Gulag Ovijan by Abul Asad-36

গুলাগ অভিযান – আবুল আসাদ (Gulag Ovijan by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

লিসবনের হোটেল ভাস্কোদাগামা।
পাশাপাশি দুটি কক্ষ।
৭১১ নং কক্ষে থাকে রবীন সিং রাফায়েল ওরফে আহমদ মুসা এবং ৭১২ নং কক্ষে থাকে লছমন লিওনার্দো ওরফে হাসান তারিক।
দুজন দুকক্ষে থাকলেও দুজনেই এখন আহমদ মুসার কক্ষে দুচেয়ারে বসে।
তাদের সামনে টেবিলে উচ্ছিষ্ট খাবার, কয়েক মিনিট আগে তারা খাবার শেষ করেছে।
দশটায় তাদের এয়ারপোর্টে পৌছতে হবে বলে খাবার খাওয়া তারা আগেই সেরে নিয়েছে। বেয়ারা এসে এখনো উচ্ছিষ্টগুলো নিয়ে যায়নি।
বেয়ারা এসে গেল।
উচ্ছিষ্ট খাবার আর বাসনপত্র গোছাতে গোছাতে বলল, ‘স্যার, আপনাদের পরিচিত কে একজন এসেছিল। আপনারা কক্ষে আছেন কিনা জিজ্ঞেস করল। কিন্তু আমি ‘আছেন’ বলার পর তারা ঘরে প্রবেশ না করে তাড়াতাড়ি চলে গেল।’
‘এটা তুমি কখনকার ঘটনা বলছ?’ জিজ্ঞেস করল রবীন সিং রাফায়েল ওরফে আহমদ মুসা।
‘এই তো স্যার ৫ মিনিটও হয়নি।’ বলল বেয়ারা।
‘কি রকম চেহারা বলত?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘বলা যায় পর্তুগীজ চেহারাই। তবে মুখ অপেক্ষাকৃত লাল। মোটামুটি লম্বা-চওড়া।’ বলল বেয়ারা।
আহমদ মুসা বেয়ারাকে বখশিশ দিয়ে বলল, ‘একটু দেখবে, তাকে দেখা যায় কিনা। পেলে নিয়ে আসবে।’
বেয়ারা চলে গেল।
বেয়ারা চলে যেতেই হাসান তারিক বলে উঠল, ‘আমি নিশ্চিত ভাইয়া, শত্রুরা আমাদের খোঁজ পেয়ে গেছে।’
‘তাইতো মনে হচ্ছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তাহলে?’
ভাবছিল আহমদ মুসা। বলল, ‘আমার মনে হয় ওরা লবীতে অপেক্ষা করছে। এমনও হতে পারে ওরা হোটেলের চারদিকেই পাহারায় আছে।’
‘দুজন মুসলমান আমরা, একথা তারা নিশ্চিত জানেন। তাই আমার মনে হয় মাত্র দুজন মুসলমানকে ধরার জন্যে ওদের এতকিছু করা স্বাভাবিক নয়।’ বলল হাসান তারিক।
‘তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে খারাপটার কথা।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এখন তাহলে আমাদের কি করণীয়?’ বলল হাসান তারিক।
‘আমাদের করণীয় হলো আজোরস দ্বীপপুঞ্জে পৌছে যাওয়া। তার আগে কোন সংঘাতে জড়িয়ে না পড়া, যা আমাদের আজোরস যাত্রায় কোন বিঘ্ন ঘটাতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু সংঘাত আসন্ন মনে হচ্ছে ভাইয়া।’ বলল হাসান তারিক।
‘দেখা যাক। তুমি রেডি তো এয়ারপোর্ট যাত্রার জন্যে?’
‘হ্যাঁ ভাইয়া। ব্যাগটা রেডি করে রেখেছি।’
‘ধন্যবাদ, তবে শুধু এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্যে রেডি নয়, লড়াইয়ের জন্যেও রেডি হবে। যাও, ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এস। হোটেলের বিল পরিশোধ করে এসেছি। চেক আউটও হয়ে গেছে। আমি বেরুচ্ছি।’
হাসান তারিক উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আসুন, আমিও বের হচ্ছি।’
আহমদ মুসা ও হাসান তারিক দুজনেই করিডোরে বেরিয়ে এল। দুজনের হাতে দুটি ব্যাগ।
‘আমরা কি সোজা লবি হয়ে বের হবো ভাইয়া?’ হাসান তারিক বলল।
‘হ্যাঁ অবশ্যই।’ বলে লিফট রুমের দিকে হাঁটা শুরু করল আহমদ মুসা।
হাসান তারিকও তার পেছনে হাঁটা শুরু করল।
তারা দুজন যখন লিফটের সামনে এসে দাঁড়াল, ঠিক তখনি লিফট থেকে বেরিয়ে এল বেয়ারা সেই দুজন লোককে সাথে নিয়ে।
আহমদ মুসা অপরিচিত দুজনের দিকে একবার তাকিয়েই বুঝতে পারল, বেয়ারা ওয়ার্ল্ড ফ্রিডম আর্মির দুজন লোককে তাদেরই ঘরে নিয়ে আসছে।
বেয়ারার সাথে ছফুটের মত লম্বা ও জিমন্যাষ্টের মত স্বাস্থ্যের অধিকারী যে লোকটি আহমদ মুসার সন্ধানে হোটেলে ছুটে এসেছে তার নাম মারিও জোসেফ। আর তার সাথের লোকটি হলো, তার দক্ষিণ হস্ত, সেই সিলভা।
যাদেরকে আহমদ মুসা এড়াতে চাচ্ছে, তাদের একদম মুখোমুখি হয়েও আহমদ মুসার চোখে-মুখে চাঞ্চল্যের সামান্য ছায়াও পড়ল না।
হাসিমুখে সে বলল, ‘বেয়ারা, আমাদের খোঁজ করছিলেন যারা তাদেরকে কি পেলে?’
‘স্যার, এরাই তো তাঁরা, আপনাদের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলাম।’ বলল বেয়ারা খুশি হয়ে দ্রুত কণ্ঠে।
বেয়ারার কথা শেষ হতেই আহমদ মুসা হ্যান্ডশেকের জন্যে নেতা গোছের লম্বা-চওড়াজন অর্থাৎ মারিও জোসেফের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘ওয়েলকাম, আমি রবীন সিং রাফায়েল এবং আমার সাথি লছমন লিওনার্দো। আপনারা নাকি আমাদের খোঁজ করছিলেন?’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top