাকে । মার্চ কোড, ভ্যারিয়েশন সিক্স ।’
গুড ।” সন্তষ্ট হয়ে সিটে হেলান দিল সলীল সেন । মাসখানেক হলো লোকটা ওর ড্রাইভারের কাজ করছে, খুবই দক্ষ । সলীলের খুব পছন্দ ওকে । কথা না বলে থাকতে পারে না জন। আজ কেন যেন বড় বেশি চুপচাপ । প্রথম থেকেই ব্যাপারটা লক্ষ করলেও এতক্ষণ, কিছু বলেনি সলীল। জিজ্ঞেস করল, ‘আজ মুখে কথা নেই কেন, জন? কিছু হয়েছে নাকি?
“কই, না তো সার!’ চমকে উঠল জন । মাথা নাড়ল। “না, কিছু না। আমি তো ঠিকই আছি। কেন?
“কিন্তু এত চুপচাপ যে?
“ভাবলাম, এই ক’দিন তো অসুস্থ শরীর নিয়েও প্রচুর খাটনি গেছে আপনার, বিশ্রাম নিচ্ছেন–তাই বিরক্ত করিনি ।”
“ও ।”
আবার আগামী কয়েকটা দিনের কথা ভেবে সুখস্বপ্নে বিভোর হল সলীল। কতদিন এমনি একসাথে হয়নি ওরা! রানা-সোহানার সঙ্গে তিন-চারটে দিন কাটালেই, ওর ধারণা, ভাল হয়ে যাবে ওর অসুখ। হঠাৎ গাড়ির গতি কমে যাওয়ায় ভাবনায় ছেদ পড়ল ওর । দেখল, পাহাড়ের একটা বাকের মধ্যে ঢুকেছে গাড়ি, রাস্তার পাশে একটা ডোরমোবিল ভ্যান দাড়ানো, চাকার কাছে জ্যাক রাখা । দুজন নান রয়েছে সেখানে, একজন লিক হওয়া চাকা বদলানোর একটা
ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়েল দেখছে, আরেকজন তাকিয়ে আছে সলীলের পিজোটার দিকে।
ওদের দশ কদম দূরে গাড়ি রাখল জন। ইন্জিন চালু রেখে সলীলের দিকে ফিরে তাকাল । “চাকা পাংচার হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, সার । বদলে দিতে যাব?
“নিশ্চয় যাবে । মহিলা মানুষ, এ রকম নির্জন পথে আটকা পড়েছে, সাহায্য তো করাই উচিত”
প্রথমে এসি, তারপর ইঞ্জিন বন্ধ করল জন, গাড়ি থেকে নামল ৷ পিছনের দরজা খুলে দিয়ে সলীলকে বলল, “হাত-পা একটু নেড়ে-চেড়ে নিন, সার।’
‘না। বসেই থাকি। নামলেই ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”
“বলার দরকার কী, সার। অন্যদিকে যেতে পারেন । বাইরের তাজা বাতাস খেয়ে নিন দশটা মিনিট ।’
কৌতুহলী দৃষ্টিতে জনের দিকে তাকাল সলীল। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ওর মুখ, ভুরুর ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম।
“ইচ্ছে হলে আমি নিজেই নামব, জন। কিন্তু তোমার কী হলো? শরীর খারাপ লাগছে?
জনের ডান হাতটা ওপরে উঠল । অবাক হয়ে সলীল দেখল, ওর হাতে একটা .৩৮ স্মিথ এন্ড ওয়েসন রিভলভার, দুই ইঞ্চি লম্বা ব্যারেল । তাক করে ধরেছে তার দিকে।
নামুন, চাপা স্বরে আদেশ দিল জন।
রিভলভারের ব্যারেলটার দিকে তাকাল সলীল। বুঝল, মিথ্যে হুমকি দিচ্ছেনা জন। আস্তে পা বাড়াল দরজার দিকে, সিটের বাইরে । কী করবে, ভাবছে। আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে রিভলভারটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে । একটা
সময় ছিল, যখন এ ধরনের কাজ অনেক করেছে ও । কিন্তু এখন ক্ষিপ্রতা বলতে কিছুই নেই আর । ইজরাইলে একটা আ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়েছিল । অনেক মেরেছিল ওকে ওরা । তারপর কথা আদায়ের জন্য ড্রাগ পুশ করেছিল । রানা ও বিসিআইয়ের নতুন একটা ছেলে ইসমাইল মিলে অনেক কষ্টে ওকে উদ্ধার করে এনেছিল । ভয়ঙ্কর ওই রাসায়নিক ওর দেহের মেটাবলিক সিসটেমকে গড়বড় করে দিয়েছে । থলথলে মোটা হয়ে গেছে শরীর । রানারই বয়েসী, অথচ দেখলে মনে হয় পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছর। কোনমতে দেহটাকে টেনে- হিচড়ে নিয়ে বেড়ায়। কিন্তু মগজের ক্ষমতা সামান্যতম নষ্ট হয়নি বলে ওকে ‘বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইউরোপিয়ান জোনের হেড বানিয়ে দেয়া হয়েছে । প্যারিসে অফিস।
জনের দিকে তাকিয়ে আছে সলীল। মোটেও আনাড়ি মনে হচ্ছে না লোকটাকে । এমনভাবে রিভলভারটা ধরেছে সলীল ওটার কাছে পৌছবার সময় পাবে না, তার আগেই ট্রিগার টিপে দিতে পারবে জন।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এল দুজন নান। আঙুল তুলে ওদের দেখাল সলীল। বলল, “তা হলে এরাও তোমার দলে, তাই না, জন? প্র্যান করেই গাড়িটা রেখেছ এখানে?
এক মুহূর্তের জন্য ওদের দিকে তাকাল জন । সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইল সলীল। সামনে লাফ দিল । হাত দিয়ে থাবা মারল জনের রিভলভার ধরা হাতে, একইসঙ্গে হাটু চালাল ওর দুই পায়ের ফাকে। কিন্তু এতই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সরে গেল জন সলীলের হাটুর গুতো আসল জায়গায় না লেগে লাগল ওর উরুতে । আর রিভলভারে সলীলের হাত স্পর্শ করার আগেই ওটা সরিয়ে নিয়েছে জন । বাট দিয়ে সলীলের মাথার একপাশে বাড়ি মারল।
টলে উঠল সলীল। চোখের সামনে হাজার তারা জ্বলতে দেখছে। পড়েই যেত, গাড়িটা ধরে পতন ঠেকাল কোনমতে । পা দুটো যেন রাবার হয়ে গেছে। রিভলভারের শক্ত নলের মুখ চেপে বসল পিঠে। কানের কাছে শুনতে পেল রুক্ষকণ্ঠের নির্দেশ, “একদম চুপ!”
সলীলের দু’বাহু চেপে ধরল কতগুলো মেয়েলি আঙুল । জ্যাকেটের হাতা ঠেলে তুলে দেয়া হলো ওপর দিকে । হাতটা ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করল সলীল। পারল না। ফিরে তাকিয়ে দেখল, দুজন নানের মধ্যে লম্বাজন ধরেছে ওকে। মেয়েমানুষ হলেও গায়ে প্রচুর শক্তি ।
সলীলের কজিটা নিজের বগলে চেপে ধরল মহিলা । অল্পবয়েসী নানকে
বলল, “জেনি, সুুইটা দাও ।’
অল্পবয়েসী নানের গোলগাল মুখটা বেশ সুন্দর । কিন্ত কালো চোখের ধোয়াটে দৃষ্টি শয়তানি ও নিষ্ঠুরতায় ভরা ।
হাতে সুচ ফোটানোর ব্যথা পেল সলীল। মাংসে ওষুধ ঢোকার যন্ত্রণা । তারপর হঠাৎ করেই অন্ধকার নেমে এল চোখে ।
পিছিয়ে গেল জন। রিভলভার নামাল। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। তাকিয়ে আছে দুই মহিলার দিকে । আস্তে করে সলীলের দেহটা মাটিতে নামিয়ে রাখল ওরা । তারপর মুখে আঙুল পুরে জোরে শিস দিল জেনি ।
পাহাড়ের পাথুরে দেয়ালের মাথায় দেখা দিল কালো ব্লেজার পরা একজন লোক । নীচে তাকিয়ে পরিস্থিতি দেখল ও, মাথা ঝাকাল, তারপর বিড়ালের মত নিঃশব্দে লাফিয়ে নেমে এগিয়ে এল সলীলের দিকে ।
‘ভেরি গুড, লেডিস,’ হাসিতে উজ্জ্বল হলো লোকটার মুখ। নিচু হয়ে এত সহজে সলীলের দেহটা কাধে তুলে নিল, যেন খড় ভরা পুতুল। এগিয়ে গেল ভ্যানের দিকে । বয়স্ক নান অনুসরণ করল তাকে । অল্পবয়েসী মেয়েটি জনের কাছে
দাড়িয়ে ঘোলাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । কেউ কথা বলছে না। পকেটে রিভলভারটা ঢুকিয়ে রাখল জন। কালো ব্লেজার পরা লোকটি ডোরমোবিলের ভিতরে একটা বাংকে সলীলের দেহটা রেখে বাংকে আটকানো চামড়ার ফিতে দিয়ে বাধল। ভ্যানের কাছে দাড়িয়ে রাস্তার ওপর নজর রাখল বয়স্কা নান। কাজ সেরে পিজোর কাছে ফিরে এল ব্লেজার পরা লোকটা ।
‘তোমার কাজে আমি খুশি, জন।’ জ্যাকেটের পকেট থেকে একটা খাম বের করল ও । “এখানে দশ হাজার ডলার আছে । আগে দিয়েছি দশ, এই নাও বাকিটা । খুশি?
সামনের দুদিকের দুই মোড়ের দিকে হেঁটে গেল দুই নান, নজর রাখার জন্য । খাম খুলল জন। নোটগুলো বের করল। হাত কাপছে ওর। গুণে নিয়ে মাথা ঝাঁকাল। “হ্যা, ঠিকই আছে ।’ নোটগুলো খামে ভরে পকেটে রাখল ও।
“কী বলতে হবে মনে আছে তো? লোকটা জিজ্ঞেস করল
“আছে, জন বলল । “একটু হাত-পা ছড়ানোর জন্যে নামতে চেয়েছিল সলীল সার। ভাঙা বেড়াটার ওই পাথরগুলোর কাছে গিয়ে দাড়িয়েছিল। আমি জানালার কাচ মুছছিলাম। হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখি, তিনি নেই। তাড়াতাড়ি বেড়ার কাছে রাস্তার কিনারে গিয়ে নীচে উকি দিলাম । দেখলাম, সার নদীতে পড়ে গেছে।’
মাথা ঝাকাল জো লুই। ওর ফ্যাকাসে নীল চোখে মিটিমিটি হাসি । “হ্যা, এর বেশি একটা কথাও কিন্তু বলবে না। বেশি বলতে গেলেই বিপদ । যাও, এখন সবচেয়ে কাছের বুথটাতে গিয়ে ফোন করে তোমার বসের নদীতে পড়ে যাবার খবর তোমাদের অফিসে জানাও।
ঘুরে গাড়ির দিকে এগোল জন। নড়ে উঠল জো লুই। রাস্তার এপাশ ওপাশ দেখল পাথরের মুর্তি হয়ে দুই মাথায় দাড়িয়ে আছে দুই নান?
চোখের পলকে জনের পিছনে চলে এল জো লুই। ওপরে উঠে গেল ডান হাতটা । প্রচণ্ড বেগে নেমে এল আবার । দায়ের কোপের মত এসে লাগল জনের মাথার পিছনে । ভোতা ধরনের বিশ্রী একটা শব্দ হলো ।
গাড়িতে ঢোকার জন্য নিচু হয়েছিল জন। উপুড় হয়ে পড়ে গেল সিটের ওপর । খুলিতে তিন ইঞ্চি একটা ফাটল তৈরি হয়েছে । ভাঙা হাড়ের কোনা মগজে গেথে গেছে । এখনও মরেনি ও, তবে মরতে দেরি হবে না। ওর পকেট থেকে রিভলভার আর টাকার খামটা বের করে নিজের পকেটে রাখল জো লুই। আবার তাকাল নানদের দিকে । আগের মতই রাস্তা পাহারা দিচ্ছে ওরা ।
পিজোর পিছনের দরজাটা খোলাই রয়েছে । ভালমত সেটাকে দেখল একবার জো লুই। পাল্লার নীচটা চেপে ধরল এক হাতে । অন্যহাতটা হালকা ভাবে ধরল জানালার ওপরের ফ্রেম । এবার উপর দিকে টানতে আরম্ত করল । কয়েকটা মুহূর্ত কিছুই ঘটল না। তারপর ধীরে ধীরে বিশ্রী ধাতব শব্দ তুলে ছুটে যেতে শুরু করল পাল্লার কজা। নীচের কজা ছুটে গিয়ে শুধু ওপরের একটিমাত্র কজায় ঝুলে রইল পাল্লাটা । টান দিয়ে সেটাকে ছাতের ওপর তুলে চিত করে রাখল ও । সরে এসে জনের অজ্ঞান দেহটাকে পাশের সিটে সরিয়ে দিয়ে নিজে উঠে বসল ড্রাইভিং সিটে।
চাবিতে মোচড় দিতেই চালু হয়ে গেল গাড়ির ইঞ্জিন । চালাতে শুরু করল জো লুই । সেকেন্ড গিয়ারে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে চলল খাদের কিনারে পাথরের বেড়ার দিকে । কয়েক ফুট দূরে থাকতে ঝাপ দিল রাস্তায়। এক গড়ান দিয়ে সোজা হলো । পরক্ষণে লাফিয়ে উঠে দাড়াল বিড়ালের ক্ষিপ্রতায়। দেখল্, এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা । ভাঙা দেয়ালে গুঁতো মারল । তারপর কয়েকটা পাথর নিয়ে মাথা ন্চিু করে পড়ে গেল দুই লাফে কিনারে চলে এল জো লুই! পড়ে যেতে দেখছে গাড়িটাকে । কোথাও কোন বাধা না পেয়ে ডিগবাজি খেয়ে সোজা গিয়ে ছয়শো ফুট নীচের পানিতে পড়ল ওটা ।
ডোরমোবিলের কাছে ফিরে এল জেনি ও মেরি। জ্যাকেটের ধুলো ঝাড়ছে জো লুই । “যাই, শেষবারের মত একবার দেখে আসি, কেউ আছে কি না।’ বলে, কিনার ধরে দোলা দিয়ে উঠে গেল পাহাড়ের দেয়ালের ওপর ।
বিড়বিড় করল জেনি, “মানুষকে অকারণে কষ্ট দিয়ে মজা পায়!’
আস্তে, জেনি! শুনে ফেলবে!
“কী বলব, বলো? লোকটার ঘাড়ে একটা রদ্দা মারলেই হতো,’সঙ্গে সঙ্গে মারা যেত, খুলি ফাটিয়ে দিয়ে এতক্ষণ বাচিয়ে রেখে কষ্ট দেয়ার মানেটা কী! কেমন পেশাচিক না? অবশ্য, পাল্লা ছিড়ে ফেলার বুদ্ধিটা ভালই করেছে। পুলিশ
ভাববে, গাড়িটা পড়ার সময় ছিড়ে গেছে পাল্লা ৷ গাড়ির ভিতরের লাশগুলো স্রোতে পড়ে কোথায় ভেসে গেছে কে…”
জো লুইকে লাফিয়ে নামতে দেখে চুপ করে গেল ও । ফিল্ড গ্লাসটা হাতে নিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে ওদের দিকে এগোল দৈত্যটা।
‘গিরিসঙ্কটে একজন মানুষ আছে” বলল ও। “নদীর ওপারে চূড়া থেকে কিছুটা নীচে একটা কার্নিশে বসে আছে । কখনও নড়াচড়া করছে, কখনও নেতিয়ে পড়ছে। এখন বেহুশ হয়ে গেছে মনে হয়।’
বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল মেরি । কিছু দেখে ফেলল না তো?
শ্রাগ করার ভঙ্গিতে নেচে উঠল জো লুই-এর বিশাল চওড়া কাধ দুটো। ‘দুরবিন ছাড়া পরিষ্কার দেখতে পাবে না। তা ছাড়া, আমার ধারণা, জখম হয়ে পড়ে আছে, তাই ওপরে উঠতে পারছে না। থাকুক আটকে । ঠাণ্ডার মধ্যে একরাত
পড়ে থাকলে এমনিতেই মরে যাবে ।’
কিন্ত যদি কিছু দেখে থাকে, আর মরার আগেই কেউ এসে উদ্ধার করে ফেলে…” ওপারের পাহাড়ের দেয়ালটার দিকে তাকাল মেরি । “ওর মুখ বন্ধ করে দেয়া দরকার, কী বলেন, মিস্টার জো লুই?
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।