ব্ল্যাক স্পাইডার – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Black Spider – Masud Rana – Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

এক

রাত দশটা।

ঢাকার মগবাজার এলাকার এক কুখ্যাত হোটেল-ব্যাম্বিনো।

রিসেপশন ডেস্কের ওপাশে উঁচু চেয়ারে বসে ঢুলছিল প্রৌঢ় তায়জুল ইসলাম। দরজায় খুট শব্দ হতেই চমকে সোজা হয়ে বসল। আগস্তুকের দিকে এক নজর তাকিয়েই বিস্ফারিত হয়ে উঠল তার দুই চোখ ।

এ মেয়ে এখানে কেন? দিনের বেলা কেউ কেউ ভুল করে এখানে ঢুকে পড়ে? কিন্তু সন্ধ্যের পর ভাল ঘরের কোন মেয়ে ভুলেও ঢোকে না এখানে। তবে? এত রাতে কি ভুল করে ঢুকে পড়ল এই ভদ্রমহিলা? এই হোটেল সম্পর্কে কিছুই জানা নেই মেয়েটার?

বাইশ-তেইশ বছর বয়স, যেমন গায়ের রঙ, তেমনি দেখতে, আর তেমনি দেহের গড়ন। সালমা-চুমকির কাজ করা একখানা হলুদ শিফন শাড়ি, নাভীর নিচে অজান্তা স্টাইলে পরা, গায়ে হাতকাটা কালো ব্লাউজ, সুগোল বাম
কব্জিতে কালো ব্যান্ডে বাধা একটা রোলগোল্ডের ছোট্ট দামি ঘড়ি, অনামিকায় লাল পাথরের আংটি, ডান কাধে ঝুলানো একখানা এয়ার ইন্ডিয়ার ব্যাগ। কনক সেন্টের ঝাঝাল সুবাস এল তায়জুল ইসলামের নাকে । উন্মুক্ত ক্ষীণ
কটিতে ঢেউ তুলে এগিয়ে আসছে মেয়েটা।

নড়েচড়ে বসল তায়জুল ইসলাম। দিন চারেক শেভ না করার ফলে গজিয়ে ওঠা কাচা পাকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ভর্তি গাল চুলকাল। মেয়েটা নিশ্চয়ই নাম শুনে মনে করেছে খুব ভাল জাতের হোটেল এটা । সময় থাকতে সাবধান করে দিতে হবে, কেউ টের পাওয়ার আগেই । নইলে হরির লুট লেগে যাবে আজ রাতে এ মেয়েটিকে নিয়ে। মনে মনে কথা
গুছাচ্ছিল তায়জুল ইসলাম, মুখে একটুকরো হাসি ফুটিয়ে তুলেছিল, কিন্তু সব গুলিয়ে গেল মেয়েটির প্রশ্নে।

‘মোশতাক সাহেব আছেন?”

ও। এরই কথা বলেছিল তাহলে । মোস্তাকের মত ভয়ঙ্কর লোকের কাছে কি দরকার এ মেয়ের?

“আছেন। তেতলার আটাশ নম্বর রূমে ৷ আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন মোস্তাক সায়েব। এই যে এদিকে সিঁড়ি। ওপরে উঠে বায়ে।’
দ্বিরুক্তি না করে ঘুরে দাড়াল মেয়েটা, রওনা হলো সিঁড়ির দিকে। দ্রুত পায়ে উঠে যাচ্ছে উপরে ।

মেয়েটির গমন পথের দিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে গেল তায়জুল ইসলামের। কি দরকার এর মোস্তাকের কাছে? মোস্তাকের ‘স’কে ‘শ’র ঢঙে উচ্চারণ করতে দেখে বৃঝে নিয়েছে সে মেয়েটা পশ্চিম বঙ্গের। ঢাকায় নতুন। একে ফাদে ফেলল কি করে মোস্তাক? মেয়েটা জানে ও না কতখানি ভয়ঙ্কর এক হিংস্র বাঘের খাচায় ঢুকতে যাচ্ছে। কিছু কি করা উচিত ছিল ওর? পিছু ডেকে বুঝিয়ে বলবার চেস্টা করবে সে মেয়েটিকে? কিন্তু সেক্ষেত্রে মোস্তাক… নাহ, দ্রুত ভেবে সিদ্ধান্ত নিল তায়জুল ইসলাম। করবার কিছুই নেই ওর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার মন দিল সে ঢুলুনিতে।

স্বল্পালোকিত করিডর ধরে এগিয়ে আটাশ নম্বর ঘরের সামনে দাঁড়াল মেয়েটা । কান পেতে শুনল ঘরের ভিতর থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা । তারপর টোকা দিল তিনটে ।

খুলে গেল দরজা । বীভৎস একটা মুখ দেখা গেল দরজার ফাঁকে।

‘এসেছেন?’ চকচক করে উঠল মোস্তাকের এক চক্ষুর লোভাতুর দৃষ্টি। মেয়েটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, “আমি তো মনে করেছিলাম বুঝি আসছেন না আজ আর ।’

কথাটা বলতে বলতে ভিতরে ভিতরে রেগে উঠল মোস্তাক । ও আশা করেছিল আতকে উঠবে মেয়েটা ওর চেহারা দেখে, ভীতি দেখতে পাবে ওর আয়ত সুন্দর চোখে, শিউরে উঠে চোখ ফেরাবে অন্যদিকে । প্রথম দর্শনেই একটা ভয়ঙ্কর ছাপ ফেলতে চেয়েছিল সে এই মেয়েটির মনে। কিন্তু তার কোন চিহ্নই দেখতে পেল না সে মেয়েটার মধ্যে । স্থির নিষ্কম্প দৃষ্টিতে পরীক্ষা করছে মেয়েটা ওর কদাকার মুখের দলিত-মথিত মাংসপিগু। না ভয়, না, করুণা, কিছুই নেই সে দৃষ্টিতে ।

মুক্তিযুদ্ধের জখম বলে চালায় এটাকে মোস্তাক । আসলে স্বাধীনতার মাস চারেক পর কাপ্তান বাজারের এক জুয়ার আড্ডায় সামান্য কয়েকটা টাকা নিয়ে মারপিট করায় আজ ওর এই হাল । মার খেয়ে চলে গেল ওরা, কিন্তু
আধঘন্টার মধ্যে ফিরে এল গ্রেনেড নিয়ে। গ্রেনেড, এল.এম,জি, স্টেন মোস্তাকেরও ছিল, আছেও; কোনরকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই পর পর দশটা গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিল ওরা জুয়াখানা, ছাত ধসিয়ে দিয়ে চলে গেল। প্রতিশোধ নিয়েছে মোস্তাক পরে, কিন্তু চেহারাটা ফিরে পায়নি । বাম চোখটা, ফেলে দিতে হয়েছে উপড়ে । সেখানে লাল একটা কুৎসিত গর্ত। মুখের বাঁ দিকে ঠোট বলতে। কিছুই নেই, গালটা ঝুলে আছে এবড়ো খেবড়ো হয়ে, নোংরা দাত আর লালচে মাড়ি বেরিয়ে পড়েছে । নাকের অর্ধেকটা নেই, সে জায়গায় লালচে ফুটো । গলার একটা পাশ পুড়ে কুচকে, আছে চামড়া কালো-হয়ে । বীভৎস!
এই চেহারা দেখিয়ে মানুষকে চমকে দিয়ে এক ধরণের বিকৃত আনন্দ লাভ করে সে। অনেকটা জেদের মত। কিন্তু মনে মনে সে জানে কি তীব্র ঘৃণার উদ্রেক হয় মানুষের মনে ওর মুখের দিকে চাইলে । স্বেচ্ছায় কোন নারী আসেনি ওর কাছে গত দুই বছরে, ধরে আনতে হয়েছে জোর করে। ঘৃণা আর ভয় ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্য মনে করে না সে আর এখন। কাটার মত খচখচ করে বুকের ভিতরটা, সেই সাথে আসে ভয়ানক এক জেদ। খারাপ লোক সে, অনেক অন্যায় করেছে জীবনে, অনেক পাপ করেছে, কিন্তু তাই বলে কি এমন চরম শাস্তি পাতে হবে ওকে?
ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল মেয়েটা। এগিয়ে গেল সোফা সেটের দিকে।

‘প্লাস্টিক সার্জারি করে নিলেই পারেন,’ মিষ্টি কণ্ঠে বলল মেয়েটা । হাজার দশেকের মধ্যেই হয়ে যাবে।

পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে উঠল মোস্তাকের । মনে হলো কৈউ যেন এসিড ছিটিয়ে দিয়েছে ওর সারা গায়ে। ঝট করে ফিরল মেয়েটার দিকে ।

‘আপনার কি খুব অসুবিধে হচ্ছে?’ এক চোখে কটমট করে চাইল সে মেয়েটার মুখের দিকে | “আমার চরকায় আমি নিজেই তেল দিয়ে নেব, আপনার সাহায্যের দরকার পড়বে না। আপনি আপনার নিজের চরকায়…

‘শাট আপ!” তীক্ষ কণ্ঠে ধমক দিল মেয়েটা | মুখ সামলে কথা বলুন ।”

মুহূর্তে কেঁচো হয়ে গেল মোস্তাক । আর একটু হলে হয়তো নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মেরে বসত সে! হঠাৎ বুঝতে পারল, এর কাছে বাহাদুরি দেখাতে গেলে ঝরঝরে হয়ে যাবে ওর নিজেরই ভবিষ্যৎ । এরই মাধ্যমে সে ঢুকেছে ব্ল্যাক স্পাইডারের দলে । ওর কাজ তদারক করবার জন্যে পাঠানো হয়েছে একে বম্বে থেকে । যদি আগামী কাজটায় সে দক্ষতা দেখাতে পারে, যদি কাজ দেখিয়ে একে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবেই সে আশা করতে পারে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার । গত দুই বছর প্রচুর টাকা পেয়েছে সে ব্ল্যাক স্পাইডারের কাছ থেকে? কিন্তু এই সেদিন হঠাৎ আবিষ্কার করেছে, এতদিন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেয়া হয়নি ওকে ইচ্ছে করেই, ছোটখাট মামুলি কাজ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে ওর কর্মক্ষমতা | বাংলাদেশে ব্ল্যাক স্পাইডার জাল বিস্তার করতে যাচ্ছে এই প্রথম । এই প্রথম ওকে সত্যিকারের কাজ দেয়া হয়েছে । এই কাজটা ঠিকমত করে দেখাতে পারলে বলা যায় না, ওকে হয়তো বাংলাদেশের চীফ বানিয়ে দেয়া হতে পারে। এই ওর সুযোগ । মেয়েটাকে চটিয়ে দিলে চিরতরে হারাবে সে এই সুবর্ণ সুযোগ |

“কিছু মনে করবেন না” স্ত্রীলোকের কাছে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে বলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে যাচ্ছিল ওর চেহারাটা, চট করে পিছন ফিরল সে। বহু কষ্টে ‘গলার স্বরটা নরম করে বলল, ‘আমার চেহারার ব্যাপারে, একটু বেশি স্পর্শকাতর রয়ে গেছি আমি এখনও । আমার অবস্থায় পড়লে ‘যে কেউ তাই হত। কিন্তু দাড়িয়ে রইলেন কেন? বসুন কফি আনাব, না চা?

কিছুই লাগবে না।

সামনের টেবিলের উপর ব্যাগটা নামিয়ে রেখে সোফায় বসল মেয়েটা । মোস্তাকও বসল সামনের একটা সোফায়! সিগারেট ধরাল মুখটা একপাশে ফিরিয়ে, যাতে লাইটারের আলোয় ভয়ঙ্কর চেহারাটা আরও প্রকট হয়ে দেখা না যায়। সরাসরি চাইল মেয়েটা ওর মুখের দিকে।

লোক জোগাড় হয়েছে?

‘হয়েছে। অনেক কষ্টে খুঁজে বের করেছি ওকে । এই কাজের জন্যে ওর চেয়ে যোগ্য লোক ‘আর হয় না, ঘড়ি দেখল মোস্তাক । ‘নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। আসতে বলেছি ওকে।

‘কেন?’ ভুরুজোড়া একটু কুঁচকে উঠল মেয়েটার ।

আমি মনে করলাম আপনি নিজ চোখে দেখলে খুশি হবেন, একটু আমতা আমতা করে বলল মোস্তাক । “অন্তত নিশ্চিন্ত হতে পারবেন ওর যোগ্যতা সম্পর্কে ।

“আপনাকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, এই অপারেশনে কোনরকম, ভুল-ভ্রান্তি হলে চলবে না । এটাই প্রথম । প্রথমবারে বিফল হলেই-সব শেষ। যাকে ঠিক করেছেন, কে সে?’

‘ওর নাম আলিবাবা । কোন্‌ পুলিস রেকর্ড নেই। সার্কাস পার্টির নাইফ-থ্রোয়ার ছিল। দারুণ হাত ।” সিগারেটে টান দিল মোস্তাক । “বার কয়েক আমার হয়ে চোরাচালান্‌ করেছে। নির্ভরযোগ্য লোক । কিন্তু অভাবী । টাকার
অঙ্ক শুনে একবাক্যে রাজি হয়ে গেছে।’

সব ভণ্ডুল করবে না তো শেষে?’ এয়ারব্যাগ থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটা বের করে কোলের উপর রাখল মেয়েটা, সেটা খুলে একটা ফিল্টার-টিপড সিগারেট লাগাল ঠোটে । চট করে আগুন পরিয়ে দিল সেটায় মোস্তাক ।

‘ভণ্ডুল হবে না। কাজটা ওর পক্ষে কিছুই না।’

“কি করতে হবে বুঝিয়ে বলেছেন ওকে?’ নাক-মুখ দিয়ে”একরাশ ধোয়া, ছাড়ল মেয়েটা ।

‘বলেছি।’

ঠিক আছে, এবার রিপোর্ট দিন এ পর্যন্ত কি কি করেছেন ।’

‘গত মঙ্গলবার টাকা চেয়ে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি । আজ রাতে একটা মাকড়সা আর একটা চিঠি রেখে আসবে আলিবাবা খাবার টেবিলে! আগামীকাল রাত ঠিক ন’টার সময় টাকা নিতে লোক পাঠাব ওখানে ।’ এই পর্যস্ত বলে একটু ইতস্তত করল মোস্তাক। “কিন্তু…একটা ব্যাপার ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না আমার কাছে। যদি টাকা দিয়ে দেয়, তাহলে?’

‘ও নিয়ে আপনার মাথা ঘামাবার দরকার নেই । টাকা ও দেবে না, এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন । দেবেনা জেনেই ওকে ঠিক করা হয়েছে আমাদের প্রথম টার্গেট হিসেবে । উড়ো চিঠির ভয়ে টাকা দেয়ার লোক’ ও নয় ।’

‘বুঝলাম। কিন্তু বাইচান্স যদি দিয়ে বসে তাহলে আমাদের আর করবার কিছুই থাকবে না।’

‘দেবে না! দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করল মেয়েটা ।

“সেক্ষেত্রে ঠিক নয়টা পনেরো মিনিটে হাজির হবে সেখানে আলিবাবা । ভাল কথা, ছোরাটা এনেছেন?’

মেয়েটা ঝুঁকে পড়ল সামনের দিকে । এয়ারব্যাগ থেকে একটা সুদৃশ্য কাঠের বাক্স বের করল। লোলুপদৃষ্টিতে মোস্তাক দেখল, মেয়েটির শরীরের বাক। খচ করে একটা কাটা বিধল ওর বুকে। একটা দীর্ঘশ্বাস আসতে চাইছিল, চেপে নিল সচকিত হয়ে। এ মেয়ে ওর ধরা-ছোয়ার বাইরে । বাক্সটার দিকে চাইল সে এবার। চকচকে একটা ছুরি বের করে এনেছে
মেয়েটা বাক্স থেকে। ছুরিটা পরিক্ষা করল মোস্তাক। কাঠের বাট, চওড়া ইস্পাতের ফলা, তার উপর খোদাই করা আছে একটা কালো মাকড়সা । ছুরির ধারটা পরিক্ষা করে নিয়ে ফিরল সে মেয়েটির দিকে।

‘এটা ব্যবহার করাটা কি ঠিক হবে?’ জিজ্ঞেস করল মোস্তাক। “এটা কোথা থেকে তৈরি করা হয়েছে বের করে ফেলবে পুলিস একটু চেষ্টা করলেই ।

‘পারবে না। খুবই গোপনে তৈরি হয় এটা আমাদের জন্যে । ঠিক এই রকম ছুরিই আমরা ব্যবহার করছি পৃথিবীর সব জায়গায়। এটা আমাদের ট্রেড মার্ক।

‘কিন্ত্বু এতসবের কি সত্যিই প্রয়োজন আছে?’

“কিসের কথা বলছেন?’

‘এই ধরুন ভয় দেখানো চিঠি, মাকড়সা, এই ছুরি… এসব?”

আছে ।’ বেশ কিছুটা তীক্ষ্ণ শোনাল মেয়েটার কণ্ঠস্বর । “আমরা প্রচার চাই। আমরা চাই মাকড়সা, হুমকি দেয়া চিঠি, আর এই অদ্ভুত ছুরি, দৃষ্টি আকর্ষণ করুক প্রেসের । হেড লাইন নিউজ হোক । তা নইলে আর সবাই ভয় পাবে কেন? পাকিস্তানী আমলে এদেশে তেমন বড়লোক কেউ ছিল না। কিন্তু এখন লম্বা লিস্ট রয়েছে আমাদের হাতে স্বাধীনতার পর রাতারাতি যারা টাকা করেছে তাদের । একে একে ধরব আমরা । আমরা চাই জোর পাবলিসিটি পাক জহুরুল হকের মৃত্যুটা। সুড়সুড় করে টাকা দেবে তখন আর সবাই। জেনে যাবে, মিথ্যে হুমকি দেয় না কালো মাকড়সা । জাপান, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকা সবখানে এইভাবেই মার্কেট তৈরি করেছি আমরা।’

“যদি সফল হতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের ভার কি আমার ওপর দেয়া হবে?’ জিজ্ঞেস করল মোস্তাক ।

নিশ্চয়ই ।’ সিগারেটে টান দিল মেয়েটা । ‘একবার যাকে আমরা দলে নিই তাকে সহজে বিদায় দিই না, যতদিন সে যোগ্যতা দেখাতে পারবে ততদিন থাকবে সে আমাদের সাথে।

তারপর?’

হাসল মেয়েটা । “নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চাইছে? একটাইমাত্র পথ খোলা আছে আপনার সামনে । দিনের পর দিন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ধাপে ধাপে আরও গুরুতুপূর্ণ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করা। বিফল হলেই চিরবিদায়।

খুশি হয়ে উঠল মোস্তাক। এতদিনে সত্যিই বস্‌ তাহলে ঢুকতে চলেছে একটা শক্তিশালী ইন্টারন্যাশনাল র‍্যাকেটে। নিজের কপালকে ধন্যবাদ দিল সে ব্র্যাক স্পাইডারের নজরে পড়েছে বলে। এই রুকম ভয়ঙ্কর একটা দুর্ধর্ষ দলের সাথে কাজ করবার স্বপ্ন দেখেছে সে বহু বছর । আজ এসেছে সুযোগ ।

বুঝলাম । সফল আমাকে হতেই হবে । হবও । আপনি দেখে নেবেন ।’ সোফা ছেড়ে একটা ছোট্ট দেয়ালে-আলমারির সামনে গিয়ে দাড়াল মোস্তাক । একটা গ্রাসে হুইস্কি ঢালল। ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনাকে দেব খানিকটা?’ ‘

না। ধন্যবাদ ।’

গ্রাসে একটা চুমুক দিয়ে মেয়েটার দিকে চাইল মোস্তাক । আপনার নামটা কিন্তু এখনও জানি না আমি । জিজ্ঞেস করাটা কি ভুল হবে?

আরতি লাহিড়ী । মিস লাহিড়ী বলে ডাকতে পাবেন ।’

‘আরতি… বাহ্‌, চমৎকার নাম!’ মাথা বাঁকাল মোস্তাক | “এই দলে কি বহুদিন থেকে আছেন?”

‘আলিবাবার হাতে টাকা দেয়ার নির্দেশ আছে আমার ওপর, মোস্তাকের প্রশ্নকে আমল না দিয়ে বলল মেয়েটা । কাজ শেষ করবার পর | কোথায় পাব ওকে ?’ মাথায় রক্ত চড়ে গেল মোস্তাকের । চোখ পাকিয়ে চাইল আরতির দিকে।

“আপনি টাকা দেবেন? তার মানে? আপনি কেন দেবেন? আমি ওকে ঠিক করেছি, আমাকে টাকা দেবেন, আমি ছুকিয়ে দেব ওর পাওনা। আমার লোক…’

“কোথায় পাব ওকে?” ঠিক একই সুরে আবার প্রশ্ন করল মেয়েটা। চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে মোস্তাকের চোখে, পলকহীন।

“কিন্তু এ বড় আশ্চর্য ব্যাপার ।” কিছুটা সামলে নিয়ে এগিয়ে এসে আবার বসল মোস্তাক সোফায় । ‘ব্ল্যাক স্পাইডার কি বিশ্বাস করেন না আমাকে?’

‘আমার কি তাকে জানাতে হবে যে আপনি নির্দেশে মানতে রাজি নন?’ ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল আরতি ।

“না, না। তা কেন?’ ব্যগ্র কণ্ঠে বলে উঠল মোস্তাক । “আমার কাছে ব্যাপারটা মনে হলো…”

‘কোথায় পাব ওকে?’ আবার জিজ্ঞেস করল মেয়েটা ।

‘৫৩/ডি তাজমহল রোড, মোহাম্মদপুর, প্রাণপণ চেষ্টায় রাগ চেপে বলল মোস্তাক।

টেলিফোন বেজে উঠতেই রিসিভার তুলে কানে ধরল মোস্তাক !

‘আলিবাবা বলে এক ভদ্রলোক আপনার সাথে দেখা করতে চান,’ ভেসে এল তায়জুল ইসলামের কণ্ঠস্বর । “ওপরে পাঠিয়ে দেব?’

‘দাও।

‘ওই ভদ্রমহিলা কি আজ রাতে এখানেই থাকবেন? রূম লাগবে? আরতির-দিকে চাইল মোস্তাক ।

আপনার কি এই হোটেলে রূম দরকার?’

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top