বন্দি রানা – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Bondi Rana – Masud Rana – Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

এক

এখন আর পালাবার পথ নেই।

অকস্মাৎ ফ্লাড ও সার্চলাইট জ্বলে ওঠায় রাতের অন্ধকার রাস্তা আলোর বন্যায় ভেসে গেল, সেই সঙ্গে ধাধিয়ে গেল ড্রাইভারদের চোখ । সীমান্তের ওপার থেকে আনা সার বোঝাই ট্রাক বহরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ইজরায়েলি সীমান্তরক্ষী ও অ্যান্টি ড্রাগ স্কোয়াড-এর সশস্ত্র লোকজন ।

অগত্যা এক সময় সামনের ট্রাকের ক্যাব থেকে নেমে আসতে বাধ্য হলো আবিল আহুদ। ইহুদি সে, জন্মসূত্রে জর্দানী, অথচ বেশভূষায় ঠিক যেন একজন আরব বেদুইন।

চোখে মায়া আছে, চোখের তারায় আছে বুদ্ধির দীপ্তি। সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী, সুদর্শন চেহারা । গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, রোদে পুড়ে খানিকটা তামাটে । ভরাট মুখ আধ ইঞ্চি লম্বা কালো দাড়িতে ঢাকা। উন্নত ললাট। সুরমা লাগানোয় চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় সম্মোহিত করে ফেলবে । বয়স ছাবিবশ কি সাতাশ – কি আটাশ।

পরনে সাদা ও ঢোলা জোববা, মাথায় পাগড়ির মত করে একটা কাপড় জড়ানো, দুইপ্রান্ত বুকের দুপাশে ঝুলে আছে; জোব্বার নীচে বাতাসে ফুলে ফুলে উঠছে কালো সালোয়ার । হাতে সরু একটা সবুজ লাঠি, গলায় পরে আছে পশু ও মাছের খুদে হাড় দিয়ে তৈরি অনেকগুলো মালা । হঠাৎ তাকালে মনে হতে পারে হাতের লাঠিটা বোধহয় সবুজ সাপ, কিন্তু তা সত্যি নয়, ওটা স্রেফ একটা লাঠিই।

কিছু একটা ঠিক মিলছে না। বিশেষ করে তার বেশভূষা যেন অন্য কোনও গল্প বলতে চায়। জর্দানের রাজধানী সেই আম্মান থেকে আসছে এই পাকা রাস্তা । জর্দানী শহর সুমাইয়া ও আল মাযার হয়ে জর্দান নদী ও যুদ্ধবিরতি-রেখা পার হয়ে ইজরায়েলে ঢুকেছে । এই রাস্তা ধরে সোজা পশ্চিমে গেলে জেরুজালেম পড়বে । ডানদিকে পড়বে কমকরেও এগারো হাজার বছরের প্রাচীন ফিলিস্তিনি শহর জেরিকো। বামে বাঁক নিয়ে দক্ষিণে এগোলে ডেড সি আর ইজরায়েলি বন্দর নাহাল কালিয়া ।

শুক্রবার বিকেল । মেইন রোডের মোড়ে মোড়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে ইজরায়েলি সীমান্তের দিকে ছুটছে সার বোঝাই ট্রাক বহর । এক সময় রাস্তা থেকে নেমে জঙ্গলে ঢুকেছে, কাচা পথ ধরে ঘণ্টাখানেক এগিয়েছে শম্বুকগতিতে । এরপর সামনে পড়ল নদী ও ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে আবার পাকা রাস্তা, তবে এটা খুব সরু আর ভাঙাচোরা। এবার রাস্তা ছেড়ে জলাভূমিতে নামল ট্রাকগুলো। নিরাপদেই পৌছে গেল ইজরায়েলে।

সুর্য ডোবার পর দিনের আলো শেষ হয়ে আসছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যে চারদিক অন্ধকার হয়ে যাবে। সামনে ধু-ধু জলাভূমি, নির্জন ও পরিত্যক্ত, মাঝখান দিয়ে চলে গেছে উচু মেঠো পথ।

সবাই জানে মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিদের সম্পর্ক সাপে-নেউলে, তবে জর্দান-ইজরায়েল সীমান্ত এলাকায় কথাটা
একদমই সত্যি নয়। এখানে যেটা ঘটছে সেটাকে চোরে-চোরে মাসতুতো ভাই বলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। যতই
অবিশ্বাস্য শোনাক, জর্দানী কিছু মুসলমান তাদের এলাকার ইহুদিদের রীতিমত জামাই আদর করে, কড়া পাহারা দিয়ে রাখে কেউ যাতে তাদের গায়ে টোকাটিও মারতে না পারে । একইভাবে ইজরায়েলি সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর কিছু ফিলিস্তিনি মুসলমানও ওখানকার একদল ইহুদির কাছ থেকে জামাই আদর পেয়ে আসছে।

ব্যাপারটা কী?

আসলে এর কারণ দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের পক্ষপাতিত্ব। জর্দানের মাটিতে কোনও ফিলিস্তিনি মুসলমান স্মাগলার ধরা পড়লে যেমন জর্দানী সীমান্তরক্ষীরা দু’চারদিন আটকে রেখে ছেড়ে দেয়; ঠিক তেমনি ইজরায়েলের মাটিতে জর্দানী কোনও ইহুদি স্মাগলার ধরা পড়লে ওদের রক্ষীবাহিনীও ছেড়ে দেয় তাকে।

দীর্ঘদিন এরকম চলে আসছে, ফলে দু’দেশের চোরা-কারবারীরা এই ব্যবস্থার সুযোগ নিতেও ছাড়ছে না।

জর্দানে ইহুদি না থাকারই মত। যে-কজন আছে তাদের প্রায় সবাইকে স্মাগলিঙে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের সময় সীমান্তের ওপার থেকে দরিদ্র কিছু ইহুদিকে ভাড়া করেও আনা হয়, ট্রাক ড্রাইভার ও ইনফর্মার হিসাবে কাজে লাগাবার জন্য। এবার যেমনটি হয়েছে।

আহুদ পরিবারের কথা ধরা যাক । এই ইহুদি পরিবারের সবাই জন্যসূত্রে জর্দানী। এদেরকে কাজে লাগাচ্ছে ক্রিমিনালদের একটি সিন্ডিকেট ।

আহুদ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটা ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট কোম্পানির মালিক করে দেওয়া হয়েছে পরিবারটিকে । বহু বছর
একই ভাবে ইজরায়েল থেকে আনছে সিল্ক, কেমিকেল ও ওষুধ । দেখেও না দেখার ভান করে। উধ্বতন মহলের মৌন সমর্থনও থাকতে পারে, হয়তো তালিকা পাঠিয়ে বলে দেওয়া হয়েছে কী কী পণ্য আটক করবার দরকার নেই।

তবে মাঝে-মধ্যে ঘেরাও দিয়ে স্মাগলারদের ধরাও হয়। সীমান্তে হয়তো নতুন কোনও কমান্ডার দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন,
কিছু কাজ দেখিয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করা দরকার । কিংবা খবর আছে বিপজ্জনক কোনও সন্ত্রাসী বর্ডার ক্রস করবে, অথবা ড্রাগের চালান আসবে । তখন সামারি কোর্ট বসে; হাতে-নাতে ধরা পড়া অপরাধীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তৎক্ষণাৎ আমলে এনে বিচার করা হয়, অপরাধের ধরন অনুসারে এক থেকে সাত বছর পর্যন্ত জেল হয়ে যায় তাদের ।

তবে বলাই বাহুল্য যে কখনোই রাঘব-বোয়ালরা ধরা পড়ে না। জর্দানে ধরা পড়ে ফিলিস্তিনি মুসলমান ট্রাক ড্রাইভাররা, ইজরায়েলে ধরা পড়ে জর্দানী ইহুদি ড্রাইভাররা। নেহাতই হতভাগ্য চুনোপুটি তারা । কার পণ্য, কী জিনিস, কে পাঠাচ্ছে, কার কাছে যাচ্ছে, এ-সবের কিছুই তারা জানে না।

জর্দানের সীমান্তরক্ষীরা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে পুরাকালের কোনও কিছু অমূল্য সম্পদ পাচার হচ্ছে কি না, ইজরায়েলিরা দেখে জর্দান থেকে ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্র বা গোলাবারুদ আসছে কি না।

আহুদরা পাঁচ ভাই। তারা সবাই অত্যন্ত ধূর্ত ও সাবধানী । সবার ছোট আবিল। ইহুদি হওয়া সত্তেও এর আগে কখনও
ইজরায়েলে ঢোকেনি সে, এবারই প্রথম । তার ভাইরা তাকে অভয় দিয়ে বলেছে, সাতদিনের এই অভিযানে কোনও রকম বিপদের ভয় নেই। জর্দানী সীমান্ত-রক্ষীরা অনেক আগে থেকেই জানে যে আহুদ এন্ড ব্রাদার্স আর্টিফ্যাক্টস কিংবা পুরাকীর্তি পাচার করে না। প্রতিটি পয়েন্টে টাকার বান্ডিলও সময়মত পৌছে দেওয়া হয়েছে। ইজরায়েলি স্মাগলাররা, হোক সে ফিলিস্তিনি মুসলমান কিংবা ইজরায়েলি ইহুদি, নিজেদের বাড়িতে সমাদৃত মেহমান হিসেবে সযত্বেই রাখবে তাকে, নিজেদের স্বার্থেই তার কোনও রকম বিপদ হতে দেবে না। আর যদি দৈবাৎ কোনও
কারণে ইজরায়েলি সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে যায়, ওরা খুব বেশি হলে দু’চারদিন আটকে রেখে ছেড়ে দেবে। এটাই নিয়ম, গত পাঞ্ছ-সাত বছরে যত ইহুদি ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবাইকে এভাবে ছেড়ে দিয়েছে ইজরায়েলিরা। ছাড়েনি শুধু একজনকে । ওই বোকাটা জেনেই হোক বা না জেনে, ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিস্ফোরক নিয়ে যাচ্ছিল । আবিল সে-ধরনের কিছু নিয়ে যাচ্ছে না, কাজেই তার ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।

চারদিকে নল-খাগড়ার ঝোপ, মাইল তিনেক এগোবার পর নির্দিষ্ট একটা ফাকা জায়গায় থামল ট্রাকগুলো । ঘড়ির কাটা ধরে সবকিছু চললে ঠিক আধঘণন্টার মধ্যে দুজন ইজরায়েলি ইহুদি স্কাউট পৌছে যাবে এখানে । প্রথমে টর্চ জ্বেলে সংকেত দেবে তারা । সেটা নির্ভুল হলে এদিক থেকে পাল্টা সংকেত দিয়ে কাছে আসতে বলা হবে তাদেরকে ।

তারা এসে রিপোর্ট করবে, নাহাল কালিয়া পর্যন্ত রাস্তাটা আজ রাতে জর্দানী ট্রাক বহরের জন্য নিরাপদ কি না। রিপোর্ট ইতিবাচক হলে ড্রাইভারদের প্রথম কাজ হবে ট্রাকগুলোর নাম্বার প্লেট বদলে ফেলা, আরবীয় বদলে ব্যবহার করা হবে হিব্রু। রঙ শুকাবার জন্য সময় দেওয়া হবে ঘণ্টাখানেক, তারপর ইজরায়েলি স্কাউট দুজনকে সামনের ট্রাকের পিছনে তুলে নিয়ে আবার শুরু হবে যাত্রা ।

ডেড সি খুব বেশি দূরে নয়, ট্রাক বহর নিয়ে ইজরায়েলী বন্দর সংলগ্ন একটা ওয়্যারহাউসে পৌছাবে তারা । ইজরায়েলি স্মাগলিং কোম্পানি তৈয়বিয়া আ্যান্ড ব্রাদার্স -এর ওয়্যারহাউস ওটা, মালিকরা ফিলিস্তিনি, প্রধান অংশীদারের নাম তৈয়ব মাহমুদজান।

ওয়্যারহাউসের ভিতরই জর্দানী ড্রাইভারদের থাকা-খাওয়া ও চবিবশ ঘণ্টা বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হবে। পৌছাবার পর এক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাক থেকে সারের বস্তা নামিয়ে কিছু তোলা হবে ওয়্যারহাউসে, কিছু মালবাহী জাহাজে । পরদিন দুপুরে খালি ট্রাকে তোলা হবে সিল্ক, কেমিকেল ও ওষুধ। সন্ধ্যায় স্কাউটরা সবুজসংকেত দিলে রাত আটটার মধ্যে ফিরতি পথ ধরবে তারা ।

এই আয়োজনের মেয়াদ একমাস । পরের মাসে ইজরায়েলি মুসলমান ড্রাইভাররা পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করবে।

প্রতি মাসে পাঁচ থেকে সাতটা ট্রিপ হয়। মাসের শেষদিকে একবারই লেখাপড়া জানা কর্তা গোছের কাউকে পাঠানো হয় ট্রাক বহরের সঙ্গে, পণ্যের বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করে দেনা-পাওনার হিসাব হালনাগাদ করার জন্য। এবার পাঠানো হচ্ছে নতুন একজনকে।

নতুন মেহমান জর্দানী ইহুদি আবিল আহুদকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ফিলিস্তিনি তৈয়ব মাহমুদজান।

কিন্তু বিধি বাম, তা হওয়ার নয়!

সব ঠিকমতই চলছিল, ভাড়া করা স্কাউটরা সংকেত দিয়ে ট্রাক বহরের কাছে পৌছাল। মেইন রোড বিপদ-মুক্ত দেখে এসেছে তারা । এক ঘণ্টা পর তাদেরকে নিয়ে রওনা হয়ে গেল ট্রাক বহর। ওদের কারও জানার কথা নয়, এই এক ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে।

জলাভূমি পিছনে ফেলে এসে মেইন রোডে উঠল কনভয়। বন্দর নাহাল কালিয়ার দিকে যেতে হলে খানিক পর দক্ষিণে বাক নিতে হবে।

ওই বাকের সামনেই দেখা গেল রোড ব্লকটা। যখন দেখা গেল তখন আর পিছু হটার পথ থাকল না, কারণ ততক্ষণে ট্রাক বহরের পিছনে মেশিন গান ফিট করা সামরিক আর্মার্ড কার চলে এসেছে। রোড ব্লকের চারপাশে পজিশন নিয়ে থাকা সশস্ত্র লোকগুলোর ইউনিফর্মই বলে দিল সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে অ্যান্টি ড্রাগ ক্ষোয়াড-এর সদস্যরাও রয়েছে।

অ্যান্টি-ড্রাগ স্কোয়াড-এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন কর্নেল। ওদের কাছে খবর আছে, এ-পথে আজ হেরোইন ও আফিম
আসবে । তবে জানা যায়নি স্মাগলারদের কোন্‌ দল ঠিক কখন নিয়ে আসবে ওগুলো । ট্রাক বহর থামানো হলো । দুই বাহিনীর লোকজন ট্রাকগুলোর নাম্বার প্রেট পরীক্ষা করে রায় দিল মাত্র দু’তিন ঘণ্টা আগে এগুলো লেখা হয়েছে। কাগজ-পত্রে চোখ বুলিয়ে বলা হলো, সব জাল। এরপর ড্রাগ স্কোয়াডের কর্নেল জানতে চাইলেন, ‘কনভয় ও সার-এর মালিক কে?

ড্রাইভাররা পরস্পরের সঙ্গে মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করল। মালিক বা তার প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ইজরায়েলে ঢুকেছে ঠিকই, কিন্তু তার সম্পর্কে কিছুই জানে না তারা । শুধু কার মুখে যেন নামটা শুনেছে।

কেউ একজন জবাব দিল, “আবিল আহুদ ।’

হুকুম হলো, “ডাকো তাকে, সামনে আসতে বলো ।’

ডাকতে হলো না, ওদের কথা শুনতে পেয়ে নিজেই সামনের ট্রাকের ক্যাব থেকে নেমে এসে অফিসারের সামনে শান্ত ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাড়াল আবিল আহুদ ।

তুমি আবিল আহুদ? এই ট্রাক বহরের মালিক? প্রশ্ন করলেন কর্নেল।

এক মুহূর্ত চিন্তা করল আবিল। তাকে বলা হয়েছে যে- কোনও জর্দানী ইহুদিকে ধরতে পারলেও ছেড়ে দেয় ইজরায়েলি সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তবে এখানে শুধু ওরা নয়, ওদের সঙ্গে ড্রাগ ক্ষোয়াডও রয়েছে । তাতে কী, ওর সঙ্গে তো ও-সব কিছু নেই। হ্যা” জবাব দিল সে।

‘ব্লাডি স্মাগলার! এত সাহস তোমার, জর্দান থেকে হেরোইন, আফিম, গাজা, কোকেন নিয়ে ঢুকেছ ইজরায়েলে? ঘৃণার সঙ্গে জানতে চাইলেন কর্নেল।

প্রথমবার এরকম বিপদে পড়লেও, এতটুকু বিচলিত হলো না আবিল। শান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিল সে, “আপনি ভুল করছেন, অফিসার । আমি একজন সৎ ব্যবসায়ী, ক্ষতিকর পণ্য বেচাকেনা করিনা ।

“সেটা এখনই জানা যাবে,” বললেন কর্নেল। “এই, তোমরা সার্চ শুরু করো ।

প্রচুর সময় নিয়ে প্রতিটি ট্রাক ও সবার বডি সার্চ করা হলো। তবে কোনও ড্রাগ পাওয়া গেল না।

হতাশ হয়ে অ্যান্টি-ড্রাগ ক্ষোয়াডের কর্নেল ঘাড় ফিরিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মেজরের দিকে তাকালেন । “এটা আমাদের কেস নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার করে এই ঝামেলা এখান থেকে বিদায় করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট রায় দেওয়া মাত্র ট্রাক ও স্মাগলারদের এখান থেকে সরিয়ে ফেলবেন আপনি । অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে খবরটা পেয়েছি আমরা, ড্রাগ পার্টি এই পথ ধরেই আসবে । আলো নিভিয়ে দিয়ে এখানে আমরা সারারাত অপেক্ষা করব।’

ইজরায়েলি মেজরের দৃষ্টি অনুসরণ করে এতক্ষণে দেখতে পেল আবিল রাস্তা থেকে খানিক দূরে, গাছপালা ও ঝোপ-ঝাড়ের আংশিক আড়ালে একটা টেবিল ও তিনটে চেয়ার ফেলা হয়েছে। একটা চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে কালো আলখেল্লা পরা একজন সরকারী উকিল। টেবিলের পিছনের চেয়ারে বসা মাঝবয়েসী ভদ্রলোক নিশ্চয়ই ম্যাজিস্ট্রেট হবেন। রাইফেলধারী কয়েকজন বডিগার্ড, একজন আরদালি, একজন ক্লার্ককেও দেখা যাচ্ছে। সন্দেহ নেই, সবাই তারা সামারি ট্রায়াল-এর সদস্য।

মনে মনে প্রমাদ গুণল আবিল। সর্বনাশ! শেষ পর্যন্ত এই ছিল কপালে? বছরের পর বছর ইজরায়েলি জেলে পচতে হবে তাকে?

তারপর আবিল ভাবল, এরকম মারাত্মক বিপদে পড়তে হবে…

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top