Masud Rana - Dhongsher Noksha

ধ্বংসের নকশা – মাসুদ রানা – কাজী আনোয়ার হোসেন (Dhongsher Noksha – Masud Rana By Kazi Anwar Hossain)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

হিথো এয়ারপোর্ট, লন্ডন। ধীর, আত্মবিশ্বাসী পায়ে ওয়াশরূমে এসে ঢুকল এক লোক। হাতে একটা ছোট বাদামী সুটকেস। পাঁচ ফুট আট হবে সে, পেশীবহুল দেহ। পা ফেলে বেড়ালের মত নিঃশব্দে। হালকা নীল, অন্তর্ভেদী চোখ । সরু ভুরুজোড়া নাকের ওপরে প্রায় মিশে আছে পরস্পরের সাথে! খাড়া নাক। সোনালী চুল।

জিনস্‌ আধ টি-শার্ট পীরে আছে লোকটা, পায়ে সাদা মোজার সাথে নাইকি কেডস । এয়ের লিঙ্গাসের একটু আগে ল্যান্ড করা ১৫৪ নম্বর ফ্লাইটের যাত্রী- এসেছে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে ।

ভেতরে এসে একসার কিউবিকলের শেষ মাথার দিকে এগোল সে। ডাঙ্গারী পরা এক ক্লীনারকে পাশ কাটাল। ওয়াশরূমের টাইলড মেঝে পরিষ্কার করছ সে বড় এক স্কৃইজী দিয়ে ৷ আর কাউকে চোখে পড়ল না আগন্তকের !

সোজা হেটে গিয়ে এক কিউবিকলে ঢুকল, ভেতর থেকে বোল্ট লাগিয়ে দিল। ল্যাভেটরি সীটের ওপর সুটকেসটা রেখে খুলল, একটা আয়না বের করল ভেতর থেকে, দরজায় কোট ঝোলানো হুকের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে ওতে নিজেকে দেখল । মাথা ঝাকিয়ে হাসল আপনমনে।

তারপর দুহাতের তর্জনী ও মধ্যমা সোজা রেখে সামান্য পা দিযে ভরে দিল চুলের রেখার নিচ দিয়ে, কপালের দু’পাশ থেকে। ঢুকে গেল আঙুল । আরেকটু চাপ পড়তে উঠে এল তার উইগ, বেরিয়ে পড়ল ক্রু-কাট দেয়া বাদামী রঙের
আসল চুল। ওটা রেখে তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে বাঁ ভুরুর বাইরের প্রান্ত ধরে আস্তে করে টান দিল । মুদু চড়-চড় শব্দ করে উঠে এল নকল ভুরু । বেরিয়ে পড়ল তার বাদামী আসল ভুরু । চওড়া, আ-ছাটা ।

এরপর সাদা আন্ডারশার্ট ছাড়া পরনের আর সব খুলে ফেলল সে। পেশাদারী দক্ষতার সাথে কাজ করছে এক মনে । এবং দ্রুত হাতে, ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে।

সুটকেস থেকে, একটা ক্যানভাস করসেট বের করল লোকটা, কোমরে পেচিয়ে শক্ত করে বাধল। দুটো কাজ হলো এতে-কোমর বেশ খানিকটা সরু হলো, এবং মনে হুলো যেন উচ্চতাও স্যমান্য বাড়ল । পরেরটা অবশ্য একটু পরই
প্রতিষ্ঠিত হলো । জিনস, টি-শার্ট ও মোজা সুটকেসে ভরে নতুন একজোড়া গাঢ় ধুসর মোজা পরল সে। চমৎকার ছাঁটের গ্রে লাইটওয়েট ট্রাউজার পরে পা গলিয়ে কেডসের চাইতে দু’ইঞ্চি উচু সলিড হীলের একজোড়া কালো পিপ-অন শুর মধ্যে ।

এরপর সাদা সিল্কের শার্ট পরল, গলায় বাধল পার্ল গ্রে টাই । নট ঠিকঠাক করে সুটকেস থেকে প্রাস্টিকের আয়তাকার একটা বক্স বের করল সে, তার ভেতর থেকে বের হলো একজোড়া জেট ব্ল্যাক কন্ট্যাক্ট লেন্স আর ফ্লুইড ৷ মণির রঙ বদলে নকল দাড়ি-গোঁপ যত্নের সাথে জায়গামত জুড়ল সে। নকল হলেও আসল দাড়ি-গোপ দিয়েই তৈরি ওগুলো-ফ্রেক্সিবল্‌, আডহেসিভ লেটেক্স ফ্রেমের সাথে এমনই নিখুতভাবে জোড়া যে একেবারে কাছে থেকে দেখলেও বোঝার উপায় নেই আসল না নকল ।

এবার দুই গালের মধ্যে ছোট দুই ফোম রাবার প্যাড গুজে দিল লোকটা। দেখতে আগের থেকে সামান্য ফোলা ফোলা হলো মুখ । ও দুটো না খোলা পর্যন্ত ড্রিঙ্ক করা বা খাওয়া, কোনটাই করতে পারবে না সে, তবে তাতে কিছু আসবে- যাবেও না। দু’চার ঘণ্টা না খেলে মানুষ মরে না। ট্রাউজারের ম্যাচিং জ্যাকেট বের করে পরল এবার লোকটা, আয়নার অচেনা প্রতিবিষ্বের দিকে তাকিয়ে মুচকে হাসল ।

বাকি কাজগুলো খুব দ্রুত সারল । এতক্ষণ সাথে যা যা ছিল, সব পাল্টে নগদ টাকা বোঝাই নতুন ওয়ালেট, পাসপোর্ট, ট্রাভেল ডকুমেন্টস, ট্রাভেলার্স চেক, রুমাল, খুচরো পয়সা এ-পকেট ও-পকেটে ভরল। বা হাতে পরল একটা গোল্ড ডিজিটাল ঘড়ি। এরপর একটা টাইট ফিটিং কভার বের করল সুটকেসের চেহারা পাল্টে ফেলার জন্যে। বালিশের গিলাফের মত’ জিনিসটা, পরাতেই বাদামী সুটকেস চকচকে কালো চেহারা পেল।

তারপর সর্বশেষ আইটেম-কেবল ডানহাতের জন্যে একটা স্কিন কালার পাস্টিক গ্লাভস, বের করে পরে নিল। জিনিসপত্র সব সুটকেসে ভরে বন্ধ করল ওটা। ডানে-বায়ে তাকিয়ে দেখে নিল কোথাও. কিছু পড়ে থাকল কি না। মাথা ঝাকাল্‌ সন্তুষ্ট হয়ে-নেই।

সুটকেস বা হাতে নিল লোকটা, ডান হাত ভরে দিল সিসটার্নের পিছনদিকে। আছে ওটা জায়গামতই । থাকবে যে, তাতে কোন সন্দেহই ছিল না, তাই এতক্ষণ চেক করে দেখার কথা একবারও ভাবেনি সে । অ্যাঁড০হেসিব টেপ দিয়ে আটকে রাখা সাইলেন্সার ল্মগানো পিস্তলটা বের করে কোটের সাইড পকেটে রাখল, ওটা একটা কোল্ট পাইথন-ছোট, সহজে বহনযোগ্য ।

বেরিয়ে এল সে কিউবিকল্‌ থেকে৷ ক্লীনারের দিকে তাকাল-এই সময়ের মধ্যে অনেকেই এসেছে-বেরিয়ে গেছে, টের পেয়েছে সে, কিন্ত ওই লোক এখনও একই জায়গায় । ব্যাপারটা সে খেয়াল করল কি না বোঝা গেল না, পাশ কাটিয়ে
আগের মতই দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী পায়ে বেরিয়ে গেল।

অমনি ব্যস্ত হয়ে উঠল “ক্লীনার’, স্কুইজী ফেলে বেরিয়ে এল ওয়াশরূম থেকে । লোকটাকে গজবিশেক সামনের এক বাক ঘুরে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখে ছুটল। বাক ঘুরতে ডানেই একটা কাচঘেরা ফোন বুদ, ওর মধ্যে ঢুকে ব্যস্ত হয়ে নাম্বার পাঞ্চ করতে শুরু করল-তার টার্গেট তখন আরেক বাক ঘুরে চলে যাচ্ছে ডিপারচার লাউজ্জের দিকে!

ও প্রান্তে সাড়া পেয়ে কথা বলতে শুরু করল ‘ক্লীনার’, নজর নিচের দিকে।

কয়েকটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছে সে, এমনসময় বুদের দরজা খুলে গেল, ঘুরে তাকাল ‘ক্লীনার’, পরক্ষণে অন্তরাত্না কেপে গেল চোখের সামনেই সাইলেন্সার পরানো একটা কোল্ট পাইথন দেখতে পেয়ে। সেই লোক! ফিরে
এসেছে! হাসছে মিটিমিটি।

তার হাসি মুখ দেখতে দেখতে মারা গেল ‘ক্লীনার’ ?

এর কয়েক মিনিট পর ট্যাক্সি নিয়ে কিংস ক্রস রেল স্টেশনের দিকে ছুটল লোকটা । অনেকটা পথ যেতে হবে ।

দুই

বিসিআই, ঢাকা ৷

নিজের শানদার অফিসে বসে আছে মাসুদ রানা । চেহারা দেখে মনে হবে পেট কামড়াচ্ছে বুঝি । ত্যাড়া হয়ে আছে। মেজাজ খাট্টা। প্রায় দু’মাস হতে চলল হাতে কাজ নেই বসে থেকে থেকে অভিযানপ্রিয় মনটা হাপিয়ে উঠেছে ওর । বন্ধ হয়ে আসছে দম অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে আটকা থেকে ৷ পালাই পালাই করছে।

সে পথও নেই। কাজ নেই বলে ছুটিতে যেতে চেয়েছিল, দেয়নি বুড়ো, প্রয়োজন হতে পারে বলে বসিয়ে রেখেছে । তাও কোনরকমে মানিয়ে নেয়া যেত যদি সহকর্মীরা কেউ থাকত, আর কিছু না হোক, আড্ডা তো মারা যেত। তারও
উপায় নেই। ওরা সবাই দেশ-বিদেশে কাজে ব্যস্ত, একমাত্র ও বসে আছে অকাজে । কিচ্ছু করার নেই।

ছুটির দিনে বাসায় বসে বাগানের পরিচর্যা করা, এবং অফিসের দিনগুলোয় অফিসে বসে বসে খবরের কাগজ পড়া, এই করে কাটছে দিন। কিন্তু তাই বা কাহাতক! সব কিছুরই একটা সীমা থাকে । কাজ নেই, ছুটি দিতে অসুবিধে কি?
এটাও নেই, ওটাও হবে না, এ কেমন কথা? .

আজ আরেকবার ছুটির কথা বলে দেখতে হবে রাহাত খানকে, ভাবছে রানা যা থাকে কপালে। এভাবে আর বসে থাকতে পারছে না ও । হাতের পত্রিকাটা বিরক্তির সাথে টেবিলের এক কোণে ছুঁড়ে মারল । এই হয়েছে আরেক যন্ত্রণা, প্রায় সবগুলো পত্রিকা আজকাল এমন নির্লজ্জের মত ক্ষমতাসীনদের সাথে গলা মেলাচ্ছে যে খবর পড়লে মনে হয় না ওসব খবর, মনে হয় সরকারী প্রেসনোট । প্রতিটি লাইনে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে পত্রিকাওয়ালারা, তাদের ধারণা, যা লেখা হয় তাই বিশ্বাস করে মানুষ । দেশ যে রসাতলে-যাচ্ছে, কেউ টের পাচ্ছে না। সত্যি, সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশ!

সিগারেট ধরাতে যাচ্ছিল ও, থেমে গেল ইন্টারকমে রাহাত খানের ভরাট গলা শুনে । রানা! ব্যস্ত?

খুশি হয়ে উঠেছিল, কিন্তু প্রশ্রটা শুনে মন দমে গেল । “না, স্যার! হাতে কোন কাজই নেই ।’

“এসো তাহলে, কথা আছে ।’

আশা-নিরাশার দ্বন্দে পড়ে গেল ও, নীরব হয়ে যাওয়া ইন্টারকমের দিকে তাকিয়ে থাকল । অফিশিয়াল কিছু হলে তো এভাবে ডাকে না বুড়ো। আনঅফিশিয়াল কিছু? ওর বুদ্ধি-পরামর্শ ধার নিতে চাইছে? দেখা যাক, ভাবতে ভাবতে উঠে পড়ল । পুরু কার্পেট মোড়া করিডর ধরে বিসিআইয়ের কর্ণধার মেজর জেনারেল (অব.) রাহাত খানের ঝকঝকে পালিশ করা বন্ধ দরজার সামনে এসে থামল ।

পেতলের চকচকে নবের দিকে তাকাতেই চিরকাল যেমন হয় এক ঝলক রক্ত ছল্‌কে উঠল বুকের মধ্যে । এই দরজার সামনে এসে দাড়ালেই ব্যাপারটা ঘটে সব সময়। লম্বা করে দম নিয়ে নক্‌ করল ও।

“কাম ইন!” দরজার ওপরে ফিট করা স্পীকারে বৃদ্ধের আহ্বান সামান্য ধাতব শোনাল।
ঢুকে পড়ল রানা। বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপাশে পিঠ উঁচু রিভলভিং চেয়ারে বসে আছেন রাহাত খান। দাঁত দিয়ে চুরুট কামড়ে ধরে আছেন হালকা করে, মুখ নিচু-করে কিছু দেখছে দু হাতে টেবিলে ভর দিয়ে। কাছে গিয়ে
দেখল রানা-দুটো ছবি, পাশাপাশি বিছিয়ে একবার এটায়, একবার ওটায় চোখ বুলাচ্ছেন। নজর তুলে ওকে বসতে বলে আরও কিছুক্ষণ দেখলেন তিনি, তারপর হেলান দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।

হাতে কাজ নেই তাহলে…?

‘না, স্যার!” বৃদ্ধের প্রশ্ন পুরো শেষ হতে দিল না ও | “কোন কাজ নেই। বসে বসে একেবারে…” থেমে গেল বৃদ্ধকে হাত তুলতে দেখে । ‘এত কথা শুনতে চাইনি ধরনের কিছু একটা বোঝাতে চাইলেন তিনি ইঙ্গিতে। সামনের একটা ছবি
ঠেলে দিলেন ওর দিকে ।

‘একে চেনো কি না দেখো তো!

এক পলক দেখেই মাথা ঝাঁকাল রানা । “আরগুয়েলো। প্যাট্রিক আরগুয়েলো ।
স্প্যানিশ, জন্ম মাদ্রিদে, ‘৬৮ সালে ।’

‘কি জানো এর সম্পর্কে? প্রশংসা ফুটল বৃদ্ধের চেহারায় । যদিও রানা চোখ তোলামাত্র উবে গেল সে-ভাব।

“ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্ট, স্যার, বলে চলল ও । ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ওয়ান্টেড । আমেরিকায় অফিশিয়ালী ওয়ান্টেড নয়, তবে ইউরোপের কয়েকটা দেশ অনুরোধ ‘জানিয়ে রেখেছে, ওদেশে দেখা’ পেলেই যেন ধরা হয় একে । লোকটার পুরো নাম প্যাট্রিক অলিভিয়েরো আরগুয়েলো, বাপ স্প্যানিশ, মা ব্রিটিশ । প্রেস আর সাধারণ মানুষ তাকে আসল নামে জানে, তবে আমাদের মত সব সংস্থার কাছে সে “র‍্যাবিট” বলে পরিচিত ।

“অনেকগুলো সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রথম এর ওপর মানুষের নজর পড়ে ৭০ সালে, পর পর দুটো ব্রিটিশ বিমান হাইজ্যাক করে আরগুয়েলো। এক সময় রেড আর্মির সাথে কড়া দহরম-মহরম ছিল, তাদের হয়ে অতীতে বিশেষ করে পশ্চিম জার্মানিতে অনেকগুলো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে লোকটা । বিলুপ্ত বাদের মেইনহফের সাথেও যোগাযোগ ছিল। সরাসরি কোন রাজনৈতিক আফিলিয়েশন নেই । বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে মাঝেমধ্যে অস্ত্রশস্ত্রও সাপ্লাই দেয় লোকটা ।

‘অসংখ্য খুনের অভিযোগ আছে এর বিরুদ্ধে । সবচেয়ে বিপজ্জনক, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী । বোমা তৈরি আর টেলি কমিউনিকে-শনস্‌ সিস্টেমের ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে ।

“তার মানে নিজের ক্ষেত্রে মুন্সি, কি বলো? নড়েচড়ে.বসলেন রাহাত খান। “যথেষ্ট রেপুটেড ॥?

তা বলা যায়, স্যার!

বা কনুইয়ের’ কাছে রাখা বড় একটা বাদামী খাম খুললেন বৃদ্ধ, ভেতর থেকে আরগুরয়েলোর আরও চারটে পোস্ট কার্ড সাইজ ছবি বের করলেন। “এগুলো দেখো ।

দেখল মাসুদ রানা । প্রথমে মনে হলো চারটা চারজনের, কিন্তু একটু ভাল করে তাকাতে বুঝল একজনেরই ৷ একেকটায় একেক ছদ্মবেশে আছে সে। প্রতিটি ছবির নিচে, ডানদিকে ছোট্ট একটা করে স্টিকার সাটা, বিভিন্ন তারিখ লেখা তাতে । এ বছরেরই । জানুয়ারি ৪ ও ২৩ তারিখ, ফেব্রুয়ারি ১২ ও ২৫ তারিখ লেখা আছে পরের চারটায়, প্রথমটায় লেখা গত মাসের একটা তারিখ-১৯ জুন!
এটায় দাড়ি-গোঁপ লাগানো অবস্থায় আছে আরগুয়েলো।

নিখুঁত ছম্মবেশ, ভাবল রানা, ও নিজেও ছদ্মবেশ ধারণে কম ওস্তাদ নয়, কোনটা সাধারণ, কোনটা অসাধারণ, বোঝে । বোঝে বলেই মনে মনে লোকটার প্রশংসা না করে পারল না। তারপর চোখে প্রশ্ন নিয়ে রাহাত খানের দিকে
থাকাল।

“গত পাঁচ মাসে পাঁচবার দেখা গেছে একে হিথ্রো এয়ারপোর্টে” বললেন তিনি। “ডাবলিন হয়ে হিথ্রো এসেছে আরগুয়েলো। ছবি প্রত্যেকটা হিথ্রোয় তোলা ।’

বিস্মিত হলো রানা। পাঁচ মাসে পাঁচবার দেখা, গেছে অথচ আ্যারেস্ট করা হয়নি?

“জানুয়ারিতে যখন প্রথমবার এর দেখ পেল সার্ভেইল্যা্ন্স টীম, কেবল” রেড আলার্ট ঘোষণা করার সময় পেয়েছিল, অপ্রস্তুত ছিল বলে ধরতে পারেনি ফেরার পথে ধরবে বলে জাল পেতেছিল, তাও হলো না।’

“কেন?’

চুরুটে টান দিলেন রাহাত খান। ‘হিথ্রো হয়ে যায়নি সে, কোন্‌ পথে গেছে জানা সম্ভব হয়নি ।’

‘তারপর?’ ঝুঁকে বসল রানা ।

‘একই মাসে দ্বিতীয়বার যখন লন্ডন এল আরগুয়েলো, সার্ভেইল্যান্স টীম পিছু নিল। কিন্তু গ্ল্যাসগো পর্যস্ত গিয়ে আবার হারিয়ে ফেলে তাকে। তৃতীয়বার তার পিছু লাগার দায়িত্ব নিল ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস, জানতে পারল নর্থ-ওয়েস্ট হাইল্যান্ডের মারকান্ডি নামে এক গ্রামে গেছে লোকটা । শেষের দু’বার অনুসরণ করে শিওর হলো একই জায়গা তার গন্তব্য, প্রথম দু’দফা ওখানেই গিয়েছিল আরগুয়েলো । গিয়েছিল পর্যন্ত জানে বিএসএস, কিন্তু কোন পথে যে লোকটা বারবার ইংল্যান্ড ছেড়ে বেরিয়ে যায়, তা এখনও জানতে পারেনি ।

‘বিএসএসের দুই অফিসার লেগেছিল তার পিছনে, দু’জনকেই এবার খুন করেছে সে। একজনকে হিথো এয়ারপোর্টে, অন্যজনকে কিংস ক্রস রেলস্টেশনে । গুলি করে মেরে রেখে গেছে।”

“আচ্ছা!’ বিস্ময় উত্তরোত্তর বাড়তে থাকল ওর।

গত এক মাসে মারকাল্ডির যেখানে আসা-যাওয়া করছে লোকটা, মানে, যে বাড়িতে, সেটার ওপর নজর রাখতে গিয়ে মারা গেছে আরও দুই বিএসএস এজেন্ট |” চুরুট নিভে গিয়েছিল, আবার ধরিয়ে নিলেন রাহাত খান। ‘কে কে, স্যার? প্রশ্ন করল ও ।

বললেন তিনি, তারপর তাকিয়ে থাকলেন স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা রানার দিকে। জানেন, এদের সাথে কাজ করেছে ও, সবার সাথে যথেষ্ট অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল রানার । ওর কষ্ট অনুমান করার চেষ্টা করলেন বৃদ্ধ ।

“মারকাল্ডিতে কার কাছে যায় আরগুয়েলো? অনেকক্ষণ পর প্রশ্ন করল রানা ।
“কেন?

‘এর কাছে যায়, সামনের দ্বিতীয় ছবিটা এগিয়ে দিলেন রাহাত খান । “তবে কেন যে যায়, এখনও জানা সম্ভব হয়নি ।

আগ্রহের সাথে ছবিটা দেখল ও । এক বৃদ্ধের ছবি-ষাটের কম হবে না বয়স। -দাড়ি-গৌোপ সব পেকে সাদা, চোখে কালো ফেমের পুরু কাচের চশমা । চওড়া উঁচু কপাল। সব মিলিয়ে প্রতিভাবানদের মত চেহারা, হাজারজনের মধ্যে
সহজেই আলাদা করে চেনা যায়। বা গাল সামান্য কুচকে আছে বৃদ্ধের, মনে হয় ব্যঙ্গের হাসি হাসছে বুঝি।

‘এঁকে মনে হয় দেখেছি আগে, নিচু গলায় আপনমনে বলল ও । “চেহারা চেনা-চেনা লাগছে।’

মাথা ঝাকালেন রাহাত খান। ‘দেখেছ। খবরের কাগজে-ম্যাগাজিনে প্রচুর ছবি দেখেছ ভদ্রলোকের ।”

“কে ইনি?

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট, ইন্টারন্যাশনাল আ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের সদস্য, ডক্টর রজার সাইমুর।’
ওপর-নিচে মাথা দোলাল রানা । ‘চিনেছি।’ পরক্ষণে চেহারা কুঁচকে উঠল। ‘এর কাছে আরগুয়েলো কি এমন-” থেমে গেল ও প্রশ্ন অসমাপ্ত রেখে ।

‘কারণটা এখনও জানা যায়নি ।’

“ভদ্রলোক শুনেছি স্কটল্যান্ডের অভিজাত সাইমুর পরিবারের শেষ বংশধর । জমিদার গোছের । বছর দুয়েক আগে ইস্তফা দিয়েছেন চাকরি থেকে ।’

প্রথম দুটো ঠিকই আছে, রানা, কিন্ত শেষেরটা উল্টো। এঁকে আসলে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আরেক সেন্সে বলা যায় তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চাকরি থেকে।

বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকল ও। প্রশ্ন করল না। জানে, এখন নিজে থেকেই সব খুলে বলবেন তিনি । হলোও তাই । শেষ হয়ে আসা চুরুট আ্যাশট্রেতে ফেলে হেলান দিয়ে বসলেন বৃদ্ধ, শুরু করলেন, “সাইমুর পরিবার স্কটল্যান্ডের অনেক পুরনো আর অভিজাত পরিবার । প্রায় তিনশো বছরের । এদের অফিশিয়াল উপাধি লেয়ার্ড অভ মারকান্ডি। পুরো মারকান্ডি গ্রাম এবং আশেপাশের হাজার হাজার একর জমির মালিক ।

“ডক্টর রজার ব্যক্তিগতভাবেও অনেকগুলো বড় বড় কোম্পানির ডিরেক্টর, রীতিমত বিলিয়নেয়ার ৷ অক্সফোর্ডের নামকরা ছাত্র, প্রতিভাবানদের মধ্যেও সেরা প্রতিভাবান, এক্সট্রা অর্ডিনারি জিনিয়াস ।’

থেমে একটু ভাবলেন মেজর জেনারেল, নাকের ডগা চুলকালেন। “এর মত একজনের সাথে আরগুয়েলোর এমন কি নিয়ে এত গোপন যোগাযোগ চলছে, ভেবে খুব দুশ্চিন্তায় আছে বিএসএস, বললেন তিনি ।

কিন্তু ডক্টর সাইমুরকে রিজাইন দিতে বাধ্য করা হলো কেন? জানতে চাইল রানা । “তার অপরাধ কি, স্যার?

‘বিষয়টা একটু জর্টিল, রানা। বছর দুয়েক আগে ডক্টর রজার কমিশনের এক মীটিঙে ঘোষণা করল, সে নাকি পারমাণবিক বর্জ্য ডিসপোজালের শতকরা একশো ভাগ নিরাপদ এক যন্ত্র তৈরি করতে আগ্রহী । ওটা তৈরি করা গেলে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো এখানে-সেখানে বর্জ্য ডাম্প করে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্যে যে মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছেন তা এড়ানোর সম্ভব হবে। রিএক্টর ধরনের কিছু একটা আর কি! দ্বিমুখী কাজ করবে ওটা, শক্তি উৎপাদন ও বৈজ্য নিরাপদে ধ্বংস করা, দুটোই । তবে এ জন্যে ‘বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড প্রয়োজন।

“কমিশন তার কাছে ডিজাইন চাইল । জমা দিল সে ডিজাইন । কিন্ত ওটা পরীক্ষা করে কমিশন মত দিল ওতে অনেক খুঁত আছে-চলবে না। অন্য সদস্যদের কেউ কেউ সরাসরি বলে বসল, বর্তমানে চালু বি, ডব্লিউ. আর বা পি.
ডব্লিউ. আর সিস্টেমের চাইতে তারটা বরং বিপজ্জনক। ব্যস, খেপে গেল মানুষটা । দাবি করল, ফান্ড দাও, আমি প্রমাণ করে দিচ্ছি তোমাদের ধারণা ভুল।

“কিন্ত দাবি করলেই তো আর সব হয় না! কমিশনের অন্য সদস্যরা কম বোঝে না ওসব, তাদের কেউই সমর্থন করছে না ডক্টর সাইমুরের দাবি, সেক্ষেত্রে কমিশন কি করতে পারে? তবু বিষয়টা নিয়ে ভোটাভুটির ব্যবস্থা করে ওরা, তাতেও দেখা গেল সব ভাট সাইমুরের বিপক্ষে পড়েছে। পক্ষে পড়েনি একটাও |

“তাই বাধ্য হয়ে কমিশন রিজেক্ট করল তার প্রস্তাব,” বলে উঠল রানা ।

“ঠিক। রেগেমেগে একাকার কাণ্ড করল বিজ্ঞানী । তার ধারণা সবাই তার রেপুটেশনকে হিংসে করে, তাই কাজটা করতে দিল না। পরিস্থিতি এমন হলো যে কমিশন এক সময় ডক্টর সাইমুরকে রিজাইন করতে নির্দেশই দিয়ে বসল বাধ্য হয়ে, নইলে আর সব সদস্যরা একযোগে রিজাইন করবে বলে হুমকি দিয়ে বসে আছে।’

“তারপর,

‘রিজাইন দিল ডক্টর সাইমুর, লন্ডন ছেড়ে ঢুকল গিয়ে নিজের দুর্গে । তারপর বহুদিন খবর ছিল না, কি বুদ্ধি পাকিয়েছে ভেতরে বসে বসে, কে জানে? হঠাৎ করে আরগুয়েলোর তার ওখানে আসা-যাওয়া শুরু ‘হলো। এসব-দেখে বেশ চিন্তায় আছে বিএসএস। কি চলছে ওখানে, জানার কয়েকটা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ওদের । দুটো সন্দেহ জেগেছে ওদের এ নিয়ে । হয় ডক্টর সাইমুরের বিশেষ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আরগুয়েলো বড় ধরণের কোন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাতে চলেছে, নয়তো বিজ্ঞানী নিজেই তার কোন অশুভ তৎপরতা সফল করতে তার সাহায্য চেয়েছে।
পরেরটার সম্ভাবনাই বেশি ।’

রাহাত খান আর কথা বলছেন না দেখে একটু পর প্রশ্ন করল ও, “আমাকে কি করতে বলেন, স্যার?”
কাজ নেই, ওদিকে বিএসএস চীফ লংফেলো এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য চেয়েছে, যদি সম্ভব হয় আর কি! তাই:.” ইচ্ছে করেই থেমে গেলেন বৃদ্ধ ।

‘আমি যাব, স্যার, তাড়াতাড়ি বলে উঠল ও | “কবে যেতে হবে?

‘যেতে চাইলে আর দেরি কেন? আজই যাওয়া যায় ।”

“তাই যাব, স্যার ।’

ওর ভেতরের অস্থিরতা টের পেয়ে মনে মনে হাসলেন রাহাত খান। ও ঠিক আমার মত হয়েছে, ভাবলেন । তারও এক সময় এই বয়স ছিল, যখন বিপদ আর রোমাঞ্চের গন্ধ নাকে গেলেই রক্তে বান ডাকত, প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে ছুটে
যেতেন তিনি পাঞ্জা লড়তে। মাসুদ রানাও তাই।

তাহলে তৈরি হয়ে নাও গিয়ে। সন্ধের পর ফ্লাইট । টিকেট আর কাগজপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি ।’

“জ্বি, স্যার, উঠে পড়ল ও।

‘রানা!’ গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলেন বৃদ্ধ ।

“স্যার?

“সতর্ক থেকো । খুব সতর্ক থেকো । বেপথে এক পা ফেললেই-”” এবারও
ইচ্ছে করে থেমে গেলেন।

“থাকব, স্যার!

‘লন্ডনে পৌছে মারভিন লংফেলোর সাথে দেখা কোরো । ও তোমাকে ব্রীফ করবে বাকি সব। গুড লাক!

“ধন্যবাদ, স্যার ।’

রেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিল রানা । ঠিক একই মুহূর্তে কয়েক হাজার মাইল দূরে আর একটা বন্ধ দরজা খুলে গেল। লন্ডনের প্রায় পাচশো মাইল উত্তরের এক দুর্গের গোপন দরজা ওটা, ভেতরে ঢুকল ছোটখাট এক মানুষ । চুল-
দাড়ি-গোফ সব সাদা তার! প্রতিভাবানদের মত চেহারা ।

তাকে দেখে ভেতরে বসা এক লোক উঠে দাঁড়াল সসম্মানে। বড় এক মিলিটারি ডেক্সের উল্টোদিকে পুরু গদিমোড়া চেয়ারে বসেছিল সে। প্যাট্রিক অলিভিয়েরো আরগুয়েলো তার নাম । এই নিয়ে ছ’বার ঢুকল সে এ দেশে। আগের সফরের সময় কিছু সমস্যা হয়েছে, কয়েকটা খুন-টুন করতে হয়েছে তাকে, পরে আরও দু’জন মরেছে, তবে তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই আরগুয়েলোর । তারপরও যে সে আবার ইংল্যাডে ঢুকতে পেরেছে, পৌছতে
পেরেছে জায়গামত, তাতেই সন্তুষ্ট ৷

খুন-খারাবি, টিকটিকি পিছু “লাগা, এসব কোন বিষয়ই নয় তার কাছে। পরোয়া করে না। ছোট ছোট পায়ে কাছে এসে ডান হাত বাড়িয়ে দিল বৃদ্ধ। তোমাকে দেখে খুশি হলাম, প্যাট্রিক ।’ শেষ নামটা একটু বড় বলে তাকে সবসময় প্রথম নাম ধরে ডাকে সে। “আমিও, হেসে তার হাত ঝাঁকিয়ে দিল লোকটা । “অনেকদিন হলো আপনার সাথে পরিচয়। কিন্ত আপনাকে কি বলে যে ডাকব, ভেবে ঠিক করতে পারিনি । ‘ওয়ারলক নামটা পছন্দ হয়? বলল পক্বকেশ । হাসল ফিক করে। “আমার কিন্তু ভারি পছন্দ |” “ঠিক বলেছেন, সে-ও হাসল । “একদম উপযুক্ত নাম। বেশ, আজ থেকে তাই ডাকব আপনাকে ।’ ,
ডেক্সের ওপাশে নিজের বিশাল সুইভেল চেয়ারে বসল বৃদ্ধ, পুরু কাঁচের ওপাশথেকে পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে আগন্তককে দেখল । ঘন ঘন মাথা দোলাচ্ছে, অনেকটা পাখির মত। ওটা তার অভ্যেস । “এবার কোন সমস্যা?’

“নাহ্‌! আপনার চপার ঠিক সময়ে পৌছেছে। পিছনে কোন লেজও ছিল ন৷ এবার ৷

“গুড, আরেক দফা পাখি-নড করল সে। “আশা করছি এটাই তোমার শেষ
সফর হবে এখানে!

হাসি দফায় দফায় মিলিয়ে গেল আরগুয়েলোর চেহারা থেকে । “কিন্তু আমার পেমেন্টের ব্যাপারটা”

‘নিশ্চই নিশ্চই!” দ্রুত বলে উঠল বৃদ্ধ । “ওটা তো আছেই। সে যাক, এবার দু’চারদিন থাকতে হচ্ছে তোমাকে । সমস্ত কিছু চূড়ান্ত করতে হবে।’

‘তাতে অসুবিধে নেই । আমি তৈরি হয়েই এসেছি।

একটা পেপারওয়েট ‘নাড়াচাড়া করঠে লাগল পরমাণু বিজ্ঞানী ৷ ‘ইউরোপের খবর বলো, সব রেডি?’ দৃঢ় আস্থার সঙ্গে বলল লোকটা।

‘আমেরিকায়?’

“ওখানেও । আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে ওরা ।’

গভীর দৃষ্টিতে তাকে দেখল বৃদ্ধ । “কারও ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তো তোমার, প্যাট্রিক?

প্রশ্নই আসে না!” দ্রুত মাথা ঝাকাল সে। “ওরা প্রত্যেকে আপনার স্বপ্ন সফল করতে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করবে, কিন্ত্র পিছপা হবে না। কেউ কেউ এখনই নিজেকে মৃত ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। ওরা কেবল একটাই নিশ্চয়তা চায়, কাজ…………

সম্পূর্ণ বইটি পড়তে চাইলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে বইটি ডাউনলোড করে নিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top