একটু চোখ বুলিয়ে নিন
বিভিন্ন বয়সে যতবার আসি কলকাতায় তায় এসেছি, তত বারই বিভিন্ন কারণে এ শহর আমাকে দু’হাতে আটকে রাখার চেষ্টা করেছে। মা যেমন করে। অবাধ্য
ছেলের মতো তত বারই আমি হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে গেছি। কলকাতা আমার মা হবে কেন? আমি বিক্রমপুরের বাঙাল। মেড ইন ঢাকা। ময়মনসিংহ আমার কৈশোরের খেলাঘর। ব্রহ্মপুত্র নামের এক অলৌকিক নদীর ধারে ছিল আমাদের বাড়ি। উঠোন ঘিরে মাটির ভিটের ঘর সমূহ, ফলনশীল বাগান, মহান সব বৃক্ষের জমিদারদের পুক্করিণী। পায়ে পায়ে জলাশয়, গাছপালা, খোলা বসতিহীন জমি। চোখে ধরা পড়ত আরও কত রূপকথার মতো মাত্রা। আকাশে উড়িছে বকপাঁতি বা নবাস্কুর ইচ্ষুবনে এখনও ঝরিছে বৃষ্টিধারার জন্য রবি ঠাকুরের কবিতা খুঁজতে হত না। সোনালি ডানার চিল তখনও জীবনানন্দের কবিতায় গিয়ে সেঁধোয়নি। দোয়েল পাখিও ছিল, ছিল ভাটবন, মাদার গাছ, শিমুল ফুল। ছিল বাদল দিনের প্রথম কদ মফুল, যা সত্যিকারের বলের অভাবে আমাদের পায়ে পায়ে বল হয়ে গড়াত। কলকাতা মা হতে পারল না কখনও। কারও না। তবে, স্তন্যদায়িনীর মতো অন্যের ছেলেপুলে কাখেকোলে করে টেনেছে সে বিস্তর। আজও তার কীখে কোলে কাধে কাদি কাদি ছেলেপুলে ঝুলছে। সেই সব অকৃতজ্ঞ ও কৃতত্ন স্তন্যপায়ীরা কেউ তাকে মায়ের সম্মান দেয়নি। তাদের লাখি-ঝাঁটা খেয়েই সে বুড়ি হল। গঙ্গা তার সহেলি বটে, কিন্তু সে হল ভাগের মা, তাই গঙ্গা পেল না। তবে, সব বৃদ্ধারই তো যৌবন ছিল এক দিন। আমার আশ্চর্য…………
লেখক সম্পর্কে
জন্ম ২ নভেম্বর, ১৯৩৫ ।
দেশ__ঢাকা জেলার বিক্রমপুর ৷ মোক্তার দাদু আইন ব্যবসা জমাতে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহে । সেখানে ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে জন্ম । শৈশব কেটেছে নানা জায়গায় । পিতা রেলের চাকুরে | সেই সূত্রে এক যাযাবর জীবন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় । এরপর বিহার, উত্তরবাংলা, পূর্ববাংলা, আসাম ।
পঞ্চাশ দশকের গোড়ায় কুচবিহার | মিশনারি স্কুল ও বোর্ডি-এর জীবন | ভিকটোরিয়া কলেজ থেকে আই-এ । কলকাতার কলেজ থেকে বি এ। স্নাতকোত্তর পড়াশুনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে । স্কুল-শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু | এখন বৃত্তি-সাংবাদিকতা । আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত । ছাত্রজীবনের ম্যাগাজিনের গণ্ডী পেরিয়ে প্রথম গল্প-দেশ পাত্রকায় । প্রথম উপন্যাস “ঘুণপোকা? । “দেশ’ শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশিত | প্রথম কিশোর উপন্যাস__“মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ । কিশোর সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিরূপে ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার । ১৯৮৯ সালে পেয়েছেন সাহিত্য আকাদমি পুরস্কার । আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন দুবার ।
খেলায় তাঁর উৎসাহ অদম্য । বকসিং, টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, টেবিল টেনিস সম্পর্কে যেমন, আযাথলিটক্সেও তেমনই আগ্রহী । জীবনের এক সংকটময় মুহুর্তে তিনি
জীবনের প্রতি আস্থা ফিরে পান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সান্নিধ্যে এসে | নিরামিষাশী । ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য । তাঁর রচনাতেও ঘুরে-ফিরে আসে আধ্যাত্মিক অন্বেষণ । পাঠক হিসেবে সর্বপ্রাসী | ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ প্রিয়, প্রিয় গ্রিলার এবং কল্পবিজ্ঞানও ।