একটু চোখ বুলিয়ে নিন
দুপুরে ইস্কুল থেকে এসে মার পাশে পাটিটার ওপর কাত হয়েছিলো । তার
চোখে কেমন করে ঘুম নেমে এসেছিলো । বেশ ঘ্বুমিয়েছে আশু । এখন ঘুমটা
পাতলা হয়ে এসেছে । চোখ মেলতে ইচ্ছা করছে না খালি। আধ ঘুমোনো
অবস্থায় আশুর কানে এলো! গানের সুর । মিষ্টি মিষ্টি । রেশটা মাকড়সার
জালের মতো বুকের ভেতর ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাঁ হাতে চোখ কচলে একবার
তাকালো । কালো কালো ছোটো ছোটো টানা টানা পিটপিটে দু’টো চোখ
আশুর। একবার মাত্র তাকিয়ে বন্ধ করলো । আবার মেললো। ডান চোখের
কোণায় পিচুটি জমেছে । মুছে নিলো ।
মা সেলাই করছে। বেড়ার ফুটো দিয়ে তিনটে আলোর রেখা তেরছা হয়ে
ঘরের ভেতর নেমেছে। একটি’ পড়েছে মার হাতে । সাদা সুইটা ঝক ঝক
করছে। ঝুঁকে পড়ে সেলাই করে যখন মা,.সে সোনা আলোর রেখাটি কপালে
নাচে । কপালের বা দিকটা গোল একটি সোনার টাকার মতো জুল জ্বল করে।
মার মুখখানি বড়ো মলিন । কুচুর কুচুর কীথা সেলাই করছে। দু’খানি ঠোট
নড়ছে মার । চেকন সুরের গান ঝরছে মার মুখে । আশুর বেশ লাগে । মার
মিহি সুরের গানে তাদের ‘হাথনে’ ঘরখানা সরু সরু আলোক লতার বন হয়ে
গেছে যেনো । মা গাইছেঃ
কেমনে পর হেলিরে মা বাপ
মনের ভ্বীলা মিটারে মা বাপ
মার নথটার.পাশ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছে । আশুর মা নাইয়র
বোনের বাড়ী । আশুর মার মা নেই, বোন নেই, খালা ফুফু কেউ নেই । বড়ো
এতিম আশুর মা । নাইয়র নেয়ার কেউ নেই । ঘরে বা-জান না থাকলে ঝাপ………
লেখক সম্পর্কে
আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।
সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।