Notun Gulag by Abul Asad-35

নতুন গুলাগ – আবুল আসাদ (Notun Gulag by Abul Asad)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

‘তাহলে বলবে না ডকুমেন্টগুলো কোথায় রেখেছ?’ বলল রাগে চোখ মুখ লাল করে এক সারিতে তিনটি চেয়ারে বসা তিনজনের মাঝের জন সামনে হাঁটু ভেঙে দাঁড়ানো তিন বন্দীকে লক্ষ্য করে।
হাঁটু ভেঙে দাঁড়ানো তিন বন্দীর খালি গা। পরনে পাতলা কাপড়ের হাফ ট্রাউজার।
বন্দীদের চেহারা বিপর্যস্ত। শরীরে শত নির্যাতনের চিহ্ন।
তিন বন্দীই কাঁপছিল। পা, হাঁটু তাদের দেহের ভার বইতে পারছিল না। কিন্তু বসার উপায় নেই, নিচে তীক্ষ্ণ পেরেক আঁটা চেয়ার। আবার সোজা হয়ে দাঁড়াবারও সুযোগ নেই, মাথার চার ইঞ্চি উপরেই অনুরূপ তীক্ষ্ণ পেরেক আঁটা ইস্পাতের বোর্ড স্থির হয়ে আছে।
‘এই প্রশ্ন তোমরা শতবার করেছ। এ পর্যন্ত শতবারই জবাব দিয়েছি, তোমরা আমাদের স্পুটনিক অফিস পুড়িয়ে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছ।’ কান্নায় ভেঙে পড়া কন্ঠে বলল তিন বন্দীর মাঝের জন।
‘আমরা বিশ্বাস করি না তোমাদের কথা। তোমরা কম ধড়িবাজ নও। ডকুমেন্টগুলোর শুধু একটি করে কপি তোমাদের কাছে ছিল এটা অবিশ্বাস্য। তোমাদের বলতে হবে ডকুমেন্টগুলোর ডুপ্লিকেট কোথায়।’ বলল চেয়ারে বসা সেই মাঝের জনই।
বন্দীরা তাদের সহ্য ও শক্তির শেষ সীমায় পৌঁছেছিল। তাদের দেহে কম্পন বেড়ে গেছে। শরীর তাদের আঁকা-বাঁকাভাবে দুলতে শুরু করেছে। চোখ তাদের বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছে।
হঠাৎ তিনটি দেহ তাদের এক সাথেই খসে পড়ল সারি সারি পেরেক আঁটা চেয়ারের উপর। সঙ্গে সঙ্গে তাদের তিনটি কন্ঠই যন্ত্রনায় বুকফাটা চিৎকার দিয়ে উঠল।
চেয়ারে বসা তিনজন হো হো করে হেসে উঠল। বলল তিনজনের ডান পাশের জন, ‘তোদের ঈমান গেল কোথায়? দাঁড়িয়ে থাকতে পারলি না তো ঈমানের শক্তিতে। তোদের আল্লাহ শক্তি যোগাল না হাঁটুতে এবং পায়ে?’
তিন বন্দীই যন্ত্রনায় আর্তনাদ করছিল। কিন্তু আর উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। কারণ পেরেক আঁটা সেই ইস্পাতের বোর্ড নেমে এসেছে ঠিক আগের মতই মাথার চার ইঞ্চি উপরে।
চারদিক থেকে শত শত যন্ত্রনা-জর্জরিত চোখ দেখছিল তাদের অসহ্য আহাজারি।
স্থানটা বিশাল একটি গোলাকার হলঘর। নিচু ছাদ আট-নয় ফুটের বেশি উচুঁ হবে না।
হলঘরটার চারদিক ঘিরে মোটা লোহার গ্রীল ঘেরা ছোট ছোট ঘর। ঘরগুলোকে খোঁয়ার বলাই ভাল। ঘরগুলোতে দাড়ানো যায় না, পা মেলে শোয়াও যায় না। ঘরের মেঝেগুলো এবড়ো-থেবড়ো কাঠের তৈরী। মাথার উপরের কংক্রিটের ছাদগুলো মুভেবল। সুইচ টিপে সেগুলো সরিয়ে দেয়া যায়, আবার লাগানো যায়। দরকার হলে বন্দীদের রোদে পোড়ানো, আবার বরফ বৃষ্টিতে শাস্তি দেবার জন্যেই এই ব্যবস্থা।
বিশাল ঘরের ঠিক মাঝখানে প্রায় ২০ বর্গফুট আয়তনের গোলাকার একটা কংক্রিটের বেদী। এই চত্বরের উপরের ছাদটা গম্বুজের মতো উঁচু। বিশেষভাবে নির্মিত এই গম্বুজে এবং বেদীর নিচে নির্যাতনের হাজারো উপকরণ সাজিয়ে রাখা। যখন যেটা তাদের প্রয়োজন সুইচ টিপলেই উপর থেকে নেমে আসে এবং নিচ থেকে উঠে আসে। বন্দীদের একাকী বা দলবদ্ধভাবে এখানে এনে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের যতপ্রকার মারাত্মক পন্থা আছে, সবই তারা পরীক্ষা করেছে এখানে বন্দীদের উপর।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top