Harano Lekha by Ahmed Sofa

হারানো লেখা – আহমদ ছফা (Harano Lekha By Ahmed Sofa)

একটু চোখ বুলিয়ে নিন

একজন বড় মানুষের মূল্যায়ন একদিন, এক বছর বা একযুগে করা অনেক সময়
অসন্ভব। মৃত্যুর অনেকদিন পর পর্যস্ত ইতিহাসে তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা
সমালোচনা চলতে থাকে । নেপোলিয়ানের ভূমিকা সম্পর্কে বিতর্ক এখনও সমানে
চলছে। জর্জ ওয়াশিংটনের ব্যাপারে বি৩তকের এখনও অবসান হয়নি। ফরাসি
বিপ্লবের নায়ক রোবস্‌ পিয়ার এবং দীতোর পক্ষে বিপক্ষে এতিহাসিকরা এখনও
নানারকম রায় দিয়ে যাচ্ছেন।
আমার ধারণা শেখ যুজিবুর রহমান এই ধরনের একজন বড় মাপের মানুষ | এ
অঞ্চলের ইতিহাসে তিনি যে বিরাট ভূমিকা পালন করে গেছেন তা ভারত
উপমহাদেশের পূর্বদিকের ভূখণ্সমূহে অনেকবার পরিবর্তন এবং রূপান্তর ঘটাবে।
শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সংগামের মধ্যদিয়ে ভারত উপমহাদেশের
ইতিহাসের একটি ভিনুমুখি প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল এবং জোরদার হয়েছে । শেখ মুজিবের
রাজনৈতিক অনুসারীরা এটা সমর্থন করবেন কি করবেন না সেটা বড় কথা নয়।
বিরোধীরা শেখের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কতদূর স্বীকৃতি দেবেন সেটাও ধর্তব্যের
বিষয় নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যে সমস্ত ঘটনা এ উপমহাদেশে ঘটছে,
নিরপেক্ষ বিচারেও সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রতিক্রিয়া জড়িত না৷
করে উপায় নেই।
বাংলাদেশের প্রনিধানযোগ্য পরিচয় হল বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক জাতীয়
রাষট্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার
আবিষ্কার করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার কোনটিই ধোপে টেকেনি। ভাষাভিত্তিক
জাতীয় রাষ্ট্র_এ পরিচিত এড়িয়ে গিয়ে অন্যকোন পরিচয়ে বাংলাদেশকে চিহ্তিত
করার উপায় নেই। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এ উপমহাদেশে বাংলাদেশই হচ্ছে
যথার্থ অর্থে একটি রাষ্ট্র যা ইউরোপের জাতীয় রাষ্ট্রসমূহের মত অনেকটা একই রকম
বৈশিষ্ট্যের ধারকবাহক। ভারত-পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিমূল যথেষ্ট রকমের সূদৃঢ় নয়।
আজ পর্যন্ত ভারত এবং পাকিস্তান সেসব দেশের সর্বসাধারণের বোধগম্য একটি
জাতীয় ভাষা চালু করতে পারেনি । ভারতের শিক্ষিত জনসাধারণ ইংরেজির মাধ্যমেই
পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এ ভাষাটা ভারতের কোন অঞ্চলেরই
জনগণের মুখের ভাষা নয়। সুতরাং যোগাযোগ রক্ষার এ পদ্ধতিটা সম্পূর্ণভাবেই……..

লেখক সম্পর্কে

আহমদ ছফা
জন্ম: ১৯৪৩ সাল
গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রী বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন । গল্প. উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা ।

সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ । বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি । একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের
স্থৃতিবিজড়িত কিয়োঙ্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top