একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
পানির রঙ ওখানে ঘন কালো । সেই পানিতে ঝুলে আছে ওটা । অপেক্ষা করছে।
মাছ নয়, ভাসিয়ে রাখার জন্যে শরীরে কোন এয়ার ব্লাডার নেই, তবে মাংসে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ থাকায় সমুদ্রের অতল তলে তলিয়ে যায় না। আবার স্তন্যপায়ী কোন প্রাণীও নয় ওটা, বাতাস নিতে হয় না বলে পানির ওপর মাথা তোলার/কোন গরজ অনুভব করে না।
কালো পানিতে ঝুলে আছে, কিন্তু ঘুমিয়ে নেই । ঘুম কাকে বলে জানেই তো না। তবে বিশ্রাম নেয়। বুলেট আকৃতির শরীর, পানি টানার জন্যে গভীর ফুটো বা গর্ত আছে শরীরে, টেনে নেয়া পানি থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে !
ঢেউ খেলানো আটটা বাহু স্রোতের সঙ্গে ঝুলছে, লম্বা দুটো টেনট্যাকল (কর্ষিকা) শক্তভাবে কুন্ডলী পাকিয়ে সেঁটে রয়েছে শরীরে । যদি কোন হুমকি দেখা দেয় বা খুনের নেশায় পেয়ে বসে, ছেড়ে দেয়া স্প্রিঙের মত লাফ দিয়ে সামনে ছুটবে ওগুলো, কাটা লাগানো চাবুকের মত।
একটাই শত্রু ওটার, পানির জগতে বাকি সমস্ত প্রাণী তার শিকার। নিজের সম্পর্কে কোন ধারণা নেই, বিশাল আকৃতি বা ধ্বংসকরী ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
সমুদ্রের ঠিক আধ মাইল নিচে ভেসে আছে ওটা, সূর্যের আলো যেখানে পৌছুতে পারে না । তবু ওর প্রকাণ্ড চোখে অস্পষ্ট চকচকে ভাব ধরা পড়ছে । ছোটখাট অনেক শিকারী প্রাণী আতঙ্কিত বা উত্তেজিত হলে তাদের শরীর থেকে আলো ছড়ায়।
মানুষের চোখ যদি দেখার সুযোগ পেত, তারপরও ওটার গায়ের রঙের বর্ণনা দেয়া সহজসাধ্য হত না । গাঢ় তামার সঙ্গে নীল আর বেগুনি মেশালে যা হয়; তবে তা শুধু এই রকম সময়ে, যখন বিশ্রাম নিচ্ছে। উত্তেজিত হলে বার বার বদলে যায় রঙ ।
জলদানবের সেনসরি সিস্টেম সাগরের শুধু একটা বৈশিষ্ট্যই সারাক্ষণ মনিটর করে, তা হলো তাপমাত্রা। চল্লিশ থেকে পঞ্চান্ন ডিগ্রী ফারেনহাইটে সবচেয়ে আরাম বোধ করে ওটা । পাহাড়ের ঢালে বাধা পেয়ে স্রোতের গতি কমে বাড়ে, তাপমাত্রাও ওঠা-নামা করে, সেই সঙ্গে জলদানবও ওপরে ওঠে কিংবা নামে নিচে।
এই মুহূর্তে একটা পরিবর্তন অনুভব করছে ওটা । স্রোতে ভাসতে ভাসতে মৃত একটা আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি চলে এসেছে। সামুদ্রিক খাদ থেকে আগ্নেয়গিরিটা খাড়া হয়ে উঠে এসেছে, ঠিক যেন একটা সূচ। পাহাড়টাকে ঘিরে পাক খাচ্ছে স্রোত, ঠাণ্ডা পানি সবেগে উঠে যাচ্ছে ওপরদিকে। কাজেই টেইল ফিন-এর সাহায্যে ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে
ওটা অন্ধকারের ভেতর ।
মাছদের মতই ওটার কোন সমাজ নেই, ঘুরে বেড়ায় একা একা । সেজন্যেই জানে না যে তার মত আরও অনেক জলদানবের অস্তিত্ব আছে আটলান্টিকে, সংখ্যায় এত বেশি আগে কখনও দেখা যায়নি । যেকোন কারণেই হোক, এক্ষেত্রে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকেনি।
ওটা শুধু বেঁচে থাকার জন্যে বেচে নেই, বেঁচে আছে খুন করার. জন্যে। প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে প্রাণী জগতের অনেকেই প্রয়োজন ছাড়াও খুন করে, জলদানবের ভেতরেও যেন সেরকম একটা প্রবণতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ।
দূর থেকে বোটটাকে দেখে মনে হবে দিগন্ত বিস্তৃত নীল সাটিনের ওপর একটা ধান পড়ে আছে। দিন কয়েক ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে একটানা বাতাস ছুটেছে, ঘণ্টা কয়েক হলো গতি হারিয়ে একেবারে থেমে গেছে সেটা । এই থমথমে পরিবেশ অনিশ্চিত একটা ভাব সৃষ্টি করে মনে, বাতাস যেন সতর্ক যোদ্ধার মত দম আটকে সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করছে, এরপর কোথাউয় কিভাবে হামলা করবে।
বোটের ককপিটে বসে রয়েছে বিলি ম্যাক, খালি ডান পা হুইলের একটা স্পোকে তোলা । বাতাস না থাকলেও ঢেউ আছে, বিশেষ একটা ছন্দে ওঠা-নামা করছে বোট । পালগুলোর দিকে একবার চোখ তুলল সে, তারপর হাতঘড়ি দেখল, বোকা বলে গাল দিল নিজেকে । এ ধরনের শান্ত পরিবেশ আশা করেনি সে, কোর্স নির্ধারণ করার সময় ধরে নিয়েছিল দখিনা বাতাসের সহায়তা পাবে। প্রথমে রয়্যাল নেভি ডকইয়ার্ডে একজন কাস্টম অফিসার দেরি করিয়ে দিল ওদেরকে। এত থাকতে আজই-তার শখ চাপল একজন শিক্ষানবিসকে হাতে-কলমে দেখাবে বাহান্ন ফুটী একটা হ্যাটারাস বোট কিভাবে সার্চ করতে হয়। তারপর বাতাসের এই খামখেয়ালীপনা । এতক্ষণে তাদের গভীর সাগরে
পৌছে যাবার কথা । অথচ..ফ্যানটেইল-এর পিছনে তাকিয়ে ইস্টার্ন ব্লু কাট-এর শেষ মাথায় লম্বা চ্যানেল মার্কার দেখতে পেল ম্যাক, অস্তগামী সূর্যের আলোয় সাদা একটা বিন্দুর মত চকচক করছে ।
হ্যাচ বেয়ে ওপরে উঠে এল তার স্ত্রী, এক কাপ চা ধরিয়ে দিল হাতে । কাপটা নিয়ে ধন্যবাদ দিল সে, তারপর হঠাৎ খেয়াল হতে মন্তব্য করল, তোমাকে দারুন দেখাচ্ছে!
বিস্মিত লুসি ঠোট টিপে হাসল, বলল, “তোমাকে খুব একটা খারাপ দেখাচ্ছে না।’
“আমি সত্যি সিরিয়াস । ছ’মাস বোটে থাকার পর কিভাবে এটা সম্ভব বুঝতে পারছি না।’
দৃষ্টিভ্রম।’ ঝুঁকে স্বামীর কপালে চুমো খেলো লুসি।
‘গন্ধটাও দারুণ তো! স্ত্রীর খালি পায়ের দিকে চোখ রেখে বলল ম্যাক। “নেশা ধরিয়ে দেয়।’ তেল মাখানো ওক’ কাঠের মত চকচকে ওগুলো, কোথাও কোন দাগ নেই, বা নীলচে শিরাও ফুটে ওঠেনি; কে বলবে পনেরো বছর আগে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছে ।
‘আবার কিভাবে আমি জুতো পরব বলো তো?’ হাসছে লুসি। “চেষ্টা করে দেখতে হবে বেয়ারফুট কমার্স ব্যাংকে কোন চাকরি পাওয়া যায় কিনা ।’
“ওখানে আদৌ যদি পৌছুতে পারো ।’ ইঙ্গিতে মেইনসেইলটা দেখাল ম্যাক, সেটা চুপসে আছে।
“বাতাস আবার শুরু হবে ।’
“তা হয়তো হবে । তবে আমাদের হাতে সময় নেই ।’ সামনের দিকে ঝুঁকল ম্যাক, এঞ্জিন চালু করার জন্যে ইগনিশন কী ধরতে গেল।
না।’
“ভেবেছ আমার খুব ভাল লাগছে? সোমবার সকালে ব্রোকার ভদ্রলোক ডকে থাকবেন, তার আগেই আমাদের ওখানে পৌছে যাওয়া উচিত ।
“এক মিনিট” হাত তুলে বাধা দিল লুসি। “শুনে আসি ওয়েদার রিপোর্ট কি বলে।’
নিচে নেমে গেল লুসি। বোটের পিছন থেকে হালকা ছলছল শব্দ ভেসে এল, ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতে আট-দশটা ছোট মাছ দেখতে পেল ম্যাক, হলুদ রঙা খানিকটা সমুদ্রশৈবালকে ঘিরে লাফালাফি করছে। শ্যাওলার ভেতর আশ্রয় নিয়েছে ছোট চিংড়ি ও অন্যান্য খুদে প্রাণী, কে ক’টা শিকার ধরতে পারে তারই প্রতিযোগিতা শুরু করেছে মাছগুলো ।
সামুদ্রিক শ্যাওলা আর সামুদ্রিক পাখি খুব ভাল লাগে ম্যাকের। সামুদ্রিক পাখি তাকে স্বাধীনতার কথা বলে। হাঙর বলে নিয়ম-শৃঙ্খলার কথা । আর ডলফিন? ওগুলো তাকে ঈশ্বরের কথা মনে করিয়ে দেয়। হলুদ সমুদ্রশৈবাল জীবনের কথা বলে । স্রোতের টানে ভেসে যায় ওগুলো, ছোট প্রাণীদের খাবার বহন করে, সেগুলো আবার বড় আকৃতির প্রাণীদের আহারে পরিণত হয় । এভাবেই প্রকৃতি একটা ফুড চেইন তৈরি করে রেখেছে।
রেডিও থেকে শব্দ ভেসে আসে, শুনতে পায় ম্যাক। “ইয়ট মুনলাইট, বারমুডা হারবার রেডিও… গো আাহেড ।’
ইয়েস, বারমুডা । উই আর সেইলিং নর্থ ফর কনেকটিকাট ৷ উই উড লাইক টু গেট আ ওয়েদার ফোরকাস্ট । ওভার ।’
“রাইট, মুনলাইট । ব্যারোমিটার থ্রী-ওহ্-পয়েন্টফোর-সেভেন আ্যাগু স্টেডি। উইণড সাউথওয়েস্ট টেন টু ফিফটিন ভিয়ারিং নর্থওয়েস্ট । ওয়েভস থ্রী টু সিক্স ফিট টুনাইট এন্ড টুমরো, উইথ নর্থওয়েস্ট ফিফটিন টু টোয়েনটি। স্ক্যাটারড শাওয়ার্স পসিবল ওভার ওপেন ওয়াট’র।
ওভার।’
“মেনি থ্যাঙ্কস, বারমুডা ।’
হ্যাচ হয়ে আবার উঠে এল লুসি । “দুঃখিত ।’
“আমিও ।’
‘ব্যাপারটা এভাবে শেষ হবার কথা ছিল না ।’
না।’
কথা ছিল অর্থাৎ প্ল্যান করা হয়েছিল দক্ষিণ-মুখী বাতাসে ভর করে ফিরবে ওরা, এঞ্জিনের সাহায্য একবারেই নেবে না; পুরোটা দূরত্ব পেরিয়ে সেই উপকূল পর্যন্ত । তারপর মন্টাউক পয়েন্ট পেরোবে, এরপর সামনে থাকে ফিশার্স আইল্যাড আর স্টোনিংটন হারবার। রওনা হবার পর থেকে গত ছ”মাসে বিভিন্ন দেশের পতাকাবাহী বার্জ, জাহাজ, ইয়ট ইত্যাদিকে পাশ কাটিয়েছে ওরা, ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য ইয়ট ক্লাব আর ডক; ফেরার পথেও আবার সেগুলোকে দেখতে পাবে, পাশ কাটাবে ইয়ট ক্লাব আর ডকগুলোকে । আশা ছিল স্টোনিংটন ব্রেকওয়াটার-এ পৌছুলে বাতাস খানিকটা পুব দিকে ঠেলবে ওদেরকে, ওরা যাতে হারবার ধরে বিজয়ীর মত ফিরতে পারে । ডকে ওদের দুই সন্তানকে
নিয়ে লুসির মা অপেক্ষা করবেন, ম্যাকের বোনও থাকবে তার বাচ্চাদের নিয়ে। ওখানে একটা শ্যাম্পেনের বোতল খুলবে ওরা, তারপর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নামিয়ে বোটটাকে তুলে দেওয়া হবে বিক্রির জন্য একজন ব্রোকারের হাতে ।
এভাবেই শেষ হবে ওদের জীবনের একটা পরিচ্ছেদ, শুরু হবে নতুন আরেকটা ।
“এখনও যে আশা নেই, তা নয়, বলল ম্যাক । “বছরের এই সময়টায় উত্তর-পশ্চিম-মুখী বাতাস টেকে না ।” একটু থেমে আবার বলল সে, “না টিকলেই রক্ষে, তা না হলে আমাদের ফুয়েল শেষ হয়ে যারে । আর ফুয়েল শেষ হয়ে গেলে বোট শুধু আগুপিছু করবে, ওই অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যাব আমরা ।’ চাবি ঘুরিয়ে এঞ্জিন স্টার্ট দিল
সে। ফোর-সিলিন্ডার ডিজেল খুব যে একটা শব্দ করে তা নয়, তবে ম্যাকের কানে যেন মুহূমহুঃ বজ্রপাত শুর হলো ।
লুসি চোখ কৌচকাল। ‘গড, আই হেট দ্যাট থিং!’
একটা মেশিনকে তুমি ঘৃণা করতে পারো না।’
“আমি তা-ও পারি। কারণ আমি দেখতে দ্দারুণ। তুমি নিজেই বলেছ। সংবিধানে আছে, দেখতে দারুণ একটা মেয়ে যে-কোন জিনিসকে ঘৃণা করতে পারে ।’ নিঃশব্দে হাসছে লুসি, ইয়টের সামনের তেকোণা পালটা নামাবার জন্যে এগোল সে।
‘পজিটিভলি চিন্তা করো,, চিৎকার করল ম্যাক। “এতদিন যথেষ্ট সেইলিং হয়েছে। এবার আমরা খানিকটা মোটরিং করব ।’
“আমি পজিটিভলি চিন্তা করতে চাই না । আমার রাগ হচ্ছে, হতাশ লাগছে । ভাল লাগবে তুমিও যদি রেগে ওঠো।
‘কিসের ওপর রাগ করব বলে দাও ।’ তেকোণা পাল নামানো হয়েছে দেখে গিয়ার দিল ম্যাক, বোটের নাক বাতাসের দিকে ঘোরাল। মনে হলো একটু যেন গতি পেয়েছে বাতাস। “দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী আমি । আমার একটা বোট আছে, বিক্রি করলে যে টাকা পাব তা দিয়ে এক বছরের খরচ চলে যাবে, এবং ভাল একটা চাকরি পেতে এক বছরের বেশি লাগার কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা, সব মিলিয়ে আমার খুব ফুর্তি লাগছে । এর বেশি একজন মানুষ আর কি চাইতে পারে?
ইয়টের সামনের দিকে চলে এল লুসি, মেইনসেইল গুটাতে শুরু করল । “আচ্ছা, যা পাওয়ার সব পেয়ে গেছ তাহলে? এখন তুমি সময়টা ফুর্তি করে কাটাতে চাও?
‘ঠিক ধরেছ।’ বড় পালটা গুটানোর কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করল সে, ইয়টের বো বাতাসের দিকে ধরে রাখার জন্যে স্টিয়ারিঙে পা আটকে রেখেছে। “কিন্তু ফুর্তি করতে চাইলে কি হবে, ছোট্ট একটা সমস্যা আছে।”
“কি সেটা? এক পায়ে দাড়াল লুসি, অপর পায়ের আঙুল দিয়ে ম্যাকের পায়ের পাতায় একটা বৃত্ত আকছে।
“বোটটা চালাবার জন্যে একজন লোক দরকার ।’
“অটোমেটিক পাইলটের কথা ভুলে যাচ্ছ কেন?’
“গ্রেট আইডিয়া**”যদি থাকত ।’
‘তা ঠিক। ভাবলাম ভূলে যাবাধ ভান করলে হয়তো পেয়ে যাব একটা ।
‘তুমি মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন, বলল ম্যাক । “বাইরেটা উপাদেয়, তবে ভেতরে পাগলামির ভাব। আছে ।’ ভাজ করা পালের মাঝখানে ঝুঁকে স্ত্রীকে চুমো খেলো সে। ক্যানভাসের স্তুপ বাধার জন্যে হাত বাড়াল কর্ড এর দিকে, হুইলে আটকানো পাটা পিছলে গেল, সেই সঙ্গে বাতাসের দিক থেকে ঘুরে গেল বোট । একটা ঢেউ এসে আঘাত করল স্টারবোর্ডে, ঠাণ্ডা পানির ছিটা লাগল লুসির পায়ে।
চমৎকার, বলল সে। রোমানসের বারোটা বাজাতে ভালই শিখেছ।’
তাড়াতাড়ি বোট আবার সিধে করে নিল ম্যাক। ঢেউগুলো এখন ঘন ঘন আসছে, মাথায় সামান্য ফেনা । বাতাসের গতি আরও যেন একটু বেড়েছে । ‘আমার বোধহয় আরেকটু অপেক্ষা করা উচিত ছিল, দেখে মনে হচ্ছে বাতাস আরও বাড়বে ।’
“চোখের সামনে বিশ্ব-সুন্দরী দাড়িয়ে থাকলে এ-সব কি কারও খেয়াল থাকে? হাসতে হাসতে ঘুরে দাড়াল লুসি, গুরুনিতম্ব দুলিয়ে নেমে গেল নিচে।
পশ্চিমে তাকিয়ে ম্যাক দেখল দিগন্ত রেখার নিচে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে সূর্য । একটা ঢেউ থেকে ঢাল বেয়ে নিচে নামল বোট, পরবর্তী ঢেউয়ের গায়ে নাক ঢোকাল। বোটের সামনে বৃষ্টির মত ছড়িয়ে পড়ল পানি। ঠাণ্ডায় কেপে উঠল সে, ভাবল লুসিকে ডেকে রেনকোটটা আনতে বলবে কি না।
এই সময় আবার ফিরে এল লুসি, নিজের রেনকোর্ট পরে আছে, হাতে এক কাপ কফি।
“ওঠো, আমি কিছুক্ষণ চালাই, বলল সে। “তুমি খানিকটা ঘুমিয়ে নাও।’
“আমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না ।’
‘জানি, কিন্তু বাতাস যদি না ফেরে সারাটা রাতই জেগে বসে থাকতে হবে ।’ হুইল ঘুরে এগিয়ে এল সে, বসে পড়ল ম্যাকের পাশে। ঠিক আছে, বলল ম্যাক, হুইল থেকে স্ত্রীর একটা হাত তুলে চুমো খেলো তাতে ।
“এটা কি জন্যে?
“চেঞ্জ অভ কমান্ড। প্রাচীন রীতি । পালাবদলের সময় সহকর্মীর হাতে চুমো খেতে হয়।’
ব্যাপারটা বেশ তো ।’
দাড়াল ম্যাক, হ্যাচের দিকে এগোল। “বাতাস মরে গেলে আমাকে ডেকো ।’ নিচে নেমে চার্টের ওপর ঝুঁকল সে, নিজেদের পজিশন বের করল, তারপর এখান থেকে মন্টাউক পয়েন্টের দূরত্ব মাপল। হ্যাচ থেকে মাথা বের করে বলল, ‘থ্রী-থ্রী-ওহ্, কেমন?” গত কয়েক মিনিটে অন্ধকার হয়ে গেছে চারদিক, কম্পাস রাখার বাক্সের মাথায় যে আলো জ্বলছে………
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।