Devdas By Sarat Chandra Chattopadhyay

দেবদাস – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Devdas By Sarat Chandra Chattopadhyay)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

প্রথম পরিচ্ছেদ

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্বেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া
মাদুরের উপর বসিয়া, শ্রেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা ছড়াইয়া, হাই তুলিয়া, অবশেষে হঠাৎ খুব চিন্তাশীল হইয়া উঠিল; এবং নিমিষে স্থির করিয়া
ফেলিল যে, এই পরম রমণীয় সময়টিতে মাঠে মাঠে ঘুড়ি উড়াইয়া বেড়ানোর পরিবর্তে পাঠশালায় আবদ্ধ থাকাটা কিছু নয়। উর্বর মস্তিষ্কে একটা উপায়ও
গজাইয়া উঠিল । সে শ্রেট-হাতে উঠিয়া দীড়াইল।

পাঠশালায় এখন টিফিনের ছুটি হইয়াছিল । বালকের দল নানারূপ ভাবভঙ্গী ও শব্দসাড়া করিয়া অনতিদূরের বটবৃক্ষতলে ডাংগুলি খেলিতেছিল। দেবদাস
সেদিকে একবার চাহিল। টিফিনের ছুটি সে পায় না-কেননা গোবিন্দ পপ্তিত অনেকবার দেখিয়াছেন যে, একবার পাঠাশালা হইতে বাহির হইয়া পুনরায় প্রবেশ
করাটা দেবদাস নিতান্ত অপছন্দ করে । তাহার পিতারও নিষেধ ছিল। নানা কারণে ইহাই স্থির হইয়াছিল যে এই সময়টিতে সে সর্দার-পোড়ো ভুলোর জিম্মায়
থাকিবে ।

এখন ঘরের মধ্যে শুধু পপ্তিত মহাশয় দ্িপ্রাহরিক আলস্যে চক্ষু মুদিয়া শয়ন করিয়াছিলেন এবং সর্দার-পোড়ো ভুলো এক কোণে হাত-পা ভাঙ্গা একখণ্ড
বেঞ্চের উপর ছোটখাটো পপ্তিত সাজিয়া বসিয়াছিল এবং মধ্যে মধ্যে নিতান্ত তাচ্ছিল্যের সহিত কখন বা ছেলেদের খেলা দেখিতেছিল, কখন বা দেবদাস এবং
পার্বতীর প্রতি আলস্য-কটাক্ষ নিক্ষেপ করিতেছিল । পার্বতী এই মাসখানেক হইল পণ্তিত মহাশয়ের আশ্রয়ে এবং তত্বীবধানে আসিয়াছে । পণ্তিত মহাশয় সম্ভবতঃ
এই অল্পসময়ের মধ্যেই তাহার একান্ত মনোরঞ্জন করিয়াছিলেন, তাই সে নিবিষ্টমনে, নিরতিশয় ধৈর্যের সহিত সুপ্ত পপ্তিতের প্রতিকৃতি বোধোদয়ের শেষ
পাতাটির উপর কালি দিয়া লিখিতেছিল এবং দক্ষ চিত্রকরের ন্যায় নানাভাবে দেখিতেছিল যে, তাহার বহু-যত্ের চিত্রটি আদর্শের সহিত কতখানি মিলিয়াছে।
বেশী যে মিল ছিল তাহা নয়; কিন্তু পার্বতী ইহাতেই যথেষ্ট আনন্দ ও আত্মপ্রসাদ উপভোগ করিতেছিল ।

এই সময় দেবদাস শ্রেট-হাতে উঠিয়া দীড়াইল এবং ভলোর উদ্দেশে ডাকিয়া বলিল, অঙ্ক হয় না।

ভুলো শান্ত গন্তীরমুখে কহিল, কি আক?

মণকবা-

শেলেটটা দেখি__

ভাবটা এই যে, তাহার নিকট এ-সব কাজে শ্রেটখানি হাতে পাওয়ার অপেক্ষা মাত্র । দেবদাস তাহার হাতে শ্লেট দিয়া নিকটে দীড়াইল । ভুলো ডাকিয়া
লিখিতে লাগিল যে, এক মণ তেলের দাম যদি চৌদ্দ টাকা নয় আনা তিন গপ্তা হয়, তাহা হইলে-_

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top