Bondinibas by Somoresh Mojumdar

বন্দী নিবাস – সমরেশ মজুমদার (Bondi Nibas By Samaresh Majumdar)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

টুপটাপ কয়েক ফোঁটা উষ্ণ কিছু নাকের ওপর পড়তেই তন্দ্রা কেটে গেল ওর। এবং আচমকা উঠে বসে, এই এতগুলো বছর ওকে যেভাবে সতর্ক থাকতে শিখিয়েছে, ও চট করে রিভলবারটা মুঠোয় নিয়ে চার পাশে তাকাল। ও যেখানে শুয়েছিল সেখান থেকে আকাশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। সকালের সূর্য অনেকক্ষণ সামনের পাহাড়টা ডিজ্গিয়েছে তবু এখানে রোদ নেই, কারণ মাথার ওপরটায় ঠাসাঠাসি শাল সেগুন গাছের পাতা হাত ধরাধরি করে তাকে আড়ালে রাখছে। গাছগুলোর তলা পরিষ্কার নয় মোটেই এবং এখান থেকে প্রাঃ খাড়া নেমে গেছে পাহাড়টার গা ধরে অনেক নীচে যেখানে মরা তিস্তা চুপচা শুয়ে আছে। কাছাকাছি একরাশ ঝিঝি তীক্ষ শব্দ করে যাচ্ছে প্রতিদিনের মত, এছাড়া আর কারো শব্দ নেই। মাথা ঘুরিয়ে চার পাশ দেখে ও হাতের চেটো দিয়ে নাক মুছতেই চমকে উঠল। চটচটে লালরত্ত। বিস্ময় বেড়ে যাচ্ছিল ওর। ঠিক সেই মুহূর্তে মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতায় শব্দ হল কিছু পড়ার। সতর্ক চোখে সে পাতাটাকে দেখে নিয়ে ধীরে ধীরে মুখ ওপরে তুললো । বিরাট একটা ঈগল অনেক উঁচু একটা ডালে বসে আছে যার ওপরটায় ছাউনির মত পাতারা রয়েছে। ঈগলের পায়ের তলায় কিছু একটা চেপে ধরা। এতদুর থেকে ও লক্ষ্য করল সেটা যেন সামান্য নড়ছে। ঈগলের ঠোঁট ওর শরীরে আঘাত করতেই রত্তুটা নেমে আসছে নীচে । তড়িৎগতিতে রিভলবার উঁচিয়ে ধরেই থেমে গেল ও। মিছিমিছি শব্দ করে কোন লাভ নেই। হাতের চেটোর দিকে তাকাল, লালচে দাগটা যেন উলকির মত এটে গেছে সেখানে । আর উষ্ণতা নেই, রন্তু খুব দ্বুত ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকেই অস্তিত্টা আবার শুরু হল। ঠিক তিনদিন হয়ে গেল নীচ থেকে কেউ আসেনি। পাহাড় ভেঙ্গে মাইল পাচেক তিস্তার পাড়……..

লেখক সম্পর্কে

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ! লেখালেখি! প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম
গল্প “দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস “দৌড়”, ১৯৭৫-এ “দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আর অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তার যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া “দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা; উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top