একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
সব কিছুরই একটা নিয়ম থাকে । আগুন নেভাবার আগে আগুন লাগতে হয়, তারপর দমকল আসে। তবে নিয়ম উল্টে দেয়ার ঘটনাও মাঝে মধ্যে ঘটে বৈকি । বোস্টন শহরের নর্থ এন্ডে, বাহারি রঙের নিওন সাইনের মেলা যেখানে চোখ ধাধিয়ে দেয়, সন্ধ্যা লাগার পরপরই বসে যায় রূপ-যৌবন বিকিকিনির হাট, মার্সিডিজ-ক্যাডিলাক-রোলসরয়েলস বিরতিহীন উগড়ে দেয় মাল্টিমিলিওনেয়ার জুয়াড়ীদের, সাউন্ডপ্রুফ চার দেয়ালের ভেতর হাতবদল হয় ব্রিফকেস ভর্তি চাঁদার টাকা, আর বিশুদ্ধতা হারিয়ে হেরোইন আর মারিজুয়ানার খোঁজে পিলপিল করে ছুটে আসে তরুণ তরুণীরা, সেখানে আজ এই নিয়ম উল্টে দেয়ার বিরল ঘটনাটা ঘটবে-আগুন লাগার আগেই পৌছে যাবে ফায়ারব্রিগেডের গাড়ি।
নিউ ইয়র্কের মতই, বোস্টনকেও নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে মাফিয়া পরিবারগুলো । নর্থ এন্ডের সম্রাট ডিগো কর্ডোনা । প্রোটেকশন দেয়ার নাম করে এলাকার ছোট-বড় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলে তার লোকজন। বেআইনি কাজ করে ফেঁসে গেছ? ঘুষ খেয়ে ধরা পড়েছ? গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ করার পর খুন? জাল দলিল বানিয়ে কারও সম্পন্তি দখল করতে চাও? জায়গা-জমি কিনতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছ? রাস্তা মেরামতের ঠিকাদারি পেয়ে কাজে হাত দিতে পারছ না? কোন চিন্তা নেই, সব সমস্যার সমাধান করে দেবে ডিগো কর্ডোনা। প্রয়োজনে পুলিসকে
নেবে-যত বড় আপরাধই করে থাকো, প্রমাণ আর সাক্ষীর অভাবে নির্দোষ ঘোষণা করা হবে তোমাকে । হ্যা, এর জন্যে অবশ্যই মোটা টাকা ভেট দিতে হবে তোমার ডন কর্ডোনাকে।
আয়ের কত যে উৎস, গুনে শেষ করা যাবে না। ছটা ওয়্যারহাউস আছে ডিগো কর্ডোনার। বেশির ভাগই রফতানি
যোগ্য পণ্যে ঠাসা । তবে একটা ওয়্যারহাউসে রাখা হয় শুধু নিজের কারখানায় তৈরি বেস-বল ব্যাট। কিছু ব্যাটে বিশেষ চিহৃ দেয়া থাকে, যা শুধু কর্ডোনার লোকেরাই চিনতে পারে। ওগুলো মোচড়ালে খোলা যায়, ভেতরটা ফাপা। ওই ফাপা অংশে ভরা হয় হেরোইন । রাস্তা, রেস্তোরা, ক্যাসিনো বা বারে ভ্রাম্যমাণ মেয়ে-হকারের কাছ থেকে হয়তো এক ডলারের সিগারেট কিনল এক লোক দুশো ডলারে, যাবার সময় “ভুলে” নিয়ে গেল লাইটারটা । ওই লাইটারে হেরোইন আছে, ভরা হয়েছে আরেক ওয়্যারহাউসে । বাকি ওয়্যারহাউসে পাওয়া যাবে বেআইনী অস্ত্র আর গোলাবারুদ ।
তারপর ধরা যাক দেহ-ব্যবসা। পুলিসের খাতায় লেখা আছে নর্থ এন্ডে কলগার্লের সংখ্যা চার হাজার, পুরুষ বেশ্যার সংখ্যা পাঁচশো। ডন কর্ডোনার তালিকায় এদের সংখ্যা যথাক্রমে এগারো হাজার ও আড়াই হাজার । রূপ-যৌবন ও বয়েস অনুসারে সবাইকে টাদা দিতে হয়। কোন কোন মেয়ের আয় ধরা হয় দৈনিক দুই হাজার ডলার । মাসে বিশ দিন কাজ করবে সে, আয় করবে চল্লিশ হাজার ডলার, এর মধ্যে থেকে পনেরো হাজার ডলারই চলে যাবে চাঁদা দিতে । তবে এদের সংখ্যা খুব কম, শতকরা দশ-পনেরোজন। বেশির ভাগই দৈনিক আয় করে পাঁচশো থেকে সাতশো ডলার । তবে আয় কমবেশি যাই হোক, নির্ধারিত অঙ্কের চাদা ঠিকই এসে নিয়ে যাবে বস্ কর্ডোনার লোকজন।
আয়ের আরও বড় উৎস জুয়া। কে না জানে যে প্রায় প্রতিটি আমেরিকানই জুয়া খেলতে পছন্দ করে। নানা রকম লটারি, ঘোড়দৌড়, বেস বল, ভলি বল, রাগবি, এ-সব তো আছেই, তারা এমনকি আগামীকাল প্রভাতের প্রথম প্রহরে সূর্য দেখা যাবে, নাকি মেঘে ঢাকা থাকবে আকাশ, এ নিয়েও জুয়া ধরে । আর নর্থ এন্ডের প্রতিটি জুয়ার মাধ্যম থেকে টাকা পায় ডন কর্ডোনা। তার ওপর আছে নিজের স্টার ক্যাসিনো । সেটা এক এলাহি কারবার ।
রিচমন্ড স্ট্রীটের পুরো পশ্চিম দিকটার মালিক বলতে গেলে সে একাই । স্টার ক্যাসিনো ত্রিশ গজ চওড়া আর চল্লিশ গজ লম্বা, ছয়তলা উঁচু একটা বিল্ডিং। সব মিলিয়ে ছোট-বড় তিনশো কামরা। দুই, তিন আর চারতলায় শুধু জুয়ার আসর বসে। একতলায় বিলিয়ার্ড, টেবিল-টেনিস ইত্যাদি খেলা হয়। প্রতি তলায় রেস্তোরা আর বার আছে। পাঁচতলায় একশো ডলার ঘণ্টা হিসেবে কামরা ভাড়া দেয়া হয়। ছ’তলায় কি হয় না হয় কেউ বলতে পারে না, তবে ডন কর্ডোনার ব্যক্তিগত অফিসটা ওখানেই। তার জন্যে আলাদা একটা এলিভেটর আছে, সশস্ত্র লোকজন সেটাকে চব্বিশ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে রাখে । ছাদে যে-কোন মুহূর্তে ওড়ার জন্যে তৈরি আছে একটা হেলিকপ্টার ।
ক্যাসিনো স্টার ভবনের দু’পাশে ও পিছনে আরও তিনটে অপেক্ষাকৃত ছোট বিল্ডিং আছে, ওগুলোর মালিকও কর্ডোনা। সামনের দুটো অফিস বিল্ডিং আইনজ্ঞ, ম্যানেজার, আকাউন্টস অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধতাদানের কাজ চলে । পিছনের বিল্ডিঙে কর্ডোনার রিজার্ভ বাহিনী আড্ডা দেয়, আট ঘন্টা পরপর পালা বদল। শোনা যায় এদের সংখ্যা একশো থেকে দেড়শোর মধ্যে, মুহুর্তের নোটিসে শহরের যে-কোন প্রান্তে অপারেশন থাকে তারা ।
রাত আটটা থেকে নয়টা, এই একঘণ্টা স্টার ক্যাসিনোর প্রতিটি ফ্লোরে একবার করে চক্কর দেয় কর্ডোনা, কারও কোন
অভিযোগ থাকলে শোনে, বিশিষ্ট ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে । টহল শেষে গ্রাউন্ড ফ্লোরের বিলিয়ার্ড রূমে গিয়ে ঢোকে সে, কিছুক্ষণ বিলিয়ার্ড খেলে তারপর আবার নিজের ছয়তলার অফিসে গিয়ে বসে। তারপর থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ওখানে থাকে সে, যতক্ষণ টাকা গোনা শেষ না হয়। হিসেবে গরমিল হলে আরও বেশি রাত পর্যন্ত থাকতে হয়। তারপর বুলেটপ্রফ গাড়ি নিয়ে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশে, সামনে ও পিছনে পাহারায় থাকে আরও চার-পাঁচটা গাড়ি, প্রতিটিতে পাঁচ-সাতজন করে দেহরক্ষী।
স্টার ক্যাসিনোয় জুয়ার ব্যবসা আজ খুব গরম। সাধারণত জুয়ার প্রতিটি আসর রাত দশটার পর জমজমাট হয়ে ওঠে, কিন্তু আজ সন্ধের পর থেকেই প্রতিটি টেবিল দখল হয়ে গেছে। ক্যাসিনো ম্যানেজারের মুখে খবরটা শুনে খুশি হবার কথা কর্ডোনার, অথচ গন্তীর হয়ে গেল তার চেহারা । ইন্টারকমের রিসিভার তুলে হেড গেটম্যানের সঙ্গে কথা বলল সে। দশ মিনিট পর তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে ছয়তলায় হাজির হলো লোকটা । তালগাছের মত লম্বা সে, কোমরের দু’ধারে ভারী দু’টো পিস্তল থাকায় খানিকটা কুঁজো হয়ে আছে। মাথা নত করে কর্ডোনাকে সম্মান জানাল, তারপর সময়ের আগে লোক সমাগম বেশি হবার কারণটা ব্যাখ্যা করল। তার কথা শেষ হতে কর্ডোনার টান-টান
মুখের চামড়ায় সামান্য ভাজ পড়ল, এটাই তার হাসি। হাত নেড়ে বিদায় করে দিল হেড গেটম্যানকে। লোকটা বিদায় হতেই ইন্টারকমে সিকিউরিটি চীফ-এর সঙ্গে কথা বলল সে। “বিদেশী গার্ড পাঠাও, টহল দিয়ে বেড়াক।’ ইন্টারকমের সুইচ অফ করে দিয়ে গ্রাসে হুইস্কি ঢালল সে, উল্টোদিকে সোফায় বসা কিশোরী মেয়েটিকে ইঙ্গিতে তাস বাটতে বলল ।
হেড গেটম্যান তাকে জানিয়েছে, সন্ধ্যার খানিক আগে ভারতীয় একদল ট্যুরিস্ট এসেছে ক্যাসিনোয়, সবাই তারা পাগড়ি পরা শিখ, প্রত্যেকেই নাম করা কোন না কোন ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর ৷ এক ঘণ্টা পর, দু’দলে ভাগ হয়ে, আরও এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের একদল ট্যুরিস্ট-দলের সদস্যরা বেশিরভাগই শেখ বা আমীর, তেল অথবা স্বর্ণখনির মালিক। সবাই তারা ব্রীফকেস ভর্তি টাকা নিয়ে এসেছে, প্রত্যেকের সঙ্গে একাধিক বডিগার্ড। তবে জুয়ায় তারা হারছে নাকি জিতছে, সে হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি । এ ধরনের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে জানা আছে কর্ডোনার, ক্যাসিনোয়
ঢোকেই এরা হারার জন্যে । আজ হয়তো টাকা গুনতে রাত দুটো বেজে যাবে তার।
আটটার সময় ছ’তলা থেকে নামল কর্ডোনা। থার্ড ফ্লোর থেকে চক্কর দেয়া শুরু হলো তার। ভারতীয় শিখ আর মধ্যপ্রাচ্যের শেখ ও আমীরদের কয়েকজনকে দেখল সে, দু’একজনের সঙ্গে কুশল বিনিময়ও করল । ক্যাসিনোর ম্যানেজার ফিসফিস করল তার কানে । চেহারায় কোন ভাব ফুটল না, কর্ডোনা নির্লিপ্ত । সবাই নয়, ট্যুরিস্ট জুয়াড়ীরা বেশিরভাগই জিতছে। এটা একটা দুঃসংবাদ হলেও, কর্ডোনা বিশেষ গুরুত্ব দিল না। অন্য কি যেন একটা কারণে তার মন খুঁতখুত করছে। কিসের যেন একটা অভাব। থাকার কথা অথচ নেই । জিনিসটা কি মনে করতে পারছে না।
অবশেষে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এসে বিলিয়ার্ড খেলায় মন দিল কর্ডোনা। বিদেশী ট্যুরিস্টরা এখানেই যেন বেশি ভিড় করেছে। আরব আমিরাতের শেখ ও আমীররা ধবধবে সাদা ঢোলা আলখেল্লা পরে আছে, ভারতীয় শিখদের মাথায় পাগড়ি। বডিগার্ডরা পাহারা দিয়ে রেখেছে যে যার মনিবকে ৷ কর্ডোনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা তাদের বসকে ঘিরে পজিশন নিল ।
এখনও খুঁতখুঁত করছে কর্ডোনার মনটা । সুঠামদেহী আগন্তুক বার-এ ঢুকতেই তিন কোণের তিনটে টেবিল
ছেড়ে কাউন্টারের দিকে এগোল তিনজন খদ্দের। একটা মেয়ে তার পুরুষ সঙ্গীকে অপেক্ষা করতে বলে বার থেকে বেরিয়ে বিলিয়ার্ড রূমের দিকে চলে গেল, আরেক মেয়ে ঢুকল লেডিস টয়লেটে । কেউই তারা সরাসরি আগন্তুকের দিকে তাকায়নি।
আগন্তুক যেন ওয়েস্টান ছায়াছবি থেকে উঠে আসা কোনও কাউবয় । মুখে দু’দিনের না কামানো খোঁচা-খোচা দাড়ি, মাথায় লেদার জ্যাকেট; জ্যাকেটের চেইনটা খোলা, চওড়া পকেটে বাম হাত ঢোকানো । পায়ে রাবার সোল লাগানো জুতো, সেলাইগুলো ঢেউখেলানো। সোজা এগিয়ে এসে কাউন্টারের সামনে থামল সে, তারপর হঠাৎ ঘুরে বারম্যানের দিকে পিছন ফিরল, শিরদাড়া ঠেকে আছে কাউন্টারের কিনারায় । চারদিকে দৃষ্টি বোলাচ্ছে, চোখাচোখি হতে ইশারায় কাছে ডাকল একজন সশস্ত্র গার্ডকে।
পরনে কালো ট্রাউজার ও ইন করা সাদা শার্ট, শার্টের ওপর একটা পিস্তল। লোকটা লম্বা-চওড়া, বোঝা যায়, বাঘের মত ক্ষিপ্র। সতর্ক পায়ে হেটে এসে আগন্তুকের সামনে দাড়াল। ইয়েস, স্যার? মুখে স্যার বললেও, আগন্তুকের বেশভূষা দেখে গার্ডের চেহারায় তাচ্ছিল্যের একটা ভাব ফুটতে চাইছে । যদিও গার্ড ও গেটম্যানদের ওপর কড়া নির্দেশ আছে, কোনও অবস্থাতেই কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। ‘কোনও সমস্যা?
আগন্তৃকের শাণিত চোখে বরফের মত ঠাণ্ডা দৃষ্টি। “ডিগো কর্ডোনা ।’
ঝাকি খেলো গার্ড, যেন ইলেকট্রিক শক খেয়েছে । “তিনি, মানে… কি বললেন, স্যার?’
আগন্তুক আবার বলল, ‘ডিগো কর্ডোনা ।
চট করে একবার ঘাড় ফিরিয়ে পিছন দিকে তাকাল গার্ড । পিছনে তিনজন বিদেশী ট্যুরিস্ট নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, প্রত্যেকের একটা করে হাত ঢোলা আলখেল্লার ভেতর । লোকগুলো এমন ভাবে দাড়িয়েছে, তার পিছু হটার পথ বন্ধ করাই যেন উদ্দেশ্য। আগন্তুকের দিকে ফিরে একটা ঢোক গিলল গার্ড। “বস্ বিলিয়ার্ড রূমে, স্যার, শব্দগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে এল।
জ্যাকেটের পকেটে ঢোকানো বাম হাতটার দিকে তাকাল আগন্তুক, তার দৃষ্টি অনুসরণ করে গার্ডও। পকেটের বাইরে শুধু কাঠের হাতল দেখা গেল-সামান্য একটু, চকচকে বাদামী রঙ । ওটা যে একটা মেশিন পিস্তলের হাতল, গার্ডকে তা বলে দেয়ার প্রয়োজন নেই। দৃষ্টি তুলে আগন্তুকের মুখের দিকে তাকাবার আগে আরও একটা জিনিস দেখতে পেল সে-জ্যাকেটের ভেতর হোলস্টারে ভারী একটা রিভলভার। “পথ দেখাও, লোকটাকে বলল আগন্তুক ।
টয়লেট থেকে বেরিয়ে নিজের টেবিলে ফিরল দ্বিতীয় মেয়েটা । ব্যাগ থেকে আয়না বের করে নিজের মেকআপ পরীক্ষা করছে, বসেছে কাউন্টারের দিকে পিছন ফিরে।
অনিচ্ছাসত্বেও বার থেকে বেরিয়ে এল গার্ড। আগন্তুক তার ঠিক পিছনেই। সিঁড়িটাকে পাশ কাটানোর সময় পিছন দিকে একবার তাকাল গার্ড। বিদেশী ট্যুরিস্টরা সংখ্যায় এখন চারজন। তিনজন সিঁড়ির ধাপে পজিশন নিল। বাকি একজন আগন্তুকের ঠিক পিছনে, সম্ভবত সে-ও বিলিয়ার্ড রূমে ঢুকবে।
বিশাল বিলিয়ার্ড রূমে বারোটা টেবিল ফেলা হয়েছে। প্রতিটি টেবিলের খেলা দেখার জন্যে তিন দিকে ক্রমশ উচু মেঝেতে চেয়ার পাতা । তিন নম্বর টেবিলে মাত্র দু’জন লোক, তার মধ্যে একজন কর্ভোনা। টেবিলের এক প্রান্তে দাড়িয়ে পড়ল গার্ড। অপরপ্রান্তে তার মনিব ।
এক ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, বস্ রুদ্ধশ্বাসে উচ্চারণ করল গার্ড ।
একটা শট নিল কর্ডোনা, কুশন থেকে পকেটে অদৃশ্য হলো বলটা । চেহারায় কোন ভাব ফোটেনি, খেলা থেকে মুখ না তুলেই বলল, তো?
“আপনি তার সঙ্গে কথা বললে ভাল হয়।
“ভাল হয় কিনা তুমি শেখাবে আমাকে, মার্টিন? কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করল কর্ডোনা ।
“উনি এখানেই, বস্ ।’
“আমিও তার সঙ্গে এখানেই কথা বলব, এক মিনিট পর, বলল কর্ডোনা। দ্বিতীয় শট নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে, টেবিলের সবুজ সারফেসে স্বচ্ছ প্লাস্টিকে মোড়া কি যেন একটা পড়ল, আইডি কার্ডের মত দেখতে । লম্বাটে ও চৌকো জিনিসটা পড়ার সময় সামান্যই শব্দ হয়েছে, কিন্তু সেটাই বোমা বিস্ফোরণের মত কাজ করল। কর্ডোনার বিশাল দুই কাধ আড়ষ্ট হয়ে গেল। প্লাস্টিকে মোড়া জোড়া ফটোর দিকে দুই সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল সে, তারপর ধীরে ধীরে বিস্ফারিত হলো চোখ দুটো । শট নিতে যাওয়ার ভঙ্গিতে স্থির হয়ে আছে শরীরটা, এক চুল নড়ছে না। আশপাশের কয়েকটা টেবিলের বন্ধ হয়ে গেছে খেলা । দম দেয়া পুতুলের মত প্রতিক্রিয়া হলো সশস্ত্র গার্ডদের-হোলস্টার ও
জমে গেল। কারও শিরদাড়ায় শক্ত কিছু ঠেকল, কেউ পাশ থেকে শুনতে পেল “নড়বে না’, আবার কেউ দেখল তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে অচেনা কোন লোক, আলকেল্লার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে মেশিন পিস্তলের ব্যারেল ।
কয়েকজন দর্শক, সবাই তারা জুয়াড়ী, চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল; কিন্তু আশপাশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উকি মারছে দেখে ঝপ্ করে বসে পড়ল আবার ।
গোটা বিলিয়ার্ড রূমে পিন-পতন স্তব্ধতা, সবাই যেন নিঃশ্বাস ফেলতেও ভুলে গেছে।
শটটা শেষ করো, কর্ডোনা, ঠাণ্ডা স্বরে বলল আগন্তুক। “এক বালতি রক্ত বাজি ধরলাম-বলটা তুমি পকেটে ফেলতে পারবে না।
আশপাশ থেকে কয়েকজন ফিসফাস করে উঠল। বিদেশী উচ্চারণে কেউ একজন কড়কে উঠল, “শাট আপ!
অবশেষে কিউ ছেড়ে দিয়ে সিধে হলো কর্ডোনা। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা সে, দুই মণের কাছাকাছি ওজন, শরীরে এক ছটাক চর্বি নেই। ভারী গলা গমগম করে উঠল, “কে আপনি? আমার কাছে কি চান?
‘ফটোর মেয়ে আর ছেলেটাকে তুমি চেনো, কর্ডোনা,, বলল আগন্তুক । “আমি জানতে চাই, ওদেরকে কোথায় রাখা হয়েছে।’
মাথা না ঘুরিয়ে শুধু চোখ ঘোরাল কর্ডোনা। তাতেই পরিস্থিতিটা পরিস্কার হয়ে গেল। সাদা পোশাকে পুলিসের সংখ্যা……
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।