Rong Mahal by Samaresh Majumdar

রংমহল – সমরেশ মজুমদার (Rong Mahal By Samaresh Majumder)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

টালিগঞ্জে গিয়েছিলাম তরুণ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করতে । তরুণবাবু তখন একটি ভিডি ও, কোম্পানির হয়ে জঙ্গল নিয়ে সিরিয়ালের কথা ভাবছিলেন। সে-ব্যাপারে একটা খসড়াও করে ফেলেছিলেন। আলোচনা ছিল সেই ব্যাপারেই । গিয়ে প্রথম কিস্তি শুনে মুগ্ধ হলাম। মনে হল একটা নিটোল ছোট গল্প শুনলাম। ওঁকে অনুরোধ করেছিলাম লেখাটাকে ছোট গল্প হিসেবেই দেশ পত্রিকায় দিতে যাতে অনেক মানুষ পড়তে পারেন, জানতে পারেন কলম ধরলে এই চলচ্চিত্রকার অনেক সাহিত্যিকের চেয়ে কিছু কম নন। দু’কাপ চা শেষ করে বেরুচ্ছি এক নম্বর নিউ থিয়েটার্স ডিও থেকে। ট্যাঞ্জি ধরতে হবে গেটের বাইরে এসে। হঠাৎ এক ভদ্রলোক সামনে এসে দীড়ালেন। ওঁকে আগেও দেখেছি আমি। ঘনিষ্টতা খুব একটা ছিলনা । লম্বা ফর্সা সুখী সুখী চেহারা । পোশাকে বেশ চাকচিক্য রয়েছে। নমস্কার করে বললেন ‘আপনার জন্যেই দীড়িয়ে আছি।’ ‘বলুন।” আমার জন্য টালিগঞ্জে কেউ দীড়িয়ে আছে শুনতে ভাল লাগল। ‘একটু ক্যান্টিনে বসে কথা বলা যাবে? আপনার সময় আছে? খুব বিনীত গলায়
জিজ্ঞাসা করলেন ভদ্রলোক। আমি রাজী হলাম। আমি চা নিলাম না, তিনি নিলেন। বললেন, ‘আমার নাম সারথী মিত্র। একটু আন-কমন নাম। আমার পরিবার আপনার লেখার ভক্ত।” মেজাজটায় চিড় ধরল। অনেক লোককেই এমন কথা বলতে শুনেছি। বিশেষ করে যাঁরা উচু পদে কাজ করেন। সভাসমিতি করতে কলকাতার বাইরে যেতে হয়। সেখানে উচু পদের মানুষরা যেন কৃতার্থ করতেই এক গাল হেসে বলেন, আমার ওয়াইফের কাছে অথবা আমার মিসেস আপনার কথা খুব বলেন। প্রকারান্তরে জানিয়ে দেন তিনি এক বর্ণ পড়েননি। সেটা ঢাক পিটিয়ে বলার কি দরকার! সারথী মিত্র বললেন, ‘আমি ছবির সঙ্গে যুক্ত।’ ‘আপনি ছবিত্বেকি করেনঃ ‘এ্যারেঞ্জমেন্ট। সবাইকে একত্রিত করে ছবিটাকে শেষ করিয়ে দিই । আমার হাতে একজন নতৃন প্রযোজক আছেন। তিনি ভাল গল্প পেলে ছবি করতে পারেন। আপনি যদি সাহায্য করেন তাহলে একটা ভাল ছবি হয়।’ ? ‘ভাল ছবি বলতে? ‘পয়সা পাবে আবার সমালোচকরা প্রশংসা করবে। লোকে বলে সোনার পাথরবাটি, আমি বলি তা কেন? সাউন্ড অফ মিউজিক হয়নি? মডান টাইমস্‌ হয়নি? আরে আমদের বাংলাতেও বালিকা বধূ ছুটি হয়েছে। গুপী গায়েন হয়েছে। আপনি যদি এইরকম একটা গল্প দেন তাহলে বাধিত হব।” সারণী মিত্র জানালেন। ‘আমার পক্ষে এভাবে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।” ‘বুঝতে পেরেছি। লেখকের কাছে সব লেখাই একরকম । আচ্ছা, চা-বাগান নিয়ে
জমজমাট কোন উপন্যাস নেই আপনার? আপনি তো ওদিকের লোক! এরপরে তিনদিন ধরে সারথী মিত্র আমার সঙ্গ ধরলেন। এক একটি মানুষকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেন কথা বলার ক্ষমতা দিয়ে। তিনি শুধু কথা বলেই আমাকে নরম করলেন। আমার প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়” ছবি হয়েছিল। তারপরে যতগুলো গল্প বিক্রী হয়েছে ছবির জন্যে তার……

লেখক সম্পর্কে

সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ! লেখালেখি! প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম
গল্প “দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস “দৌড়”, ১৯৭৫-এ “দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আর অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তার যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া “দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা; উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top