একটু চোখ বুলিয়ে নিন
উনিশ শ’ ছিয়াশির নভেম্বর মাস। ইউরোপ জুড়ে বইছে প্রবল শৈত্যপ্রবাহ । পুরু তুষারে ঢেকে গেছে গোটা মহাদেশ ।
ইতালির সেসিনিয়া শহরে দামি আসবাবপত্রে সজ্জিত এক বাড়িতে বহু বছর ধরে একাকী বাস করছেন বৃদ্ধা। বরাবরের মত আজও রাত দশটা পর্যন্ত রয়ে গেছেন প্রিয় স্টুডিয়োতে। চারদেয়ালে টাঙানো দুর্মূল্য সব তৈলচিত্র।
প্রতিটি নিজ হাতে এঁকেছেন তিনি। শুধু একটি ছবি অসম্পূর্ণ । আগামী হপ্তায় শেষ হবে এটার কাজ।
বৃদ্ধা স্থির করেছেন, এরপর অবসর নেবেন। বয়স তো আর কম হলো না । সারাটা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন,
আর না; এবার চাই বিশ্রাম ।
রাত সাড়ে দশটায় ভাবলেন, এবার বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পড়বেন । কিন্তু তখনই ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল স্টুডিয়োর
জানালার কীচ। পরক্ষণে ওদিক থেকে উঠে এল ছয়জন লোক, হাতে পিস্তল ও সাব-মেশিন গান!
ভয় পেয়ে উঠে দাড়াতে গেলেন বৃদ্ধা, কিন্তু কাধে চাপ দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল লম্বা-চওড়া দু’জন লোক । মহিলার
কপালে পিস্তলের নল ঠেকাল তৃতীয়জন। সে দলনেতা, সে-ও ষন্ডামার্কা। অন্তত দু’বার ভেঙেছে নাকের হাড় । পরনে দামি সুট। লনমোয়ার দিয়ে যেন সমান করে ছেঁটেছে মাথার ধূসর চুল।
যে ভাষায় কথা বলছে সে, সেটা শেষবার শুনেছেন বৃদ্ধ বহু বছর আগে । তখন তিনি ছিলেন তরুণী ও সুন্দরী ।
“কোথায় ওটা? কর্কশ কণ্ঠে জানতে চেয়েছে দলনেতা । তার মুখ নেমে এসেছে বৃদ্ধার নাকের কাছে। গনগনে রাগে
যেন জ্বলছে লোকটার দু’চোখ ।
ভদ্রমহিলার মনে পড়ল অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি । কাপা গলায় বললেন, “যা খুঁজছ, ওটা কখনও দেখিনি আমি!
এ কথা শুনে ধাক্কা দিয়ে চেয়ারের পিঠে তাকে ঠেলে দিল দলনেতা। কাত হয়ে চেয়ার নিয়ে মেঝেতে পড়লেন আটাত্তর বছর বয়সী অসুস্থ বৃদ্ধা। থরথর করে কাপছেন ভীষণ ভয়ে। হঠাৎ ব্যথা শুরু হতেই ডানহাতে খামচে ধরলেন বাম বুক। ঘোলা চোখে দেখলেন তাঁর স্টুডিয়ো তছনছ করছে লোকগুলো ।
মাত্র পাঁচ মিনিটে দস্যুরা বুঝল, এখানে নেই ওটা । বৃদ্ধার দিকে আবারও চাইল দলনেতা । কিন্তু চার মিনিট আগেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন মানুষটি ।
মহাবিরক্ত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো স্টুডিয়ো সার্চ করল তারা । কিছুক্ষণ পর জীর্ণ পাতার একটা ডায়েরি পেল দলনেতা । দীর্ঘ ষাট বছর ওটা আগলে রেখেছিলেন বৃদ্ধা ।
সতর্ক হাতে মলিন পৃষ্টা উল্টে ফ্যাকাসে নীল লেখা পড়ল দস্যুনেতা। কিছুক্ষণ পর বুঝল, আজ থেকে সত্যিকার অর্থে শুরু হচ্ছে তার দীর্ঘ অনুসন্ধান ।
দুই
বত্রিশ বছর পর।
রাশান সীমান্ত থেকে দু’শ মাইল দূরে পশ্চিম জর্জিয়ার পাহাড়ি এলাকা । গিরিখাদে বইছে সেপ্টেম্বরের উষ্ণ হাওয়া ।
বাতাসে পাইন বনের সুবাস । দূরাকাশে স্বর্গ-ছোয়া শুভ্র-তুষারে শোভিত পর্বতচূড়া থেকে নানাদিকে ছিটকে পড়ছে
সকালের সূর্যের সোনালি ছটা ।
এইমাত্র জঙ্গল থেকে বেরোল মাদি এক লিঙ্কস। নরম পায়ে চলেছে একটু দুরের ঝর্না লক্ষ্য করে। চোখ রেখেছে
নিজের শাবকদের ওপর । দীর্ঘ ঘাসে খেলতে খেলতে মায়ের পিছু নিয়ে আসছে ওরা ।
ঝর্নার তীরে পৌছে শীতল জলে জিভ ছোয়াল মাদি লিঙ্কস । তখনই টের পেল, এগিয়ে আসছে খুব অস্বাভাবিক
কিছু! খাড়া হলো মা লিঙ্কসের কান। আগে এমন ভয়ঙ্কর শব্দ শোনেনি সে! একলাফে ঝর্নার তীর ছেড়ে ছানাদের কাছে ফিরল সে। শাবকরাও বুঝেছে, ভীষণ ভয় পেয়েছে মা। লেজ তুলে একছুটে জঙ্গলে ঢুকল মাদি লিঙ্ক্স্। পিছু নিল তার পরিবারের ছয় সদস্য ।
এক সেকেণ্ড পর ওদের মাথার ওপর হাজির হলো বিকট আওয়াজ । এমনই প্রচণ্ড গর্জন, প্রাণের ভয়ে গভীর জঙ্গল
লক্ষ্য করে ছুটল মা লিঙ্কস ও শাবকরা। আকাশ চিরে চলে গেল কালচে রঙের ভয়ঙ্কর দুই দানব। এক মুহূর্তে নষ্ট
করেছে গিরিখাদের মায়াময় প্রশান্তি । মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
চারপাশ কাপিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেল ওই দুই দানব।
হ্যা, আজ ওদের চেয়েও বিপজ্জনক হিংস্র শিকারী প্রাণী হাজির হয়েছে এই অঞ্চলে ।
জঙ্গল পেরোলে উচু জমিতে রয়েছে পুরনো আমলের ভাঙাচোরা একটা পাথরের কুটির । আজ থেকে দু’শ” বছর
আগে ওখানে বাস করত খামার মালিক বা ভেড়া চারক। আজ আর নেই সে দিন। বহুকাল হলো কেউ আসে না
ওখানে । গত ক’বছরে পা ফেলেনি কেউ । কিন্তু আজ ভোরে এসেছিল একদল লোক ।
জানালা খসে পড়া কুটিরে আছে তিনটে কাঠের চেয়ার । কাঠের মেঝেতে পেরেক মেরে আটকে দেয়া হয়েছে ওগুলোর
পায়া। ওই তিন চেয়ারে বসে আছে হাত-পা বাধা তিনজন লোক । উপায় নেই যে কথা বলবে । মুখে গুঁজে দেয়া হয়েছে
রুমাল । মাথায় তিনটে কালো হুড । কিছুই দেখছে না তারা । ভাল করেই জানে, ভারী শেখল দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে কুটিরের পুরু কাঠের দরজা। চাইলেও কোথাও পালাতে পারবে না তারা ।
অপেক্ষা করছে নীরবে । জানে, আজই জীবনের শেষ দিন। তাদের দু’জন ভাবছে স্ত্রী-ছেলেমেয়ের কথা, তৃতীয়জনের মনে পড়ছে প্রেমিকার মিষ্টি মুখ ।
তিনজনই বুঝেছে, সময় বড় কম। তবুও মনে ভিড় করছে অতীতের অম্ল-মধুর কত কথা, কত স্মৃতি। ঘনিয়ে আসা মৃত্যুর কথা ভেবে কাপছে বুক। এই আছে, একটু পরেই নেই হয়ে যাবে, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে ওদের অস্তিত্ব । ওরা যে ছিল এই দুনিয়ায়, এটা সত্যি, না স্বপ্ন?
আসলে ওই লোকের কথায় এসবে জড়িয়ে যাওয়া ছিল ওদের মস্তবড় ভুল। এবার জীবন দিয়ে মেটাতে হবে সব
অপরাধের দায়।
থমথম করছে চারপাশ ।
ওদের জানার কথা নয়, এই মুহুর্তে তুমুল বেগে ছুটে আসছে দুটো ক্যামোভ কেএ-৫০ ব্ল্যাক শার্ক কমব্যাট হেলিকপ্টার। ভাইযরের মাঝ দিয়ে টার্গেট দেখছে দুই পাইলট । একবার চেক করল রিড-আউট । বাটন টিপতেই
এয়ারক্রাফটের পেটের নিচে তৈরি হলো ওয়েপন্স।
কুটির থেকে দু’মাইল দুরে লক-ইন করল অটোমেটিক
লেযার গাইডেড টার্গেট ট্র্যাকিং সিস্টেম । ককপিট মনিটরে স্পষ্ট দেখা গেল বহু বহু দূরের জীর্ণ কুটির। এত দূর থেকেও দুই পাইলট পড়ল দরজায় ঝুলন্ত তালার নির্মাতা কোম্পানির নাম। দেরি হলো না মিসাইল আর্ম হতে। এবার উড়িয়ে দেবে টার্গেট । তবে তার আগে কয়েক সেকেণ্ড অপেক্ষা করল দুই পাইলট।
বেস থেকে এল না কোনও নির্দেশ ।
অর্থাৎ শেষ করতে হবে অপারেশন ।
ট্রিগার টিপল দুই পাইলট । একটু শিউরে উঠল উড্ন্ত দুই হেলিকপ্টার । এয়ারক্রাফট থেকে ছুটে গেল চারটে ভিখর
এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল । দৈর্ঘ্যে তিন মিটার। ওজন পয়তাল্লিশ কেজি । প্রতি সেকেণ্ডে যাচ্ছে ছয় শ’ মিটার ।
দুই পাইলট চুপ করে দেখছে ছুটন্ত মিসাইল । নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করবে ওগুলো । নীলাকাশে রেখে যাচ্ছে বাষ্পের
মত চারটে সাদা লেজ । দেখতে না দেখতে গাছের মাথা ছুঁয়ে পৌছুল কুটিরের দরজায়। বিস্ফোরিত হলো প্রায়
একইসময়ে । চারপাশে ছিটিয়ে গেল শ্বেত-রশ্মির অত্যুজ্জ্বল ঝিলিক। পরক্ষণে কোটি টুকরো হলো পর্ণ কুটির ।
স্থির হয়েছে আস্ত রাখবে না কোনও দেয়াল। ৩০ এমএম কামান থেকে গোলাবর্ষণ করল অগ্রসরমাণ হেলিকপ্টার।
দুই পাইলট জানে, এসবের প্রয়োজন ছিল না। তবে বস দেখছেন বিশেষ এই প্রদর্শনী । তাকে বোঝাতে হবে কী ধরনের মারণাস্ত্র ক্যামোভ কেএ-৫০ ব্ল্যাক শার্ক কমব্যাট হেলিকপ্টার।
কামানের গোলার আঘাতে আকাশে উঠল পাথরখণ্ড ও মাটির প্রকাণ্ড সব চাকা । পরক্ষণে ধুলোবালির ভেতর হারিয়ে গেল ওদিকের দৃশ্য। কিছুক্ষণ পর হাওয়ায় ভর করে ধুলো ও ধোয়া সরতেই দেখা গেল, ওই জায়গা হয়ে উঠেছে চাষ দেয়া এবড়োখেবড়ো জমির মত।
কুটিরের সেই তিনজনের দেহাবশিষ্ট এখনও রয়ে গেলে রাতে সব খেয়ে সাফ করবে মাংসাশী বুনো জন্তরা ।
তিন
ক্যামোভ কেএ-৫০ ব্ল্যাক শার্ক কমব্যাট হেলিকপ্টার দুটোর বিধ্বংসী ক্ষমতা দেখে খুশি ক্যালযি বোরকভ। তৃত্তি নিয়ে
চোখ থেকে নামাল বিনকিউলার। শত কোটি ডলার আসবে সামরিক কপ্টার বিক্রি হলে । টাকার গন্ধের চেয়ে পছন্দনীয় তেমন আর কিছুই নেই তাঁর কাছে। সেজন্যই দলে ভিড়িয়ে খুন খুন করেছে কুটিরের ওই তিনজনকে । কখনও ছেঁড়া সুতো আলগা রাখে না বোরকভ । চলার পথে কেড বাধা হলে রক্ষা নেই তার ।
ক্যামকর্ডার দিয়ে হেলিকপ্টারের আক্রমণ ভিডিয়ো করেছে দলের একজন। তার দিকে তাকাল ক্যালযি বোরকভ। “ছবি তোলা হয়েছে?”
“জী, বস” জানাল লোকটা ।
হতাশ হবে না ক্যালযি বোরকভের ক্লায়েন্টরা ।
হামভি জিপে উঠে ড্রাইভারকে ইশারা দিল রাশান মাফিয়া ডন। ধমক শোনার আগেই রওনা হলো ড্রাইভার । কিছুক্ষণ পর পৌছুল পাথুরে উপত্যকার ওদিকে জলের হদের তীরে। পরের পনেরো মিনিট তুমুল বেগে চলার পর উচু
দেয়াল দিয়ে ঘেরা মস্তবড় বাড়িটার উঠানে পৌছুল গাড়ি ।
ধীরেসুস্থে হামভি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকল ক্যালযি বোরকভ । স্টাডিরুমে পৌঁছে একবার বিরক্ত চোখে দেখল
ভাতিজা গ্রেগোরি বোরকভকে ।
কাকতাড়ুয়ার মত চুপ করে দাড়িয়ে আছে যুবক। বিলাসবহুল আসবাবপত্রে সাজানো এ ঘরে মানাচ্ছে না তাকে । ডেক্সের পেছনে গদিমোড়া আরামদায়ক চেয়ারে বসল চুয়াত্তর বছর বয়সী ক্যালযি। আজও গ্রিজলি ভালুকের মতই
ভয়ঙ্কর হিংশ্ব। তবে অন্য কারণে নাম হয়েছে “যার” । তবে শত্রুপক্ষ ভালো করেই জানে, অতীতের রাশান সম্রাটের মতই হাসতে হাসতে যে কাউকে খুনের নির্দেশ দেয় সে।
“নতুন কোনও খবর?’ ভাতিজার কাছে জানতে চাইল ক্যালযি বোরকভ |
আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বলল গ্রেগোরি, “যোগাযোগ করেছিল ।’
“তাই? ভাতিজাকে যোগ্য ভাবে না বৃদ্ধ । তবে তিন বছর আগে ক্যানসারে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই নিজের একমাত্র ছেলে ইউরি ও ভাতিজা ছাড়া কাছের আর কেউ নেই তার।
মাফিয়া ডন অপছন্দ করে বাড়তি কথা, তাই মৃদু স্বরে বলল গ্রেগোরি, “জী, কন্ট্যাক্ট বলেছে ওটা থাকবে ওখানে ।’
নীরব থাকল ক্যালযি বোরকভ। ভাবছে, শেষপর্যন্ত পাবে ওটা! ঘড়ঘড়ে গলায় জানতে চাইল সে, “আমার ছেলে এখন
কোথায়?
“জানি না,” সামান্য ইতস্তত করল গ্রেগোরি বোরকভ।
বাস্তবতা হচ্ছে: মাত্র তিন জায়গায় থাকবে ওই বদমাশ। প্রথমেই খবর নিতে হবে তার বাবার ইয়টে । হয়তো উলঙ্গ
কটা মেয়েকে নিয়ে পড়ে আছে বিছানায়। অথবা ইউরি আছে বাবার ক্যাসিনোর প্রাইভেট রুমে-ব্যস্ত একাধিক সমকামী ছেলের সঙ্গে লাম্পট্যে। এবং তৃতীয় সম্ভাবনা: গোপন কোনও আখড়ায় ভয়ঙ্কর কষ্ট দিয়ে খুন করছে কাউকে!
এসব ক্ষেত্র চুপ থাকে গ্রেগোরি। তাকাল নিজের জুতোর দিকে।
আধাঁর দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ডন চাপা স্বরে বলল, “ইউরিকে খুঁজে বের করো । বলবে, ওর জন্যে কাজ
আছে।’
চার
পাঁচ দিন পর।
ক্যালযি বোরকভের স্টাডিরুমে যারা আসে, প্রত্যেকেই অত্যন্ত নিষ্ঠুর মনের দানব। সংগঠনের একতিল স্বার্থ বিনষ্ট
হলে মানুষ খুন করতে দেরি করে না তারা । আবার ধরে আনা হয় কাউকে কাউকে । তাদের কেউ কেউ মারা পড়ে এ
ঘরে ক্যালযি বোরকভের হাতে ।
কালো, দামি কাঠের প্যানেল দেয়া ঘর । শোকেসে নানান প্রাচীন আর্টিফ্যাক্ট। সাইডবোর্ডে ফ্রেডারিক দ্য গ্রেট-এর ধনভান্ডার থেকে লুঠ করা আকর্ষণীয় ল্যাপিস লাযুলির সংগ্রহ । একটু দূরেই আদ্রে-চার্লসস বৌলের গিল্ট করা ব্রোজ্জের বিখ্যাত রোকোকো কমোড, আগে ছিল আ্যাডলফ হিটলারের । এ ছাড়া, মস্ত ঘরে রয়েছে সতেরো শ’ একুশ থেকে উনিশ শ’ সতেরো সালের ইম্পেরিয়াল রাশার স্বর্ণ যুগের দুর্দান্ত, দামি আর্টিফ্যাক্ট। চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব কালেক্ট করেছে ক্যালযি বোরকভ । অনেকে এজন্যেও তাকে আড়ালে ডাকে “যার” |
আর্টিফ্যাক্টের মধ্যে বোরকভের সেরা দুর্লভ জিনিস উনিশ শ’ দশ সালের শক্তিশালী ম্যাক্সিম ওঅটার-কুন্ড হেভি মেশিন গান, সঙ্গে চাকাওয়ালা ক্যারিজ। অস্ত্রটা আছে ঘরের কোণে । বোরকভের ডেক্সের ওদিকে কেউ বসলে সরাসরি নল তাক করা থাকে তার বুকে । এ কারণে বুক কাপে মাফিয়া ডনের সামনে বসা লোকটার |
আপাতত স্টাডিরুমে রয়েছে ইউরি, গ্রেগোরি ও মাফিয়া ডন ক্যালযি বোরকভ। ডেস্কের ওদিকের চেয়ারে বসে বাবার
দিকে চেয়ে আছে ইউরি। চুপ করে শুনছে কথা । পেছনে দাড়িয়ে আছে গ্রেগোরি বোরকভ। বয়স চল্লিশ। মাথার চুল
পাতলা । কপালে ভাজ । ভাবছে গভীরভাবে । বাবা-মা মারা গেলে দশ বছর বয়স থেকে কাজ করছে চাচার মাফিয়া দলে। চাচা বা ইউরিকে যমের মত ভয় পায়। গ্রেগোরি দেখল, অপলক চোখে ইউরিকে দেখছে চাচা । একমাত্র সন্তানকে ভালবাসলেও তা প্রকাশ করে না মাফিয়া ডন।
খুনি যুবক ইউরির বয়স উনত্রিশ। পনিটেইল করা সোনালি চুল। সাইকোপ্যাথ। লম্বাটে, সরু চেহারা। চোখে আগুনের ঝিলিক। খেপে ওঠে হঠাৎ করেই । আর যে চেতিয়ে দিয়েছে, খুন হয় সে লোক ।
ভাতিজার টেনশন বুঝছে ক্যালযি বোরকভ। তার সংগঠনের সবাই ভয় পায় ইউরিকে। আর এটা টের পেয়ে
মনে মনে গর্ববোধ করে মাফিয়া ডন। গম্ভীর মুখে বলল, “তুমি কি মনোযোগ দিচ্ছ, ইউরি?’
“অবশ্যই ।
“এখনও অতিরিক্ত মদ গিলছ?’
“অবশ্যই না, ডাহা মিথ্যা বলল ইউরি। মদ জিনিসটা প্রচণ্ড ঘৃণা করে ডন। তার উল্টো হয়েছে ইউরি। নড়েচড়ে
চেয়ারে বসল সে। প্রশংসার চোখে তাকাল আ্যালিগেটরের চামড়া দিয়ে তৈরি হাতে বানানো নতুন কেনা বুটের দিকে ।
সারাদিন দলের সবার নাকের কাছে ওটা ঘ্বুরিয়ে দেখিয়েছে সে। তবে এত সাহস নেই যে, বাবার ডেস্কে তুলে বুট
দেখাবে । “শুনছি । বলে যাও, বাবা ।”
বাবার হয়ে নানান কুকীর্তি করেছে সে। বুক ফুলিয়ে তা বলে বেড়ায়। দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আশা করে, বোরকভের মতই সুট-টাই পরে অফিসে বসে মিটিং বা কনফারেন্স-এ মানুষের সর্বনাশ করবে ইউরি। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওসব কাজে আগ্রহ দেখায়নি যুবক । গত ক’বছর হলো প্রাক্তন স্পেৎসনায সার্জেন্ট আলেকযাণ্ডার গোরভের সঙ্গে বন্ধুত হয়েছে তার। কিছু দিন আরেক মাফিয়া দলের বড় পর্যায়ের তিনজনকে ধরে নিয়ে সতেরো দিন নির্যাতন করেছে
তারা। জেনে নিয়েছে জরুরি তথ্য, তারপর খুন করেছে নির্মমভাবে । লাশ পেয়ে হতবাক হয়েছে পুলিশবাহিনী ।
মৃতের বুকে এক শ’র বেশি সিগারেটের আগুনের পোড়া ক্ষত। পেরেক দিয়ে বহুবার ফুটো করা হয়েছে হাতের কবজি
ও পায়ের গোড়ালি ।
নিজের কাজ পছন্দ করে ইউরি। বাবার ব্যবসার ব্যাপারে কখনও কোনও প্রশ্ন তোলে না। এর প্রথম কারণ, ক্যালযির
ব্যবসার ব্যাপারে নাক গলাতে পারে না কেউ। দ্বিতীয় কারণ, কী জন্যে কী হচ্ছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই ইউরির।
সারাজীবন একদিকেই তার খেয়াল। নিজেকে জিজ্ঞেস করে:
“আমি কি ওটা পাব?”
“ওই মেয়ে বা ছেলেকে বিছানায় তুলতে পারব?”
“পারব তো ওই শালা বা শালীকে খুন করতে?”
এসব প্রশ্নের জবাব না-সূচক হলে কয়েক মুহূর্তে ভুলে’ যায় বিষয়টি ।…………
সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।