JANMADAG by Samaresh Majumdar

জন্মদাগ – সমরেশ মজুমদার (Janmadag By Samaresh Majumdar)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

হঠাংই একটা দিন আসে যেদিন সব কিছু ঠিকঠাক চলে। একটার পর একটা ডাল ঘটনা ঘটে যায়। একটাও খারাপ ঘটনা নয়, কেউ অভিযোগের আঙুল তোলে না, এমন কী জমে থাকা দুঃখগুলোও ফুরফুরে খুশির তলায় চাপা পড়ে যায়। কাবেরী কোনও অলৌকিকত্বে বিশ্বাস করে না। কিন্তু খবরের কাগজ পড়া শেষ করার আগে “আপনার রাশিফল” কলমটিতে চোখ রাখে। মজা লাগে পড়তে। একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাশিগুলোর পাশে ছড়ানো থাকে। তীর রাশি মেষ। কোনও দিন মেলে না, মেলার কথাও নয়। গতকাল একটা নতুন লাইন দেখতে পেয়েছিল সে। আত্মীয় বিয়োগের সম্ভাবনা, ব্যবসায় সমূহ ক্ষতি হতে পারে। বিদেশযাত্রায় যোগ আছে ইত্যাদির শেষে নতুন লাইন দেখতে পেয়েছিল কাবেরী। আগামীকাল আপনার পক্ষে খুব ভাল দিন। পড়ে হেসে ফেলেছিল। এই কাগজের যত মেষ রাশির পাঠক স্বপ্ন দেখবে, আগামীকাল
তাদের জন্যে কত ভাল খবর নিয়ে আসছে। যারা স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে তাদের উপকার করছে কলমটা।

কাবেরী বিছানা ছাড়েন সকাল ছণ্টায়। শীত গ্রীষ্ম বা বর্ষায় এর ব্যতিক্রম হয় না। এখানে অসময়েও বৃষ্টি হয়, বর্ষাকালে মারাত্মক। কিন্তু আজ আকাশ পরিষ্কার। একটু হিম বাতাস বইছে। রোদ ওঠেনি, চারধার বেশ ছায়াছায়া। ঢোলাপাজামা এবং পাঞ্জাবি পরে কাবেরী ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁর বাগানে এসে দাঁড়ালেন। প্রথমেই চোখ পড়ল গোলাপ ঝুঁড়িটার ওপর। ঢাউস ঝুঁড়িটাকে গতকালও বেশ টাইট দেখাচ্ছিল। আজ মুখ খুলেছে। হয়তো বিকেলের মধ্যেই ফুল হয়ে দোল খাবে। দেখে মন ভাল হয়ে গেল।

বাগানের ওপাশে খাদ। অনেকটা নীচে নেমে সেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে চেলসি নদীতে। অবশ্য বর্ষাকাল ছাড়া ওকে নদী বলার সময় বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়। এখন তিরতিরিয়ে জল বইছে নুড়িগুলোর শরীর নাড়িয়ে। বাকিটা বালি আর বুনো ঝোপ বুকে নিয়ে ঝুম হয়ে আছে। দু’শো গজ এবড়ো খেবড়ো জমির পর পাহাড়ের শুরু। সামনের পাহাড়টা বড় নয়। ওর পেছনে যেটি সেটি…….

লেখক সম্পর্কে

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ! লেখালেখি! প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম
গল্প “দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস “দৌড়”, ১৯৭৫-এ “দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আর অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তার যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া “দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা; উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top