একটু চোখ বুলিয়ে নিন
প্রথম পরিচ্ছেদ
মহিমের পরম বন্ধু সুরেশ । একসঙ্গে এফ.এ পাস করার পর সুরেশ গিয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হইল; কিন্তু মহিম তাহার পুরাতন সিটি কলেজেই টিকিয়া
রহিল।
সুরেশ অভিমান-ক্ষুগ্রকণ্ঠে কহিল, মহিম, আমি বার বার বলছি, বি.এ; এম.এ পাস করে কোন লাভ হবে না। এখনও সময় আছে, তোমারও মেডিক্যাল
কলেজেই ভর্তি হওয়া উচিত ।
মহিম সহাস্যে কহিল, হওয়া ত উচিত, কিন্তু খরচের কথাটাও ত ভাবা উচিত।
খরচ এমনই কি বেশী যে, তুমি দিতে পার না? তা ছাড়া তোমার স্লারশিপও আছে।
মহিম হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিল।
সুরেশ অধীর হইয়া কহিল, না না-_হাসি নয় মহিম, আর দেরি করলে চলবে না, তোমাকে এরই মধ্যে গ্রাডমিশন নিতে হবে, তা বলে দিচ্ছি। খরচপব্রের
কথা পরে বিবেচনা করা যাবে ।
মহিম কহিল, আচ্ছা ।
সুরেশ বলিল, দেখ মহিম, কোন্টা যে তোমার সত্যকারের আচ্ছা, আর কোনটা নয়–তা আজ পর্যন্ত আমি বুঝে উঠতে পারলুম না। কিন্তু পথের মধ্যে
তোমাকে সত্য করিয়ে নিতে পারলুম না, কারণ, আমার কলেজের দেরি হচ্ছে। কিন্তু কাল-পরশুর মধ্যে এর যা-হোক একটা কিনারা না করে আমি ছাড়ব না।
কাল সকালে বাসায় থেক, আমি যাব । বলিয়া সুরেশ তাহার কলেজের পথে দ্রতপদে প্রস্থান করিল ।
দিন-পনের কাটিয়া গিয়াছে । কোথায় বা মহিম, আর কোথায় বা তাহার মেডিক্যাল কলেজে এ্যাডমিশন লওয়া! একদিন রবিবারের দুপুরবেলা সুরেশ বিস্তর
খৌজাখুঁজির পর একটা দীনহীন ছাত্রাবাসে আসিয়া উপস্থিত হইল । সোজা উপরে গিয়া দেখিল, সুমুখের একটা অন্ধকার স্যাতসেঁতে ঘরের মেঝের উপর ছিন্ন-
বিছিন্ন কুশাসন পাতিয়া ছয়-সাতজন আহারে বসিয়াছে। মহিম মুখ তুলিয়া অকস্মাৎ বন্ধুকে দেখিয়া কহিল, হঠাৎ বাসা বদলাতে হল বলে তোমাকে সংবাদ দিতে
পারিনি; সন্ধান করলে কি করে?
সুরেশ তাহার কোন উত্তর না দিয়া থপূ করিয়া চৌকাঠের উপর বসিয়া পড়িল এবং একদৃষ্টে ছেলেদের আহার্ষের প্রতি চাহিয়া রহিল। অত্যন্ত মোটা চালের
অন্ন; জলের মত কি একটা দাল, শাক, ডাটা এবং কচু দিয়া একটা তরকারি এবং তাহারই পাশে দুশ্টুকরা পোড়া পোড়া কুমড়া ভাজা । দধি নাই, দুগ্ধ নাই,
কোনপ্রকার মিষ্ট নাই; একটুকরা মাছ পর্যন্ত কাহারও পাতে পড়িল না।