Masud Rana - Dharmaguru

ধর্মগুরু – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Dhormoguru – Masud Rana By Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

এক


হাজার হাজার বছরের নিয়ত প্রাকতিক অত্যাচারে মলিন হয়েছে প্রকাণ্ড স্ফিংস। এই মুহূর্তে নির্বিকার, নিষ্পলক, মৃত চোখে দেখছে, তার মস্ত দুই থাবার সামনে পায়চারি করছে সুন্দরী তরুণী বেলা আবাসি।

বিখ্যাত পাথুরে প্রাচীন মনুমেন্টের দিকে ঘুরেও চাইছে না মেয়েটা । এখানে এসেছে দু’সপ্তাহ, এরই ভেতর স্ফিংস বা
পিরামিড হয়ে উঠেছে প্রাচীন সপ্তাশ্চর্য থেকে পাথরের সাধারণ দালান। অথচ ভেবেছিল, দারুণ লাগবে মিশরে কাজের সুযোগ পেলে । প্রথম সপ্তাহটা গেছে ডিজিটাল ছবি ও ভিডিয়ো ক্লিপ সংগ্রহে । কিন্তু তারপর থেকেই থাই পকেটে ঘুরছে ক্যামেরা । গত কয়েক দিন একটা ছবিও তোলেনি।

মিশরে এসে মাত্র ক’দিনে সব ম্যাড়মেড়ে হবে, ভাবতেও পারেনি বেলা । অথচ, ছোটবেলায় এ দেশের প্রাচীন রাজা-
রানি, অশুভ জাদুকর, ভয়ঙ্কর ডাইনী ও রূপকথার কত গল্প শুনেছে দাদা-দাদীর মুখে! ভাবত, তাদের বলা প্রতিটি গল্প জাদুময়। তারা এই দেশ ত্যাগ করে আমেরিকায় গেছেন বলে ভীষণ আফসোস ছিল মনে। মায়ামির কি বিসক্যায়নি এলাকার ধনী পরিবার থেকে এসেছে বেলা, শিশুকাল থেকেই ভেবেছে, প্রথম সুযোগেই ঘুরে দেখবে মায়াবী এ অদ্ভুত দেশ।

কিন্তু বাস্তবতার রূঢ় কশাঘাতে হোঁচট খেয়ে ভেঙেছে ওর সব স্বপ্ন।

হঠাৎ পায়চারি থামিয়ে স্ফিংসের ডান থাবার পাশের পোর্টেবল কেবিন দেখল বেলা।

এখনও ফিরল না আর্কিওলজিকাল টিমের নেতা ম্যান মেটয!

চট করে হাতঘড়ি দেখল বেলা: রাত আটটা পনেরো মিনিট|

একটু পর নিউ ইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল হেরিটেজ এজেন্সি চিফের সঙ্গে ভিডিয়োকনফারেন্স করবে এক্সপিডিশন লিডার। এ কারণেই হাতে খুব কম সময় পাবে বেলা । তা ছাড়া, সাড়ে আটটায় প্রতি রাতের মত শুরু হবে সাউণ্ড এন্ড লাইট শো। রঙিন লেসার আলো ফেলবে পিরামিড ও স্ফিংসের ওপর। সেইসঙ্গে বিকট শব্দে চলরে অতীতের বর্ণনা । এসব অত্যাচার শুরুর আগেই জুনিয়রদের ঘাড়ে সব চাপিয়ে সরে পড়বে টিম লিডার ম্যান মেটয ও সিনিয়র আর্কিওলজিস্টরা । স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে এক্সকেভেশনের কাজ গুছিয়ে রাখতে হবে বেলাদের।

ম্যান মেটয যে দলের জুনিয়র সদস্য বলে ওকে মেনে
নেবে, তা-ও মনে করে না বেলা ।

ও যেন বিনা পয়সার শ্রমিক!

এ-ও ঠিক, আরও দু’বছর লাগবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হতে, এদিকে রেযাল্টও খুব ভাল হচ্ছে না। কিন্তু কেউ বলুক বা না বলুক, অন্তরে ও সত্যিকারের আর্কিওলজিস্ট । যদিও এটা মানছে না কেউ। ভাল কোনও দায়িত্ব না দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে সিনিয়রদের কফি তৈরি আর নুড়িপাথর সরিয়ে নেয়ার কাজে।

কী অপমানজনক!

আঁবারও পায়চারি আরম্ভ করল বেলা আবাসি। স্ফিংসের মুখে পড়া কমলা স্পট লাইটের আভা পড়েছে ওর জলপাই ত্বকে । ওর বংশের নাম “আবাসি” হলেও দেখতে হয়েছে ও কিউবান মা’র মতই । না শ্বেতাঙ্গ, না বাদামি । থমকে গিয়ে পনিটেইল সিধে করল বেলা । আর তখনই শুনল স্ফিংসের থাবার ওদিক থেকে আবছা কথাবার্তা । দেরি না করে বিশাল সিংহ-থাবা ঘুরে ওদিকে চলে গেল বেলা ।

ওই যে, খনন এলাকায় পৌছে গেছে আর্কিওলজিকাল দলনেতা ম্যান মেটয।

প্রথম দর্শনে বেলার মনে হয়েছিল, নিউ ইংল্যান্ডবাসী দারুণ আকর্শনীয় সুপুরুষ ডক্টর ম্যান মেটয। বয়স পঁইত্রিশ, কপালে বাদামি কোকড়া চুল। চোখে-মুখে জ্ঞানের দ্যুতি । কিন্তু মুখ খুলতেই বুঝেছিল, অত্যন্ত অভদ্র, উদ্ধত, অহংকারী, বেয়াড়া এক লোক সে।

এসব বিশেষণ প্রয়োগ করতে পারবে বেলা মেটয-এর অন্য দুই সঙ্গীর বিষয়েও । প্রথমজন, টিভি প্রডিউসার লোগান
ক্যাসপাস। ফ্রিজের মত চারকোনা এক লোক সে। সাপের মত নিম্পলক চোখে ভীষণ লোলুপ দৃষ্টি। সুন্দরী মেয়ে
দেখলেই জিভ থেকে পড়তে শুরু করে লালা । বেলার প্রতি বিশেষ নজর তার । সুযোগ পেলেই হাজির হয় গায়ের কাছে। অসত্য বলবে না বেলা, বেশিরভাগ পুরুষ ওর প্রতি আগ্রহী হলে ও খুশিই হয়, কিন্তু তাই বলে চৌকো কোনও জোককে পছন্দ করতে হবে, এমন তো নয়!

ম্যান মেটয-এর দ্বিতীয় সঙ্গী মিশরীয় । নাম ডক্টর লুকমান বাবাফেমি। দেশের আর্কিওলজিকাল কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী সরকারী এজেন্সি সুপ্রিম কাউন্সিল অভ এন্টিকুইটি সংস্থার সিনিয়র অফিসার সে। পেটমোটা, প্রায়-টাক পড়া এক লোক। ভীষণ খারাপ চোখের দৃষ্টি। চাটতে থাকে মেয়েদের দেহের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা । এই খননের দায়িত্ব আসলে তার ওপরেই, কিন্তু যা খুশি করতে দিচ্ছে ম্যান মেটয কে । বদলে টিভি ক্যামেরার সামনে বেশিক্ষণ তাকে থাকতে দিলেই হবে।

বেলার ধারণা: হাজার-হাজার বছরের পৌরাণিক হল অভ রেকর্ডস উন্মোচিত হলে ঠিক সময়ে লেন্সের সামনে হাজির হবে সে, বলতে শুরু করবে, এই আবিষ্কারের সময় নিজে কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে মিশর দেশটাকে উদ্ধার করে দিয়েছে।

ওই ব্রডকাস্ট নিয়েই এখন আলাপ করছে ওরা তিনজন। “কোনও ভুল হবে না, এটা আপনি এক শ’ ভাগ নিশ্চিত?
ঠিক সময়ে খুলতে পারবেন তো ওই দরজা? জানতে চাইল লোগান ক্যাসপাস। কণ্ঠে গভীর সন্দেহ।

“আবারও বলছি, জানি কী করছি, নাকি সুরে বলল বিরক্ত ম্যান মেটয। “ঠিক সময়ে খুলব ভল্টের পথ। আপনি
ভাল করেই জানেন, এটা আমার প্রথম খনন কাজ নয় ।’

“কিন্তু এটা লাইভ অনুষ্ঠান, বিশ্বের অন্তত পঞ্ঝশ মিলিয়ন মানুষ দেখবে । দু’ঘণ্টা ধরে পুরনো ইট খসিয়ে আনতে গিয়ে নেটওয়ার্কের স্পেশাল প্রাইম টাইম নষ্ট করলে, খেপে যাবে কর্তৃপক্ষ । অকল্পনীয় কিছু দেখতে চায় তারা । একই কথা অন্যদের ক্ষেত্রেও। মিশরীয় এসব আবর্জনা দেখতে ভালবাসে সবাই ।


নিজ দেশের সমৃদ্ধ এতিহ্যের পক্ষ নিয়ে তর্ক করবে, না আমেরিকান টিভি প্রডিউসারের পায়ে লুটিয়ে পড়বে, ভাবছে
লুকমান বাবাফেমি । নরম সুরে বলল, “ডক্টর মেটয, আপনি শিয়োর, সঠিক সময়ে স্কেজুয়াল মেনে কাজ শেষ হবে?

“আজ থেকে আট দিন পর, দেখবেন আটলাণ্টিস আবিষ্কারের চেয়েও অবিশ্বাস্য ঘটনা– মনে সন্দেহ রাখবেন না, দাঁতে দাঁত চাপল ম্যান মেটয। ঘুরে গেল পোর্টেবল কেবিনের দিকে । ওটার ছাতে বড় এক স্যাটেলাইট ডিশ। ‘স্কেজুয়ালের কথায় যখন উঠল, এবার আমাকে যোগাযোগ করতে হবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ।

লোকটার মেজাজ বোধহয় ভাল নেই, ভাবল বেলা। কিন্তু ধমক খাওয়ার ঝুঁকি না নিয়ে উপায়ও নেই ওর। “ডক্টর মেটয, এক মিনিট কথা বলতে পারি? খুব জরুরি! ‘ওই কেবিনে ঢোকা পর্যন্ত কথা বলতে পারবে,’ বিরক্ত চোখে বেলাকে দেখল ম্যান মেটয। “সময় কম!”

‘বিষয়টি ব্যক্তিগত, স্যার’ আর্কিওলজিস্টের পাশে যেতে যেতে জানাল বেলা, “আপনি আর্কিওলজিকাল কোনও কাজ দিলে খুশি হতাম। এত দিনে নিশ্চয়ই প্রমাণ করেছি, কাজে আমি একদম খারাপ নই ।’

থমকে গিয়ে বেলাকে’ দেখল মেটয। “কাজ? ঠোট বেঁকে গেল তার। “কাজ কথাটা বলেই বুঝিয়ে দিয়েছ, কী পাব
তোমার কাছ থেকে! বেলা, আর্কিওলজি সাধারণ কাজ নয়, ওটা ঘোর। যে-কোনও আর্কিওলজিস্টের সার্বক্ষণিক নেশা । কাজ চাইলে যোগ দাও ম্যাকডোনান্ড বা সেভেন-ইলেভেনের
মত কোনও প্রতিষ্ঠানে। ওরা কর্মী খুঁজছে।

‘না, ইয়ে…, আমি আসলে ঠিক…” শুরু করেছিল বেলা, কিন্ত দামড়ি খেয়ে থামতে হলো ওকে।

“এজন্যেই তোমাকে নেয়া হয়নি মূল খননে, বলল মেটয, “কারণ তুমি এখনও হতে পারোনি আকিওলজিস্ট।
কী এমন করেছ যে জায়গা পাবে এই দলে? অন্যান্য জুনিয়র এরই মাঝে কাজ করেছে কয়েকটা খনন সাইটে । ভাল
রেযাল্ট করে গ্রাজুয়েশন করেছে । …আর তুমি? রাগ নিয়ে বলল মেট্য্‌, “তোমার মা দাতব্য সংস্থার জন্যে টাকা
তোলেন, তাই ইউএনএর কর্মকর্তা জন হার্ট জুটিয়ে দিয়েছে তোমাকে আমার গুরুত্বপূর্ণ এই খনন কাজে । তা করেছে, কারণ তার উপকার করেছিল তোমার মা। তোমার খুশি থাকা উচিত, সুযোগ পেয়েছ আমার দলে যোগ দেয়ার । …যাও, এবার গিয়ে সাইট পরিষ্কার করো। এমনিতেই প্রফেসর ট্রিপের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে দেরি করেছি ।’ সোজা গিয়ে কেবিনে ঢুকল সে । পেছনে দড়াম করে বন্ধ করল দরজা ।

হতবাক হয়ে দরজার দিকে চেয়ে রইল বেলা । কয়েক সেকেন্ড পর ঘুরে দেখল, ওকেই দেখছে লুকমান বাবাফেমি ও
লোগান ক্যাসপাস। অস্বস্তি বোধ করে সিল্কের বো টাই নাড়ল বাবাফেমি, তারপর চলে গেল: প্রধান খনন এলাকার ছাউনির ভেতর । একা রয়ে গেল লোগান ক্যাসপাস। মধুর মত মিষ্টি কণ্ঠে বলল, “অন্য কোনও ক্যারিয়ার খুঁজছ? ক’টা মডেলিং এজেন্সির মালিকের সঙ্গে চেনাশোনা আছে আমার।’

“মর, হারামজাদা!” বিড়বিড় করল বেলা । ভুরু কুঁচকে লোভী শয়তানটাকে দেখে নিয়ে সরে এল স্ফিংসের এদিকে।
দূরে চোখে পড়ল, খনন এলাকার র‍্যাম্প বেয়ে নেমে চলেছে কন্ট্রাক্টরদের দেয়া ইউনিফর্ম পরা সিকিউরিটির এক লোক। মন খারাপ, একা একা মন্দিরের ধ্বংসস্তূপে ঢুকল বেলা । সামনেই ভাঙা মূর্তি, এখানে-ওখানে ফাটল ধরা দেয়াল। পরিবেশটা ছায়াময় ।

চৌকো এক সমতল পাথরখণ্ডে বসল বেলা । নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে বিক্ষিপ্ত মনটাকে । ওর কাছে স্বপ্নের জাদুর
দেশ ছিল মিশর । অথচ, এখন দেখছে সব অন্যরকম । তার চেয়েও বড় কথা, ওকে পছন্দ করে না দলনেতা । সুযোগ
পেয়েই করেছে চরম অপমান । সত্যিই খুব জঘন্য লোক!

পাল্টে গেল লাইটিং, আরও গভীর ছায়ায় হারাল স্ফিংসের মন্দির । এবার যে-কোনও সময়ে শুরু হবে সাউন্ড এন্ড লাইট শো। গত দু’সপ্তাহ ধরে ধারাভাষ্য শুনছে বেলা । মুখস্থ হয়ে গেছে প্রতিটা শব্দ। মন ভাল থাকলে এখন ও থাকত দলের মালামাল গুছিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত। কিন্তু আজ রাতে আর ভাল লাগছে না কিছুই

“মরুক সব, বিড়বিড় করল বেলা । চিত হয়ে শুয়ে পড়ল পাথরখণ্ডের ওপর । ঠেকা পড়লে নিজের যন্ত্রপাতি ঠিক
জায়গায় রাখুক ম্যান মেটয।

উত্তর-পশ্চিমে আরও প্রাচীন এক ধ্বংসাবশেষ ও স্ফিংসের মাঝের ওয়াকওয়ে ধরে হেটে চলেছে সাইট সিকিউরিটি চিফ মাধু কামিল। ওয়াকওয়ের শেষপ্রান্তে গেট পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র গার্ড। দু’হাজার আট সালে সাধারণ মানুষের জন্যে গিজা মালভূমি উন্মোচিত করার আগে ছিচকে চোর যাতে দামি কিছু সরাতে না পারে, সেজন্যে পুরো বারো মাইল এলাকা ঘিরে নেয়া হয়েছে স্টিল ও তারকাটার বেড়া দিয়ে। আগে উটের পিঠে চেপে আসত দর্শনার্থী, তাতে ক্ষতি হতো নিদর্শনের ।
আরও একটা কারণে অত্যন্ত সতর্ক মিশরীয় কর্তৃপক্ষ । উনিশ শ’ সাতানববুই সালে লুক্সর-এ নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল একদল টুরিস্ট । তেমন আবারও ঘটুক, তা চায় না মিশরীয় কর্তৃপক্ষ । কাজেই শত শত সিকিউরিটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মালভূমিতে। চারপাশে ঘুরছে টুরিস্ট পুলিশ, প্রত্যকের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র এবং মেটাল ডিটেক্টর।

মালভূমির বাইরে কাটাতারের বেড়া তো আছেই, ভেতরেও নির্দিষ্ট সব জায়গায় বেড়া। টেরোরিস্ট হামলার ভয়ে নয়, এসব রাখা হয়েছে মিশরের প্রাচীন সম্পদ সাধারণ টুরিস্টের হাত থেকে রক্ষার জন্যে। প্রতিদিন মাত্র কয়েকজন
টুরিস্টকে ঢুকতে দেয়া হয় পিরামিডের অভ্যন্তরে । এদিকে প্রায় কেউই ঢুকতে পারে না ক্ষিংস এলাকায় । চলছে নানা
আর্কিওলজিকাল এক্সকেভেশন। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে পাহারা দেওয়া হচ্ছে জায়গাটা।

পূর্বে বালিপাথরের কূপে মিলেছে প্রাচীন মূর্তি, এদিকে মরুভূমির পশ্চিম ও দক্ষিণ থেকে মন্দির ঘিরেছে পাথুরে টিলা। উত্তরদিকে উঁচু, আধুনিক কংক্রিটের দেয়াল। ওপাশে সমতলে সড়ক। গেট দিয়ে ঢুকতে পারবে শুধু পাসধারী কেউ।

কিন্ত এর ব্যতিক্রম করা হবে আজ রাতে ।

গেটের কাছে পৌছে গেল মাধু কামিল। তখনই শুরু
হলো সন এট লুমিয়ের ডিসপ্নে । স্ফিংসের মন্দিরের ওদিকে সারি সারি চেয়ারে বসেছে কয়েক শ’ দর্শক। চালু হয়েছে
আলো ও ধারাভাষ্যের অনুষ্ঠান।

এসব শেষ হলে টুরিস্ট ও আইএইচএ টিম বিদায় নিলে, এবং গভীর রাতে আজকের এই মিটিং শেষ হলে নিশ্চিন্ত
থাকত মাধু কামিল। কিন্তু তা হওয়ার নয়। অধৈর্য হয়ে উঠেছে নাদির মাকালানি। চট্‌ করে রেগে ওঠে সে। কখন কী
করে বসবে, তার ঠিক নেই ।

সবার গাড়ি থাকে পার্কিংলটে, কিন্তু অগ্রসরমান উজ্জল সাদা হেডলাইট কামিলকে জানিয়ে দিল: ওই কালো মার্সিডিয এসইউভিতে করেই আসছে বিশেষ লোকটি ।

গেটের সামনে গাড়ি থামতেই ওটা থেকে নামল মইয়ের মত ঢ্যাঙা এক অচেনা শ্বেতাঙ্গ । মাথায় দীর্ঘ চুল। গায়ে সেঁটে আছে সাপের চামড়া দিয়ে তৈরি জ্যাকেট । থুতনিতে খোঁচা খোঁচা ছাগলা দাড়ি । চেহারা রুক্ষ । গাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে গিয়ে পেছনের দরজা খুলল সে।

সিট ছেড়ে নামল এক লোক, সে মাধু কামিলের, মতই মিশরীয়।

গেট পেরিয়ে তার সামনে থামল কামিল। “মিস্টার মাকালানি, আবারও আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব ভাল
লাগছে।

মিষ্টি কথার মুড নেই নাদির মাকালানির। কড়া সুরে
বলল, “খনন কাজ স্কেজুয়াল থেকে পিছিয়ে পড়েছে ।’

‘ডক্টর মেটয বলেছে…’

“ওর খননের কথা বলছি না।’

মাকালানি সরাসরি ঘুরে তাকাতেই অস্বস্তির মধ্যে পড়ল কামিল। লোকটার ডান গালে পুরনো পোড়া ক্ষতচিহ। কান
থেকে নেমেছে ঠোটে । থরথর করে কাঁপছে ওটা । চকচক করছে আলো পড়ে । নিচে নেমে গেছে চোখের পাতা । ফলে দেখা যাচ্ছে লালচে টিস্যু । আগেরবার দেখা হলে সিকিউরিটি চিফ বুঝেছে, নিজের ক্ষতচিহ্ণ দেখিয়ে মানসিক চাপ তৈরি করে নাদির মাকালানি ! বাম থেকে সে সুদর্শন । কিন্তু একবার
মাথা ঘুরিয়ে তাকালে চমকে ওঠে সবাই।

“সামান্য পিছিয়ে পড়েছি, চট করে জবাব দিল মাধু কামিল, “ধসে গিয়েছিল ছাতের অংশ । এরই ভেতর ওদিকটা
ঠিক করে ফেলেছি।’

কারও তোয়াক্কা না করে গেট পেরিয়ে নির্দেশের সুরে বলল মাকালানি, “চলুন, দেখব ।’

“নিশ্চয়ই, স্যার । আসুন আমার সঙ্গে । সন্দেহের চোখে অন্য লোকটাকে দেখল কামিল । শ্বেতাঙ্গ চলেছে ওদের সঙ্গে ।

“এ আমার বডিগার্ড,’ বলল মাকালানি, “এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মিস্টার ভগলার।’

“ভগলার? অনিশ্চিত সুরে প্রতিধ্বনি তুলল কামিল।

“কিলিয়ান ভগলার,’ আমেরিকান টানে বলল বডিগার্ড।
বলার সুরে অশুভ কী যেন। “আমার নামটা নিয়ে আপনার কোনও আপত্তি আছে?

“না, না-না, চট্‌ করে বলল মাধু কামিল । “প্লীজ, চলুন এ পথে ।” হাটতে শুরু করে ওয়াকওয়ে দেখাল সে।

পিরামিড ও স্ফিংস বিষয়ে বর্ণনাকারীর বোমার মত সব বক্তব্য শুনে, নিজে তা নকল করে উল্টোপাল্টা বলে অনেকটাই ভাল হয়ে গেল বেলার মন। আর তখনই দেখল সিকিউরিটি চিফকে। ও নিজে যে ছায়ার ভেতর রয়েছে, সেখান থেকে লোকটার উর্ধ্বাঙ্গ দেখছে মন্দিরের উত্তর দেয়ালের ওদিকে ।

মাধু কামিলের সঙ্গে আরও দুই লোক। তাদের একজনের পরনে সাপের চামড়া দিয়ে তৈরি জ্যাকেট । কুৎসিত চেহারা
তার। অন্যজনকে চিনে ফেলল বেলা । নাম বোধহয় নাদির মাকালানি। খননকাজ শুরু হলে দেখতে এসেছিল। ধর্ম
বিষয়ক এক সংগঠনের কর্মকর্তা । ওই সংগঠন আইএইচএর…..।।

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top