একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
কাচা-পাকা ভুরু কুচকে আছে । কপালের পাশে একটা রগ তিরতির করে কেপে উঠল | গভীর মনোযোগের সাথে একটা ফাইল দেখছেন বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেনের সুযোগ্য কর্ণধার মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খান ।
কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট/পার্ট ওয়ান
মিকোয়ান প্রজেক্ট
প্রজেক্টের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে । প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয় পাঁচ বছর আগে । এটা মিগ-৩১ তৈরির একটা মহা পরিকল্পনা । পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র একজোড়া বিমান তৈরি করা হয়েছে ।
মিগ-৩১ সোভিয়েত সমর-বিজ্ঞনীদের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার | এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হলে পৃথিবীর গোটা আকাশ সোভিয়েত এয়ারফোর্স হয়ে উঠবে অপরাজেয় একটা শক্তি। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র বা তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে এ-ধরনের কিছু নেই। তারমানেই এক্ষেত্রে রাশিয়ার চেয়ে দশ বছর পিছিয়ে পড়বে তারা । ন্যাটো আর সি.আই.এ. মিগ-৩১-এর সার্থক নামকরণ করেছে-এয়ারকিং ।
দুটো অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে এয়ারকিং (মিগ-৩১)-এর । একটা হলো থট-গাইডেড উইপনস সিস্টেম, অপরটি অ্যান্টি রাডার । ইনভ্যালিড চেয়ার কিভাবে কাজ করে জানা থাকলে থট-গাইডেন্স সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব । ইনভ্যালিড চেয়ার বেসামরিক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে তৈরি হতে যাচ্ছে । এই চেয়ারের পরিকল্পনা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে একজন পঙ্গু বা অচল ব্যক্তি তার কোন হাত, পা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া না করে শুধু পজিটিভ থট আাকটিভিটির সাহায্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অনায়াসে যাওয়া-আসা করতে
পারবে । চেয়ারটা তৈরি করা হবে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে, ব্রেন-এর সাথে সংযুক্ত (একটা ক্যাপ বা হেডরেস্টের মাধ্যমে) সেনসরগুলো ব্রেন থেকে পাওয়া নির্দেশ হুইলচেয়ার বা ইনভ্যালিড ক্যারিজের মেকানিক্সের কাছে ট্র্যান্সমিট করবে-ইলেকট্রনিক ইমপাল্সের মত । মনের নির্দেশগুলো-সামনে এগোও, উল্টো দিকে ঘোরো, ডানে বা বায়ে বাক নাও-সরাসরি ব্রেন থেকে আসবে । এই নির্দেশ সরাসরি হুইলচেয়ারের অন্তরে গিয়ে পৌছুবে |
পরীক্ষামূলকভাবে এই চেয়ার তৈরি করা সম্ভব হলেও, সামরিক প্রয়োজনে এই পদ্ধতি এখনও ব্যবহার করা শুরু হয়নি । কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এ-ধরনের একটা পদ্ধতি আরও নিখুত করে নিয়ে সামরিক কাজে ব্যবহার করার যোগ্যতা অর্জন করেছে। (পশ্চিম ইউরোপ এমনকি ইনভ্যালিড চেয়ার পর্যন্ত তৈরি করছে না।)
ডিটেকশন আর গাইডেনের জন্যে আধুনিক একটা এয়ারক্রাফট রাডার আর ইনফ্রা-রেড সিস্টেম থাকতেই হবে, এয়ারকিং-এ এ-সবের সাথে রাশিয়ানরা যোগ করেছে চিন্তা-পরিচালিত এবং চিন্তা নিয়ন্ত্রিত (থট-গাইডেড এন্ড থট-
কন্ট্রোলড্) অস্ত্রাগার ৷ রাডারের সিগন্যাল নিরেট একটা জিনিসে বাড়ি খায়, স্ক্রীনে দেখা যায় আসলে ওখানে জিনিসটা কি রয়েছে । আর ইনফ্রা-রেড স্ক্রীনে দেখায় ডিটেকশন ইকুইপমেন্টের চারদিকে হিট-সোর্স কোথায় রয়েছে । মিসাইল পরিচালনা বা লক্ষ্যস্থির করার জন্যে দুটোর যে-কোন একটা বা দুটো সিস্টেমই ব্যবহার করা যেতে পারে | মিসাইলেও দুটো সিস্টেমের যে-কোন একটা অথবা দুটোই থাকে | তবে থট-গাইডেড সিস্টেমের সুবিধে হলো এই যে মিসাইল ছোড়ার পরও পাইলটের হাতে ওটাকে পরিচালনা করার ক্ষমতা থেকে যায়। পাইলট আরও একটা সুবিধে পাচ্ছে, এরও কোন তুলনা হয় না, বোতাম টিপলেই মিসাইল বেরোয়, কিন্তু বোতাম টেপা থেকে শুরু করে মিসাইল
বেরুনো পর্যন্ত কিছুটা সময় লেগে যায় । থট-গাইডেড সিস্টেমে মিসাইল রিলিজ হতে প্রায় কোন সময়ই লাগবে না, কারণ কোন রকম শারীরিক তৎপরতার দরকার হবে না ।
এই সফিসটিকেটেড সিস্টেমের কাছ থেকে পুরোমাত্রায় সুফল পেতে হলে নতুন ধরনের সফিসটিকেটেড কামান আর মিসাইলও দরকার । যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্রদের তো প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি সম্ভবত সোভিয়েত রাশিয়াও এখনও ওগুলো তৈরি করতে পারেনি ৷ এয়ারকিং-এ তারা নিশ্চই প্রচলিত মিসাইল আর রকেটই ব্যবহার করবে । তবু, রাশিয়ার যা প্রোগ্রাম, এই মুহূর্তে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উঠে পড়ে না লাগে, নতুন ধরনের মিসাইল আর কামান টেকনোলজিতেও পিছিয়ে পড়বে তারা ।
এয়ারকিং-এর এন্টি-রাডার কৌশল সম্পর্কে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি । ওটার প্রাথমিক উড্ডয়নের সময় স্যাটেলাইট রাডারে ওটাকে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে সি.আই.এ.। কিভাবে জানা না গেলেও, এতে কোন সন্দেহ নেই যে এয়ারকিং যে-কোন ধরনের রাডারকে ফাকি দিতে সক্ষম |
এ-সব তথ্য পাবার পর, সঙ্গত কারণেই, ন্যাটো, সি.আই.এ. আর পেন্টাগনের ওরা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ে ।
এই বিস্ময়কর হানাদার বিমান ব্যাপক হারে তৈরি করার জন্যে ক্যেকশো বিলিয়ন রুবল আলাদা করে রেখেছে সোভিয়েত সরকার । মিগ-২৫ [ ন্যাটো আর সি.আই.এ-র দেয়া নাম-এয়ারউলফ)-কে আরও উন্নত করার দুটো প্রজেক্ট এরইমধ্যে বাতিল করে দেয়া হয়েছে বা হবে | সোভিয়েত সমরবিদরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মিগ-৩১ (এয়ারকিং) ব্যাপক হারে তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সোভিয়েত এয়ারফোর্সের পয়লা নম্বর হানাদার বিমান হিসেবে মিগ-২৫-ই বহাল থাকবে । ব্যাপক হারে মিগ-৩১ উৎপাদনে সহায়তা করার জন্যে রাশিয়ার ইউরোপীয় অংশে অন্তত তিনটে ফ্যাক্টরি-কমপ্রেক্স তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে । একই সাথে এয়ারকিং-এর দু’ধরনের সংস্করণ তৈরি করা হবে ইনটারসেপটর আর স্ট্রাইকার । এগুলোর উৎপাদন শুরু হলে ক্ষমতার ভারসাম্যে গুরুতর পরিবর্তন দেখা দেবে, তার পরিণতি
কারও জন্যেই ভাল হবে বলে আশা করা যায় না ।
এই হুমকি মোকাবিলার জন্যে প্রেসিডেন্টের কাছে দুটো গোপন প্রস্তাব পাঠায় সি.আই.এ. । তাদের প্রস্তাব ন্যাটো আর
পেন্টাগন সমর্থন করে | এক নম্বর প্রস্তাব-কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়ে গোটা মিকোয়ান প্রজেক্ট ধ্বংস করে দেয়া হোক । দু’নম্বর প্রস্তাব-একটা এয়ারকিং বিলিয়ারস্ক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা হোক ।
তৃতীয় বিশ্ব-যুদ্ধ বেধে যেতে পারে, এই কথা বলে প্রেসিডেন্ট দুটো প্রস্তাবই বাতিল করে দিয়েছেন । এটা প্রায় দু’বছর আগের কথা ।
কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট/পার্ট টু
সি.আই. এ. এবং জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের গোপন প্ল্যান ।
মিকোয়ান প্রজেক্টে একজন প্রথমশ্রেণীর ইহুদি বিজ্ঞানী কাজ করছে । তার নাম নেসতর কোইভিসতু । কোইভিসতু শুধু একজন বিজ্ঞানী নয়, সেইসাথে একজন স্পাইও | জন্মসূত্রে সোভিয়েত রাশিয়ার নাগরিক এবং সেখানেই মানুষ হলেও, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের স্বার্থ তার কাছে সব সময় বড় ।
রাশিয়ার সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও মিকোয়ান প্রজেক্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করতে
কোইভিসতুর কোন অসুবিধে হয় না । মস্কোর মার্কিন দূতাবাসের ট্রেড আটাশে টিম ওয়াইজম্যান সি.আই.এ-র লোক, তার বিশ্বস্ত এজেন্ট হলো চাইম জসেস্কু । জসেস্কু একজন রাশিয়ান ইহুদি | বিলিয়ারস্ক থেকে কোইভিসতুর পাঠানো তথ্য মস্কোয় রিসিভ করে এই জসেস্কু, তথ্যগুলো নিয়ে আসে মোলায়েভ নামে এক মুদি । সেগুলো টিম ওয়াইজম্যানের হাত ঘুরে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে পৌছে যায় তেল আবিবে । কোইভিসতুর দুই ইহুদি বন্ধু আছে বিলিয়ারস্কে, তারাও বিজ্ঞানী এবং মিকোয়ান প্রজেক্টে কাজ করে । এদের দু’জনকেও দলে ভিড়িয়েছে সে । এদের একজন ড. ইসরাফিলভ, অপরজন ড. করনিচয় ।
এই খুদে স্পাই রিঙে রাশিয়ান ইহুদি যারা রয়েছে তারা কেউ পেশাদার স্পাই নয়, কিন্ত সবাই ইসরায়েলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ৷ ইসরায়েল বা ইহুদিবাদের বড় কোন উপকারের বিনিময়ে মৃত্যুবরণ করতেও কুষ্ঠিত নয় তারা । কাজেই এদের শক্তিকে খাটো করে দেখা চলে না।
প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব দুটো বাতিল করে দিলেও, সি.আই.এ. কিন্তু হাল ছাড়ে না। নাসা আর পেন্টাগনের সাথে পরামর্শ করে
নেসতর কোইভিসতুর কাছে একটা প্রস্তাব পাঠায় তারা | উত্তরে কোইভিসতু জানায় সে রাশিয়া থেকে পালিয়ে আমেরিকায় পৌছুলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না| এয়ারকিং-এর উইপনস সিস্টেমের ডিজাইন তার তৈরি, সিস্টেমটার উন্নতিও তার হাতে হয়েছে, কিন্তু বিমানের আর সব অংশ নিয়ে কাজ করছে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা, সেখানে তার নাক গলাবার কোন উপায় নেই । মিকোয়ান প্রজেক্টে সিকিউরিটি অত্যন্ত কড়া, তার ওপর ইহুদি বিজ্ঞানীদের, সামান্য হলেও, কিছুটা সন্দেহ আর অবিশ্বাসের চোখে দেখা হয় । বিমানের সমস্ত গোপন তথ্য হাত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় । কাজেই আমেরিকা তাকে নিরাপদে রাশিয়া থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারলেও এয়ারকিং-এর মার্কিন
সংস্করণ তৈরির কাজে তেমন কোন সাহায্য সে করতে পারবে না।
এই উত্তরের সাথেই পাল্টা একটা প্রস্তাব পাঠায় কোইভিসতু । তাতে বলা হয়, সি.আই.এ-র সহায়তায় জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্স যদি রাশিয়ার একটা এয়ারকিং চুরি করতে চায়, বিলিয়ারস্কের ইহুদি বিজ্ঞানীরা তাহলে সম্ভাব্য সব রকম সাহায্য করবে ।
প্রস্তাবটা লুফে নেয় সি.আই.এ. চীফ রবার্ট মরগ্যান । জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর আইজ্যাক ময়নিহানের সাথে
গোপন বৈঠকে বসে সে। দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, অপারেশনটা ইসরায়েলের নামে পরিচালিত হবে । সি.আই.এ. তার সমস্ত শক্তি দিয়ে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু গোপনে । শেষ পর্যন্ত যখন সব জানাজানি হয়ে যাবে, এর সাথে যে সি.আই.এ. জড়িত ছিল, সেটা প্রকাশ পাওয়া চলবে না । চুরি করা এয়ারকিং ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হবে, কাজেই পাইলটকে হতে হবে একজন ইসরায়েলি ইহুদি | সি.আই.এ. হেডকোয়ার্টার ল্যাংলি, ভার্জিনিয়াতে ট্রেনিং দেয়া হবে তাকে । রিফুয়েলিং পয়েন্ট কোথায় হবে, নির্ধারণ করার দায়িত্ব সি.আই. এ-র | রিফুয়েলিং পয়েন্ট খুজে পাবার জন্যে পাইলটের কাছে কোন এক ধরনের হোমিং ডিভাইস থাকতে হবে, রাশিয়ানরা দেখেও সেটার অস্তিত্ব যেন
টের না পায়। চুরি করা এয়ারকিং তেল আবিবেই থেকে যাবে, তবে যখন বা যতক্ষণ খুশি সেটা মার্কিন বিজ্ঞানীদের দেখতে দিতে বাধ্য থাকবে ইসরায়েল ৷ এয়ারকিং-এর মার্কিন সংস্করণ তৈরি হলে এক স্কোয়াড্রন বিমান উপহার হিসেবে চাইবে ইসরায়েল, সি.আই.এ. ইসরায়েলের এই দাবি সমর্থন করবে | মিকোয়ান প্রজেক্টের কাজ শেষ হতে দু’বছর বাকি, কাজেই সময় নষ্ট না করে একটা প্ল্যান তৈরি করে ফেলা দরকার । ইসরায়েল পাইলট নির্বাচন করে পাঠালেই তাকে ট্রেনিং দেয়ার কাজ শুরু করা হবে।
দুই ইন্টেলিজেস চীফের মধ্যে এই সমঝোতা হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গেছে । ইসরায়েলি পাইলট পিটি ডাভ-এর
ট্রেনিং শেষ, সিগন্যাল পাওয়ার অপেক্ষায় লন্ডনে রয়েছে সে। মিকোয়ান প্রজেক্টের কাজও প্রায় শেষ, তিন-চার মাসের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে উড়বে এয়ারকিং ৷ সে-অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সোভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টির ফার্স্ট সেক্রেটারি । এই অনুষ্ঠানের মাত্র দু’চার দিন আগে সিগন্যাল দেয়া হবে পিটি ডাভকে | সিগন্যাল পেয়ে লন্ডন থেকে মস্কোর পথে রওনা হয়ে যাবে সে।
কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট/পার্ট থ্রী (ডিটেলস্)
বি.সি.আই-এর কর্তব্য।
কেনেথ রবসন একজন ডাবল এজেন্ট, তার সাথে রানা ইনভেস্টিগেশনের যোগাযোগ বহুদিনের | ইসরায়েলি পাইলট
পিটি ডাভ সি.আই.এ. হেডকোয়ার্টারে ট্রেনিং নিচ্ছে, এই তথ্য মাসুদ রানার কাছে মাত্র পাচশো ডলারে বিক্রি করে সে। দুর্দিন পর নিউ ইয়র্কের একটা পাব-এ অজ্ঞাতনামা একজন আততায়ীর গুলিতে রবসন মারা যায় । রবসন মারা যাওয়াতেই তার দেয়া তথ্যটা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে । তদন্ত শুরু করে রানা | কেচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে সাপ । সি.আই.এ. আর জিওনিস্ট ইন্টেলিজেনসের গোপন প্ল্যানের অনেকটাই জেনে ফেলে ও |
বি.সি.আই. হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করে রানা, সেই সাথে নুমার ডিরেক্টর আডমিরাল জর্জ হ্যামিলটনকেও ব্যাপারটা
জানায় | মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিনি, একটা ইন্টেলিজেস এজেন্সীর চীফও বটেন। এই এজেন্সীর অস্তিত্ব
সম্পর্কে সি.আই.এ, এফ.বি.আই. সহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ধরতে গেলে কিছুই জানে না, জর্জ হ্যামিলটন একমাত্র মার্কিন
প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি তার কাজের রিপোর্ট দেন । এদিকে আবার, বি.সি.আই. চীফ মেজর জেনারেল রাহাত খানের সাথেও তার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব রয়েছে। রানাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন ভদ্রলোক, ঠেকায়-বেঠেকায় সাহায্য নেন এবং করেন । মার্কিন প্রশাসনে অল্প যে দু’একজন ইসরায়েল-বিরোধী ব্যক্তি আছেন, তিনি তাদের অন্যতম |
রানার কাছ থেকে ব্যাপারটা জানার পর প্রথমে হেসেই উড়িয়ে দেন তিনি । তার ধারণা, প্রেসিডেন্টকে গোপন করে
সি.আই.এ. এ-ধরনের কোন প্ল্যান করতে পারে না। কিন্তু রানা সিরিয়াস বুঝতে পেরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ব্যাপারটা খোজ নিয়ে দেখবেন ।
দিন পনেরো পর ওয়াশিংটনে আবার তার সাথে দেখা করে রানা । প্রথমদিকে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন
আ্যাডমিরাল ৷ কিন্তু রানা নাছোড়বান্দা বুঝতে পেরে স্বীকার করেন, হ্যা, সি.আই.এ. আর জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের গোপন প্ল্যান সম্পর্কে বিস্তারিত সবই জানতে পেরেছেন তিনি । মিকোয়ান প্রজেক্ট সম্পর্কেও সব কথা তার মুখ থেকে শোনে রানা । কিন্তু সবশেষে আডমিরাল জানান, ওরা দু’পক্ষই সাংঘাতিক সতর্ক, এর সাথে যে সি.আই.এ. জড়িত সেটা প্রমাণ করা এক কথায় অসম্ভব । আর প্রমাণ ছাড়া সি.আই.এ-র বিরুদ্ধে তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে রিপোর্ট করতে পারেন না ।
অথচ রাশিয়াকে সাবধান করা দরকার।
অ্যাডমিরাল জানিয়ে দিলেন, সে দায়িত্বও তিনি নিতে পারেন না। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইচ্ছে করলে কে.জি.বি-র সাথে যোগাযোগ করতে পারে ।
কিন্তু প্রমাণ ছাড়া কে.জি.বি-ই বা বি.সি.আই-এর কথা বিশ্বাস করবে কেন?
প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলল । ইসরায়েলি পাইলটের নাম-ধাম, চেহারা, তার ট্রেনিং, টাইম শিডিউল ইত্যাদি নিশ্চই কোন ফাইলে লেখা আছে । সেই ফাইলটা বি.সি.আই-এর দরকার |
ওয়াশিংটন গিয়ে জর্জ হ্যামিলটনের সাথে দেখা করলেন মেজর জেনারেল রাহাত খান। তিন দিন আলোচনার পর
আডমিরাল বি.সি.আই-কে সাহায্য করতে রাজি হলেন। বললেন, তিনি চান ইসরায়েলের এই অপারেশন ব্যর্থ হোক, কিন্তু সি.আই.এ-র বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয় । তিনি গোপনে বি.সি.আই-কে সাহায্য করবেন-তবে প্রেসিডেন্টের কাছে ব্যাপারটা গোপন রাখবেন না । সি.আই.এ. যে এর সাথে জড়িত, সেটা প্রেসিডেন্টকে জানানো হবে না । শুধু জিওনিস্ট ইন্টেলিজেন্সের কথা বলা হবে ।
এ-সবের আগে বি.সি.আই. হেডকোয়ার্টারের নির্দেশ পেয়ে ইউরোপে এসে কে.জি.বি-র একজন গুরুতৃপূর্ণ এজেন্টের সাথে দেখা করল রানা । জিওনিস্ট ইন্টেলিজেস আর সি.আই.এ-র ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সব কথা খুলে বলা হলো তাকে । রানা অনুরোধ করল, ব্যাপারটা এখুনি তুমি তোমার হেডকোয়ার্টারকে জানাও ।
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।