একটু চোখ বুলিয়ে নিন
এক
অরোজেনি-র, অর্থাৎ পর্বতসৃষ্টির, প্রক্রিয়াতে সময় লাগে লাখ লাখ বছর। সৃষ্টির কায়দাও থাকে হরেক রকম। সাধারণ নিয়মটা হলো–পানির নীচের গিরিখাদ ভরে ওঠে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ আর জৈব পলিতে; কালের প্রভাবে প্রাকৃতিক চাপের মুখে ওগুলো পরিণত হয় সেডিমে্ন্টারি রক্ বা পাললিক পাথরে । এই পাথরের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে নতুনভাবে জমতে থাকা খনিজ পদার্থ আর জৈব পলি। ভূ-পৃষ্টের ক্রাস্টাল প্লেটের নড়াচড়া, কিংবা গিরিখাদের মেঝের উচ্চতা বাড়তে থাকলে পাললিক পাথরের স্তুপ উপরদিকে উঠে আসে ।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে তরলে পরিণত হয় পাথর, লাভা
হিসেবে বেরিয়ে আসে আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে । তবে বেশিরভাগ
সময়েই তা ঘটে না। রুক্ষ এই পাথরের সমষ্টি, প্রচণ্ড চাপের মুখে
বিস্ফোরিত হয়, আগুনের লেলিহান শিখার আকারে উঠে আসে
ভূ-পৃষ্ঠে। ঠাণ্ডা হবার পর এই পাথরের স্ত্পই পরিণত হয়
পর্বতমালায়। নিষ্প্রাণ, এবড়ো-থেবড়ো, এলোমেলো এক
দেয়ালের চেহারা নেয়; দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ দিয়ে গ্রাস করে বিশাল
একেকটা এলাকাকে ।
প্রাকৃতিক চাপ।
সেটাই সবকিছুর চাবিকাঠি ।
যে-এলাকায় যত বেশি প্রাকৃতিক চাপ থাকে, সেখানে তত উঁচু পর্বতশৃঙ্গের সৃষ্টি হয়।
ভূতর্ত্ববিদরা দুনিয়ার সমস্ত পর্বতমালার শ্রেণীবিন্যাস করেছেন বয়স অনুসারে । তরুণ, পরিণত আর বৃদ্ধ-এই তিনটি পর্যায়ে ফেলা যায় যে-কোনও পর্বতমালাকে। মজার ব্যাপার হলো, সবচেয়ে তরুণটির বয়সও কয়েক মিলিয়ন বছরের কম নয় । আর প্রবীণরা অতিক্রম করছে বিলিয়ন বছরের সীমা। তবে আচার-আচরণে এই তিন বয়সের ছাপ খুঁজে পাওয়া যাবে এমনকী প্রাণহীন পর্বতের মাঝেও।
রুক্ষ, প্রশস্ত, সুউচ্চ রকি পর্বতমালাকে ফেলা হয় নিতান্তই তরুণদের কাতারে । মাত্র সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে জন্ম হয়েছে এর । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো থেকে আলাস্কা পর্যন্ত বিস্তৃত । কোনও কোনও চূড়ার উচ্চতা বিশ হাজার ফুট ।
যে-কোনও প্রাণচঞ্চল তরুণের মত রকি পর্বতমালাও অনিশ্চিত মেজাজ আর ঘন ঘন পরিবর্তনের দোষে দুষ্ট । অসংখ্য রহস্যও জমা আছে এর ভিতর । সৌন্দর্যের দিক থেকে অপরূপ, কিন্ত তাকে ছুঁতে পারবে কেবল যোগ্য অনুরাগীরাই। একবার যদি তার আলিঙ্গনে ধরা পড়ে কেউ, অসাধারণ উদ্যম আর প্রাণশক্তি ছাড়া কিছুতেই নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না সে।
ক্ষমা কী জিনিস, তা জানে না রকি পর্বতমালা । মুহূর্তের জন্য সতর্কতায় টিল দিন-উপরে তাকারার পরিবর্তে নীচে তাকান, ডানের বদলে ভুল করে পা দিন বামে… ব্যস, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাতু হয়ে যাবেন। এমন এক পাহাড়ি খাদ বা ফাটলে আছড়ে পড়বেন, লাশটা পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারবে না কেউ। জৈব পলি হয়ে ভবিষ্যতের কোনও পর্বতের রসদ বাড়াবেন শুধু ।
একেকটা পাহাড় তৈরি হতে সময় লাগে লক্ষ-কোটি বছর । কিন্তু… মানুষের মৃত্যু হতে পারে মাত্র এক নিমেষে!
দুই
কলোরাডো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷
পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি ড্রাইভ করা সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর মাসে-যখন শীত নামতে শুরু করে। তুষারে-ভেজা রাস্তায় চাকা পিছলে যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, পথ ছেড়ে গাড়ি আছড়ে পড়তে পারে গহীন গিরিখাদে । তবে ওসব নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছে না মাসুদ রানা, ল্যাণ্ড রোভারের উইন্ডশিল্ড ভেদ করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রকৃতির দিকে তাকাচ্ছে ও। এমন মনোরম দৃশ্য চোখের সামনে থাকলে আর কোনও কিছুর
দিকে মনোযোগ দিতে ইচ্ছে করে না।
অবশ্য ওকে দোষও দেয়া যায় না। আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ-রাজ্যে ঢুকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সবাই। বিশাল কলোরাডোর অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে রকি পর্বতমালা । বরফের মুকুট পরা হাজারো চূড়া
আড়াল করে রাখে আকাশকে, সূর্যের কিরণ অপার্থিব একটা ঝলমলে আবহ ছড়িয়ে দেয় চতুর্দিকে । পাহাড়শ্রেণীর গোড়া ছেয়ে রাখা সবুজ বনানী, কলোরাডো নদী, আর জানা-অজানা হাজারো জলাশয় হেসে ওঠে সেই আলোয়… মোহগ্রস্ত করে ফেলে মানুষকে । রানা তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও অতীতে একাধিকবার এখানে এসেছে ও, তারপরেও প্রতিবারই মুগ্ধতা আবিষ্ট করে ওকে । কিছু কিছু দৃশ্য আসলে কখনোই পুরনো হয় না।
গুড়ু গুড়ু ধ্বনি কানে বাজায় আকাশের দিকে তাকাল রানা । কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে পর্বতশ্রেণীর উপরে ।
প্রাক-শীতকালীন ঝড় আসবার সঙ্কেত। মনে একটু শঙ্কা জাগল, প্ল্যান-প্রোগ্রাম কি তবে মাটি হয়ে যাবে?
প্রায় চার মাস হতে চলেছে দেশছাড়া ও। জটিল এক আসাইনমেন্ট নিয়ে ইউরোপের কয়েকটা দেশে ছুটে বেড়াতে
হয়েছে এতদিন। কাজ শেষ করে কদিন আগে কলোরাডোর রাজধানী ডেনভারে এসেছে রানা এজেন্সির নতুন শাখার বাৎসরিক পরিদর্শনের কাজ সেরে যাবে বলে। সেই ঝামেলাও শেষ হয়েছে গতকাল । ঢাকায় ফেরার আগে সময় আছে চারদিন । সময়টা আর ডেনভারে বসে নষ্ট করতে ইচ্ছে হয়নি। ঝাড়া হাত-পা, তাই তল্লিতল্লা গুটিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। গন্তব্য–ছোট্ট শহর টুইন পিকস্। ইচ্ছে, আগামী ক’দিন পর্বতারোহণ করে কাটাবে । রক-ক্লাইম্বিঙের জন্য ওর প্রিয় জায়গাগুলোর এরুটা ওটা। ছুটিছাটায় আগেও বহুবার গেছে । শহরটা ছোট, অধিবাসীর সংখ্যা
কম। নিয়মিত আসা-যাওয়ার ফলে অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়ে গেছে রানার, স্থানীয় লোকজন ওকে শহরেরই একজন বলে মনে করে।
একটা গ্যাস স্টেশন পেরিয়ে এল রানা । ঢুকে পড়ল ন্যাশনাল ফরেস্টে। রাস্তা এখানে অনেক সরু হয়ে এসেছে । স্টেশনটা পেরুবার সময় চোখে পড়ল পুরনো এক জিপ, পরিচিত চেহারার দুই তরুণ ওটায় তেল ভরছে। ওরাও চিনতে পেরেছে ওকে ।
“আরে, মি. রানা না? বলে উঠল এক তরুণ, মাথাভর্তি সোনালি চুল। “রিকি, মি. রানা গেল!
“তাই নাকি? বলল রিকি। ওর লম্বা কালো চুল নেমে গেছে ঘাড় ছাড়িয়ে । চলো, কথা বলি ।’
তেল ভরা হয়ে গেছে জিপে। ওতে উঠে পড়ল ওরা, রেডিওতে বাজাল উদ্দাম রক অ্যাণ্ড রোল মিউজিক, টায়ার পুড়িয়ে সবেগে আগে বাড়ল । প্রবল গতির কারণে অল্পক্ষণেই পৌছে গেল রানার পিছনে ।
“মি. রানা! মি. রানা! ডাক শোনা গেল। ল্যান্ড রোভারের গতি কমাল রানা, পাশে আসতে দিল জিপকে । হাসিমুখে তাকাল ওদিকে ।
“হাই, রিকি! হাই, উইলি!,
ছটফটে এই দুই তরুণের সঙ্গে বছরখানেক আগে পরিচয় হয়েছে রানার । উড়নচন্ডী, পাগলাটে, এক্সট্রিম স্পোর্টসের ভক্ত । পাহাড়ের মাথা থেকে প্যারাশুট নিয়ে ঝাপ দেয়া ওদের হবি। বিপদেও পড়ে সে-কারণে। রানার সঙ্গে যেবার পরিচয় হলো, সেবার বাতাসের ধাক্কায় পাহাড়ি একটা চাতালের উপর আছড়ে পড়েছিল ওরা–পা মচকেছিল উইলির, রিকির ফেটেছিল মাথা । অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল দু’জনেই । কী ঘটত, বলা যায় না; কিন্ত কপাল ভাল, কাছেই ক্লাইন্থিং করছিল রানা । জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করে ওদেরকে, তাড়াতাড়ি নিয়ে যায় হাসপাতালে । সেই
থেকে ওর অন্ধভক্ত এই দুই তরুণ ।
মি. রানা!” চেচাল সোনালিচুলো উইলি। “কোথায় ছিলেন এতদিন?
“কাজে ব্যস্ত ছিলাম, ভাই, বলল রানা । “এদিকে আসা হয়ে ওঠেনি ।’
কাজ!” মুখ বাকাল রিকি। “শব্দটাই আমার অপছন্দ । যাক গে, কিছুদিন থাকছেন তো?
“দু’ তিনদিন, তার বেশি না।”
“মি. রানা, বলল উইলি। টাওয়ারের উপর থেকে আজ জাম্প করব-আমরা । চলুন আমাদের সঙ্গে ।’
হ্যা, মি. রানা, সুর মেলাল রিকি । “কিলার জাম্পের জন্য একেবারে আদর্শ আবহাওয়া ।”
“না, ধন্যবাদ, ওদেরকে নিরাশ করল রানা ।
কাম অন, ম্যান, উইলি বলল। “এ-কথা বলবেন না যে, আপনাকে উচ্চতাভীতি পেয়ে বসেছে ।
“মোটেই না, ক্লাইম্বিঙে যাবার ইচ্ছে আছে আমার ।” হাসল রানা । তিনজনের মধ্যে একজনকে তো অন্তত সুস্থ থাকতে হবে! আবার যদি দুর্ঘটনায় পড়ো, উদ্ধার করতে হবে নাঃ
এক ভুল দু’বার করি না আমরা, গোমড়ামুখে বলল রিকি।
“তা-ই?’ আকাশের দিকে ইশারা করল রানা । “ওই দেখো, কী আসছে । এর মধ্যে লাফ-ঝাঁপ দেয়া উচিত হবে না।
“ঝড়-বাদল হলেই তো ভাল! উই লাইক ইট এক্সদ্রিম!’
“সতর্ক থেকো ।’
“ও.কে., ম্যান!” হাত নাড়ল রিকি । “শীঘ্রি দেখা হবে ।’
গতি কমাল জিপ, সামনে এগিয়ে গেল রানা । রিয়ারভিউ মিররে দেখল, ইউ-টার্ন নিয়ে একটা সাইড রোডে ঢুকে যাচ্ছে রিকি আর উইলি।
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল রানার বুক চিরে । ওদের বয়সটা বহু আগে পেরিয়ে এসেছে, কিন্ত আজও মিস করে সময়টা । নির্ঝঞ্ঝাট জীবন ছিল তখন । দায়িত্ব ছিল না কোনও, যা-খুশি-তাই করতে পারত । কোথায় হারিয়ে গেছে সে-সময়! যদি ফিরে যাওয়া যেত!
আকসেলারেটর চেপে গতি বাড়াল রানা । মাথার উপর তখন কালো মেঘের আনাগোনা বেড়ে গেছে আরও ।
টুইন পিকসের একপ্রান্তে ছোট্ট এক খামারবাড়ি। স্থানীয় কাঠ আর পাথর দিয়ে তৈরি, পুরনো; দাড়িয়ে আছে ছয় একর জমির ঠিক মাঝখানে । বাড়ির উত্তরপাশে রয়েছে বড়সড় এক আস্তাবল, সারাদিন রোদ খেলা করে সেটার উপর । লাল রঙের একটা গোলাঘর আছে আস্তাবলের পশ্চিমে ।
আস্তাবলের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজের ঘোড়ার পরিচর্যা করছে আইভি উইন্টার। মৃদু বাতাস বইছে পাহাড়ের দিক থেকে । মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুকনো খড় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে এদিক-সেদিক।
অস্ফুট শব্দ করে উঠল ঘোড়া, নার্ভাস ভঙ্গিতে পিছিয়ে গেল দু’পা।
‘নড়িস না, বিরক্ত গলায় বলল আইভি । ‘ঠান্ডা বাতাস তোর শরীরের জন্য ভাল……
কথা শেষ হবার আগেই পিছন থেকে ভেসে এল পরিচিত একটা কণ্ঠ।
“কেমন আছ, আইভি?
ঝট করে ঘুরল আইভি । বিস্ফারিত হয়ে গেল দৃষ্টি । তারপরই পাগলের মত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল আগন্তুককে ।
“রানা! মাই গড! বলল ও । “হোয়াট আ প্লেয্যান্ট সারপ্রাইয!”
হেসে রানাও পাল্টা আলিঙ্গন করল ৷ বলল, “কেমন আছ, তা কিন্ত বললে না।’
নিজেকে ছাড়িয়ে চেহারায় কপট রাগ ফোটাল আইভি । “ভাল নেই। মনের মানুষের শোকে কাতর! তোমার সঙ্গে কথাই বলব না। এভাবে গায়েব হয়ে যায় কেউ?
“খুব অন্যায় হয়েছে, মাফ চাইছি ।” কান ধরল রানা । “আসলে জরুরি কাজ…’
কাজ শেষ হলে তখন?
“তখনও খুব ব্যস্ত ছিলাম ।’
ব্যস্ত ছিলে? কই, চেহারাসুরত দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। আগের চেয়ে আরও হ্যাণ্ডসাম হয়েছ।’
“আমি তো বরাবরই ছিলাম, তুমিও খুব সুন্দর হয়েছ।’
প্রশংসার চোখে আইভিকে দেখল রানা। প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলোকেশ। চুলের রঙ লালচে-সোনালি, কোমর
পর্যন্ত লম্বা, রোদ লাগায় পালিশ করা তামার মত চকচক করছে । চোখ জোড়া নীল, মুখে কোনও দাগ নেই, চিকবোন সামান্য উঁচু। দাড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা দারুণ, মেয়েলি সৌন্দর্য ও আভিজাত্য প্রকাশ পায় । শরীরে কোথাও টিলে-ঢালা ভাব বা অসামঞ্জস্য নেই, একহারা লম্বা ও, সরু হাত-পা; রোদে পুড়ে তামাটে-সোনালি রঙ পেয়েছে চামড়া । বয়সটা অনুমান করা শক্ত, আশ্চর্য সুন্দরী বলেই । বিশ থেকে বত্রিশ, এর মাঝখানে কোনও একটা বছর
হবে। পাখনা মেলে দেয়া পাখির মত আয়ত দুটো চোখ । আটো টি-শার্ট আর জিন্স পরেছে, শরীরের উত্থান পতনগুলো স্পষ্ট। বিউটি কনটেস্টের বিশেষজ্ঞ না হলেও, অভিজ্ঞতা থেকে জানে রানা, এ ধরনের ফিগার দুর্লভ ।
‘অ্যাই, ওভাবে কী দেখছ? বলে উঠল আইভি ।
অপ্রস্তত হয়ে হাসল রানা। মেয়েটার সঙ্গে স্রেফ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ওর, নির্দোষ খুনসুটির বাইরে আর কিছু ঘটেনি আজ
পর্যন্ত । তাকানোটা একটু বেশিই হয়ে গেছে।
“কিছু না, বলল রানা। “দেখছি, কতটা রেগে আছ তুমি ।
বাড়িতে জায়গা পাওয়া যাবে, নাকি গাছতলায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করব?
জলতরঙ্গের মত হেসে উঠল আইভি। আমার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা, রানা ।’
টুইন পিকসে ভাল হোটেল, বা বোর্ডিং হাউস নেই । তাই এখানে এলে আইভির বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে ওঠে রানা । মেয়েটা পেশায় হেলিকপ্টার পাইলট, সেইসঙ্গে সৌখিন ক্লাইম্বার | স্থানীয় মাউন্টেইন রেঞ্জার স্টেশনে কাজ করে । ক্লাইম্বিঙের ছুতোয় রেঞ্জারদের সঙ্গে কয়েক বছর আগে পরিচয় হয়েছিল রানার, ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। তার পর থেকে বলতে গেলে জোর করেই রানাকে নিজের বাড়িতে উঠতে বাধ্য করেছে আইভি। বন্ধুকে আজেবাজে হোটেলে থাকতে দিতে রাজি নয় ও।
গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে বাড়ির ভিতরে ‘নিয়ে গেল রানা। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো ।
নক হলো গেস্ট রুমের দরজায়। পরমুহূর্তে ধূমায়িত কফির কাপ নিয়ে কামরায় ঢুকল আইভি । পোশাক পাল্টে
রেঞ্জার-ইউনিফর্ম পরেছে ।
এমন একটা সময়ে এসেছ, না দিতে পারছি. ব্রেকফাস্ট, না দিতে পারছি লাঞ্চ, বলল ও । তাই কফি নিয়ে এলাম ।’
“ওতেই চলবে, রানা বলল । “বেকফাস্ট সেরে এসেছি পথে। লাঞ্চ নিয়ে না ভাবলেও চলবে ৷ আবহাওয়া ভাল থাকলে ক্লাইস্বিঙে যাব বলে ভাবছি ।’ কফির কাপ নিল।
‘সে-সুযোগ পাবে বলে মনে হচ্ছে না!” জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরাল আইভি । বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।
ধ্যাত! বিরক্তি প্রকাশ পেল রানার কণ্ঠে । “দিনটাই তো মাটি। তুমিও তো মনে হচ্ছে ডিউটিতে যাচ্ছ?
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।