একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
এই নিয়ে তিনদিন প্রতি সন্ধ্যায় হংকং শেরাটনের লাউঞ্জে বিদেশী এক এজেন্টের জন্যে অপেক্ষা করছে মাসুদ রানা । সে দেখতে কেমন, নাম কি, বয়স কত, এ-সব কিছুই জানা নেই ওর |
সন্ধ্যা লেগে আসায় লাউঞ্জ সংলগ্ন বারটি রূপসীদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। হাতে গ্রাস নিয়ে টেরেসে বেরুবার সময় রানা লক্ষ করল, কথার মাঝখানে থেমে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে দুটি মেয়ে । লম্বা মেয়েটা সম্ভবত ভারতীয়: শাড়িটা জর্জেট, নুয়ে পড়া নারকেল-বীথি আকা, কপালের মস্ত টিপটা হুবহু শিবলিঙ্গ । সঙ্গের মেয়েটা একশো ভাগই চীনা, সদ্যফোটা গোলাপের মত তাজা মুখ, অত্যন্ত আকর্ষণীয় ফিগার । ওদের তেরছা দৃষ্টি ও কৌতুহল্ স্রেফ অপচয়ই হলো, কারণ ব্যাপারটা রানা উপভোগ করল ঠিকই, কিন্তু সাবধানতার কারণে দ্বিতীয়বার ওদিকে তাকাল না। ঝাড়া প্রায় ছ’ফুট লম্বা, নড়াচড়ায় একজন কন্ডিশনড অ্যাথলেট-এর সাবলীল্ ভঙ্গি, বোঝা যায় শক্তি ও ক্ষিপ্রতার লাগাম টেনে রাখা হয়েছে: টেরেসে বেরিয়ে এসে পুরোটা দৈর্ঘ্য পেরুল ও, চলে এল শেষ প্রান্তে । কিছুক্ষণ আগে সূর্য ডুবলেও মেঘের ভাজে-ভাজে এখনও লালচে ছোপ লেগে আছে। ওর সামনে বিচিত্র আলোকসজ্জায় ঝলমল করছে হংকং ও ভিক্টোরিয়া হারবার। মেয়ে দুটো এখনও তাকিয়ে আছে, অনুভব করে ক্ষীণ একটু হাসি ফুটল ঠোটে-নিজেকে সতর্ক করল খবরদার, অন্তত এই আ্যাসাইনমেন্টে কাজ ও ফুর্তি এক করে
ফেলা চলবে না।
বিদেশী গুপ্তচর যোগাযোগ করতে বড় বেশি দেরি করছে। তার সঙ্গে কথা না হলে বোঝা যাবে না ঠিক কি পরিস্থিতিতে আসাইনমেন্টটা শুরু করতে যাচ্ছে ওরা। রানার হাতে সময় আছে খুবই কম, অথচ দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দিতে হবে ওকে। আজই অবশ্য অপেক্ষার শেষ দিন, কেউ যোগাযোগ না করলে কাল সকালে একাই রওনা দেবে ও । বস্ ওকে সেই নির্দেশই দিয়েছেন।
ভ্যাপসা গরম পড়েছে, হারবারে ভারী হয়ে আছে বাতাস । তবে রানা যে অস্থিরতা অনুভব করছে তার জন্যে আবহাওয়া বা মেয়ে দুটোকে দায়ী করা যাবে না। এ হলো’ একজন যোদ্ধার অস্থিরতা, ক্যারিয়ারের কঠিনতম লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পর রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উন্মাদনা |
হারবারের ওপর চোখ বুলাল রানা | কাউলুন আর ভিক্টোরিয়ার মাঝখানে বিভিন্ন কোম্পানির এক ঝাক ফেরি যোগাযোগ রক্ষা করছে। প্রতিদিন কম করেও সব মিলিয়ে এক হাজারবার আসা- যাওয়া করে ওগুলো; প্রতিবার সামনে এসে পড়া ফ্রেইটার, সাম্পান, ওয়াটার ট্যাক্সি আর জাঙ্কগুলোকে নানান কৌশলে পাশ কাটাতে হয়। উদ্ভাসিত কাউলুনের পিছনে সাদা ও লাল. আলোর ঝলক দেখতে পাচ্ছে রানা, কাইটাক এয়ারপোর্টে একের পর এক
ওঠা-নামা করছে যাত্রীবাহী প্লেন! ও যেখানে দাড়িয়ে আছে সেখান থেকে মূল চীন কিছুদিন আগেও মাত্র বাইশ মাইল দূরে ছিল, ব্রিটিশরা স্বত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যাবার পর হংকংও এখন আবার মূলের সঙ্গে জোড়া লেগেছে। এখন ক্যান্টন-কাউলুন রেলপথ ধরেও অনেক পশ্চিমা ট্যুরিস্ট হংকঙে আসে । হংকং ছোট একটা দ্বীপ হলেও শিল্পসমৃদ্ধ শহর, তবে ব্রিটিশদের ব্যবস্থাপনার কারণে এখানে বস্তি এলাকার বিস্তার ঘটেনি । তারা চলে যাবার পর মেইনল্যান্ড থেকে ঝাঁকে-ঝাকে বেকার লোকজন চলে আসায় প্রায় রাতারাতি শহরের একটা অংশ বিশাল বস্তিতে পরিণত
হয়েছে । ওদিকে বহুতল ভবনের ছাদগুলো পর্যন্ত চীনা মাফিয়া দখল করে নিয়ে ভাড়াটে বসিয়েছে ।
হাতের গ্নাস খালি করে লাউঞ্জে ফিরে এল রানা । পিয়ানিস্ট অলস ও বিষন্ন একটা সুর তুলছে, গ্রাসটা ভরে নিয়ে গাঢ় সবুজ লাউঞ্জ চেয়ারের দিকে এগোল, বারে বসা মেয়ে দুটোর দিকে এবারও তাকাল না। চেয়ারে বসে পা দুটো লম্বা করে দিল, মাথাটা রাখল কুশন লাগানো নরম টপে। লাউঞ্জে রীতিমত ভিড় এখন, আরও লোকজন আসছে! কামরাটায় আলো খুব কম, টেবিলগুলো ফাক রেখে ফেলা-হয়েছে, প্রতি টেবিলে একটা কি দুটো চেয়ার!
রানার চোখ আধবোজা, ঠোটে খেলা করছে অস্পষ্ট একটু হাসি। মনের পর্দায় ঢাকা, বিসিআই হেডকোয়ার্টার আর মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খান। পাঁচ দিন আগের ঘটনা ।
নিজের চেম্বারে ডেকে প্রিয় শিস্যকে ভৌগোলিক বাস্তবতার নিরিখে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির পাঠ দিচ্ছিলেন রাহাত খান ।
প্রথমে ভারতীয় সমরসজ্জার বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন তিনি, ওরা রাশিয়ার কাছ থেকে যা নেয়ার তা তো নিচ্ছেই, সম্প্রতি সামরিকবাহিনীকে আধুনিক মারণান্ত্রে সজ্জিত করে দেয়ার মার্কিন প্রস্তাবও গ্রহণ করেছে। এরপর একে একে অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, তাইওয়ান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বললেন। পাকিস্তান ও মায়ানমারকে আলোচনা থেকে আপাতত বাদ রাখলেন তিনি । অস্ট্রেলিয়া প্রসঙ্গে বললেন, দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ওখানে একটা সামরিক ঘাটি তৈরি করতে যাচ্ছে । আর নেপালে যে সিআইএ-র নীল-নকশা অনুসারে চীনপন্থী কমিউনিস্টদের মেরে সাফ করা হচ্ছে, এ তো সবারই জানা.। তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন ঘাটিও গোপন কোন বিষয় নয় সব শেষে বাংলাদেশ। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর টেরোরিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা চাওয়ার অজুহাতে, বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করার মৌখিক প্রতিশ্রতি আদায় করে নিয়েছে পেন্টাগন পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সমস্ত রিজার্ভ গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে শুষে নেয়া, বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার যে লোভণীয় টোপটাও থাকবে । “মার্কিনীদের এত সব আয়োজন আর পরিকল্পনার একটাই উদ্দেশ্য, চীনকে চারদিক থেকে বেঁধে ফেলা, বললেন রাহাত খান। “কিন্তু ওরাও তো হিকমতে চীন, তাই না? পাল্টা পরিকল্পনা ওদেরও একটা আছে ! কি সেটা?
এবার বেইজিঙের প্ল্যানটা ব্যাখ্যা করলেন বস্। ওদের এই প্ল্যান ও টাইম শেডিউল বিসিআই গোপন সুত্রে জানতে পেরেছে তাইওয়ান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ, এই সাতটা রাষ্ট্র চীনের জন্যে বাস্তব হুমকি হয়ে দেখা দেবে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে । যুদ্ধ লাগলে এই দেশগুলোয় যাতে একযোগে পারমাণবিক বোমা ফেলা যায় সেজন্যে সব রকম প্রস্ততি নিয়ে এগোচ্ছে বেইজিং । তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের এই প্রস্তুতি শেষ হবে ।
“তিন বা পাচ বছর খুব বেশি একটা সময় নয়, বলল রানা । “তবু এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে । বাংলাদেশ হয়তো চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না, ফলে সেন্ট মার্টিনে ঘাটি গাড়ার মার্কিনীদের স্বপ্ন স্বপ্রই থেকে যাবে । নতুন প্রেসিডেন্ট এলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতেও মৌলিক পরিবর্তন ঘটতে পারে ।’
‘ডক্টর কংসু চউ ঠিক সেই ভয়ই পাচ্ছে।’ হঠাৎ ভারী ও থমথমে হয়ে উঠল রাহাত খানের অবয়ব । রানা লক্ষ করল, তার কপালের একটা শিরা দু’তিনবাঁর লাফিয়ে উঠল ।
“ডক্টর কংসু চউ?’ জিজ্ঞেস করল ও । “কে সে, স্যার?
চীনের টপ নিউক্লিয়ার-বম সায়েন্টিস্ট ও মিসাইল এক্সপার্ট । ওদের কাছে তার এতই মূল্য, গোটা প্রজেক্টের দায়িত্ব এককভাবে তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে-সে নিজের খেয়াল খুশি মত যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, দেখার বা বাধা দেয়ার কেউ নেই । বলা হয় গত বিশ বছরে পারমাণবিক বোমা ও রকেট তৈরিতে চীন যা কিছু অর্জন করেছে, তাতে এককভাবে তার অবদানই সবচেয়ে বেশি । তবে সে শুধু বিজ্ঞানী নয়, একজন ম্যানিয়াকও বটে । তার ধারণা, ঈশ্বর নয়, একমাত্র মানুষই পারে এই দুনিয়াটাকে আক্ষরিক অর্থে স্বর্গ বানাতে | সব মানুষ নয়, একমাত্র তারই নাকি
সেক্ষমতা আছে।’
রানা কিছু বলতে যাচ্ছিল, বস্ ইশারায় থামিয়ে দিলেন ওকে ।
স্বর্গ বলতে সে কি বোঝাতে চায়, তাও শোনো! তার বানানো স্বর্গে মানুষের রোগ-শোক বলে কিছু থাকবে না। মানুষ
পরমায়ু তো পাবেই, সে কোনদিন বুড়োও হবে না। প্রতিটি মানুষ হবে সুদর্শন ও বুদ্ধিমান । তাদেরকে কোন কাজ করতে হবে না। অনন্তকাল ধরে শুধু খাও-দাও আর ফুর্তি করো । ধর্মগ্রন্থে যেমন আছে, যে-কোন জিনিস চাওয়ামাত্র তোমার সামনে-চলে আসবে । ডক্টর কংসুর স্বর্গে মহিলাদেরই সুযোগ-সুবিধে বেশি দেয়া হয়েছে-একেকজন যত খুশি সঙ্গি রাখতে পারবে । তো, এরকম একটা স্বর্গ বানাতে হলে আগে তো গবেষণা করতে হবে, তাই নাঃ সেই গবেষণা করতে প্রচুর টাকা দরকার তাই নিজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে টাকা কামাবার বুদ্ধি করেছে ডক্টর কংসু চউ। টানা নীতি-নির্ধারকদের মত তিন কি পাচ বছর অপেক্ষা করতে রাজি নয় সে । তার টাইম শেডিউল হলো মাত্র দু’হপ্তা।
চমকে উঠল রানা, তারপর আর একচুল নড়ছে না।
‘হ্যা, দু’হপ্তা চৌদ্দ দিন, নিশ্চিত করলেন রাহাত খান ।
‘বেইজিঙের টাইম শেডিউলের অপেক্ষায় থাকতে রাজি নয় ডক্টর কংসু চউ। রাজনীতি বা রণনীতিতে কখন কার কি পরিবর্তন ঘটে, তাই হামলা করার সময়টাকে এগিয়ে এনেছে সে। তালিকাও একটু বদলানো হয়েছে ।’
‘নতুন তালিকায় কি বাংলাদেশ আছে?’ উদ্বিগ্ন রানা একটা ঢোক গিলল।
“জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে বাদ দিয়েছে, ডক্টর চউ। বাদ দিয়েছে তাইওয়ানকেও । কারণ, ওই তিন দেশে আণবিক বোমা ফেলা হলে নিজেদের ঘাটি ধ্বংস হওয়ায় প্রচণ্ড খেপে যাবে আমেরিকা’। চীনের তালিকায় পাকিস্তান ও মায়ানমার নেই, কারণ ওরা তাদের বন্ধুরাষ্ট্র, তবে এই ম্যানিয়াকের তালিকায় ‘আছে। আর আছে শ্রীলঙ্কা । হ্যা, বাংলাদেশও আছে । তার প্ল্যান হলো, সাত রাষ্ট্রের কাছে বোমা হামলার হুমকি দিয়ে সাতশো বিলিয়ন ডলার চাঁদা সংগ্রহ ।’
‘এ-ব্যাপারে চীন সরকার…
‘চীন সরকার এ-ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না, রানা,’ বললেন রাহাত খান। “সে-প্রসঙ্গে পরে আসছি। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বেইজিং হস্তক্ষেপ করার আগেই কাজটা করে বসতে পারে ডক্টর কংসু। সে-স্বাধীনতা, সে-যোগ্যতা এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ তার আছে ।, স্যার, আপনি যে-সব তথ্য পেয়েছেন, সবই কি -..?
“আাবসলিউটলি সলিড | ওখানে আমাদের বিশ্বস্ত একজন ইনফরমার আছে, আজ পর্যন্ত তার পাঠানো কোন তথ্যই ভুল প্রমাণিত হয়নি । শুধু তাই নয়, এই সব তথ্য আমরা ইন্ডিয়ান কাউন্টার ইন্টেলিজেলস থেকেও পেয়েছি। এমন হতে পারে যে ওই একই ইনফরমারের কাছ থেকে তারাও এ-সব জেনেছে। এসপিওনাজে এথিক্স-এর কি অবস্থা তুমি তো জানোই। সে যাই হোক, বিপদ টের পেয়ে স্বভাবতই খুর ঘাবড়ে গেছে আইসিআই ।
যৌথ ভাবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে ওরা আমাদের কাছে। একজন এজেন্টকে তৈরি রেখেছে ওরা । আমিও ভাবছি, এরকম টাফ একটা আসাইনমেন্টে তোমাকে ব্যাক করার মত কেউ থাকলে মন্দ হয় না।’
“স্যার, বলল রানা, “বেইজিঙের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তো খারাপ নয়, আমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডক্টর চউ-এর ‘ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সব কথা খুলে বলছি না কেন?”
“সেটা স্রেফ পন্ডশ্রম হবে, বললেন বৃদ্ধ । “চীনা নেতারা ডষ্টর কংসু চউকে দেবতার চেয়েও বেশি সম্মান করেন্। আমাদের অ্ভিযোগ নয়, তার প্রতিবাদই গ্রহণ করবেন তারা । ভাববেন, ভারত বা” যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় তাদের সেরা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞকে অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । আরেকটা অসুবিধে হলো, এ বিষয়ে বেইজিঙের সঙ্গে কথা বলতে গেলেই ফাস হয়ে যাবে যে তাদের দীর্ঘমেয়াদী সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে সবই আমরা জানি ।;আমাদের ইন্টেলিজেন্স কত গভীরে পেনিট্রেট করে ওদের ওপর নজর রাখছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে চাই
না আমরা ওদের ।’
“তারমানে গোপনে ঢুকতে হবে আমাকে চীনে? জিজ্ঞেস করল রানা । “কাজটা করতে হবে নিজের বা বাংলাদেশের জড়িত থাকার কথা ফাস না করে?’
‘হ্যা। অবশ্য যদি সেটা সম্ভব হয়।” নিভে যাওয়া চুরুটটা ধরালেন রাহাত খান। “তবে ডক্টর চউ-এর প্রাইভেট ইন্টেলিজেসকে তুমি ফাকি দিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। বিসিআই ও আইসিআই-এর ফিল্ড এজেন্টরা সাধারণত তথ্য বিনিময় করে না পরস্পরের সঙ্গে, এবারই প্রথম করছে । আমি খবর পেয়েছি, ওয়্যারলেসে প্রঠানো মেসেজ ইন্টারসেপ্ট করার চেষ্টা হয়েছে ।’
‘এর মানে কি ডক্টর কংসু চউ জানে যে আমরা আসছি?’
“তা নাও হতে পারে! মেসেজ যদি পেয়েও থাকে, তা ডিকোড করা প্রায় অসম্ভব ।’
‘আমার আ্যাসাইনমেন্টটা কি, স্যার? জিজ্ঞেস করল রানা । “মানে, ঠিক কি করতে হবে আমাকে?
‘বলছি তার আগে জেনে নাও, আর কি তথ্য আমরা পেয়েছি। ডক্টর কংসু চউ কুয়াংটাং প্রদেশের কোথাও সাতটা
পারমাণবিক বোমা আর সাতটা রকেট লঞ্চার জড়ো করেছে। অনেক আগে থেকেই ওখানে বড়সড় একটা সামরিক স্থাপনা আছে নানা ধরনের আধুনিক মারণাস্ত্র নিখুত করার কাজ চলে সেখানে । তোমাদের কাজ হবে মিসাইলসহ ওই সাতটা লঞ্চিং প্যাড উড়িয়ে দেয়া । আমাদের টেকনিকাল ডিপার্টমেন্ট আজই তোমাকে কিছু স্পেশাল ইকুইপমেন্ট দেবে । ডক্টর কংসু চউয়ের ইন্সটলেশন উড়িয়ে দেয়ার কাজে ওগুলো লাগবে তোমার । আমি চাই আগামী দু’দিনের মধ্যে হংকঙে পৌছাও তুমি। ভারতীয় এজেন্টের সঙ্গে কিভাবে তোমার যোগাযোগ হবে ইতিমধ্যে তা
স্থির করা হয়েছে”
‘তার সম্পর্কে কতটুকু কি জানি আমরা? জিজ্ঞেস করল রানা ।
চীনের ভেতরে তার আসা-যাওয়া আছে, বললেন রাহাত খান। “ওরা বলছে, খুবই নাকি যোগ্য এজেন্ট। তার সঙ্গে
যোগাযোগের পদ্ধতিটাও টেকনিকাল ডিপার্টমেন্ট ব্যাখ্যা করবে তোমাকে ।
রানার মনে অনেক প্রশ্নই ভিড় করে এল, তবে জানে একটারও জবাব পাওয়া যাবে না। চুপ করে থাকল ও ।
তখন আমার কথার মাঝখানে কি যেন বলতে চাইছিলে তুমি, মনে করিয়ে দিলেন বস্ । “কি?
ও, হ্যা” বলল রানা । “ডক্টর কংসু চউও স্বর্গ তৈরি করতে………………………………………………
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।